বুবলার প্রথম অঞ্জলি
বুবলার প্রথম অঞ্জলি
প্রথম দৃশ্য
( সাত সকালে পূজো মন্ডপে মাইকে মহিষাসুর মর্দ্দিনী বাজছে। বুবলা চুপচাপ শুয়ে শুনছে।)
মা: এই বুবলা তাড়াতাড়ি ওঠ । পূজোর দিনে এই ভাবে শুয়ে থেকে সকাল টা নষ্ট করতে নেই।
বুবলা: ( লাফিয়ে উঠে) মা আজ জলখাবারে কি বানিয়েছ? ( একটা জোড় শ্বাস টেনে) আঃ কি সুন্দর গন্ধ উঠছে আলুর দোমের ।
মা: ( হেসে) লুচি আলুর দোম বানিয়েছি। যাও তাড়াতাড়ি মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।
(বুবলার দিদি রিঙ্কির প্রবেশ)
রিঙ্কি: মাআআআআআ ও মমাআআআআআ
মা: কিরেএএএ? সকাল বেলায় এত চেঁচাচ্ছিস কেন? আমি কি কালা হয়ে গেছি!
রিঙ্কি: ওমা তোমার একটা ভালো শাড়ি বের করে দাও। পুষ্পাঞ্জলি দিতে যাব। দেরী হয়ে গেছে একি! আবার ওদিকে রুম্পারা মন্ডপে চলে গেছে। এ ব্যাচে দিতে না পারলে দেরী হয়ে যাবে।
মা: বারবার করে বললাম কাল, যে শাড়িটা পড়বি বের করে রেখে দে নইলে পূজোর সময় সকালে তাড়াহুড়োয় কিছু খুঁজে পাবি না। তা আমার কথা শুনলে তো! আমার আবার পূজোর জোগাড় আছে। কাজ কামাই যাবে।
(গজগজ করতে করতে মা প্রস্থান করল।)
বুবলা: এ দিদি তুই পুষ্পাঞ্জলি দিতে যাবি? আমিও যাব তোর সাথে।
রিঙ্কি: এ বাবা! তুই তো চান ই করিস নি । আমি অত দাঁড়াতে পারব না । আর তুই অতক্ষন না খেয়ে থাকতেও পারবি না। যা পেটুকরাম তুই। হি হি হি
বুবলা: কে বলেছে পারব না ! আমি পারব । পুষ্পাঞ্জলি দিতে আর কতক্ষণ লাগে।
রিঙ্কি: দেখাই যাবে পারিস কি না পারিস। ওখানে গিয়ে কিন্তু আমায় একদম জ্বালাবি না ' খিদে পেয়েছে ' বলে। যা আমার শাড়ি পরে রেডী হতে হতে চান করে নে। আমি কিন্তু দাঁড়াতে পারব না। দেরী হয়ে গেছে আমার।
(বুবলা দৌড়ে চলে গেল স্নান করতে।)
দ্বিতীয় দৃশ্য
(স্থান-পূজো মন্ডপ)
পুরোহিত : যারা যারা পুষ্পাঞ্জলি দেবেন সামনের দিকে এগিয়ে আসুন। কেউ হুড়োহুড়ি করবেন না। যারা এখন দিতে পারছেন না তারা পরের ব্যাচে দেবেন।
অহহমমম (গলাটা একটু ঝেড়ে) আচ্ছা এবার তাহলে শুরু করছি। এই কে আছ সবার হাতে একটু করে গঙ্গা জল দাও।
(একজন এসে সবার হাতে জল দিয়ে যাবে)
আচ্ছা সবাই পেয়েছেন জল?
