ব্যাচেলর রিলেশন ভার্সেস ফিউশন
ব্যাচেলর রিলেশন ভার্সেস ফিউশন
নিতিন যখন বলানেই কওয়া নেই দুম করে চোখ বুজল তখন তার ঘরে এক বিবাহযোগ্যা মেয়ে , দুই মাধ্যমিক স্তরে পড়াশোনা করা যমজ ছেলে । নিতিনের হার্ট এট্যাক তাকে তো চির ঘুমের দেশে নিয়ে গেল অপার শান্তি দিয়ে কিন্তু তার বিধবা আশিক্ষিত বউ শান্তা পড়লো অথৈ জলে । নিতিন তার বাপ মায়ের এক ছেলে ছিল আর তার বউ ও তাই । কারোর বাবা মাই তেমন কিছুই রেখে যাননি ওদের জন্য । নিতিনের বাপের ওই লরঝড়ে বাড়ি টুকু ছাড়া কিছুই ছিল না সম্পত্তি বলতে । নিতিন কাজ করতো একটা প্রাইভেট ফার্মে যেখান থেকে তেমন কিছুই উপার্জন করতে পারেনি সে , তবু সংসারের গাড়ি গড়িয়ে গড়িয়ে চলছিল । তার উপার্জিত ধন বলতে তার একটি বি এ পাস করা মেয়ে লেখা আর দুই যমজ পুত্র লব আর কুশ ।
সে মরার পর তার কোম্পানি তার পরিবারের হাতে তুলে দিল প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা । শান্তা অনুরোধ করে কোম্পানির মালিককে যদি তারা লেখাকে একটা চাকরি দিত তা হলে সংসারটা ভেসে যেত না । মালিক বিনীত ভাবে জানায় তারা কোন মহিলা কর্মচারী বহাল করে না । লেখা বিয়ের আশা ত্যাগ করে এদিক ওদিক চাকরির খোঁজ করতে লাগলো এভাবে কিছুদিন কেটে গেল । এদিকে জমা টাকা কতদিন ? দুটো ছেলের পড়াশোনা , খাবারের খরচ এসবেই প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেল । যখন আজ খেয়ে কাল কি খাবো এই চিন্তা শান্তা কে ঘিরে ফেলেছে তখনই সুখবর এলো । পাড়াতেই থাকে নিতিনের এক বন্ধু সুবোধ , সেই এসে বললো তার এক মামাতো ভাই বালিতে এক কটেজ ইন্ডাস্ট্রির মালিক । তার একটি মহিলা গ্র্যাজুয়েট সহকারী দরকার আছে , সেই খবর পেয়ে সুবোধ তার ভাই অর্ঘ্য কে অনুরোধ করেছে সে যেন লেখার একবার ইন্টারভিউ নেয় । যদি লেখা উৎরাতে পারে তা হলে তার পরিবারটা রক্ষা পাবে । অর্ঘ্য জানিয়েছে আগামী সোমবার সুবোধ যেন মেয়েটিকে নিয়ে আসে তার কাছে । সব শুনে শান্তা বললো , ঠাকুরপো তোমার ভাই যখন আর চিন্তার কিছুই নেই তবু বড় মেয়ের মা তো বুঝতেই পারছো ! তাই বলি কটা কথা জিজ্ঞাসা করলে কি রাগ করবে ? সুবোধ চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলে না না বৌদি কি যে বলো ? ঠিকই তো বলেছ , লেখা আমাদের বিবাহযোগ্যা সুন্দরী মেয়ে তাই যেখানে সে দিনের বেশিরভাগ সময় কাটাবে সেখানকার বিষয়ে তো জানতেই হবে । শান্তা বললো , তা তোমার ঐ ভাইটি কি বিবাহিত ? আর তার স্বভাব চরিত্রটি বা কেমন ? সুবোধ বলে বৌদি আমার ভাই অর্ঘ্য ব্যাচেলর , বয়সে আমার থেকে অনেক কম ওই পঁয়তাল্লিশ বছরের মতোই হবে , বিয়ে সাদি করবে না বলেই মনে হয় । আর নিজের স্বভাব চরিত্রের সন্ধান তো মানুষ নিজেই অনেক সময় পায় না তো আমি কোন ছাড় যে তোমায় বলে দেবো ভাই আমার ধোয়া তুলসী পাতা । কিন্তু ছেলেটা ভালো গো বৌদি , নেশা ভাং করে তবে নিজের কাজের জায়গায় নয় । তুমি নিশ্চিত থাকো আমার ভাইজি বলে যাকে ওর কাছে পাঠাবো তাকে ও নিজের কাছে যত্ন করেই রাখবে । লেখাকে নিয়ে সোমবার সকালে বালি রওনা দিলো সুবোধ । অর্ঘ্য কটেজ ইন্ডাস্ট্রি বিশাল একটা কিছু না হলেও কম ও নয় । অর্ঘ্য সেন ইন্টারভিউ নিলো লেখার , আর সেই ইন্টারভিউ পাশ ও করে গেল লেখা । অর্ঘ্য জানালো আপাতত তার মাইনে মাসে নয় হাজার টাকা , পিএফ ,ই এস আই সহ ।
এছাড়া গোলাবাজার থেকে বালি অনেকটা পথ তাই লেখা চাইলে সপ্তাহে ছয় দিনের বদলে পাঁচ দিন এখানে অর্ঘ্যর বাড়িতে রাত্রি বাস করেও ডিউটি করতে পারে । এক্ষেত্রে তার দুইদিন ছুটিও মিলবে আবার যাতায়ত খরচ ,হয়রানি ও হবে না । অর্ঘ্য ব্যাচেলর তার বাড়িতে সে দুটো কাজের লোক নিয়ে একাই থাকে এটাও জানাতে সে ভুললো না । লেখা বললো কাকু বাড়িতে আলোচনা করেই জানাবো , আপাতত এ হপ্তা আমি ছয়দিন যাতায়াত করে নেবো । অর্ঘ্য বুঝলো লেখা বুদ্ধিমতী মেয়ে , সে এই কয়দিন আসা যাওয়া করে তাকে বাজিয়ে দেখতে চাইছে । অর্ঘ্য বললো ঠিকই আছে তবে আমাকে তুমি কাকু বলো না সুবোধ দার মতো । ও আমার দাদা আর সম্পর্কে তোমার কাকু ঠিক আছে তবে এখানে আমাকে সবাই মিস্টার সেন বলেই ডাকে । তো আমার সাথে তোমার জখন প্রফেশনাল রিলেশন হলো তো আমাকে প্রফেশনাল নামেই ডাকবে । লেখা ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালো । লেখার কাজে যোগদান করে এক সপ্তাহ পার হয়ে গেছে , আসা যাওয়ার ভীষণ ধকল । ভোর রাতে উঠে পড়তে হয় তাকে তার পর স্নান সেরে টিফিন খেয়ে বেরিয়ে যায় সে । অফিস পৌঁছাতে তবু নয়টা বেজে যায় , সারা দিন ফাইল পত্র নিয়ে কাজ করতে করতে বেলা বয়ে যায় । দুপুরের খাবার যদিও কোম্পানির ক্যান্টিনে ফ্রিতে মেলে । তার পর বিকাল চারটে তে ট্রেন ধরে বাড়ি ফিরে আসতে আটটা বেজে যায় এক একদিন । বাড়ি ফিরে কোনমতে দুটো মুখে দিয়েই ঘুম জড়িয়ে আসে লেখার চোখে । শান্তা বললো দেখ লেখা তোর স্যার যখন ভালোমানুষ বলছিস তো আমি বলি তুই ওনার অফারটা নিয়ে নে ।
