বংশানুক্রমিক
বংশানুক্রমিক
সুশীল হাসপাতালের করিডরে এদিক ওদিক পায়চারি করছে। খুব টেনশন হচ্ছিল তার। স্ত্রীকে অপারেশনের জন্য ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাইরে সুশীলের সঙ্গে বাবা মা শ্বশুর শাশুড়ি রয়েছে। সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
বেশ কিছু সময় পর ডাক্তার বেরিয়ে এলেন। ডাক্তার ছিলেন একজন মহিলা। তার পেছনে পেছনে একজন নার্স বেরিয়ে এলো। কিন্তু সে না দাঁড়িয়ে পাশ দিয়ে বেরিয়ে চলে গেল। সুশীল গিয়ে ডাক্তার ম্যাডামের কাছে দাঁড়াতে তিনি দাঁড়িয়ে পড়লেন।
'এখন ভয়ের কিছু নেই, ছেলে হয়েছে।' ডাক্তার বললেন।
এই খবর শুনে খুশি হলো সুশীল। সে বলল,' ধন্যবাদ ম্যাডাম।'
'একটু পরে আপনার স্ত্রী আর ছেলেকে বেডে দেওয়া হবে। তখন আপনারা দেখা করতে পারবেন।' ডাক্তার এই কথা বলে সেখান থেকে বেরিয়ে গেলেন।
এই খবর শুনে সুশীলের বাবা-মা শ্বশুর-শাশুড়ি সকলেই খুশি হলেন। সবার মুখে খুশির হাসি ফুটে উঠেছে। সুশীল অপেক্ষা করতে লাগলো কখন তার স্ত্রী আর ছেলেকে দেখতে পারবে সেই কথা ভাবতে
ভাবতে। তাদের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে কিছু সময় পর এক নার্স এসে দাঁড়ালো তাদের কাছে। সে খবর দিল,' আপনারা এখন মা-ছেলে দু'জনকেই দেখতে পারেন। তবে এক এক করে যাবেন। তবে আপনি আগে যান।' শেষের কথাটা সুশীলের দিকে তাকিয়ে বলল নার্স। এই কথা শুনে সুশীল বেশ আনন্দিত হলো। বাকিদের ওখানে বসিয়ে রেখে সে এগিয়ে গেল যে রুমে ওদের রাখা হয়েছে সে দিকে।
ভিতরে যাবার আগে দরজার মুখে দাঁড়িয়ে সুশীল দেখতে পেল তার স্ত্রী আর ছেলে শুয়ে আছে বিছানায়। সে এগিয়ে গেল বেডের দিকে। ফুটফুটে বাচ্চাটা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে মায়ের পাশে। সুশীলের দিকে তাকিয়ে একটু হাসল তার স্ত্রী। বাচ্চাটার ছোট্ট পা দুটি স্পর্শ করল সুশীল। অন্য এক অনুভূতি লাভ করল সে। তার স্ত্রী হয়তো তার আগেই সেই অনুভূতি পেয়ে গেছে।
সুশীলের জন্মের পর ওর মা বাবাও হয়তো এরকম কিছু অনুভব করেছিল। সব মা বাবাই সেটা অনুভব করে হয়তো বংশানুক্রমিক। এখন এই নবীনতম পিতা মাতার চোখে মুখে ফুটে উঠেছে তারই বহি:প্রকাশ, খুশির ঝলক।