বোকা বাঁদরের গল্প
বোকা বাঁদরের গল্প
আমরা সবাই ছোটোবেলায় বাদর আর কুমীরের গল্প পড়েছি। যেখানে কুমীরের লোভী বৌ বাদরের কলিজা খেতে চেয়েছিল ভেবেছিল সেটি খুব সুস্বাদু হবে। গল্পের বাদর খুব বুদ্ধিমান ছিল সে নিজের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে তার কলিজা খাওয়ার সুযোগটাই দেয়নি কুমীরকে। কিন্তু আমার গল্পের বাদর অতো বুদ্ধিমান নয় সে নিজেই নিজের কলিজা দান করে আমার গল্পের নামকরনের স্বার্থকতা বজায় রেখেছে।
তো এবার আসা যাক আমার গল্পের বাদরের পরিচয়ে, তার কোনো লম্বা লেজও নেই সে গাছে গাছে ঘুরেও বেড়ায় না। সে আমার আপনার মতোই মানুষ ওর নাম সুজিত। ফর্সা লম্বা রোগাপাতলা চেহারার ছেলে সুজিত। খুবই সরল নম্র স্বভাবের ছেলে ও। এবার বলি আমার সাথে পরিচয় কীভাবে ওর, আমরা একই কলেজে একই ডিপার্টমেন্টে পড়তাম। আমাদের ছজনের গ্রুপে সুজিতও একজন মেম্বার ছিল। সুজিতও বন্ধু হিসেবে আমাকে খুব পছন্দ করতো অনেক কথা শেয়ার করতো।
সুজিতদের চারজনের ছোটো সংসার, মা বাবা দিদি আর ও। একদিন হঠাৎই ওর বাবার চাকরিটা চলে যায় মানসিক অবসাদে ভুগতে ভুগতে উনি খুবই অসুস্থ হয়ে পরেন। তখন সুজিত একটা কল সেন্টারে কাজ শুরু করে, আর মা দিদিও টুকটাক কাজ করছিলেন, কোনোরকমে চলছিল সংসার।
এরই মধ্যে গল্পে কুমীরের এন্ট্রি হল। সুজিতের ফেসবুকে তার সাথে আলাপ, নাম রিমা। প্রোফাইল পিকটা দেখেই ও প্রেমে পড়েগেছিল ওর। তারপর থেকে হাই হ্যালো আরও কথা শুরু হল। রিমাকে অনেকবারই সুজিত ইঙ্গিত দিয়েছিল যে সে ওকে পছন্দ করে কিন্তু রিমা হয়তো বুঝেও না বোঝার ভান করতো। কারন সুজিতও ছিল আর ৫টা ছেলের মতোই ওর কাছে টাইম পাস। সুজিতদের পাড়াতেই রিমার পিসির বাড়ি ছিল, চ্যাটিং করতে করতে এটাও জানতে পাড়ল ও। তারপর যখন পিসির বাড়ীতে আসত রিমা দেখাও হত সুজিতের সাথে। সুজিতের জীবনে এতো প্রবলেমের মাঝেও রিমার সাথে কথা ওকে অনেক স্বস্তি দিতো। তারপর কিছুদিন রিমা ফেসবুকে অন হচ্ছিল না ওই কারনে সুজিতের ওর সাথে চ্যাটিংও হচ্ছিল না, মনটাও খারাপ ছিল ওর চিন্তাও হচ্ছিল কিছুটা ।এরই মধ্যে রিমার পিসির মেয়ের সাথে সুজিতের দেখা হয় তখন ও জানতে পারে রিমা হাসপাতালে ভর্তি। ওর চোরা জন্ডিস হয়েছিল যার জন্য ওর লিভারটা পুরো ড্যামেজ হয়ে গেছে। সুজিত তো শুনেই নিজেকে আর সামলাতে পারলো না হাসপাতালে চলে গেলো ওকে দেখতে, গিয়ে জানতে পারলো যে রিমার লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করতে হবে কিন্তু কোনো ডোনার পাওয়া যাচ্ছে না। রিমার বাবা ৫৫ ঊর্ধ্ব আর মা ডায়াবেটিসের রোগী তো তারাও দিতে অক্ষম আর তাদের তেমন অর্থবলও নেই যে ডোনারকে অনেক অর্থ দিতে পারবে। তো অগত্যা সুজিত ডোনার হতে চাইল, ওর সমস্তকিছু টেস্ট করা হল, ভাগ্যবশত ম্যাচ করেও গেল। তারপর অপারেশন হল, রিমাও সুস্থ হয়ে বাড়ীও চলে গেল। সবাই খুব ধন্য ধন্য করল সেই সময়ে সুজিতের এই অবদানকে।
ট্রান্সপ্লান্টের পর ডোনারকে অনেক কিছু মেনে চলতে হয়। কিন্তু অভাবের সংসার ওর উপর সব দায়িত্ব কত মেনে চলবে। ওর ও বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে লাগল লাস্টে ওর লিভারে একটা ইনফেকশন ধরা পড়ল। ডাক্তার পুরোপুরি ওকে রেস্ট নিতে বলল। তো এরই মধ্যে একদিন রিমার বাবা সুজিতদের বাড়িতে এলেন হাতে বিয়ের কার্ড। রিমার বিয়ে, অসুস্থতার আগেই নাকি সব ঠিকঠাক ছিল শুধু বিয়ের ডেটটা ফিস্কড হয়নি। তো এখন রিমা অনেকটাই সুস্থ তাই ছেলের বাড়ির লোক আর দেরি করতে চায়না। মূহুর্তের মধ্যেই যেন লিভার থেকে ইনফেকশন হার্ট অব্দি ছড়িয়ে পড়ল সুজিতের যে ক্ষত কতদিনে সাড়বে তা কারোর জানা নেই।