তুই ওনার বাড়িতেই থাক , এতে করে এত ধকল ও হবে না এদিকে দুইদিন ছুটিও কাটাতে পারবি বাড়ি এসে । লেখা মা কে জানায় তা হলে ফোনে সে স্যারকে বলে কালই তল্পিতল্পা নিয়ে চলে যাবে । সত্যি বলতে তার কষ্টই হচ্ছে এই যাতায়াত করতে । অফিসে এসি রুমে তেমন কাজ নেই , স্যারও অমায়িক । যত পরিশ্রম এই বাড়ি থেকে আসা যাওয়া করতে । অর্ঘ্য লেখার জন্য গেস্টরুমটা পরিস্কার করিয়ে দেয় । লেখাকে সে বলে আজ থেকে এখানে যখন থাকবে এখানেই লাঞ্চ , ডিনার সব করবে তুমি । আমি জানি তোমার ক্যান্টিনে লাঞ্চ করতে কষ্ট হয় । লেখা বলে সে তো ঠিক আছে তবে আমি কি রান্নাটা করতে পারি ? অর্ঘ্য বলে তা হলে তো মহারাজের চাকরি খাবে ? লেখা বলে মহারাজ আমাকে সাহায্য করবেন তো । অর্ঘ্য বলে তথাস্তু , তবে তাই হোক । সপ্তাহের পাঁচদিন ডিউটি বাজিয়ে দুদিন লেখা ঘরে চলে যায় । কেন জানে না অর্ঘ্য তখন কেমন একা বোধ করে ! কিন্তু এই একা থাকাটা তার তো উপভোগ্য ছিল এতদিন , তাই সে বিয়ে করে নি । কারো তার জীবনে নাক গলানো তার সহ্য হবেনা বলেই সে সংসার পাতেইনি ।
মহারাজের হাতের রান্না ওই দুইদিন অসহ্য লাগে , রাত্রে মদের বোতল গুলো ওই দুই দিন একটু বেশিই খালি হয় । তবে লেখাকে সে কিছু বলে না । লেখার ও বাড়ি ফিরতে মন করেনা , ফিরে এসেও আনমনা থাকে সে । শান্তা দেখে মেয়ের দশটা কথায় নয়টা তার স্যারকে নিয়ে । স্যার কি খেতে ভালোবাসেন , ওনার কেমন কি ভালো লাগে এই সব । শান্তা বোঝেন মেয়ে অর্ঘ্যর প্রতি দুর্বল হয়ে গেছে তবে বয়সের পার্থক্য টা ও তো অনেক ? তাই কিছুই বলেনা শান্তা । মাসের শেষ মাইনে হাতে আসে লেখার , কিন্তু এ কি কথা হয়েছিল নয় হাজার আর স্যার দিয়েছেন পনেরো হাজার ? এক্সট্রা টাকা গুলো খাম থেকে বের করে ফিরিয়ে দিতে যায় লেখা । অর্ঘ্য বলে ভুল করে নয় ইচ্ছা করে দিয়েছি লেখা , ওগুলো তুমি রাখো । লেখা বলে আপনাকে রেঁধে খাওয়াই তার মাইনা বুঝি ! তার দুই চোখে অভিমান ঝরে পড়ে । অর্ঘ্য তাকে ধরে চেয়ারে বসায় , রাগ করে না লেখা আমি এসব ভাবিনি । আসলে তোমার কাছে যখন জানলাম তোমার দুই ভাই পড়াশোনা করে তখন ভাবলাম ওই টাকাতে কি করে চলবে ! তাই আমি মাইনে বাড়িয়ে দিলাম তোমার । লেখার টিকালো নাকের পাটা ফুলে ফুলে উঠছে , মাথা নিচু রেখেই বলে আমি কে আপনার ? অর্ঘ্য বলে তুমি কে এটা শুনতে চাও ? বেশ তবে রবি ঠাকুরের গানেই তোমার আগমনের , তোমার জন্য আমার ফিলিংসের বর্ণনা দি ...
