STORYMIRROR

অন্য পুরুষের গল্প

Romance Thriller Others

3  

অন্য পুরুষের গল্প

Romance Thriller Others

""" বনমালী তুমি পরজনমে হইও রাধা """

""" বনমালী তুমি পরজনমে হইও রাধা """

15 mins
397

“গোঠের রাখাল, বলে দে রে কোথায় বৃন্দাবন।

যথা, রাখাল–রাজা গোপাল আমার খেলে অনুক্ষণ।।

যথা দিনে রাতে মিলন–রাসে চাঁদ হাসে রে চাঁদের পাশে,

যার পথের ধূলায় ছড়িয়ে আছে শ্রীহরি–চন্দন।

যথা কৃষ্ণ–নামের ঢেউ ওঠে রে সুনীল যমুনায়,

যার তমাল–বনে আজো মধুর কানুর নূপুর শোনা যায়।

আজো যাহার কদম ডালে বেণু বাজে সাঁঝ–সকালে, নিত্য লীলা করে যথা মদন–মোহন...”


আমার এই গল্পের পটভূমি হলো এই বাংলার এই অখ্যাত গ্রাম কুসুমপুর... অখ্যাত বললাম এই কারণে ইতিহাসের পাতায় এই গ্রামের নাম উঠে আসেনি... একইভাবে বাংলা সাহিত্যের পাতাতেও সে ব্রাত্য রয়ে গিয়েছে... আজ অবশ্য আমার এই গল্পের পটভূমি এই কুসুমপুর... ভারতের সীমান্তে অবস্থিত এই কুসুমপুরে একসময়ের জমিদার ছিলেন দুর্গেশ নারায়ন সিংহরায়... বিশাল জমিদারী এলাকা... বিরাট জায়গা নিয়ে এই জমিদার বাড়ি... এখন অবশ্য সব ভগ্নপ্রায়...

-----------

জমিদার পরিবারের বর্তমান প্রজন্ম বলতে বিকাশ সিংহরায় কলকাতাতে থাকেন... উনি ব্যবসা করেন... ওনার একমাত্র সন্তান ১৮ বছরের সুদর্শন যুবক বিমান সিংহরায় এই বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে কয়েকদিনের জন্য বাপ-ঠাকুরদার জমিদারী দেখতে এসেছে... এখানে তারসাথে আছে এইগ্রামের ছেলে রাজু...

গ্রাম বাংলার শস্যশ্যমলা সবুজের সমারোহ দেখে মনের মধ্যে একটা সুর বেজে ওঠে... এই মনমাতানো প্রাকৃতিক রূপ দেখে কাজে মন বসে না... দক্ষিণা বাতাসে আত্মহারা হতে ইচ্ছে করে... ক্ষেতের ওই ধানের শিষের হারিয়ে যেতে প্রাণ কাঁদে... গ্রীষ্মের প্রবল দাবদাহে ওই তরুতলে বাদলদিনে জল-কাদায় একাকার... শরতে কাশ ফুলের রঙের বাহারে মন চলে যায় কোন সুদূরে... হেমন্তের ডাকে পাকা ধানে মাঠঘাট ভরে ওঠে... কাক ডাকা শীতের ভোরের আলোর ঝলকানি... বসন্তের আহবানে গ্রাম বাংলা প্রাণ ফিরে পায়...


“উফফফ বিমানদা... এবার ছাড়...”

“কেন রে তোর কি আরো ভাতার আছে নাকি...”

“এই দ্যাখো তোমার কামের দাগ আমার সারা শরীরে...”

“ওরে ভালোবাসার দাগ...”

“ধ্যুর... কলকাতায় গেলে আমাকে তো ভুলে যাবে...”

“কেন রে... আমি কি এখানে মাঝেমাঝে এসে তোর শরীরের খিদে মেটাই না...”

“মেটাও তো...”

বিছানায় উলঙ্গ দুটো কমবয়সী নগ্ন শরীর দুইজনকে জড়িয়ে ধরে... জ্বলে ওঠে কামের আগুণ... নেমে আসে বীর্যেরধারা...


“আমি কি সুখে লো গৃহে রব

সখী গো,

আমার শ্যাম হলো যদি যোগী

ওলো সখী আমিও যোগিনী হবো।

আমি যোগিনী হব,

শ্যাম যে তরুর তলে বসিবে লো ধ্যানে

সেথা অঞ্চল পাতি’

বাঁশির শব্দে বিছানা থেকে উঠে জানলার কাছে আসে বিমান... আপন মনে বলে

“কে আকুল করছে আমার মন...”

“এই বিমানদা... উলঙ্গ হয়ে উদাস মনে জানালাতে দাঁড়িয়ে কি ভাবছ...”

“এতো সুন্দর বাঁশি কে বাজাচ্ছে রে?”

“কেন? প্রেমে পড়লে নাকি...”

“এই তুই থাম... কে বাজাচ্ছে বল না...”

“পাশের গ্রামে থাকে... নাম কমল... বাবার অনেক জমিজিরেত আছে... কিন্তু বাবা-মা এখন মারা গিয়েছে... সারাদিন এদিকওদিক ঘুরে বেড়ায়... বাঁশি বাজায়...”

“ওহ... তা রোজ চলে কিভাবে?”

“ওই তো ভাগচাষীরা ভাগের হিসাব দিয়ে যায়... তাই দিয়েই চলে যায়...”

“আহা রে...”

“বেশী নজর দিও না কিন্তু...”

“কেন আমাকে কি গিলে খাবে?”

“না সেটা না... তবে একটু মেয়েলী স্বভাবের...”

“এই চল তো একবার দেখি গিয়ে...”

“আমাকে ছেড়ে এখন ওই কতির পেছনে দৌড়বে...”

“তুই থামলি...”

সংকোচে জানাই আজ: একবার মুগ্ধ হতে চাই। তাকিয়েছি দূর থেকে। এতদিন প্রকাশ্যে বলিনি। এতদিন সাহস ছিল না কোনো ঝর্ণাজলে লুণ্ঠিত হবার - আজ দেখি অবগাহনের কাল পেরিয়ে চলেছি দিনে দিনে …”

----------

বিমান আর রাজু জমিদার বাড়ি থেকে বেরোয়... উদ্দেশ্য সেই বাঁশিবালককে খুঁজে বের করা… বাঁশির সুর মিলিয়ে যাবার আগে দুইজনে হাঁটার গতি বাড়ায়… কিছুক্ষণ বাদে দেখা মেলে আদুল গায়ে নদীপাড়ে বসে থাকা সেই ছেলের… গৌরবর্ণ গায়ের রঙ… টিকালো নাক… টানাটানা চোখ… সেই চোখের দিকে তাকিয়ে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে… বিমান একমনে তাকিয়ে আছে সেই ছেলেটার দিকে… এই সারল্য, এই লালিত্য,‌ এই মায়াময় অহবান… কিভাবে প্রত্যাখ্যান করবে সে…

“জানি, পুরুষের কাছে দস্যুতাই প্রত্যাশা করেছো। তোমাকে ফুলের দেশে নিয়ে যাবে ব’লে যে-প্রেমিক ফেলে রেখে গেছে পথে, জানি, তার মিথ্যে বাগদান হাড়ের মালার মতো এখনো জড়িয়ে রাখো চুলে।”

“এই যে রসের নাগর... একমনে ওই কতির পানে তাকিয়ে কি দেখছ?”

“দেখছি এই শরীরের রূপ, রস… একটা মনমাতানো গন্ধ পাচ্ছি… একটা অদৃশ্য নগ্নতা… এই নগ্নতা কখনো শৈল্পিক কখনো না পতন…”

“এবার আমার কি হবে… আমাকে কে ভোগ করবে…”

“একটা আগ্রাসী আচরণ আছে কিন্তু নেই দম্ভ… আছে আকর্ষন আছে আকাঙ্ক্ষা... আছে একটা মাদকতা...” “আজ যদি বলি, সেই মালার কঙ্কালগ্রন্থি আমি ছিন্ন করবার জন্য অধিকার চাইতে এসেছি? যদি বলি আমি সে-পুরুষ, দ্যাখো, যার জন্য তুমি এতকাল অক্ষত রেখেছো ওই রোমাঞ্চিত যমুনা তোমার?”

“কি সব বলছ?”

“জানিস রাজু... এই সমাজ বলে পুরুষ শরীর নিয়ে একটা পুরুষকে মাততে নেই... সেটা অন্যায়... তুমি প্রেমিক হলে তুমি বিকৃতকাম... তোমার মনের হাজারো কথা নিয়ে থাকো নীরব পটচিত্র হয়ে...”

“ধ্যুর আমি এতো সব মানিনা...”

“আমিও মানি না রাজু... আমার ইচ্ছে আমার প্রেমিক পুরুষের হাতে হাত ধরে ঘুরব... ছবি তুলব... দাঁড়াব একটা খোলা আকাশের নিচে যেখানে বাতাস মুক্তির কথা বলে... চাঁদ এসে কানেকানে বলে যায় পুরুষ সৌন্দর্য্যের মোহে পাগল হতে দ্বিধা করো না... কারণ সেটা সুন্দরের অপমান...”

“শোনো, আমি রাত্রিচর। আমি এই সভ্যতার কাছে এখনো গোপন ক’রে রেখেছি আমার দগ্ধ ডানা; সমস্ত যৌবন ধ’রে ব্যধিঘোর কাটেনি আমার। আমি একা দেখেছি ফুলের জন্ম মৃতের শয্যার পাশে বসে, জন্মান্ধ মেয়েকে আমি জ্যোস্নার ধারণা দেব ব’লে এখনো রাত্রির এই মরুভুমি জাগিয়ে রেখেছি।”

বাঁশি একপাশে রেখে শুধু গামছা পরে সেই ছেলেটা নদীতে নামল... নদী জলে একটা মাতাল তরঙ্গ উঠল... সেই ছেলেটার বয়ঃসন্ধির লোমে ভরা পা দুটো আস্তেআস্তে জলে নিমজ্জিত হচ্ছে... প্রাণের সখার লাজুকতায়, গন্ধে শাপলা ফুল কোথায় একটা লুকিয়ে পড়ল... মাছরাঙা হটাৎ পালিয়ে গেল সে কোথায় একটা... নির্মদে, সেই মাতাল করা দেহটাকে ধীরে ধীরে জলের স্তর গ্রাস করছে...

“দ্যাখো, সেই মরুরাত্রি চোখ থেকে চোখে আজ পাঠালো সংকেত -

যদি বুঝে থাকো তবে একবার মুগ্ধ করো বধির কবিকে;

সে যদি সংকোচ করে, তবে লোকসমক্ষে দাঁড়িয়ে তাকে অন্ধ করো,

তার দগ্ধ চোখে ঢেলে দাও অসমাপ্ত চুম্বন তোমার…

পৃথিবী দেখুক, এই তীব্র সূর্যের সামনে তুমি সভ্য পথচারীদের আগুনে স্তম্ভিত ক’রে রেখে উন্মাদ কবির সঙ্গে স্নান করছো প্রকাশ্য ঝর্ণায়।”

আজ সকালে থেকেই মনটা আনচান করছে... আসলে আজ দুইদিন সেই ছেলেটার বাঁশির আওয়াজ শুনিনি... ছেলেটাও কোথায় একটা বেপাত্তা...

