চাকরিটাই দরকার
চাকরিটাই দরকার
বাইরে টাপুর টুপুর বৃষ্টি পড়ছে। দুপুরবেলা ,কিন্তু সূর্য টা এমন ভাবে ঢেকে গেছে যে দুপুর বলে মনে হচ্ছে না। আকাশ ছেয়ে অন্ধকার নেমেছে।
অন্ধকার শুধু পরিবেশকে ঢেকে রাখে নি ঢেকে রেখেছে শোভন এর মনটাকেও। আর কিছুক্ষণ পরেই তাকে রিমির বাড়িতে যেতে হবে, তার পরিবারের সাথে কথা বলতে।
রিমি আর শোভনের প্রায় সাত বছর এর প্রেম, শোভন যখন ক্লাস টেন এ পড়ত ঠিক তখন থেকে। তখন থেকেই শোভন মনে মনে আজকের দিনটা কল্পনা করত।
ভেবে রাখত একদিন এই দিনটা আসবেই যখন রিমির বাড়িতে তাকে যেতে হবে আর মাথা নত করে নয় শ্যামনগর হাই স্কুলের রেকর্ড স্কোর করা এই ছেলেটা মাথা উঁচু করেই যাবে........
ফোনটা বেজে উঠলো,,,
কল্পনার সাগর থেকে বেরিয়ে শোভন ফোনটা তুললো আর কানে দিল....
হ্যালো,,
রিমি: তুমি কোথায়? কখন থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি আসো তাড়াতাড়ি।
শোভন :হম যাচ্ছি ও একটু বৃষ্টি পড়ছে বলে ভাবছিলাম একটু পরে ......যাচ্ছি তাহলে।
ফোনটা রেখে দিল সে, তৈরি সে হয়ে ই ছিল, শুধু মেস ঘরের লাইটটা বন্ধ করে দরজার চাবি দিয়ে সাইকেলটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ল।
যে কথাটা সে কিছু বছর আগে ভেবেছিল সে কথাটা এখনো তার মনে পড়ে। সে নাকি বুক চিতিয়ে রিমির বাবার কাছে গিয়ে বলবে আমি কলেজে চাকরি করি, কিন্তু আজ আজ কি বলবে সে শ্যামনগর হাই স্কুলের ফার্স্ট বয় হয়ে আজ টিউশন পড়ায়? শুধু টিউশন ই পড়ায়।
দুশ্চিন্তায় মনটা ভরে গেল তার। ভাবনা যতই বাড়তে থাকল ততই সাইকেলের গতি অল্প হতে থাকলো। বৃষ্টিটা থেমে গিয়েছে কিন্তু অন্ধকার টা আরো গাঢ় হয়েছে ঠিক শোভন এর মনের মত।.....
আরে, এস এস, এখানে বসো, রিমি দের ঘরে ঢুকতেই প্রথমে রিমি আপ্যায়ন করল মিষ্টি গলায়।
রিমির বাবা কলেজের প্রফেসর, শোভন যে বিষয় এর ছাত্র রিমি বাবা সে বিষয় এর ই প্রফেসার।
ঘরে ঢুকেই শোভন কে রিমি বারান্দায় নিয়ে গেল যেখানে রিমির মা আর তার বাবা বসে ছিলেন।
শোভন তাদের সামনে ই বসল।
প্রফেসর মশায় হাসছিলেন, ভাবছিলেন যে ছেলেটা ইতিহাসের বিষয়ে তাকে এতদিন প্রশ্ন করে কাহিল করে এসেছে আজ তাকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করার সময় এসেছে।
প্রফেশ্বর মশাই: কি শোভন কেমন আছো,, পড়াশোনা ভালো চলছে?
শোভনের মুখটা লাল হয়ে উঠলো।
প্রফেসর: স্কুল থেকেই শুনেছি তুমি ভালো ছাত্র আর কলেজে তো বরাবর প্রথম হতে দেখেছি তোমায়, তা কী করছো এখন?
এই প্রশ্নটাই তাকে এতক্ষণ ধরে ভয় পাই এ এসেছে,
শোভন শান্ত গলায় জবাব দিল: চাকরির চেষ্টা করছি 4 বছর আগে পরীক্ষায় বসেছিলাম কিন্তু এখনো রেজাল্ট আসেনি আর কলকাতায় থাকার খরচ মেটানোর জন্য টিউশন পড়াচ্ছি।
কথাটা শুনে কেমন ব্যঙ্গর দৃষ্টিতে তাকালেন প্রফেসর, কত রোজগার করো ওই টিউশন থেকে? প্রশ্ন করলেন তিনি।
শোভন: আমার চলে যায়।
শুধু তোমার চললে তো হবে না বাবু আমার মেয়েরও চলতে হবে, চাকরি খোঁজার চেষ্টা করো, শেষমেষ আঘাতটা দিয়ে দেন প্রফেসর।
রিমির মা: আমার মনে হয় না চাকরির ভরসায় থাকা দরকার আমাদের হাতে তো অন্য ছেলে আছে চাকরির বাজার ভরসা করা যায় না।
প্রফেসর: একদম তুমি এত বছর ধরে চাকরি খুঁজছ তবুও পেলে না তাহলে ভরসা রাখি কি করে বলতো। তারপর হাতের সামনে মনি বাবুর ছেলে আছে।
কথাটা শুনলো শোভন মনি বাবু ,, প্রাক্তন এমএলএ তার ছেলে শোভনের সাথে পড়তো। সারা জীবন কোনক্রমে পাস করে এসেছে । শ্রবণ এর সাথে পড়াশোনা তার কোন তুলনাই ছিলনা। কিন্তু আজ শোভনের মেধা প্রতিপত্তির হাতে সে বুঝি মার খেয়ে গেল।
আর বসে থাকা অসম্মানজনক ভেবে শোভন উঠে পড়ল, যাবার সময় রিমির দিকে তাকালো না। রিমি তাকে একবার বলেছিল যদি চাকরি না পায় তাহলে হয়ত তার ঘরে তাকে মেনে নেবে না ,তখন মেধাবী শোভন ভাবেউনি একদিন চাকরিটা তার জন্য দুর্মূল্য হয়ে যাবে।
মাথা নিচু করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল শোভন। রিমির দুয়ারের কাছে দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকলো চাকরি আর কবে হবে,, পাশের স্কুল থেকে মাইকে আওয়াজ ভেসে আসলো দুয়ারে সরকার....