আমার মল্লিকাবনে যখন প্রথম ধরেছে কলি
তোমার লাগিয়া তখনি, বন্ধু, বেঁধেছিনু অঞ্জলি॥
তখনো কুহেলীজালে,
সখা, তরুণী উষার ভালে
শিশিরে শিশিরে অরুণমালিকা উঠিতেছে ছলোছলি॥
এখনো বনের গান, বন্ধু হয় নি তো অবসান--
তবু এখনি যাবে কি চলি।
ও মোর করুণ বল্লিকা,
ও তোর শ্রান্ত মল্লিকা
ঝরো-ঝরো হল, এই বেলা তোর শেষ কথা দিস বলি॥
লেখা স্থান কাল পাত্র ভুলে জড়িয়ে ধরে অর্ঘ্যকে । অর্ঘ্য ও নিজের ঠোঁট দুটো ডুবিয়ে দেয় লেখার ঠোঁটে । ছুটি হয়ে যাওয়া ফাঁকা অফিস , ফাঁকা ফ্যাক্টরি প্রমান থাকে দুটো তৃষ্ণাত্ম শরীরের মিলে মিশে এক হয়ে যাওয়ার । বহুক্ষণ একে অপরের সঙ্গে নিবিড় ভাবে নিভৃত যাপন করে ফিরে আসে বাড়ি । রাতে ডিনারের পর অর্ঘ্য যখন তার ড্রিংকস নিয়ে বসেছে তখনই তার ঘরে আসে লেখা । অর্ঘ্য তাকে বলে , ম্যাম কি আজ এই রুমেই রাত কাটাতে চান , আসুন বসুন ! লেখা বসে কিন্তু খাটে না পাশের সোফা কাউচ্ টাতে । এনি থিং রং ডিয়ার ? অর্ঘ্য বলে । লেখা ভনিতা না করেই বলে , ব্যাচেলর বাবু কি ভবিষ্যতে ব্যাচেলরই থাকবেন না বিবাহের ইচ্ছা আছে ? অর্ঘ্য উঠে এসে লেখার পাশে বসে তার পর বলে , আমি সুবোধ দার মামাতো ভাই লেখা । তোমার সম্পর্কে কাকু , যদিও আমি ওসব ডিনাই করি । তবু আমি মোট কথা তোমার থেকে অনেক বড়ো বয়সে , তোমার মা হয়ত আমারই বয়সী কি আমার থেকে একটু বড়ো হবেন বয়সে । তোমার আগামীদিনে অনেক কিছুই দেখার বাকি । আমরা আজ প্রথম শারীরিক ভাবে মিলিত হলাম তবে এটা তো আমি তুমি ছাড়া কেউই জানতে পারছে না যতক্ষণ না পর্যন্ত আমরা কাউকে বলছি । আর যদি আমি তুমি বিয়ে করি সেটা সর্বসমক্ষে আসবে । আমার কোন আপত্তি নেই বিয়েতে আসলে ব্যাচেলর ট্যাগটা আচমকাই বড্ড ভারী হয়ে গেছে । তবে তুমি ভেবে দেখো , মায়ের সঙ্গে আলোচনা করে জানাও আমাকে । লেখা বলে ,আমার যা কিছু দেখার বাকি সবই আপনার সাথে দেখতে চাই আমি । আর আমি আপনাকে নিয়ে কি ভাবি সেটা আমি বোঝার আগেই মা বুঝে গেছেন । তবু রিস্ক নিতে আমার আর আগ্রহ নেই তাই আমরা কি বিয়েটা করে মায়ের কাছে যেতে পারিনা ? অর্ঘ্য হেসে বলে জো হুকুম মিসেস সেন , আপাতত রাত টুকু একটা ট্রায়াল ফুলশয্যা করে নেওয়া যাক , যতই হোক আপনার আবার বুড়ো ব্যাচেলর বর । অধমকে একটু শিখিয়ে পরিয়ে যদি নেন ভালো হয় । আজ না হয় ব্যাচেলর লাইফে একটু ফিউশন এনে দিক লেখা ম্যাডাম । লেখা নিজের হাউসকোট টা খুলে ছুঁড়ে ফেলে দেয় আর অর্ঘ্যর কানে ফিসফিস করে বলে লেটস ট্রাই আ নিউ ফিউশন ।।