“এই বিমানদা... আমি জানি তুই প্রেমে পড়েছিস...”

“জানি না রে রাজু... কিছুতেই মন বসছে না... কিছুই ভালো লাগছে না...”

“এবার দেখা পেলে প্রেম নিবেদন করেই ফেল... দেরী করিস না...”

“কি জানি...”

“ফুটিল মানস মাধবী কুঞ্জে,

প্রেম কুসুম পুঞ্জে-পুঞ্জে,

মাধব তুমি এসো হে

হে মধু পিয়াসী, চপল মধুপ

হৃদে এসো, হৃদয়ে এসো হে

নীল মাধব তুমি এসো হে।”

“এই বিমানদা... এই রসের নাগর... তোর প্রেম তোকে বাঁশি বাজিয়ে ডাকছে...”

বিমান ছুটে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়... রাজুও পেছন পেছন যায়... জমিদার বাড়ির গেটে এসে বিমান দেখে ছেলেটা বাঁশি বাজাতে বাজাতে হাঁটছে... বিমান মন্ত্রমুগ্ধের মতন পেছনে পেছনে যায়...

“তুমি আসিলে না বলি শ্যামরাই

অভিমানে ফুল লুটায় ধূলায়,

মাধব তুমি এস হে,

নীল মাধব তুমি এস হে,

বনমালী বোনে বনফুলহার

হায় শুকাইয়া যায় আঁখিজলে তার

জিয়াইয়া রাখি কত আর,

বনমালী বোনে বনফুলহার।”

“এই বিমানদা... যা গিয়ে বল...”

হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বলে রাজু... কিন্তু বিমানের কোন কথাই কানে ঢুকছে না... সে কেমন একটা মন্ত্রমুগ্ধের মতন তাকিয়ে আছে তার কল্পনার ছবির দিকে...

“এস গোপন পায়ে,

চিতচোর, এস গোপন পায়ে

যেমন নবনী চুরি ক’রে খেতে,

সেই শ্যাম সেই গোপন পায়ে,

চিতচোর, এস গোপন পায়ে”

“আরে বাবা ও তো চলে যাচ্ছে... এই বিমানদা... এই বিমানদা... আরে চলে যাচ্ছে... কিছু বলো...”

“না হয় নুপুর খুলিয়ো

শ্যামের যমুনার ক্ষীরনীরে,

বাঁশরির তানে না হয় লহরী না তুলিও,

না হয় নুপুর খুলিয়ো”

ছেলেটা ধীরে ধীরে বাঁশি বাজাতে বাজাতে এগিয়ে যায়... বিমানের পা যেন আটকে গিয়েছে... সে আর এগোতে পারে না...

“যেমন নীরবে ফোটে ফুল,

যেমন নীরবে রেঙ্গে ওঠে

সন্ধ্যাগগন ফুল

যেমন নীরবে ফোটে ফুল।

এস তেমনি গোপন পায়ে

অনুরাগভাষাহরি চন্দন শুকায়ে যায়

এস গোপন পায়ে,

আর রহিতে নারী, এস হৃষীকেশ শ্যামরাই

এস গোপন পায়ে।”

“এই বিমানদা... কি হলো তোর... এখানে দাঁড়িয়ে থাকলি... ও তো চলে গেল... আমি কি ডেকে আনব...”

“ছেলেটার মনে হয় অনেক দুঃখ জীবনে...”

“হ্যাঁ... কম বয়সে বাবা-মাকে হারিয়েছে... কি করবে... বেচারা...”

“না না... অন্য কোন দুঃখ... যা ওকে সারাজীবন কুরে কুরে খাচ্ছে...”

“প্রেমে ধোঁকা খাওয়া বলছিস...”

“হতে পারে...”

“আশেপাশের গ্রামে আমার মতন কেউ আছে জানিনা তো... মানে বুঝিনি...”

“অন্য কোন জায়গার হতে পারে...”

“তার মানে দূরদুরান্তরের প্রেম...”

“জানি না... আমাকে খুঁজে বের করতেই হবে...”

রাত অনেক হয়েছে... জানলায় উদাস মনে বিমান ভেবে যাচ্ছে সেই ছেলেটার কথা... কল্পনায় সেই ছেলেটা বাঁশি হাতে এসে সামনে দাঁড়িয়েছে...

“ফুল হাতে আমি দাঁড়িয়েছি... তুমি কি আমার সামনে রূপকথায় রাজপুত্র হয়ে দাঁড়াবে... আমি আমার মনের সব ভালোবাসা হয়ত প্রকাশ করতে পারছি না... কিন্তু আমি তোমাতেই মুগ্ধ...”

“তোমার সব কষ্ট আমি দূর করব... তোমাকে প্রেমের গুলাল মাখাবো...”

“তোমার বাঁশি থেকে সুমধুর সুর বেরোবে যখন... আমি তখন ডালিতে করে সব কুড়িয়ে রাখব...”

“আচ্ছা আমাদের মধ্যে শত-সহস্র মান-অভিমান-রাগ থাকবে... আমি আবারো এই স্মৃতি বুকে করে রেখে দেবো...”

বিমান হাতড়াতে থাকে... কিন্তু কল্পনার সেই অবয়ব আর দেখতে পায় না বিমান... জানলার গারদে হতাশায় মাথা রেখে নিজের মনে মনে বলে...

