বিশ্বাস
বিশ্বাস
প্রায় বছর পাঁচ ধরে অদৃজা র ডান হাতের রিং ফিঙ্গার এ লাল প্রবল টা নতুন এর মতো টুক টুকে লাল রং বয়ে চলেছে । বাস এক্সিডেন্ট এর পর জ্যোতিষ মহাশয়ের নির্দেশে ধারণ করেছিল অদৃজা । রক্তক্ষরণ নাকি এতে রোধ হয় । অগাধ বিশ্বাস এ এতদিন অদৃজা মুহূর্তের জন্য হলেও এই সোনায় বাঁধানো প্রবাল নিজের হাত ছাড়া করে নি।এছাড়াও নীলা ,বসরাই মুক্ত র প্রতি ও তার দুর্বলতা কম নয় ।জ্যোতিষ মহাশয়ের গণনায় অনুযায়ী এক এক করে সব অদৃজা এই পাঁচ বছরে ধারণ করেছে ।মাথা ঠান্ডা রাখার জন্য মুক্ত ,নীলা সর্বাঙ্গীন পরিবারের এবং নিজের ভালো থাকার জন্য ।
কিন্তু একদিন হঠাৎ অফিস এ দেখলো আদৃজা মুক্ত নেই আছে শুধু আংটির ফ্রেম তার ডান হাতের তর্জনী তে । এদিক ওদিক ,টেবিল এর আশেপাশে কোথায় পরে নেই মুক্তোটা । বেশ মন খারাপ হয়ে গেলো । কি করবে এখন ? ভাবতে ভাবতে আদৃজা মা কে ফোন করে মুক্ত র হারিয়ে যাওয়ার কথা টা জানালো ।মা আস্বস্ত করে বললো " চিন্তা করিস না , আজকে ই হারা নিধি করবো ,ঠিক পেয়ে যাবি "। হারা নিধি এক প্রচলিত প্রথা তাতে নাকি ভগবান এর উদ্দেশ্যে ১০ ঘটি জল ঢালা হয় আর ভক্তি সহকারে হারিয়ে যাওয়া বস্তু ফিরে পাওয়ার জন্য ভগবান কে প্রায় এক রকম রিকোয়েস্ট করা হয়। এতে নাকি ভগবান খুশি হয়ে হারিয়ে যাওয়া জিনিস ফিরিয়ে দেন যদি না চুরি হয়ে যায় ।তবে কোন ভগবান কে রিকয়েস্ট করা হয় তা আদৃজা র জানা নেই ।
তা যাই হোক ,খুঁত খুঁতে মন নিয়ে অদৃজা অফিস থেকে বাড়ি ফেরে । নিজেকে খুব সংযত রাখার চেষ্টা চালাতে হবে অদৃজা কে যত দিন না মুক্ত আবার ধারণ করে কারণ মেজাজ না হারানোর গ্যারান্টি দেওয়ার মতো মুক্ত এখন আর হাতে নেই ।সেই দিন কোনো মতে কাটিয়ে পরের দিন ই অদৃজা জ্যোতিষ মহাশয়ের কাছে যাবে ঠিক করে ফেললো । মনে মনে ভাবলো যদি মুক্ত কে রিপ্লেস করে জ্যোতিষ মহাশয় পোখরাজ দেন তো ভালো হয় কারণ একবার তিনি পোখরাজ এর কথা বলেছিলেন বলে মনে পড়ছে ।মনে মনে ভেবে একটু চাপা আনন্দ ও পেলো অদৃজা । দেখা যাক কি করা যায়।ইতিমধ্যে মা হারা নিধি র কাছে রিকোয়েস্ট ও প্লেস করে ফেলেছেন মুক্ত ফিরে পাওয়ার জন্য ।
পরের দিন ভোর বেলা রোজ কার মতো তাড়াহুড়ো করে মেয়ের স্কুল এর টিফিন তৈরী করতে ছুটলো কিচেন এ অদৃজা । আজ সে বানাবে চওমিন। green vegetable কেটে সেটাকে একটা বড় ছাঁকনি তে নিয়ে কলের তলায় জল দিয়ে ধুতে গিয়ে কি যেন একটা শক্ত জিনিসে আঙ্গুল ঠেকলো ।
আরে এ যে তার হারিয়ে যাওয়া মুক্ত তাকে দেখে খিল খিল করে হাসছে । ক্ষনিকের জন্য আনন্দে উচ্ছসিত হয়ে অদৃজা মনে মনে ভাবলো বাপ্ রে বাপ্ গ্রহের জগতেও কি অসম্ভব কম্পিটিশন ।খালি একটু ভেবেছি পোখরাজ দিয়ে রিপ্লেস করবো ..........নিজের জায়গা কেউ ছাড়তে চায় না । আনন্দে গদ গদ হয়ে অদৃজা যখন মা কে জানালো যে হারানো মুক্ত পাওয়া গেছে ,মা এক মুখ গর্বিত হাসি হেসে বললেন জানতাম তো আমার হারা নিধি কখনোই বিফল হয় না । মা এর অবাক করার মতো কনফিডেন্স দেখে অদৃজা হয়তো সেদিন ভেবেছিলো " বিশ্বাস এ মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর "
বেশ কিছুদিন বাদে আবার একই ঘটনা ঘটে লাল প্রবাল কে নিয়ে । সেদিন ঘুমাতে যাওয়ার সময় আবার অদৃজা দেখে খাঁচা আছে পাখি ফুড়ুৎ। এবার ও মা এর শরণাপন্ন অদৃজা ।মা র কনফিডেন্স এর উপর তার ও কেমন যেন একটা কনফিডেন্স জন্মেছে । তাই এবারের মতো অন্য পাথর দিয়ে রিপ্লেস করার কথা সে মাথায় আনে নি ।
মা যথারীতি ভক্তি সহকারে হারা নিধি র কাছে রিকোয়েস্ট প্লেস করে দিয়েছেন কিন্তু এবার দু দিন কেটে গেলো প্রবাল আর ধরা দেয় না । একটু একটু কষ্ট ও হচ্ছে প্রবাল এর জন্য অদৃজার । শত হোক রক্তক্ষরণ থেকে এতগুলো বছর আগলে তো রেখেছে অদৃজা কে । এমন ই একদিন অফিস থেকে বেড়িয়ে চার চাকায় স্টার্ট দিতেই কি যেন একটা লাল ছোট জিনিস ড্রাইভার এর পাশের সিট এর তোলা থেকে গড়িয়ে এলো আবছা আলোয় অদৃজা দেখতে পেলো ।সাথে সাথে ভিতরের লাইট জ্বালিয়ে আনন্দে আত্মহারা অদৃজা । আজ যেন চিৎকার করে গাইতে ইচ্ছে করছে " হৃদয় আমার নাচে রে আজিকে , ময়ূরের মতো নাচে রে "। প্রবাল কে পেয়ে অদৃজা আজ confused থ্যাঙ্কস কাকে জানাবে মা কে তার কফিডেন্স এর জন্য না হারা নিধি কে for granting রিকোয়েস্ট ????
গল্প কাল্পনিক নয় .....