সকলে: (সমস্বরে) হ্যা বামুন ঠাকুর।
পুরোহিত: আচ্ছা সবাই আচমণ করে নিন। দিয়ে হাত জোড় করে বলুন
"নমঃ অপবিত্রঃ পবিত্রো বা সর্বাবস্থাং গতো হপি বা | যঃ স্মরেত্ পুন্ডরীকাক্ষং সবাহ্যাভ্যন্তরঃ শুচিঃ ||"
বুবলা: 'নমঃ অপবিত্রঃ পবিত্রো বা সর্বাবস্থাং গতো হপি বা | যঃ স্মরেত্ ' - যা তারপর কি বলল ঠাকুর মশাই বুঝতেই তো পারলাম না। পরের টা শুনি ভালো করে ।
পুরোহিত: "নমঃ সর্বমঙ্গলমঙ্গল্যং বরেণ্যং বরদং শুভম্ | নারায়ণং নমস্কৃত্য সর্বকর্ম্মাণি কারয়েত্ || "
বুবলা: নমঃ সর্বমঙ্গলমঙ্গল্যং ( পাশ থেকে একজন জোড়ে জোড়ে বলছে 'নমঃ সর্বমঙ্গলমঙ্গল্যে বরণ্যং বরদং শুভম্ | নারায়ণং নমস্কৃত্য সর্বকর্ম্মাণি করায়তে'।।)
উফফ! এত জোড়ে জোড়ে বলার কি আছে । আস্তে মনে মনে বলতে পারে না। আবার আমি শুনতে পেলাম না ঠিক করে।
পুরোহিত: আচ্ছা এবার সবাই হাতে পুষ্প নিন।
( সবার হাতে পুষ্প দেওয়া হবে।)
সবাই পেয়েছেন পুষ্প?
সকলে: ( সমস্বরে) হ্যা।
পুরোহিত: বলুন-
" নমঃ মহিষগ্নি মহামায়ে চামুন্ডে মুন্ডমালিনি | আয়ুরারোগ্য বিজয়ং দেহি দেবী নমোস্তুতে || "
বুবলা: নমঃ (হঠাৎ মন্ডপের পাশে মঞ্চ থেকে গান ভেসে এল- ' বোঝে নাআআআ সে বোঝে নাআআ....')যাঃ কি বলল আবারও বুঝতেই পারলাম না।(বিরক্ত হয়ে) উফফ! গানটা এখনই চালাতে হল এদের!
পুরোহিত:
"নমঃ সৃষ্টিস্তিতিবিনাশানাং শক্তিভূতে সনাতনি | গুণাশ্রয়ে গুণময়ে নারায়ণি নমোস্তু তে ||
নমঃ শরণাগতদীর্নাত পরিত্রাণপরায়ণে | সর্বস্যাতিহরে দেবী নারায়ণি নমোস্তু তে || "
এষ সচন্দন-পুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলিঃ নমঃ দক্ষযঞ্জ বিনাশিন্যে মহাঘোরায়ৈ যোগিনী কোটিপরিবৃতায়ৈ ভদ্রকাল্যৈ ভগবত্যৈ দুর্গায়ৈ নমঃ ||
বুবলা: নমঃ সৃষ্টিস্তিতিবিনাশানাং শক্তিভূতে ( হঠাৎ নাকে এগরোলের গন্ধ এল) আঃ কি সুন্দর এগরোলের গন্ধ। বড্ড খিদে খিদে পাচ্ছে। যাঃ ঠাকুর মশাই এর মন্ত্র তো কিছু বুঝতেই পারছি না। কি বলল 'অটিপরিবৃতাএই' ! না কি বলল! মানেই বা কি ?
পুরোহিত: এবার সবাই হাতের পুষ্প মায়ের চরণে দিন। একটু জোড়ে ছুড়বেন যাতে পুষ্প আমার চরণে না পড়ে মায়ের চরণ পর্যন্ত পৌছায়।
বুবলা: ( শরীরের সমস্ত শক্তি নিয়ে ছুড়ল পুষ্প) এইরেএ! পুষ্পটা তো অসুরের মুখের ভেতর আটকে গেল। দুর দুর ! পুষ্পাঞ্জলিটা ঠিকঠাক দেওয়া হল না।
পুরোহিত: এবার সবাই হাত জোড় করে প্রণাম করুন
"জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রকালী কপালিনী | দুর্গা শিবা ক্ষমা ধাত্রী স্বাহা স্বধা নমোস্তু তে || "
বুবলা: উফফ্ খিদে তে পেটে ছুঁচোর ডন ডাকছে। মন্ত্র তন্ত্র কিছুই মাথায় ঢুকছে না।
ওওও মা দুর্গা আমি তো তোমার মন্ত্র কিছুই ঠিক মতো বলতে পারলাম না । আমার ওপর রেগে যাবে না তো? আমাকে এবারের ইউনিট টেস্টে কম নম্বর দেওয়াবে না তো? এই আমি হাত জোড় করছি প্লিইইসসস মা দুর্গা প্লিইইস।
রিঙ্কি: ( বুবলার মাথায় টোকা মেরে)কি প্লিস প্লিস করছিসরে বুবলা ?
বুবলা: (চমকে) কিছু না । প্রণাম করছি।
রিঙ্কি: প্লিস প্লিস করে কি প্রণাম করছিস?
বুবলা: তোকে বলব কেন? আমার আর মা দুর্গার ব্যাপার।
রিঙ্কি: (মুখ বেকিয়ে) মমমমম! বাআব্বাআআ! চল বাড়ি চল।
দ্বিতীয় অঙ্ক
প্রথম দৃশ্য
মা দুর্গা: উফফ ! আর পারি না দাঁড়িয়ে থাকতে। এই সিংহ একটু ঠিক মতো দাঁড়া ।পা পিছলে যাচ্ছে যে।
সিংহ: কি করব মা! আমিতো চেষ্টা করছি ঠিক ভাবে দাঁড়াতে কিন্তু এই অসুর টাই তো সেই থেকে ঠেলা দিচ্ছে।
মা দুর্গা: এই মহিষাসুর ঠিক মতো একটু বসে থাকতে পারছিস না ? পায়ে ভর পারছি না। হুমড়ি খেয়ে পরব যে!
মহিষাসুর: কি করব দুর্গা? সেই থেকে বুকে ত্রিশূল গেঁথে রেখে দিয়েছিস। বের ও করিস নি । বড় ব্যথা লাগে যে! (বেসুরো গান ধরে)
'এ ব্যথা যে কি যে ব্যথা......'
সরস্বতী: ওহ্ ! থাম তো মহিষাসুর। আর বেসুরে গান ধরিস না। একি দিনরাত এদের ঘ্যানঘ্যানে গানের ঠেলায় কান ঝালাপালা।
লক্ষ্মী: যা বলেছিস সরস্বতি ! সত্যি! বাপরে ! এত্ত ঢাক আর কাঁসরের আওয়াজ! একি আমি বেশি আওয়াজ সহ্য করতে পারি না।
হাঁস ও পেঁচা: (একসাথে) ও মা গো ! বাঁচাও গো! শব্দ বাজির আওয়াজে যে পিলে চমকে যাচ্ছে। বুক ধড়ফড় করছে।
কার্তিক: আঃ ! এখনও তো দু দিন বাকি। এত তাড়াতাড়ি বিরক্ত হলে হবে! গনেশ আর ওর মূষিক এই কদিন কত ভালো মন্দ খাবার পায় বলত।
গনেশ: ( ভুরি তে হাত বুলিয়ে) তা তুমি ঠিক বলেছ দাদা। কত রকমের ফল, মিষ্টি। চার দিনে হরেক রকম ভোগ দেয়। (আনন্দে শুঁড় দোলায়)
মা দুর্গা: এই গনেশ তোকে কি আমি খেতে দিই না? সব সময় খাবো খাবো বায়! মর্ত্যে এসেও খালি খাবো খাবো। আর এদিকে তো আমার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কোমরে ব্যথা হয়ে গেল। (দুঃখ করে) বেচারা আমার বাহন সিংহের কি কষ্টই না হচ্ছে !
গনেশ: আহা ! অমন করে কেন বলছ মাআআ ! মর্ত্যবাসী আমাদের কত ভালোবাসে, কত ভক্তি করে বল। তাই তো ভালোবেসে আমাদের এত খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করে।
মা দুর্গা: না না ঐ সব ভক্তি টক্তি কিস্সুনা বুঝলি। সব লোক দেখানো। দেখছিস না সামনের ঐ মেয়েগুলো কেমন সেজে গুজে ঝিঙ্কু মামণি হয়ে সেলফি নিচ্ছে। এদিকে এলো না পর্যন্ত। এদের আবার সব দুগ্গা সাজা হয়। আমার মতো সেজে ছবি তোলে। হূউউউউ! ঢং যত !
লক্ষ্মী: ( খকখক করে কাশতে কাশতে) যা বলেছ মা। শুধু আমাদের মতো সেজেগুজে ছবি তোলার বেলায় আছে। আমাদের মতো চারদিন ধরে ঠাই দাঁড়িয়ে থাকতে যদি হত এদের এত ধুনোর মধ্যে (খকখক) বাপরে! এত ধুনো ! দম আটকে কাশি চলে আসছে।
এই এই কি হচ্ছে? কি হচ্ছে এটা?
ইঁদুর: ক্ষমা করবেন মা। আসলে নাড়ুটা খেতে গিয়ে গড়িয়ে আপনার শাড়ির তলায় চলে গিয়েছিল।
গনেশ: কে এত ডাকছে মা তোমায় ? প্লিস প্লিস করছে।
মা দুর্গা: কে রে কই দেখি? ওও ওতো বুবলা । বেচারা বুবলা! এই প্রথম ছেলেটা পুষ্পাঞ্জলি দিতে এল কিন্তু কিছুই ওর মনের মতো হল না। আহা ! ছেলেটা কত স্বচ্ছ মনে নিজের মনের কথা গুলো আমায় বলছে।।
দ্বিতীয় দৃশ্য
( রাতে শুয়ে বুবলার স্বপ্নালোকে গমন)
মা দুর্গা: বুবলা বুবলাআআ ওঠ। আমি এসেছি। বুবলা বুবলা ..
বুবলা: কে কে ? কে তুমি ?
মা দুর্গা: আমি রে বুবলা আমি। মা দুর্গা।
বুবলা: (অবাক হয়ে) মা দুর্গা ! (কিছুক্ষণ স্থির ভাবে তাকিয়ে থাকে ) । তুমি আমার সাথে দেখা করতে এসেছ !
মা দুর্গা: ওমা! তুই তো ডাকলি আমায় ।
বুবলা- আমি তো ভাবিইনি যে তুমি আমার কথা শুনতে পাবে ,আমার ডাকে সাড়া দেবে। আমি তো ভাবলাম তুমি রেগে যাবে আমি তোমার মন্ত্র ঠিক করে বলতে পারিনি কিনা!
মা দুর্গা: হা হা হা ! দূর বোকা ছেলে ! ওসব মন্ত্র তন্ত্র আমিও কি ছায় বুঝি। তুই কত সহজ ভাবে তোর ভাষায় মন থেকে আমায় ডাকলি তাই তো তোর প্রার্থনা শুনতে পেলাম। কত সরল ভাবে নিজের কথা গুলো বললি তাইতো এলাম তোর কাছে।
বুবলা : (আনন্দে বিস্মিত হয়ে) তাই ? সত্যি ? (হাত তালি দিয়ে) ইয়েএএএ! এবার থেকে ডাকলে আসবে তো ?
মা দুর্গা: ( বুবলার মাথায় স্নেহপরবশ হাত বুলিয়ে ) এই ভাবেই আমাকে সহজ ভাবে স্বচ্ছ- সরল মন থেকে ডাকবি, ঠিক আমার কথা শুনতে পাবি তোর মধ্যে।
(ভোরের স্নিগ্ধ আলোতে মা দুর্গা মিলিয়ে গেল। ঢাকের আওয়াজে বুবলার ঘুম ভেঙে গেল।)
বুবলা: ( ঘুম থেকে উঠে) এটা কি দেখলাম আমি? এটা কি সত্যি না স্বপ্ন! মা দুর্গা এসে আমার মাথায় হাত বলালো আমার সাথে কথা বলল। ধেৎ ! স্বপ্নই দেখেছি। এমন আবার হয় নাকি।
(এমন সময় বুবলার বন্ধু টুবলুর প্রবেশ)
টুবলু: এই বুবলা আজকে ঠাকুর দেখতে যাবি? (মুখ ভারী করে) আমার বাড়িতে সবাই এত ব্যস্ত কেউ নিয়ে যাচ্ছে না আমায়। দাদা নিজের বন্ধুদের সাথে ঠাকুর দেখতে গেল, আমায় নিয়ে গেল না।
বুবলা: কিন্তু মা কি আমাদের কি ছাড়বে একা?
টুবলু : আরে আমরা তো দূরে যাবো না। কাছাকাছি পাড়া গুলোর ঠাকুরই দেখে আসব।
বুবলা: আচ্ছা বেশ। আমি তৈরী হয়ে আসি।
(বুবলা, টুবলু,গোগল, ঘেল্টু চার বন্ধু মিলে বেরলো কাছাকাছি পাড়ার পূজা পরিক্রমায় । )
গোগল: আঃ পায়ে ব্যথা করছে । চল কোথাও একটু বসি।
টুবলু: ঠিক বলেছিস। আমারও। এই ঘেল্টুটা আর একটু চল আর একটু ঠাকুর দেখি বলে বলে এই ধুনিপাড়া পর্যন্ত নিয়ে এল। বাড়িতে জানতে পারলে হেব্বি দেবে কিন্তু।
বুবলা: আমার তো পেটে ছুঁচো দৌড়াচ্ছে । স্টল গুলো থেকে কি সুন্দর এগরোল চাউমিনের গন্ধ আসছে। কিনে যে খাব তারও উপায় নেই।
গোগল , টুবলু আর ঘেল্টু : (একসাথে ) আমারও খিদে পেয়েছে।
(এমন সময় ধুনিপাড়ার পূজা মন্ডপ থেকে ঘোষনা করা হয়- যারা যারা ভোগ নেবেন লাইনে দাড়ান। )
টুবলু: ঐ দেখ যারা ভোগ খাবে তাদের লাইনে দাড়াতে বলছে। চল লাইন দিই।
( চার বন্ধু লাইনে দাড়িয়ে ভোগ নিল। )
টুবলু: আঃ কি সুন্দর পোলাও ভোগ!
গোগল- হমম্ খেতেও বেশ।
(বুবলা ভোগ খেতে যাবে এমন সময় পেছন থেকে এক বৃদ্ধার প্রবেশ)
বৃদ্ধা : বাছা ! দুটো টাকা দেবে । সকাল থেকে কিছু খায়নি ।
বুবলা : (বৃদ্ধার মুখ দেখে মায়া হল) আমার কাছে তো টাকা নেই দিদা। ( নিজের হাতের ভোগের বাটির দিকে তাকিয়ে একটু ভেবে) তুমি এই ভোগ টা নাও বরং।
বৃদ্ধা: (বুবলার হাত থেকে হাসি মুখে ভোগের বাটি নিয়ে) বেঁচে থাকো বাবা। অনেক বড় মানুষ হও।
( ভোগের বাটি নিয়ে বৃদ্ধার প্রস্থান)
ঘেল্টু: যা তুই তোর ভোগের বাটি দিয়ে দিলি! এবার কি খাবি?
বুবলা : (মনে মনে) ও মা দুর্গা এবার আমি কি করব! ঐ দিদা খেতে চেয়েছিল বলে আমার ভোগের বাটি তাকে দিয়ে দিলাম। কিন্তু এবার আমি কি খাব?
(এমন সময় ভোগের বাটি নিয়ে এক মেয়ের প্রবেশ)
মেয়ে: ও ভাই ! এই নাও ধরো এই ভোগের বাটি।
বুবলা: এটা আমার জন্য?
মেয়ে: হ্যা তোমার জন্য। মায়ের মন্দিরে এসে কি শুধু মুখে যেতে আছে !
(বুবলা একসাথে অবাক আর খুব খুশি হয়ে ভোগের বাটি হাতে নিল। এমন সময় তার কানে কানে কেউ যেন বলল)
- " বলেছিলাম না স্বচ্ছ সরল মনে ডাকলে ঠিক আমার সাড়া পাবি।"
(বুবলা চমকে ওঠে মায়ের প্রতিমার দিকে তাকায় আর সন্ধি পূজোর ঢাক বেজে ওঠে।)
মঞ্চে আবহ সংগীত -
"আশ্বিনেতে মেঠো হাওয়া কাশের বনে
দোল দিয়ে যায়
ঢাক বাজে আর ঢোল বাজে ঐ
দশভুজার আঙিনায়।
কৈলাস হতে বাপের বাড়ী এসেছে পার্ব্বতী
সঙ্গে গনেশ কার্ত্তিক আর লক্ষ্মী সরস্বতী।
ষষ্ঠীর দিন অধিবাসের কাঁসর ঘন্টা বাজে
সপ্তমীতে কলা বউ সাজল বধুর সাজে।
আজ সেজেছে বরষ পরে আবার বসুমতী
অষ্টমীতে সন্ধি পূজার লগ্ন এলে পরে
শতক প্রদীপ জ্বেলে মায়ের বরন ঘরে করে।
শাঁখ বাজিয়ে উলু দিয়ে হোল গো আরতী
যেই নবমীর ছায়া নামে সাঁঝের আকাশ জুড়ে
সবার যেন মন ভরে যায় বিষাদেরই সুরে।
বিজয়াতে শ্বশুর বাড়ী ফিরবে ভগবতী।
ঐ শোন শোন কেঁদে বলে পূজার আঙিনা তলে
বিদায়ী বিষাদী ঢাক ;
ঠাকুর থাকবে কতক্ষন
ঠাকুর যাবে বিসর্জন।
যবনিকা পতন