“তোমার কাজল কালো ওই চোখের পাতা আমার মনে প্রেম জাগিয়ে তুলেছে কমল... আমাকে তুমি গ্রহণ করো... তোমার ওই কাজল কালো চোখের দিকে তাকিয়ে আমি হারিয়ে যেতে পারি কোন সুদূরে...”

নিজের বাড়ির দাওয়াতে বাঁশ ধরে বসে আছে কমল... হাতে একটা চিঠি... কমল নিজের মনে বলে চলেছে...

“আজ তোমাকেই মনে পড়ছে প্রতি মুহুর্তে... আকাশে বাদলের কালো মেঘ জমলে তোমার কথা মবে পড়ে... বিদ্যুতের চমক, ঝমঝম বৃষ্টির সময়ে মনে হয় তুমি কোথায় আছো... আমি জানি না... তোমার কি আমাকে ছেড়ে ভালো লাগছে... ভালো আছো তুমি... আমার আজ কেন জানিনা খুব মনে পড়ছে... সেইদিন ওই নদীর পয়ারে হাত ধরে কতক্ষণ হেঁটেছিলাম... পুকুর, ঝিল থেকে কতো শাপলা তুলেছিলাম... আমার মনের কোণায় স্মৃতি জমে আছে... তুমি সব ভুলে গিয়েছো... তুমি চিন্তা করো না... আমি মনের মণিকোঠায় সব লিখে রেখেছি... আমার কথা... তোমার কথা...”

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে রাজু দেখে বিমান জানলার পাশে মাটীতে শুয়ে আছে...

“এই বিমানদা... তোর কি ব্যাপাররে...”

“জানি না... আমি পাগল হয়ে যাবো... আমি আর পারছি না...”

“ঠিক আছে ঠিক আছে... চল সকালে খেয়ে ছেলেটার খোঁজে বেরবো... ছাতার মাথা কোন গ্রাম সেটাও তো জানি না...”

সকালের জলখাবার কোন রকমে খেয়ে বিমান আর রাজু দুইজনে বেড়িয়ে যায় সেই ছেলেটার খোঁজে... অনেক খোঁজাখুঁজির পরে তারা সেই ছেলেটাকে দেখতে পায় নদীর ধারে বসে আছে... বিমান একটু দোনামনা করে কিন্তু রাজু তাকে একপ্রকার ঠেলে পাঠায় সেই ছেলেটার কাছে...

বিমান গিয়ে ছেলেটার পাশে বসে... একমনে তাকিয়ে থাকে ছেলেটার দিকে...

“তোমার নাম কি?”

ছেলেটা চমকে তাকায় বিমানের দিকে...

“আজ্ঞে কমল... কিন্তু আপনাকে তো ঠিক...”

“আমি বিমান... আমি ওই জমিদারবাড়ির ছোট ছেলে...”

“ও আপনি ছোট কর্তা...”

“আমি তোমাকে ভালোবাসি কমল... তোমার এই সুন্দর মুখ দেখে বাঁশির আওয়াজ শুনে আমি তোমার প্রেমে পড়ে গিয়েছি...”

“প্রেম আমাকে নিয়ে একটা নোংরা খেলা খেলে... ব্যাথা দেয় মনের মধ্যে...”

“কমল... প্রেমে সুখ দুঃখ সব আছে...”

“না না না... প্রেম এই অবুঝ মনকে জেনেশুনে ব্যাথা দেয়... দুঃখ দেয়... মন নিয়ে খেলা করেই সে মজা পায়...”

“আমি তোমার নতুন সুখ, আনন্দ হতে চাই কমল... চলো না আমার সাথে...”

“কোথায়?”

“প্রেমের একটা নতুন অবয়ব আঁকি মনের ক্যানভাসে...”

“না না না... এ হতে পারে না... এ সম্ভব নয়... আমি শুধুমাত্র কৃষ্ণের রাধা... জন্মজন্মান্তরের প্রেম...”

কমল দৌড়ে চলে যায়... বিমান ওর যাবার দিকে তাকিয়ে থাকে... একটু বাদে বিমান কমলের পিছু নেয়... একটু দুরে জঙ্গলের মধ্যে একটা গাছের নিচে বসে একমনে কমল কারোর সাথে কথা বলছে...

“আচ্ছা এবার আমি কি করব... আমি কি এভাবেই বেঁচে থাকব?”

“এভাবে বাঁচাকে কি বেঁচে থাকা বলে... তুমি শুধুই জীবিত আছো কমল... বেঁচে থাকা আর জীবিত থাকা কি এক জিনিস?”

“আমি ভালো থাকতে চাই... আমি ভালো থাকার উপায় জানতে চাই...”

“ভালো থাকতে পারবে না... ভালো থাকা সম্ভব নয়... জীবনে সুখের স্পর্শ তুমি পাবে না... সারাজীবন দুঃখের লেলিহান শিখায় জ্বলবে তুমি...”

“না না না... আমি আর শুনতে চাই না...”

“কেন চুপ করব... আমাকে তুমি সারাজীবন চুপ করিয়ে রেখেছো... তুমি আসলে কি জানো?”

“কি...”

“একটা ভীতু কাপুরুষ তুমি... তোমার নিজের যা ছিলো সারাজীবন সেটা তুমি হেলায় হারিয়েছো... তোমার যা নয় সেটা তুমি দুইহাত দিয়ে আঁকড়ে থেকেছো... নিজের ভালোবাসার কথা তুমি মুখ ফুটে বলতে পারনি... জ্বালা-যন্ত্রণায় জ্বলেছ... বিরহের দহনে পুড়েছ... তুমি সত্যের সামনে দাঁড়াতে ভয় পাও... সেইজন্য তুমি কাপুরুষ... একজন কাপুরুষ কি আর সুখে থাকতে পারে... দুঃখ তোমার নিয়তি...”

