বিসর্জন
বিসর্জন
রাতে খাওয়ার টেবিলে বহুদিন পর স্বামী রৌনক আর মেয়ে রুহু-কে একসাথে পেয়ে শবরী কথাটা তুলেছিল। আসলে দৈনন্দিন ব্যস্ততা আজকাল এমন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, যে পরিবারের তিনজনের মধ্যে কথাই খুব কম হয়।
ডঃ রৌনক মুখার্জী নাম করা সার্জেন, কলকাতার দুটো বড় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে যুক্ত, মেয়ে ডঃ রুহু এম. বি. বি. এস. পাশ করে আপাতত আরও পড়ছে। শবরী একসময় একটা স্কুলে পড়াত। মেয়ের জন্য সেই চাকরি একসময় ছাড়তে হয়েছিল। এখন মহিলা সমিতি ছাড়াও দুটো এন. জি. ও. তে যুক্ত।
সল্টলেকে বিশাল বাংলোতে তিনজন কাজের লোক ছাড়াও তিনটে ড্রাইভার, মালী, দারোয়ান। আর এদের দিয়ে সব করিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব শবরীর।
রৌনক ওঠে ভোর ছ’টায়। আধ ঘন্টা জিম আর যোগা করে সাড়ে সাতটায় আসে ব্রেকফাস্ট টেবিলে। হাল্কা টোস্ট আর চিনি ছাড়া লাল চা খেয়ে ঠিক পৌনে আটটায় বেরিয়ে যায়। ফেরা সেই রাত দশটায়।
অবশ্য দুপুরের খাবার শবরী নিজে হাতে সাজিয়ে পাঠায়। কোলস্টেরল আর সুগারটা যবে থেকে বেড়েছে শবরী ওর খাওয়া দাওয়ায় আলাদা নজর রেখেছে। যদিও ডাক্তারবাবু খাওয়ার সময় সব দিন পায়না।
মেয়ে রাত করে পড়ে বলে ওঠেও দেরিতে। হাল্কা ব্রেকফাস্টের পর ও বেরিয়ে যায়। সারাদিন শবরীর কাজ বলতে কাজের লোকেদের পরিচালনা করা, বাগান করা। সপ্তাহে দু’দিন এন. জি. ও.-র কাজ আর মহিলা সমিতি করে ইদানিং হাঁপিয়ে উঠেছে সে।
বহুদিন একসাথে কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়না। সেই মেয়ের উচ্চ মাধ্যমিকের পর একসাথে সবাই রাজস্থান গেছিল। আসলে রৌনক তো মাঝেমধ্যেই কনফারেন্সে দেশ-বিদেশে যাচ্ছে। মেয়েও আজকাল বাবার সঙ্গে যায়। শবরীর এসব ট্যুর আর ভালো লাগে না। হোটেলে বসে বোর হতে কি ভালো লাগে?
তিন বছর আগে একটা প্ল্যান হয়েছিল ইউরোপের কিন্তু আর হয়নি। দিন দিন এদের ব্যস্ততা বেড়েই চলেছে।
আজ বহুদিন পর দুজনকে একসাথে পেয়ে শবরী ঘুরতে যাওয়ার কথাটাই আবার তোলে।
রুহু প্রথমেই বলে সামনে তার পরীক্ষা, এই সময় সে কোথাও যাবে না। রৌনক জানায় এখন পর পর কনফারেন্স চলবে। তাই আপাতত সে কোথাও যাবেনা। তবে পূজার ছুটিতে কোথাও যাওয়া যেতেই পারে।
বাবা আর মেয়ে খেয়ে উঠেই একটা অপারেশনের রেকর্ডিং নিয়ে বসে। আবার সেই ডাক্তারি বিষয়ে আলোচনা। শবরীর পাগল পাগল লাগে। একেক সময় বাড়িটাকেই হাসপাতাল মনে হয়। এরা বাড়ি থাকলেই সারাক্ষণ এই এক আলোচনা!
