বর্ষার দিনে প্রেম
বর্ষার দিনে প্রেম
হঠাৎ!করে আমার ঘুমটা ভেঙে গেল তখন আমি আমার বেডরুমের জানালার দিকে তাকিয়ে দেখি তখন সবে সবে আলো ফুটেছে।কিন্তু তাও সব অন্ধকার মেঘে ঢাকা বাইরে অঝোরে বৃষ্টি পরছে, আমি উঠে গিয়ে বারান্দার দরজাটা খুলে বাইরে গিয়ে দেখি বৃষ্টিতে পুরো ধোয়া হয়ে গেছে চারিপাশটা।আমি আমার চোখদুটো রাস্তার দিকে ঘোরাতেই দেখলাম আমাদের সামনে একটা বিরাট বড় বটগাছ আছে,সেই গাছটার তলায় দুটো সাইকেল দাঁড়িয়ে আছে আর তার পাশে একটা ফ্ল্যাট বাড়ি আছে সেই ফ্লাট বাড়ি তলায় একটা ছেলে আর একটামেয়ে ছাতার তলায় বসে আছে। আমি আরো উৎসাহ নিয়ে দেখতে গেলাম কি ছেলে আর মেয়েটা কি করছে একটু ঝুঁকতেই দেখতে পেলাম ছেলেটার কাঁধে মেয়েটা নিজের মাথা রেখেছে আর তার ভিজে চুলটা ছেলেটার পিঠে এলিয়ে দিয়েছে তারা দুজনে হাত ধরে চুপিসারে এই বৃষ্টির মধ্যে নিজের মনের কথা গল্প করছে সেই দেখে হঠাৎ করে আমার কি জানি মনে হল, আমি বারান্দা থেকে চলে এলাম আর আমার খাটের সামনে রাখা পড়ার টেবিল থেকে ডায়েরী টা উঠিয়ে নিয়ে কিছু একটা লিখতে বসলাম। প্রথমে লিখলাম ------,আজকের তারিখ ছয়ই আগস্ট 2020 তার নিচে লিখলাম আজকের রচনা ভূমিকা আজকে আমার ভূমিকা হল "বর্ষাকালের প্রেম"।
এই ধরুন বর্ষাকালের দিনে আমি আপনি বা আমাদের মা জেঠিমামারা কি করতে পারেন গরম গরম পিঁয়াজি বেগুনি ভেজে মুড়ির সঙ্গে মেখে নিয়ে গরম গরম চায়ে চুমুক দিয়ে আশে পাশের বাড়ির বৌদের নিয়ে গল্প করা। কিন্তু আমি বা আমার বয়সী ছেলেমেয়েরা কিন্তু তা করবে না তারা তাদের বন্ধুদের সঙ্গে তাদের বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে গল্প করতে চাইবে চাইবে।এই প্রচন্ড বর্ষা মুখর দিন একটা ছাতার নিচে হাত ধরাধরি করে গল্প করতে কিংবা পার্কের মধ্যে বসে ছাতার তলায় ভুট্টা খেতে কিংবা একটা সিনেমা হলে গিয়ে পপকন নিয়ে দুজনে একে-অপরের কাঁধে মাথা রেখে। একটা প্রেমের সিনেমা দেখা কিন্তু সেটা সব সময় তো সম্ভব হয়না সবার পক্ষে তাই এখনকার নতুন প্রজন্মের প্রেমিক-প্রেমিকারা বেছে নিয়েছে তাদের জন্য একটা গল্প বলার জায়গা সেটা হল হোয়াটস্যাপ কিংবা ফেসবুক।তাই আজকের বর্ষার দিনে প্রেমিক-প্রেমিকারা কফি আর ডিমের ওমলেট নিয়ে নিজের প্রেমিক প্রেমিকাদের সঙ্গে গল্প করে অথচ এই প্রজন্মের নতুন অ্যাপ গুলো কে কিছু সংখ্যক ছেলে মেয়েরা নিজের করে গ্রহণ করতে পারেনি তার উদাহরণ হল আমার দেখা সেই সকাল বেলা ফ্লাট বাড়ির তলায় বসে থাকা।সেই ছেলে মেয়েটা আমার মনে হল যে বর্ষার দিনে প্রেম কিভাবে হয় সেই বিষয়ে কিছু লেখা যায় আমাদের মা-বাবা তার সময়ের প্রেম আর এই যুগের প্রেমের অনেক তফাৎ আছে যেমন এই বর্ষার দিনে তারা যখন দেখা করতো সেই দেখা করার মধ্যে ছিল একটা অদ্ভুত ধরনের ইচ্ছা আর উৎসাহ সেই দেখা করার ইচ্ছাটা আরো প্রবল হয়ে উঠত যখন তাদের মনে হচ্ছে এই বর্ষা বাদলের দিনে কি করে আমি আমার কাছের মানুষের কাছে গিয়ে পৌঁছাব তার সঙ্গে দেখা করব তার হাত ধরে দু একটা কথা বলব গরম গরম মাটির ভাঁড়ে চা খাবো।
কিন্তু এখনকার প্রজন্ম কফি আর ফেসবুক সঙ্গে করে নিজের প্রেমিকের সঙ্গে কথা বলে বর্ষার দিনে খিচুড়ি আর ইলিশ মাছ ভাজা আর তার সঙ্গে পাশে বসে থাকা প্রিয় মানুষটার সঙ্গে কথা বলতে বলতে খাওয়ার মজা আলাদাই ছিল। বর্ষার দিনে চোখে চোখ রেখে গান গাওয়া যেমন আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে বৃষ্টির সুবাস বাতাস ধেয়ে এই সুন্দর বাতাসে বৃষ্টির গন্ধ আজ মেঘলা আকাশের প্রভাব প্রেমিক-প্রেমিকাদের মনে এতটাই আবেগপূর্ণ হয়ে ওঠে যে তারা এই বৃষ্টি মাথায় করে নিয়ে নিজের প্রেমের কথা বলে।কিছু সংখ্যক প্রেমিক-প্রেমিকারা একটু আড়ালে আবডালে প্রেম করতে ভালোবাসে আবার যখন বাইরে অঝোর কালো মেঘ করে বৃষ্টি পরছে তারা চায় তাদের প্রেমটা সবার দৃষ্টিতে না পড়ে অথচ তারা নিজেদের প্রেমে মগ্ন হয়ে ভালোবাসার কথা বলতে পারে তাই তারা বর্ষার দিনে নিজেদের বাড়িতে থেকে ফোনে প্রেম নিবেদন করে আবার কিছু সংখ্যক প্রেমিকেরা চায় শুধু তার প্রেমিকার চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু না কথা বলে অনেক কথা বলা তেমনই একজন প্রেমিক-প্রেমিকাকে আমি জানি আমার বন্ধু মধুরিমা আর তার হবু স্বামী শেখর তারা যখন কোথাও যেত আমাদের সঙ্গে আমি দেখতাম একটু দূরে একটা গাছের তলায় দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু তারা কোনো কথা বলছে না শুধু একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে আর মনে হচ্ছে না পিছনে কোন ব্যাকগ্রাউন্ড রোমান্টিক মিউজিক চলছে কি অসহ্য লাগতো আমার জন্য এই বর্ষার দিনে প্রেম অনেকটাই আলাদা আমার তো কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই তাই আমি বর্ষার দিনে একটা কফি নিয়ে আর আমার সবথেকে প্রিয় বই সঞ্চিতা নিয়ে একা বারান্দায় বসে পড়ি আমার সঞ্চয়িতার মধ্যে সবথেকে প্রিয় কবিতা টা হল
রবী ঠাকুরের ;
"আমি"
আমারই চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ,
চুনি উঠল রাঙা হয়ে।
আমি চোখ মেললুম আকাশে -------
জ্বলে উঠলো আলো
পূবে পশ্চিমে।
গোলাপের দিকে চেয়ে বললাম 'সুন্দর' -----
সুন্দর হল সে।
বর্ষাকালের তিনি যেমন ময়ূর পেখম তুলে নাচে তেমনি এই সকালে কালো মেঘের নিচে বসে থাকা প্রেমিক-প্রেমিকাদের দল সব দৃষ্টিকটু ভুলে নিজেদের মধ্যে প্রেম ভালোবাসার ভাব বিনিময় আদানপ্রদান করেl বর্ষাকালে কিছু প্রেমিকের ভালোবাসার অর্থ একটু বেশি গভীর হয়ে ওঠে তারা বর্ষার এই মেঘলা দিনে জনহীনশূন্য রাস্তায় তাদের প্রেমিকার কপালে গালে চুম্বন দিতে পছন্দ করে তারা ভাবে এভাবে বর্ষার দিনে প্রেম করলে তাদের প্রেমে সমুদ্রের জলের মতো আরো গভীরতম হয়ে উঠবে কিন্তু সেটা মোটেও হয়ে ওঠে না যখন কোন পথিকের আনাগোনা শুরু হয় ওই রাস্তায় বর্ষাকালের প্রেমিক-প্রেমিকারা আরো রোমান্টিক হয়ে ওঠে আর তাদের পছন্দের মানুষকে কবিতা শোনাতে শুরু করে ;
শুধু বিধাতার সৃষ্টি নহ তুমি নারী!
পুরুষ গড়েছে তোরে সৌন্দর্য সঞ্চারি
আপন অন্তর হতে।
শুধু যুবক-যুবতীরা নয় অনেক বয়স জ্যেষ্ঠ মানুষেরাও প্রেম- ভালোবাসায় মত্ত থাকে যদিও তারা নিজেদের জীবন সঙ্গিনীর সঙ্গে এই বর্ষার দিনটা কাটায় কিন্তু তবুও এই দিনের মাহাত্ম্য টা তাদের কাছে অনেক যুবক যুবতীর থেকেও বেশি কারণ তারা তাদের আপনজনের সেবা-শুশ্রূষা ও ভালোবাসা পায় এই কথা বলতে গিয়ে আমার হঠাৎ একটা গান মনে পড়ল,
একটুকু ছোঁয়া লাগে!
একটুকু কথা শোনো;
তাই দিয়ে মনে মনে,
রচি মম ফাল্গুনী।
বর্ষাকালের প্রেমের ছোঁয়া সবার উপরে এতটাই প্রভাব ফেলে যে সেই প্রভাব অনেকদিন থেকে যায় কিন্তু সবার প্রভাব চলে গেলেও কিছু রসিক মানুষের উপর প্রভাব বিস্তীর্ণ থেকে যায় সেই রসিক মানুষ এরা হলো কবি সেই রসিক মানুষের মধ্যেও আমিও এক কবি কিন্তু আমার রসিকতা ও রোমান্টিক স্বভাবটা অনেক কবি থেকেই আলাদা আমি কবি মানুষটাই অনেক আলাদা আমার রোমান্টিক কথা হল বর্ষার দিনে কোন এক রোমান্টিক গল্প লেখা বা কবিতা লেখা এই নিয়েই আমি সুখে থাকি সুখে আছি সুখে থাকবো আমি আমার আজকে রচনা শেষ করলাম আমার গল্প ফুরালো নটে গাছটা মুড়ালো।