“কি করতাম আমি... আমার কি করার ছিলো... আমি কি করে আমার ভালোবাসার মানুষটাকে আমার ভালোবাসার কথা বলব... এটা তো শ্বার্থপরতা... এটা ভালোবাসার পাওয়ার ছলনা...”

“ভুল ভুল ভুল... তোমার ধারণা ভুল... এটা ভীরুতা... তুমি যাকে ভালোবাসো তাকে তুমি মনপ্রাণ খুলে নিজের ভালোবাসার কথা বলবে...”

“কমল...”

কমল পেছন ফিরে দেখে বিমান দাঁড়িয়ে আছে... বিমান দেখে কমলের আশেপাশে কেউ নেই...

“কমল তুমি আমার হবে...”

“না এটা হতে পারে না... আমি শুধুই কৃষ্ণের...”

“তুমি কি আমার ভালোবাসা স্বীকার করবে না...”

“আমি পারব না... পারব না...”

কমল জঙ্গলের মধ্যে কোথাও একটা হারিয়ে যায়...

আজ দুইদিন থেকে তিনদিন হলো কমলের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না... ঘুরে ঘুরে সে বাঁশি বাজাচ্ছে না... কিছুটা তাড়নায় কিছুটা ভালোবাসায় বিমান আর রাজু কমলের খোঁজে বেরোল...

“একটা কোন অতীত একটা কিছু ওকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে...”

“কি করে বুঝলে...”

“কারোর ভালোবাসা কিংবা কারোর দ্বারা প্রতারিত হওয়া... কিছু একটা অতীত আছে ছেলেটার...”

“হেঁয়ালি না করে সরাসরি বলো তো...”

“একবার গ্রামের লোকদের সাথে কথা বলতে হবে... জানতে হবে...”

“দাদা ও দাদা... কমল কোথায় জানেন...”

“কে জানে কই... এতো দুঃখ ছেলেটার...”

“কিসের দুঃখ গো...”

“অকালে বাপ-মা মরল তারপরে ওই ছেলেটা...”

“এই মানিক চল... কাজ আছে... কার সাথে কি কথা বলছিস...”

“আরে ও দাদা একটু শুনুন...”

“বিমানদা আমার মনে হয় না এই গ্রামের লোকেরা কিছু বলবে...”

“হ্যাঁ কিন্তু আমাকে বের করতেই হবে সেই অতীত... কে বলতে পারে...”

“হয়ত কমলকে জানে এমন কেউ...”

“কিংবা কমলের কোন বন্ধু...”

“ও দিলু চাচা দুটো চা দেবে...”

“দিচ্ছি...”

“রাজু কমলকে খুঁজে বের করতে হবে...”

“তোমরা কোন কমলের কথা বলছ ছোটকর্তা...”

“আরে চাচা ওই যে ছেলেটা বাঁশি বাজায়... এদিকওদিক ঘুরে বেড়ায়...”

“তোমরা ওর খোঁজ নাও কেন?”

“আসলে দুই-তিনদিন ওকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছিনা...”

“বড় দুঃখ ওই ছেলের মনে... কম বয়সে বাবা-মাকে হারাল... যাও একজনকে পেলো তাকেও...”

“কি হয়েছিলো বলবে চাচা...”

“এইরে আমাকে তোমরা বিপদে ফেললে...”

“তোমার কিছুই হবে না চাচা... আমরা অন্য কাউকে বলব না... তুমি কি চাও না একজনের সাথে যদি কোন অন্যায় ঘটে থাকে সে তার বিচার পাক...”

“কে করবে বিচার কে দেবে বিচার... রক্ষক যখন ভক্ষক হয়...”

_________________________

বছরখানেক আগের কথা

“আমার ওপর রাগ করে আছো কমল...”

“না কৃষ্ণ... আমি তোমার ওপর রাগ করতে পারি...”

“আমার কথা শোন... আমাকে বিশ্বাস কর...আমি অনেক চেষ্টা করেও ভুলটা ধরতে পারলাম না... তবে একটা উত্তর পেয়েছি...”

“কি উত্তর...”

“আমার মনের মধ্যে তোমার জায়গা সবথেকে বেশী কমল... আমার প্রতিটি হৃদস্পন্দনে তুমি আছো...”

“কৃষ্ণ... আমাদের এই ভালোবাসা... তুমি অনেক দুরে আছো... কিন্তু আমার মন থেকে তুমি দুরে নেই...”

“আমার কি মনে হয় জানো...”

“কি মনে হয়?”

“আমি তোমাকে এতদূর থেকে গুলি করতাম যদি বন্দুকের মধ্যে ভালোবাসা থাকত... প্রেম থাকত...”

“তুমি কি হত্যাকারী কৃষ্ণ?”

“আমি ভালোবাসার পাগল খুনি...”

ফোন কেটে কমল খেতে বসে... আজ একমাস হলো কৃষ্ণ চলে গিয়েছে... কিন্তু সারাদিনে বারদুই ফোনে কথা হয় দুইজনের... খেতে খেতে আচমকা দুইজনের কাটানো সময় মনে পড়ে যায় কমলের...

ঘটনা ১

“এই কমল আর কতক্ষণ... এবার কি আমি চোখ খুলব...”

“একদম না... চুপ করে থাকো তুমি... একদম চুপ... আরে আবার নড়াচড়া করে... গাল কেটে যাবে তো বোকা...”

“উফফফ কি জ্বালাতন... দাড়ি কাটতে এতক্ষণ লাগে কারোর... চোখ খোলা বারণ... আমি আর পারছি না... কতক্ষণ ধরে আমি আমার পাগল কমলকে দেখতে পারছি না...”

“বেশী কথা বললে আমি মুখ সেলাই করে দেবো...”

“আমার তাতে কোন অসুবিধা নেই... কিন্তু এই যে তোমার চুল আমার মুখের ওপর পড়ছে... তোমার চুলের মনমাতানো গন্ধ আমাকে পাগল করে দিচ্ছে... একবার কপালে চুমু খেতে দাও...”

“আবার দুষ্টুমি শুরু করেছো...”

ঘটনা ২

একদিন নদীর পাড়ে একাএকা বসে আছে কমল... পেছন থেকে এসে কৃষ্ণ তাকে জড়িয়ে ধরে...

“আজ দুইদিন হলো তোমার সাথে একবারও দেখা হয়নি... কথা হয়নি...”

“এই কমল আসার সময় নিশ্চয় চুল আঁচড়াও নি তুমি...”

“এই কৃষ্ণ তুমি কি করে জানলে?”

“দুইদিন আমি দেখা করতে পারিনি বলে কাল সারারাত ধরে একটা লম্বা চিঠি লিখেছো?”

“এই শয়তান তুমি কি লুকিয়ে দেখেছো...”

“আমি জানি দুপুরে না খেয়ে তুমি বিকেলে খেয়েছো...”

“তোমাকে কে বলল এই কথা?”

“সকাল থেকে এখনও স্নান করনি?”

“তোমাকে বুধনকাকা কিছু বলেছে... আমি জানি...”

“সারাদিন ফোন মুখে করে বসেছিলে?”

“যাও তোমার সাথে কথা বলব না...”

কৃষ্ণ কমলকে জড়িয়ে ধরে কপালে একটা চুমু এঁকে দেয়...

কয়েকমাস আগের ঘটনা...

একদিন কমল তাদের গ্রামের পাশের বড় রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে...

“ও দিলু চাচা... একটা চা দাও না...”

“আরে কমলবাবু... আজ অনেকদিন বাদে... খবর ভালো তো...”

“হ্যাঁ হ্যাঁ...”

“একটা লালন শোনাও না...”

“শোনাচ্ছি দাঁড়াও...”

“আমার হয় না রে সে মনের মত মন।

আমি জানবো কি সে রাগের কারণ।।

পড়ে রিপু ইন্দ্রিয়ের ভোলে

মন বেড়ায় রে ডালে আলে

এবার দু মনে এক মন হলে

এড়াই শমন।।

রসিক ভক্ত যারা

মনে মনে মিশালো তারা

এবার শাসন করে তিনটি ধারা

পেল রতন।।

কিসে হবে নাগিনী বস

সাধবো কবে অমৃত-রস

দরবেশ সিরাজ সাঁই কয়, বিষেতে নাশ

হলি লালন।।”

“বাহ আপনি দারুণ বাঁশি বাজান তো...”

আচমকা অচেনা গলা শুনে কমল ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে গাড়িতে একজন সুপুরুষ বসে আছে... লোকটা গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়... উচ্চতা প্রায় ৬ফুট... ফর্সা, টিকালো নাক, মায়াবী একটা চোখ... এককথায় স্বপ্নের রাজকুমার... কমল মন্ত্রমুগ্ধের মতন তাকিয়ে থাকে... কোথাও একটা হারিয়ে যায়...

“ভাই একটা কথা জিজ্ঞেস করব?”

কমল কোন উত্তর না দিয়ে শুধু তাকিয়ে আছে...

“ভাই... আরে ও ভাই... কোথায় হারিয়ে গেলে...”

“না আসলে... বলুন...”

“আমি আসছি কলকাতা থেকে... আচ্ছা আমেদপুর কোনদিকে?”

“এই তো পাশেই... আপনি কোথায় যাবেন?”

“আসলে এখানে একটা বড় কারখানা হবে না...”

“হ্যাঁ হ্যাঁ... সেতো অনেকদিন থেকেই শুনছি...”

“আমি ওখানকার হেড ইঞ্জিনিয়ার... তাই আসা... দুই-একদিনের মধ্যেই বাকি লোকজন আর মেশিন সব এসে যাবে...”

“এতো দারুণ খবর শোনালেন বাবু...”

“আমার নাম কৃষ্ণ... তোমার?”

“আমি কমল...”

“আমাকে একটু নিয়ে যাবে সেইদিকে... মানে কোন অসুবিধা নেই তো...”

“আরে না না... আমার তো ওটাই গ্রাম... আসলে এই কারখানার জন্য আমরাই সবথেকে বেশী জমি দিয়েছি...”

“তাই নাকি... আমাদের কিন্তু কাজের জন্য প্রচুর লোক লাগবে... আশেপাশের গ্রাম থেকে পাওয়া যাবে তো...”

“সেটা আপনি পঞ্চায়েতে বললেই হবে...”

ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব হয় দুইজনের... শুরু হয় একসাথে পথচলা... তৈরি হয় ভালোলাগা... গড়ে ওঠে একটা মধুর সম্পর্কের... কি নাম দেবেন এই সম্পর্কের?

“আমি বইসা রইলাম নদীর কূলে

আমায় কে বা পার করে

আমি কান্দিয়া আকুল হইলাম

বইসা ঘাটের পাড়ে গ

আমায় কে বা পার করে।।

আশা নদীর তীরে গেলাম

পিপাসিত হইয়া

আশা নদীর জল শুকাইল

দুঃখিনী দেখিয়া গ

আমায় কে বা পার করে।।

নাও আছে কাণ্ডারি নেই

শুধু ডিঙা ভাসে

আমি খেয়ার মাঝির নাম জানি না

কি নামে ডাকব আরে গ

আমায় কে বা পার করে।।”

একমনে বাড়ির দাওয়াতে বসে সন্ধ্যেবেলা গান গাইছিলো কমল... গানের শেষে কৃষ্ণ পেছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরে কমলকে... কানের লতিতে একটা চুম্বন... শিহরিত হয়ে ওঠে কমল...

“এই কি দুষ্টুমি করছ... সবাই দেখবে...”

“আমি আমার ভালোবাসাকে আদর করব... তাতে কার কি...”

“তুমি আমাকে ভালোবাসো কৃষ্ণ...”

“তোমার কোন সন্দেহ আছে?”

কমল ঘুরে বসে... কৃষ্ণ নিজের ঠোঁট দিয়ে কমলের ঠোঁট চেপে ধরে... সিক্ত হয় প্রেম...

“এই আমার জলে নামতে খুব ভয় করছে...”

“আরে ধ্যুর... শুধু দুই-তিন সিঁড়ি নামবে... আমি তো আছি...”

“আমার কিন্তু ভীষণ ভয় করছে...”

“আরে এসো...”

কৃষ্ণ কমলের হাত ধরে দুই-তিন ধাপ নামে নদীতে... দুইজনে দুইএকটা ডুব দেবার পরে আচমকা কৃষ্ণ কমলকে পাঁজাকোলা করে কোলে তুলে নেয়...

“এই কি করছ...”

“আগে বলো আই লাভ ইউ...”

“আমি তোমাকে ভালোবাসি কৃষ্ণ...”

“আমিও...”

কৃষ্ণ নিজের জিভ দিয়ে কমলের ঘাড়, স্তনবৃন্ত, বুক, নাভি সব জায়গাতে আদর করতে থাকে... কমল শিহরিত হয়... আজ রাতে কমলের বাড়ি... অন্ধকারে দুটো পুরুষ শরীর উলঙ্গ হয়ে উজার করে দেয় নিজেদের ভালোবাসা...

“সোনাবন্ধু তুই আমারে করলি রে দিওয়ানা

মনে তো মনে না, প্রাণে তো বুঝে না...

বন্ধে মায়া লাগাইছে, পিরিত শিখাইছে

দিওয়ানা বানাইছে...

কৃষ্ণ আইলা রাধার কুঞ্জে

ফুলে পাইলা ভ্রমরা ময়ূর বেশেতে নাচে...

প্রাণসখীরে ওই শোন কদম্ব তলে

বংশী বাজায় কে...

সোনা বন্ধে আমারে দিওয়ানা বানাইছে

সোনা বন্ধে আমারে পাগল বানাইছে...

ঘাটে লাগাইয়া ডিঙা

পান খাইয়া যাও মাঝি...

ময়না ছলাত ছলাত করে রে

পেছন পানে চায়না রে...

ছাইড়া দে কলসি আমার যায় বেলা

না না ছাড়তাম না কলসী তোমার...

রূপসাগরে ঝলক

কি রূপ তুই দেখাইলি মোরে...

নিশিথে যাইও ফুলবনে রে ভোমরা

নিশিথে যাইও ফুলবনে...”

“ইঞ্জিনিয়ারবাবু কথা ছিলো...”

“আপনি? আপনাকে তো ঠিক...”

“আমি জেলাপরিষদ সদস্য মাখনবাবুর ছেলে কালু...”

“হ্যাঁ বসুন...”

কৃষ্ণ একটু অবাক হয়ে কালুকে সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে দেখে...

“বলুন কি দরকার...”

“আপনি একাএকা ক্ষীর খাবেন আর আমি আঙুল চুষব নাকি?”

“আপনি কি বলছেন আমি কিছুই বুঝতে পারছি না...”

“ন্যাকা চণ্ডী আমার...”

“স্পষ্ট করে বলুন...”

“ওই ছেলেটা আর ওর জমির দিকে আমার অনেকদিনের নজর... মালটা হেভি সেক্সি আর কচি আছে... অনেক জমিজমা... মাঝখান থেকে তুমি কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসলে চাঁদ...”

“কার ব্যাপারে বলছে একটু বলবেন...”

“আরে তোমার নতুন রসের নাগর... সারারাত যার শরীর ছাড়া তোমার খিদে মেটে না...”

“ভদ্রভাবে কথা বলুন...”

“এই বোকাচোদা... আমার সামনে গলা তুলবি না... এখানেই পুঁতে দেবো...’

“শুনুন... আপনি একজন সরকারী কর্মচারিকে হুমকি দিচ্ছেন... আমি পুলিশে যাবো...”

“তাহলে যান সেখানে... আমি সাতদিন সময় দিলাম... নাহলে কিন্তু...”

“আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব...”

কালু তার দলবল চোখ রাঙিয়ে চলে যাবার পর কমল আসে...

“এই কালুদা এখানে কেন এসেছিলো গো...”

“বাদ দাও ওর কথা...”

“আরে না গো... হেভি শয়তান... আমাকে অনেকবার কুপ্রস্তাব দিয়েছে... জমিবাড়ি হাতিয়ে নেবার তালে আছে... আমার ভয় হয় ও যদি তোমার কিছু করে...”

“আমি একজন সরকারী ইঞ্জিনিয়ার... এখানে এই সরকারী প্রোজেক্টের দায়িত্বে... আমি দরকার পড়লে ওপরমহলে জানাবো...”

“আমার একটা কথা শুনবে?”

“কি কথা?”

“তুমি তো বনগাঁ থেকেও কাজ চালাতে পারবে?”

“হ্যাঁ কিন্তু কেন?”

“না বলছিলাম... আমি আমার সব জমি বিক্রি করে তুমি আর আমি একসাথে বনগাঁতে থাকব...”

“সেটা মানে ভয় পেয়ে পালিয়ে যাওয়া... আমি পালাব না... আমি শেষ দেখে ছাড়ব...”

“কৃষ্ণ আমার ভয় করে... ওদের হাতে সরকার, ক্ষমতা, তুমি কি করবে?”

“সেটা দেখো...”

“ও তারমানে ওই কি নাম ছেলেটার... কালু... ওই সব নষ্টের মূলে...”

“হ্যাঁ... ক্ষমতা তার হাতে...”

“চাচা এখন হাওয়া বদলেছে... এবার জমবে খেলা...”

“তোমরা?”

“সব বুঝবে চাচা... আমাকে আগে পুরো ঘটনাটা বলো... তারপর দেখো আমি কি কি করতে পারি...”

পুলিশ স্টেশান

“আপনি জানেন আপনি কি বলছে অফিসার...”

“দেখুন আমাদের হাত-পা বাঁধা... আমি আপনাকে একটা পথ দেখাচ্ছি...”

“বাহ বাহ... রক্ষক যদি হাত তুলে নেয় তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে?”

“আপনি ওনাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবেন... কি লাভ... কোন সাক্ষী পাবেন না...আদালতে আমাদের মুখ পুড়বে...”

“তারমানে একজন নিজের ইচ্ছায় অন্যায় করবে কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করতে পারবে না...”

“হাসালেন দাদা...”

“ঠিক আছে আমি আমার রিপোর্ট আমার ডিপার্টমেন্ট আর স্বরাষ্ট্র দপ্তরে পাঠিয়ে দিয়েছি... দেখি কি হয়...”

“আপনি সাপের লেজে পা দিয়েছেন দাদা...”

“সাপ কি ব্যাঙ সেটা পরে বোঝা যাবে...”

“কি হয়েছে গো তোমার?”

“ভালো লাগছে না... অর্থ, ক্ষমতা, পদের কাছে অন্যায়ের প্রতিবাদ হেরে যাচ্ছে কমল... সাধারণ মানুষ আজ অসহায়...”

“আমি সেইজন্যেই তোমাকে বলেছিলাম...”

“ঠিক আছে... আমি দেখছি কি করা যায়...”

“সব বিক্রি করে দাও... আমার শুধু তুমি থাকলেই হবে... আমার আর কিছুই চাইনা...”

“আমারও শুধু তোমাকেই দরকার কমল...”

রাতের অন্ধকারে দুটো প্রেম একসাথে জেগে থাকে, ভালোবাসে, গল্প করে...

“এবার বুঝলাম... আইন যদি সাধারণ মানুষকে সাহায্য না করে তাহলে যা হবার সেটাই হয়েছে...”

“এবার কি করবে বিমানদা...”

“এবার ওই অফিসারকে আমি ক্ষমতা দেখাব...”

“বিকেলের একপ্রান্তে তুমি দাঁড়িয়ে

আমার ছায়া একদিন ছোঁবে তোমায়,

নির্বাসনে চুবিয়ে নিয়ে মাথা

ক্রমশ যেন যাচ্ছি চলে কোমায়।

মনখারাপকে দূরত্ব ভাগ করে

আংটির মতো সাজায় মধ্যমায়,

এই গান তার মানে খুঁজে পাবে

তোমার আমার নিজস্ব তর্জমায়।”

“এইযে ইঞ্জিনিয়ারবাবু... খুব তো আমার বিরুদ্ধে লেগেছিলে কি লাভ হলো...”

কালুর কথার সামনে কৃষ্ণ চুপ করে থাকে মাথা নিচু করে...

“এবার শুনুন... আমি ওই কমলের জমি দখল করব... পারলে আটকে দেখান...”

”বেলা বয়ে বয়ে যায়,

বেলা বয়ে যায়, এ শহরে,

জাহাজেরা ঘুমে যায়,

উদাসী হাওয়ায়, এ শহরে।

নিজেকে কুড়িয়ে ঝিনুকের মতো শুনি

সমুদ্রধ্বনি কোথাও বাজছে কিনা,

নির্জনতার মাঠটাকে কোনাকুনি

পেরোচ্ছি তবু ছায়া খুঁজে পাচ্ছি না।”

কয়েকদিন বাদে কাজ শেষে বাড়ি ফিরিতে গিয়ে আচমকা নদীর পাড়ের জঙ্গল থেকে কমলের গলার আওয়াজ শুনে থমকায় কৃষ্ণ... এদিকওদিক দেখতে গিয়ে দেখে কালু আর তার পাঁচজন স্যাঙ্গাৎ মিলে কমলকে উলঙ্গ করে জোর করে পায়ুতে লিঙ্গ ঢোকাচ্ছে...

“এই ওকে ছেড়ে দাও...”

মাথায় একটা ভারী কিছুর আঘাত এবং সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু অন্ধকার...

”ছায়াটি আমার, একটু তফাতে হাঁটো

যাও পেরিয়ে কোল্যাপসিবল টেনে,

বিষণ্ণতার প্রহর করেছি ফিরি

কেউ দরদামে বসন্ত যদি কেনে।

বেলা বয়ে বয়ে যায়,

বেলা বয়ে যায়, এ শহরে,

জাহাজেরা ঘুমে যায়,

উদাসী হাওয়ায়, এ শহরে।”

(অসমাপ্ত)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance