বড়দিনের উপহার
বড়দিনের উপহার
পাহাড়ের গায়ে পুরো শহরটা আলোয় আলোয় সেজে উঠেছে। আকাশ দূষণ মুক্ত, তাই বহুদূরের পাহাড়ের গায়ের আলো গুলোও দেখা যাচ্ছে। রঙিন কাগজ ফুল আর আলোয় সাজানো ম্যাল রোডে এতক্ষণ চলেছে উৎসব।এবার সবাই চার্চের পথে যাচ্ছে। আর একটু পরেই জন্ম নেবে প্রভু যিশু। সব বাড়ির সামনে ছোট খ্রিষ্ট-মাস ট্রি আর খামারে জন্ম নিচ্ছে প্রভু যিশু। ঠাণ্ডাটাও বেশ জব্বর পড়েছে এবার।
জন ওর ছোট্ট মোমবাতির দোকানটা একটু আগেই বন্ধ করেছে। এবার ওর প্রিয় লাল পোশাকটা পরে বড় ব্যাগটা কাঁধে নেয়। সাদা দাড়ি গোঁফটা ঠিক করে সব দেখে নিয়ে পিছনের রাস্তাটা দিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলে। পাহাড়ের ঢালে সার সার ঘর। বেছে বেছে কিছু ঘরের দরজায় বা জানালায় ও ছোট ছোট উপহারের প্যাকেট নামিয়ে রাখে।
এ পথের শেষে একটা ছোট্ট অনাথ আশ্রম আছে। একুশটা বাচ্চা থাকে।
গেটটা খোলার সময় ক্যাঁচ করে একটু আওয়াজ হয়। কি সুন্দর খ্রিষ্ট-মাস ট্রি সাজিয়ে রেখেছে বাচ্চা গুলো!! একুশটা উপহার গাছের ডালে আর নিচে সাজিয়ে দেয় সান্টাক্লজরূপী জন। বেরিয়ে যাওয়ার পথে আবার একটু আওয়াজ।
অনাথ আশ্রমের দারোয়ান ঘুম চোখে দেখে একটা লাল পোশাক পরা লোক চলে গেল। এমন প্রতিবার হয়।
পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নিচে নামে জন। ছোট্ট কাঠের বাড়িটা আলো আর রঙ্গিন কাগজে সেজে উঠেছে। কয়েকটা উপহার রাখতে গিয়েই দরজায় খুট করে শব্দ। ছোট্ট এলিস বেরিয়ে আসে দু চোখে বিস্ময় নিয়ে!! সান্টা এসেছে তাদের বাড়ি!! কথা খুঁজে পায় না ছোট্ট মেয়েটা। বাবা মা গেছেন চার্চে। ছোট ভাইটা ঘুমাচ্ছে। এলিস জানত আজ ঠিক সান্টা আসবে। তাই জেগে বসেছিল। মাঝে মাঝে কাচের জানালা দিয়ে দেখছিল বাইরেটা।
কেকের বাক্সটা এলিসকে দিয়ে জন এগিয়ে যায়, আর দুটো বাড়ি যেতে হবে।
ভোর রাতে ক্লান্ত জন বাড়ি ফেরে। মারিয়া গরম কফি করে আনে। বাইরে পেঁজা তুলার মত তুষার পাত শুরু হয়েছে। জনের লাল আলখাল্লায় তুষারের গুড়ো। মারিয়া সযত্নে ঝেড়ে তুলে রাখে। এরপর বড় কেক আর একটা খেলনা নিয়ে দু জনে যায় পাশের ঘরে সাজানো খ্রিষ্ট-মাস ট্রি টার কাছে। উপহার রেখে একটা বড় মোম ধরায়। সামনের দেওয়ালে বছর সাতের ছোট একটা ছেলের ফটো। মনে হয় সে হাসছে। গত ছয় বছর ধরে এভাবেই জন আর মারিয়া বছরের এই বিশেষ দিনটি পালন করে। ছয় বছর আগে একটা ছোট্ট দুর্ঘটনায় তাদের ছেড়ে চলে গেছিল ছোট্ট ঋকি। ছেলেটার স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে রয়েছে এখন ওরা। প্রতিটা গরীব বাচ্চাকে খেলনা কেক আর মোজা দিয়ে আসে জন। সারা বছর রোজগারের বেশির ভাগটাই ওরা আলাদা করে জমায় এজন্য। ঋকি যে সান্টার দেওয়া উপহারের আশায় সারা বছর পাগল থাকত। দিন যত এগোত ওর উৎসাহ বাড়তও। সুন্দর করে খ্রিষ্ট-মাস ট্রি সাজাত। ঘর সাজাত মায়ের সাথে। জনের সাথে টুনি বাল্ব লাগাত।
বড়দিনের আগেই চলে গেছিল ছেলেটা। কিন্তু ওরা দুজন দুঃখ করে না। প্রভু যিশুর কাছে খুব শান্তিতে রয়েছে ঋকি। এই যে অনাথ বাচ্চা গুলো, গরীব বাচ্চা গুলো এদের মাঝেই ঋকিকে খোঁজে ওরা। ওদের মুখের হাসির সাথে যে ঋকির হাসির অদ্ভুত মিল।
আর ঋকির চোখদুটো এখনো বেঁচে আছে এলিসের মধ্যে। ছয় বছর আগে ঋকির চোখটা ওরা দান করেছিল ঐ বাচ্চাটাকে। চোখ দুটো ওদের দেখলেই হাসে সর্বদা।