মেয়ে যখন দারুণ র্যাঙ্ক করে মেডিকেলে চান্স পেয়েছিল মা হিসাবে খুব গর্ব হয়েছিল শবরীর। কারণ মেয়ের পড়াশোনার পেছনে তার অবদান তো কম নয়। চাকরী ছেড়েছিল মেয়ে যখন ক্লাস সেভেন। তারপর থেকে মেয়েকে পড়ানো, মেয়ে নিয়ে ভালো কোচিং এ দৌড়ানো, ভালো হোম-টিউটর রাখা সব সে একাই সামলেছে। রৌনকের সময় কোথায়?
কিন্তু মেয়ের ভালো রেজাল্টের পর সবাই রৌনকের পেশা আর পরিচিতিকেই প্রাধান্য দিয়েছে। মেয়ের মাথা ভালো এটাও বলেছে। কিন্তু শবরীর অবদানের কথা কারও মনে হয়নি। এখন মনে হয় মেয়েটা অন্য লাইনে গেলেই ভালো হ’ত।
এমন একেকটা দিন আসে হয়ত রৌনক আর রুহুর সাথে একটাও কথা হয় না শবরীর। রুহু আজকাল বন্ধুদের সাথে জেলায় জেলায় ক্যাম্প করতে চলে যাচ্ছে যখন তখন। রৌনক এই সবে বাধা দেয়না কখনোই। মেয়ের সব রকম স্বাধীনতা রয়েছে। শবরীর এসব ব্যপারে কথা বলার অধিকার নেই। ওর ব্যপারেও বাপ মেয়ে মাথা ঘামায় না। ও সম্পূর্ণ স্বাধীন।
এন. জি. ও. র কাজেও শবরী আর আনন্দ পায় না, বাকি যারা রয়েছে সবাই এটাকে একটা রোজগারের জায়গা বানিয়ে নিয়েছে। যত টাকা অণুদান আসে তার মাত্র একটা অংশ খরচ হয়, বাকিটা চোখের সামনে নয়ছয় হতে দেখে শবরী দুই এক বার প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু লাভ হয়নি কিছুই। আসলে বাকিরা একজোট, তাই ও একা কিছুই করতে পারেনি। শুধু অনাথ আর পথশিশুগুলোর মায়ার টানে এখনও যায়। আর ও এখনও যায় বলেই এই বাচ্চাগুলো কিছুটা হলেও বরাদ্দ পায়। মহিলা সমিতিতেও একই গল্প। কিছু গরীব মেয়েকে হাতের কাজ শিখিয়ে, শাড়ি কাপড় আর গহনা বানানো হয় ঠিকই কিন্তু শবরীর মত যারা সমাজের উচ্চস্তরের তারা ওখানে যায় শুধু পি. এন. পি. সি. করতে। শবরীর এতেও অনিহা। আর তাই মন খুলে এদের সাথে মিশতে পারেনা ও। একটা অদৃশ্য কিছু ওকে সর্বদা ঘিরে থাকে। কিন্তু মনোমত না হলেও সেভাবে জোর দিয়ে প্রতিবাদ করতে পারে না শবরী।
কোনো কিছুই আর ভালো লাগে না। গ্ৰামের বাড়ি থেকে নায়েব কাকা এসেছিল একদিন। বহুদিন গ্ৰামেও যাওয়া হয় না। অম্বিকা কালনায় রৌনকদের বিশাল পৈতৃক বাড়ি যার একমাত্র উত্তরাধিকারী এখন রৌনক। দুর্গা পূজা হয় সে বাড়িতে। মন্দির রয়েছে মায়ের। কয়েক বছর ধরে পূজাতেও যেতে পারেনি রৌনক। সম্পত্তি ও পূজার ভার নায়েবকাকার হাতেই ছেড়ে রেখে ও নিশ্চিন্ত। প্রচুর ধানী জমি ফল ফলাদি রয়েছে ওখানে, ওখানকার আয়েই পূজা হয়ে যায়। বছরে এক দুবার শবরী ঘুরে আসে। একটা অদ্ভুদ টান ও অনুভব করে ঐ বাড়ির প্রতি, সেই টানেই যায়। এবার ঐ পূজা এক’শ বছর হতে চলেছে, তাই কাকা খুব আশা করেছে সবাই অন্তত একটা দিনের জন্য যাবে গ্রামে। শবরীর খুব ইচ্ছা করে কদিন ওখানে গিয়ে থাকতে। বিয়ে হয়ে ঐ তিনমহলা বাড়িতেই প্রথম ঢুকেছিল নতুন বৌ হয়ে। প্রথম প্রথম শ্বশুর শাশুড়ির টানে মাসে একবার করে যাওয়া হ’ত ওখানে। ওঁরা থাকতে পূজাতেও যাওয়া হত। বেশ কিছু আত্মীয় স্বজনের সাথেও দেখা হত ওখানে। বেশ কয়েক বছর হল শাশুড়ি শ্বশুর নেই, আর রৌনক যেতে চায় না।
ছোটবেলা রুহু ও খুব আনন্দ করত বাড়ির পূজায়। কত আগে থেকে দিন গুনত। কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে সবাই কেমন বদলে যায়। বদলে যায় ভালো লাগাগুলো। আজকাল রুহু গ্ৰামের নাম শুনলেই প্রথমে না করে দেয়।
পূজায় ঘুরতে যাবে বললেও রৌনক কোনো প্ল্যান করেনি। তাই একদিন রাতে শবরী গ্ৰামের বাড়ির পূজার কথাটা তোলে। বলে -"চলো না এবার সবাই মিলে গ্ৰামের বাড়ি যাই পূজায়? বহুদিন যাওয়া হয় না। "
-"আমার হবে না মা। আমি এবার বন্ধুদের সাথে কেরালা যাবো ঠিক হয়েছে। তোমরা যাও।", রুহু এক কথায় নাকচ করে উঠে যায়।
রৌনক কোন উত্তর না দিয়ে খেতে থাকে।
শবরী দ্বিতীয় বার বলতেই রৌনক বলে -"গ্ৰামের বাড়ি তো যখন তখন যাওয়া যায়। ওর জন্য তো প্ল্যানিং দরকার নেই। চারদিন ছুটি আছে। যেতেই পারি আমরা।”
বহুদিন পর শবরীর মনটা খুশি হয়ে ওঠে। হিসাব করে দেখে আর আঠাশ দিন। পরদিন নায়েব কাকাকে ফোনে জানিয়ে দেয় ঘরবাড়ি পরিষ্কার করাতে, তারা আসছে এবার।
পূজার বাজার আর গোছগাছ করতেই এই দিনগুলো পার হয়ে যায়। চতুর্থীতে রুহু চলে গেল ওর বন্ধুদের সাথে। রৌনক ষষ্ঠীর দিন সন্ধ্যায় যাবে বলেছে। নায়েব আর পুরোহিতের অনুরোধে শবরী গাড়ি নিয়ে পঞ্চমীতেই চলে যায়। বোধন হবে সে দিন। রৌনক পরদিন পৌঁছে যাবে বলেছে।
অত বড় প্রাসাদের মতো বাড়ি আলো দিয়ে সাজিয়েছেন নায়েবকাকা। আত্মীয় শরীকরা কেউ আর তেমন নেই। তবুও একশো বছর আর শবরীরা আসছে শুনে আশে পাশে যারা রয়েছে দু’চারজন এসেছে। বহু পুরানো স্মৃতি ভিড় করে আসে শবরীর মনে। শাশুড়ী শেষ দিনটা অবধি এই বাড়িতেই কাটিয়েছিলেন। নিজে হাতে পূজার ভোগ রাঁধতেন উনি। নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সব দেখাশোনা করতেন। শবরীকে এসব করতে হয়নি কখনো। কিন্তু এবার এসে থেকেই সবাই বৌমা বৌমা করে ওকে ঘিরে ধরেছে। ভালোই লাগছে। যৌথ পরিবারের সবাই কত সন্মান দিচ্ছে। আপন করে নিয়েছে।
না, ষষ্ঠীতে আসতে পারেনি রৌনক। এক বড় মন্ত্রী হঠাৎ ওর আণ্ডারে ভর্তি হওয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়তে হয়েছে। নবমীর দিন পর্যন্ত চলেছে তার ব্যস্ততা। সার্জেন রৌনক মুখার্জী ডাক্তার হয়ে এমন রুগি ফেলে কোথাও যাবে কি করে!! সব খবর এসে পৌছাচ্ছিল ফোনের মাধ্যমে। শবরী কী বলবে আর!! ডাক্তারদের দায়িত্ব কর্তব্য সে ভালো করেই জানে। দশমীর সকালে বেদনাতুর মনে সবাই যখন মা কে বিদায় জানাচ্ছিল তখনো শবরীর মনে একটা আশা ছিল হয়তো রৌনক এসে পৌঁছাবে। কারন আগেরদিন তার পেশেন্ট উড়ে গেছে চেন্নাই। রৌনক তিনদিন ছুটি পেয়েছে। শবরী ভেবেছিল লক্ষ্মী পূজা পার করেই বাড়ি ফিরবে। রোনককে বলবে ছুটিটা বাড়িয়ে নিতে। রুহুর লক্ষ্মী পূজার আগের দিন ফেরার কথা, যদি ফিরে আসে... একবার ফোন করবে ওকে।
ঢাকের আওয়াজে বিসর্জনের করুণ সুর। দক্ষিণের বারান্দায় দাঁড়িয়ে শবরী চেয়েছিল বড় রাস্তার দিকে। মাত্র কয়েক ঘন্টার পথ। হয়তো এখনি এসে পড়বে রৌনক সেই নতুন বিয়ের পর যেভাবে প্রতি সন্ধ্যায় রোনকের পথ চেয়ে বসে থাকত সেই কথা মনে পড়ছে বার বার। তখন রৌনক এদিকেই হাসপাতালে ছিল। রৌনকের ফোন নট রিচেবেল।
পূজার তিনদিন বৃষ্টি না হলেও আজ আকাশের এক কোণে আস্তে আস্তে জমা হয়েছে কালো মেঘ। মা ফিরে যাচ্ছে বলে প্রকৃতিরও মুখ ভার। গাঁয়ের লোক এসেছে মা-কে বরণ করতে শেষ বেলায়। সবাই শবরীর প্রতিক্ষায়, বাড়ির একমাত্র বৌ সিঁদুর ছোওয়ালেই শুরু হবে সিঁদুর খেলা। শেষ বার পথের দিকে চেয়ে নেমে আসে শবরী। মা-কে চোখের জলে বরণ করে বিদায় জানায়। সিঁদুরে সিঁদুরে রাঙ্গিয়ে ওঠে বহুদিন পর। গোধুলীর আলোয় মা-কে নিয়ে সবাই চলল গঙ্গায়। সিংহ দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আবার রাস্তা দেখে শবরী। আরেকবার ফোন করতে চেষ্টা করে। না, এবারেও ...
রুহুকে একবার ফোন করতে চেষ্টা করে। বিজয়ার আশীর্বাদ দিতে হবে। মেয়েটাও এই তিনদিন ফোন করেনি। বাবা মায়ের প্রতি যত তেমন টান নেই মেয়েটার। নাঃ, ফোনটাও লাগছে না।
উৎসব মুখর এতবড় বাড়িটাও কেমন চুপচাপ। আলোগুলো আজ কেমন আলো আঁধারির ছবি আকছে। শান্তিজল আর বিজয়ার আশীর্বাদ করে ফিরে গেছেন পুরোহিত। গ্ৰামের লোক মিষ্টিমুখ করে বিদায় নিয়েছে। তারপরেই ঝড় উঠেছিল। সঙ্গে বৃষ্টি। বৃষ্টি কমতেই উথাল পাথাল মন নিয়ে পায়ে পায়ে ছাদে উঠে আসে শবরী। যদি সিগনাল পায় ফোনে!!
রিং হচ্ছে। সব উৎকন্ঠা কাটিয়ে রৌনকের গলা ভেসে আসে। -"এ কয়দিন যা গেছে খুব ক্লান্ত লাগছে। পূজাও শেষ। তাই আর ওদিকে না গিয়ে সোজা বকখালি চলে এলাম। তিনটে দিন টানা রেস্ট নেবো। নেক্সট উইকে আবার বাইরে কনফারেন্স, পেপারগুলোও রেডি করতে হবে। তাই একটু রিফ্রেশ হওয়া। তোমায় দুবার ট্রাই করলাম, নট রিচেবেল।”
শবরী উত্তর দেয় না। চুপ করে থাকে। রোনক বলে চলে -
"তুমি চাইলে ওদিকটা মিটিয়ে চলে এসো এদিকে। অবশ্য পরশু ফিরে যাবো। একদিনের জন্য তুমি আর এসেই বা কী করবে !! ... নায়েবকাকা বলছিল তুমি নাকি লক্ষ্মী পূজা পার করে আসবে বলেছো! সেটা দেখে নাও..."
শবরী কী বলবে ভেবে পায় না।
-"কী হ’ল, শুনতে পাচ্ছো তো? পূজা কেমন কাটলো ওদিকে?”
শবরী ফোনটা কেটে দেয়। আস্তে আস্তে দোতলায় নেমে আসে। সার দিয়ে সব বন্ধ ঘর। শুধু বড় হল আর দুটো শোওয়ার ঘর খোলা। বাতি জ্বলছে। মনে পড়ে বিজয়াতে কত গানের আসর বসত। সব গ্ৰামের লোক আসতো। কত খাওয়া দাওয়া হত। সব রকম পূজায় এই বাড়িতে উৎসব হত একদিন। নেমে আসে একতলায়।তিনটে কাজের লোক টুকটাক কাজ করছে। ঘুরে ঘুরে দেখে সব। তার বিয়ে, বৌভাত, রুহুর অন্নপ্রাশন, রুহুর পাঁচ বছরের জন্মদিন কত উৎসব পালন হয়েছে একদিন এই বাড়িতে। আজ শুধু কাজের লোকের হাতে এ বাড়ির চাবি। পরিবারের লোকেরাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে। তাদের আর কোনো টান নেই এ বাড়ির প্রতি।
বড় দেওয়াল ঘড়িতে ঢং ঢং করে রাত নটা বাজে। ফ্ল্যাটের চাবিটা হাতে নিয়ে শবরী গিয়ে দাঁড়ায় ঠাকুর দালানে, খোলা মণ্ডপে একটা মাত্র প্রদীপ জ্বলছে। ড্রাইভার ওকে দেখে এগিয়ে আসে।শূন্য ঠাকুর দালানে প্রণাম করে শবরী গাড়িতে উঠে বসে, বলে গঙ্গার ঘাটে নিয়ে যেতে।
বোধহয় শেষ প্রতিমাটা বিসর্জন দিয়ে ফিরে যাচ্ছে একটা দল। ওধারের একটা ফাঁকা সিঁড়ি ধরে সে নেমে যায় জলের কাছে। জোয়ার আসছে । ঢেউ ভাঙ্গছে সিঁড়ির বুকে। পায়ে এসে লাগে জলের ছোঁওয়া। এক শীতল স্পর্শ। এক অন্য অনুভূতি।
হঠাৎ হাতের চাবির গোছা ছুড়ে ফেলে দেয় নদীর বুকে। নিজেকে ভীষণ হাল্কা মনে হয়। সময় সব কিছু বদলে দিয়েছে। পিছু টান টুকু ও এই সময় কাটিয়ে দেবে ধীরে ধীরে। এবার থেকে শুধুই নিজের জন্য বাঁচবে ও, নিজের মত করে উপভোগ করবে জীবনকে। টান নেই যাদের সেই পরিবারকে আর সময় দেবে না।স্রোতের টানে ভেসে যাচ্ছে মায়ের প্রতিমা, এক ঝলক ঠান্ডা বাতাস ভেসে আসে নদীর বুক থেকে। বহুদিন পর শবরী প্রাণ ভরে নিশ্বাস নেয়।
- সমাপ্ত -