চারমূর্তির রিইউনিয়ন
চারমূর্তির রিইউনিয়ন


"যাই বলুন মশায়, বিরিয়ানির মধ্যে একটা আলাদা আবেগ আছে," মুরগির ঠ্যাং নামিয়ে রেখে পটল বাবু বললেন,"আর আমিনিয়ার বিরিয়ানির জবাব নেই।"
"আপনি তো চিকেন নিলেন, আমার মতো বয়সেও আমি মাটন নিলাম। চেখে দেখবেন নাকি?"
বনমালী নস্কর এর কথাতে পটলবাবু বললেন,"রক্ষে করুন দাদা!"
ফিরনির বাটিটা নামিয়ে রেখে রজনী বাবু এতক্ষণে মুখ খুললেন,"খাওয়া দাওয়া যাই করুন, নিয়মিত শারীরচর্চা করবেন, ব্যামোর ভয় থাকেনা।"
"বিশ্বাস করুন, কয়েকবছর আগেও গড়ের মাঠে ফুটবল খেলেছি। এখন এক কিমি হাঁটতেও হাঁপ ধরে যায়",পটলবাবুর গলায় হতাশা ঝরে পড়ল।
"আপনাদের এখানে পরিবেশও বড্ড কলুষিত। কবে থেকে বলছি চলে আসুন নর্থ বেঙ্গলে।" বিশপবাবু বললেন," আমার কোয়ার্টারে থাকবেন এক হপ্তা মত, জঙ্গল আছে আর চারিদিকে শুধু সবুজ আর স্নিগ্ধতা, মন-শরীরের সব দূষণ দূর হয়ে যাবে।"
"আমায় ক্ষ্যামা দিতে হবে বিশু ভায়া। আমি কয়েকদিন আগেই দেশে ফিরলাম নাইরোবি থেকে। এখন চার ভাইপো মিলে ধরেছে, ওদের আফ্রিকার সব গল্প না শুনিয়ে রেহাই নেই। অবশ্য আমারও মন আর শরীর দুই-ই বিশ্রাম চাইছে।" বনমালী নস্কর কাঁধ ঝাঁকালেন।
"দেখুন সবার কবে সময় হয়, তারপরে চারমূর্তি মিলে একটা ট্রিপ হয়ে যাবে। ওদিকের ব্যবস্থা সব আমার। তা গোয়েন্দামহাশয় কি লালবাজার থেকে ছুটি ম্যানেজ করতে পারবেন?",বিশপবাবু রজনীবাবুকে জিজ্ঞাসা করলেন।
"সবার সময় হোক, আমারও অনেক ছুটি জমে আছে, অসুবিধে হবেনা",রজনীবাবু বললেন।
চারমূর্তি যখন রাস্তায় নামল, শহরে তখন সন্ধ্যা নেমে গেছে।
পটলবাবু বললেন,"অনেক দিন পরে সবাই মিলে ভালোই জমল।"
রজনীবাবু চারমিনার অফার করলে, পটলবাবু বাদে সবাই নিলেন, "আমি দাদা ওই রসে বঞ্চিত। "
এরপর বিদায় সম্ভাষণ, ভাল থাকবেন, শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর পটলবাবু সবাইকে অবাক করে দিয়ে বলে উঠলেন "ডি-লা-গ্র্যাণ্ডি মেফিস্টোফিলিস...ইয়াক ইয়াক!!" বাকিরা হেসে উঠলেন পটলবাবুরর কাণ্ড দেখে। এরপর সবাই নিজেদের গন্তব্যে বেরিয়ে গেলেন।
বনমালীবাবু ৭২নং বাসে যাবেন ঘনশ্যাম দাস লেন। বিশপবাবু আর রজনীবাবু ওলা ট্যাক্সি ডাকলেন, বিশপবাবুকে ঋজু গুহ রোডে নামিয়ে রজনীবাবু ২১, পি.সি.মিত্র রোডে যাবেন। অন্যরা বেরোনোর পরে পটলবাবু এগিয়ে গেলেন ধর্মতলার দিকে ভজহরি মুখুজ্জে স্ট্রিটের বাস ধরতে।