শিপ্রা চক্রবর্তী

Romance Tragedy

3  

শিপ্রা চক্রবর্তী

Romance Tragedy

চিরন্তন ভালোবাসা

চিরন্তন ভালোবাসা

5 mins
198




রবিবারের সকাল তাই সপ্তাহের অন‍্য দিনের তুলনায় আজকের ব‍্যস্ততা কম। সপ্তাহের মাত্র এই একটা দিন অঞ্জলি নিজের মত করে কাটায়। বাড়ির সমস্ত কাজ নিজের হাতে করে। অবশ‍্য বাড়িতে লোক বলতে অঞ্জলি একা, আর অঞ্জলির একমাত্র সঙ্গী একটা কুকুর তার নাম পিকু। সকাল বেলায় উঠে থেকে সমস্ত কাজ সেরে অঞ্জলি একটু বসেছে নিজের ল‍্যাপটপটা নিয়ে। সারা সপ্তাহ অফিসের ইমেল চেক করতে করতে পার্সোনাল মেল গুলো চেক করা হয়ে ওঠেনা!!! এই রবিবারে সেই গুলো চেক করে রিপ্লাই দেয় অঞ্জলি।

মেল বক্সটা খুলে মেল চেক করতে করতে একটা মেল দেখে অঞ্জলির চোখ আটকে যায়!!!! আসলে মেল নয়...... মেল আইডির নামটা দেখে অবাক হয় অঞ্জলি!!! নামটা জ্বলজ্বল করে ভাসতে থাকে অঞ্জলির চোখের সামনে। অঞ্জলি তাড়াতাড়ি মেলটা ওপেন করে পড়তে শুরু করে.

"ডিয়ার, অঞ্জলি,

                কেমন আছো????? জানি এই প্রশ্নটা করা আমার উচিত নয় তবুও করলাম???? আমি জানি আমাকে আজও তোমার মনে আছে?? জানি অন‍্যায় আবদার করছি!!! তবুও...... তোমার সাথে আমি একবার দেখা করতে চাই, আমি জানি তুমি এখন কোলকাতার বুকে একা থাকো। অনেক কথা আছে যেগুলো তোমাকে বলতে চাই......পারলে প্লিজ রবিবার, বিকেলে পাঁচটার সময় মিলেনিয়াম পার্কে দেখা করো।


রিগার্ডস

অনিক।"


অঞ্জলি ইমেলটা পড়ে কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে বসে রইল। অঞ্জলির চোখের সামনে পুরনো স্মৃতি গুলো টুকরো টুকরো করে ভেসে উঠতে লাগল। সাথে সেই বিয়ের রাতের স্মৃতি, অঞ্জলি লাল বেনারসি পড়ে কনের সাজে সেজে বসে ছিল বর আসার অপেক্ষায় কিন্তু! বর আসেনি!এসেছিল মোবাইলে একটা ছোট্ট মেসেজ

"আমাকে ক্ষমা করে দিও.... অঞ্জলি!!!! আমি এই বিয়েটা করতে পারবনা!!!! আর কারনটা জিজ্ঞাসা করোনা বলতে পারবনা |"

মেসেজটা পড়ার পর অঞ্জলি অনেকবার ফোন করে কথা বলার চেষ্টা করেছে অনিকের সাথে,, কিন্তু ফোনটা বারবার সুইচঅফ বলেছে। এমনকি অনিকের বাড়ির ঠিকানায় লোক পর্যন্ত পাঠিয়েছিল, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি!!!!! কারন অনিকরা গ্রাম ছেড়ে চলে গেছিল। বিয়ের দিন বিয়ে না...? হওয়া একটা মেয়েকে যে..... কত অপমান, অসম্মান সহ‍্য করতে হয় সেটা নিজের লাইফ দিয়ে ফিল করেছিল অঞ্জলি। অঞ্জলির বাড়ির লোকেদের সম্মান ধূলোয় মিশে গিয়েছিল। অঞ্জলি এক রকম জেদ করে অনিকের সাথে বিয়ে দেওয়াতে রাজি করিয়েছিল ওর পরিবারকে। আর সেই মানুষটা ওকে সবার সামনে ছোট করে একা ফেলে চলে গিয়েছিল!কোন রকম যোগাযোগ পর্যন্ত করেনি!!!! সেইদিনের সেই ঘটনার জন‍্য আজ অঞ্জলি একা থাকে এই শহরের বুকে, পরিবার, পরিজন ছেড়ে। আজ হঠাৎ কি. এমন হলো যে.... দেখা করতে চাইছে। এই সব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে অঞ্জলি ঠিক করল ও দেখা করবে! কারন ওরও অনেক প্রশ্নের উত্তর জানা বাকি?তাই দেরী না করে মেলটা রিপ্লাই করে দিল"ডিয়ার, অনিক,

              আজ আমি অবশ‍‍্যই দেখা করব তোমার সাথে!!! আমারও অনেক উত্তর জানা এখনও বাকি!!!!!


রিগার্ডস

অঞ্জলি।


****************************************


বিকেল চারটে বেজে পয়তাল্লিশ, মিলেনিয়াম পার্কের একটা কর্নারের চেয়ারে বসে আছে অঞ্জলি, আর বারবার ঘড়ি দেখছে। ভিতরে একটা চাপা উত্তেজনা কাজ করছে। ঠিক ঘড়ির কাটা যখন পাঁচটা ছুঁই ছুঁই তখন অঞ্জলির সামনে একজন এসে হাসিমুখে দাঁড়াল। সামনের মানুষটাকে দেখে অঞ্জলি পুরো অবাক!!!! এ.... কি......অবস্থা হয়েছে আগের অনিকের সাথে এরতো কোন মিল নেই!!!! সেই সুঠাম, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল চোখ হারিয়ে গিয়ে জীর্নকায় শরীর এবং চোখের তলায় কালি এ.....কোন অনিক!!!

অঞ্জলিকে এই ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অনিক বলে উঠল, চিনতে অসুবিধা হচ্ছে!!!আসলে আমি আর মাত্র কয়েক দিনের অতিথি তাই!!! এই দুনিয়া ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে আমার অঞ্জুর মুখটা একটু দেখতে চেয়েছিলাম।

অঞ্জলির সবকিছু যেন মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে, কথা গুলো যেন গলার কাছে এসে আটকে গেছে মুখ দিয়ে আর বের হচ্ছেনা, এই মানুষ টাকে কত প্রশ্ন করবে এবং তার জবাব চাইবে বলে মনে মনে ঠিক করে এসেছিল অঞ্জলি কিন্তু এই মানুষটাকে দেখে আর কোন কথাই বলতে ইচ্ছে হচ্ছেনা।-----------অনিক অঞ্জলির হাতটা ধরে ওকে বসিয়ে ওর পাশে বসল, অঞ্জলির দিকে তাকিয়ে বলল, মনে আছে অঞ্জু.... আমি তোমাকে বলেছিলাম থেকে থেকে আমার প্রচণ্ড পেটে ব‍্যাথা করে। তুমি সাথে করে নিয়ে গেছিলে আমাকে ডাক্তারের কাছে। আমাদের বিয়ের দুদিন আগে আমি সেইসব রিপোর্ট পাই, রিপোর্টে লেখা ছিল আমার লিভার ক‍্যানসার হয়েছে। ছুটে গেছিলাম ডাক্তারের কাছে, কারন আমি তোমাকে নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলাম! চোখে অনেক স্বপ্ন সাজিয়ে ছিলাম!!!!! কিন্তু!!!!! ডাক্তার কোনো রকম আশা দিতে পারেনি, তাই আমার এই অনিশ্চিত জীবনের সাথে তোমাকে জড়াতে চাইনি, তোমাকে ছেড়ে থাকতে আমার যে.... কি.... কষ্ট হয়েছে বলে বোঝাতে পাড়বনা!!!! কথাগুলো বলতে বলতে অনিকের চোখে জমে থাকা জল গাল বেয়ে পড়তে থাকে।

------------অঞ্জলি কথাগুলো শুনে হতবাক হয়ে যায়। এই মানুষটাকে সেইদিন কত ভুল ই না বুঝেছিল অঞ্জলি। অঞ্জলি নিজের হাতে অনিকের চোখের জলটা মুছিয়ে দিয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় বলে, আমি কি.... খুব খারাপ অনি? যে..... তোমার কষ্টের ভাগিদার আমাকে করতে পারলেনা, আমার ভালোবাসায় মনে হয় কোথাও কমতি ছিল, তাই ভালোবাসার মানুষের যখন আমাকে সব থেকে বেশি প্রয়োজন ছিল তখন আমি তারপাশে থাকতে পারিনি!

------------অনিক অঞ্জলিকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে পাগলি একটা, আমি চেয়েছিলাম আমাকে ভুলে তুমি অন‍্য কারোর সাথে নতুন করে জীবন শুরু করো। কিন্তু!!!! আমার পাগলিতো আমাকে ছাড়া কাওকেই নিজের জীবনে জায়গা দিলনা, তাই ভাবলাম যে..... কটাদিন আর এই পৃথিবীতে আছি আমার পাগলিটার সাথেই থাকি। অনিক একটা আলতো করে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিল অঞ্জলির মাথায়।

-----------অঞ্জলি অনিকের চোখে চোখ রেখে বলল কেন এত কষ্ট পেলে? আর আমাকেও দিলে?কেন একসাথে কষ্টটা ভাগ করে নেওয়া যেতনা!জানি তুমি না থাকলে আমার খুব কষ্ট হবে!!! এই পৃথিবীতে একা একা পথ চলতে, কিন্তু যে কটা দিন আমরা সাথে থাকতাম সেই কটাদিনের স্মৃতি বুকে আগলে আমি হাসি মুখে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতাম। আচ্ছা তুমি আমাকে এই মুহূর্তে কথা দাও আজ থেকে আমরা একসাথে থাকব, আর তুমি আমাকে দূরে ঠেলে দেবেনা।

----------অনিক অঞ্জলিকে নিজের বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে বলল ঠিক আচ্ছে!তোমাকে এইভাবে আমার সাথে রেখে দেব, আর এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার পর তোমার জন‍্য অপেক্ষা করব, যাতে নতুন করে আবার আমরা এক হতে পারি।

অঞ্জলি আর অনিক দুজন, দুজনকে আঁকড়ে ধরে বসে রইল, দুজনের চোখের জল অবিরাম ভাবে পড়তে থাকল গাল বেয়ে। কারোর মুখে কোন কথা নেই দুজন দুজনের ভালোবাসা কে অনুভব করতে লাগল। আর ওদের ভালোবাসার সাক্ষি হয়ে রইল,আকাশ,বাতাস, গাছ, পাখি আর পড়ন্ত সূর্য। সূর্য যেন তার লাল আভা দিয়ে আকাশের গায়ে লিখে দিতে লাগল এই চিরন্তন ভালোবাসার কাহিনি।

ভালোবাসা হলো এক সুন্দর অনুভূতি!!!!!ভালোবাসা মানে শুধু চাওয়া-পাওয়ার হিসাব নিকাষ নয়!!!! ভালোবাসা হল একে অপরের সুখে, দুঃখে, আনন্দে পাশে থেকে, ভরসার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে চলা। ভালোবাসার কখনও মৃত্যু হয় না, সে অমর। ভালোবাসা সব সময় মনের মধ‍্যে বেঁচে থাকে এবং সময়ের সাথে সাথে নতুন ভাবে, নতুন করে অঙ্কুরিত হয়।




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance