Shilpi Dutta

Romance

3  

Shilpi Dutta

Romance

বৃষ্টিতে ভেজা

বৃষ্টিতে ভেজা

3 mins
1.3K


কৃষ্ণেন্দু আর নীলার বিয়ে হয়েছে প্রায় বছর খানেক হতে চলল। নীলা একটি স্কুলের শিক্ষিকা আর কৃষ্ণেন্দু একটি সরকারী ব্যাঙ্কে চাকরী করে। বিয়েটা সম্বন্ধ করেই হয়েছিল তবে প্রথম দেখাতেই কৃষ্ণেন্দু ভালোবেসে ফেলেছিল নীলাকে এটা তার বিশ্বাস। কিন্তু নীলা যেন তাকে নিজের করে নিতে পারেনি বলে তার মনে হয়।

   বিয়ে ঠিক হওয়ার পর সে নীলাকে বলেছিল ‘আমাদের একবার একা দেখা করা উচিত, একে অন্যের পছন্দ বা অপছন্দ গুলি জেনে নিলে ভালোই হবে।’ কিন্তু নীলা রাজি হয়নি।

   তাই একে অপরের সম্বন্ধে খুব বেশী কিছুই জেনে নেওয়া হয়নি বিয়ের আগে।

    আজ রবিবার। বিয়ের পর এটাই তাদের জীবনের প্রথম বর্ষাকাল। রবিবার ছিল বলে দুজনেই বাড়ীতে ছিল। দুপুরের দিকে আকাশ কালো করে মেঘ করল আর তারপরই অঝোর ধারায় নেমে এল বৃষ্টি। কৃষ্ণেন্দু দরজার কাছে এসে দেখল নীলা একমনে একটা গল্পের বই পড়ছে। সে বলল ‘নীলা চল না বর্ষার প্রথম বৃষ্টিতে দুজনে একটু ভিজি। আমার বৃষ্টিতে ভিজতে খুব ভালো লাগে। আর তোমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজব এটাতো আমার স্বপ্ন।’ নীলা বই থেকে মুখ না তুলেই উত্তর দিল ‘আমার বৃষ্টিতে ভিজতে ভালো লাগে না।’ নীলার উত্তর শুনে সে সেখান থেকে চলে গেল।

   কিন্তু সদ্য বিবাহিত হয়েও তাদের মধ্যে এই দূরত্বের কারণ কৃষ্ণেন্দু কিছুতেই বুঝতে পারল না।     

এদিকে দুপুরে যে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল তা যেন কম হওয়ার নামই নিচ্ছিল না। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হল। কৃষ্ণেন্দু কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতে পারেনি। হঠাৎ ঘুম ভাঙতে দেখল নীলা পাশের ঘরে খুব নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। ওর ঘুম ভাঙাতে ইচ্ছা হল না তার। সে নিজেই বারান্দা থেকে নিজের জামা কাপড়ের সঙ্গে নীলার জামা কাপড়গুলিও তুলে নিয়ে এল। সেগুলি ভাঁজ করে নীলার আলমারিতে রাখতে গিয়ে হঠাৎ করে একটি পুরানো ডায়েরির দিকে নজর পড়ল তার। সে এর আগে কখনও নীলার আলমারিতে হাত দেয়নি তাই হয়ত এটি ইতিপূর্বে তার দৃষ্টিগোচর হয়নি। সে কিছুতেই তার কৌতূহল চেপে রাখতে পারল না। পাতার পর পাতা উল্টে পড়তে থাকল সে। মনে একটা অপরাধ বোধ কাজ করলেও নিজেকে কিছুতেই আটকাতে পারলনা কৃষ্ণেন্দু। একটা পাতায় নীলা লিখেছে ‘আমি তোমায় আজও ভুলতে পারিনি অর্ক, তোমার ভালোবাসা, তোমার সাথে বৃষ্টিতে ভেজা সবই যে মনে পড়ে আমার, জানি আমি বিবাহিতা এটা আমার কাছে একটা অপরাধ, কিন্তু আমি যে বড় অসহায়। তুমি যখন অসময়ে হঠাৎ করে এই পৃথিবী থেকে চলে গেলে আমাকে তোমার সঙ্গে নিয়ে গেলেই পারতে।’

   এরপর কৃষ্ণেন্দু আর পড়ল না। ডায়েরিটাকে স্বস্থানে রেখে আস্তে আস্তে গিয়ে দাঁড়াল নীলার ঘরে, বসল নীলার পাশে বিছানায়। নিজের হাত রাখল নীলার মাথায়। কৃষ্ণেন্দুর স্পর্শে জেগে গেল নীলা। কৃষ্ণেন্দু বলল ‘নীলা আমাকে ক্ষমা করে দাও, আমি লুকিয়ে তোমার ডায়েরিটা পড়েছি। আর তাই আমি তোমাকে কয়েকটা কথা বলতে চাই।’ নীলা শুধু অবাক হয়ে চেয়ে রইল কৃষ্ণেন্দুর মুখের দিকে। কৃষ্ণেন্দু বলল ‘নীলা যে মানুষটা এই পৃথিবীতে নেই তার উপর কোন রকম রাগ বা হিংসা করার মত এত ছোট মনের মানুষ আমি নই। তুমি যখন আমার জীবনে এসেছিলে আমি কোনকিছু না জেনেই তোমাকে সর্ম্পূণ ভাবে গ্রহণ করেছিলাম। তাই আজ তোমার স্মৃতিতে কেউ আছে বলে তোমাকে ভালোবাসবোনা তা হয়না। তুমি তোমার বাবা, মা, বাড়ী সব ছেড়ে এসেছ তাই বলে আমি তোমার স্মৃতিকেও ভুলে যেতে বলতে পারিনা। তুমি মনে কোন অপরাধবোধ রেখোনা।’

     নীলার যেন বহুদিন পর ইচ্ছা করল আবার কাউকে ভালোবাসতে, কারো সাথে বৃষ্টিতে ভিজতে।

    বাইরে বৃষ্টিটা যেন আরো জোরে পড়তে শুরু করল। হয়ত বৃষ্টিও অপেক্ষা করছে কৃষ্ণেন্দু ও নীলার একসঙ্গে ভেজার।   


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance