ফেইসবুক
ফেইসবুক
ছোট বেলায় যখন ক্লাস ১১ এ পড়ি তখন আলাপ হয় আমাদের ই পাড়ার এক সিনিয়র ছেলের সাথে অদ্ভুত ভাবে এক আষাঢ়ের ঝোড়ো সন্ধ্যায়। আমি অদৃজা। আর সিনিয়র ছেলে টি কৃষ্ণেন্দু । মাত্র দু বছরের সিনিয়র আমার থেকে। আলাপ ধীরে ধীরে নিজেদের অজান্তেই একদিন ভালোবাসায় পরিণত হয়।
বেশ দেখতে ছিল কৃষ্ণেন্দু কে। লম্বা, টানা টানা চোখ , মুখে মিষ্টি এক সরল হাসি। গায়ের রং কালো। যাকে বলে অ্যাংরি ইয়ং ম্যান (না হাসলে)। তার ফ্যান ফল্লওইংস ও কম ছিল ন। সেসময় তো ফলোয়ার ফেইসবুক, পেজ বা ইনস্টাগ্রাম এ কাউন্ট করা যেত না তখন শুধু মাত্র অনুভূতি আর উপলব্ধি তে ধরা পড়তো এই ভালো লাগা ব্যাপারটা। সে যাই হোক কৃষ্ণেন্দু র এসবে কোনো ভৃক্ষেপ ও ছিল না , মাঝে মাঝে মনে হতো আমার প্রতি ও তার এক উদাস ভালোবাসা। কিন্তু এক নিখাদ ভালোবাসার বন্ধন থাকতো আমাদের মধ্যে।
যত দিন যায় বুঝতে পারি সে বড়োই আত্মভোলা ,পড়াশুনা তার ভালো লাগে না অথচ যথেষ্ট মেধাবী। কেমন যেন এক অদৃশ্য কষ্ট মাখানো জীবন।
আমি উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে এডমিশন নিলাম যাদবপুর ইউনিভার্সিটি তে। ধীরে ধীরে কৃষ্ণেন্দু র সাথে যোগাযোগ কমতে লাগলো পড়াশুনা র চাপে ,দেখা হওয়ার সুযোগ ও গেলো কমে। কারণ তখন আমি থাকতাম হোস্টেল এ।
আজ দীর্ঘ ৩০ বছর পর ফেইসবুক স্ক্রল করতে করতে নাম ভেসে এলো এক ২০ বছর বয়সী ঝক ঝকে ,বুধদ্ধিদীপ্ত এক কিশোরীর। নাম কৃষ্ণকলি চ্যাটার্জী। JNU র স্টুডেন্ট। বাহ্ বেশ দেখতে তবে সত্যি কৃষ্ণকলি ,কিন্তু সেই টানা টানা চোখ, মিষ্টি হাসি। তবে প্রতিবাদী ব্যক্তিত্ব মনে হলো। ট্রল করতে লাগলাম অদম্য উৎসাহে। ঠিক যা ভেবেছিলাম ,কৃষ্ণেন্দু তনয়া। না হলে চেহারার এতো মিল ! সেই হাসি ....
উৎসাহ উদ্দীপনায় খুঁজে বেড়াতে লাগলাম কৃষ্ণকলি র মা বাবা র ফেইসবুক প্রোফাইল। এতো বছর বাদে আজ মনে অনেক প্রশ্ন , কেমন আছে কৃষ্ণেন্দু ? এখনো কি আগের মতো আত্মভোলা?এখন কি তার সে হাসি মিষ্টি মধুর না সময়ের সাথে তা মলিন হয়েছে? এখনো কি তার জীবনে কষ্ট র রেশ আছে?কে কৃষ্ণেন্দু র সন্তানের মা ? তার সন্তানেৱ মা এর সাথে কি সে অদৃজা র কোনো মিল খুঁজে পাবে ?চাপা উত্তেজনায় পাগলের মতো খুঁজতে লাগলাম কৃষ্ণেন্দুর জীবনসঙ্গিনী কে ও ? অবশেষে পেলাম ,তবে কৃষ্ণেন্দুর জীবন সঙ্গিনী কে ,কৃষ্ণেন্দু কে নয় ।
চিনতে পারলাম কৃষ্ণকলি র জন্মদাত্রী কে। অদ্ভুত রাগ ,অভিমান এ মন টা দুমড়ে ,মুচড়ে গেলো , অশ্রু দীপ্ত চোখ চিনতে পারলাম পাড়ার সেই ছোট্ট মেয়ে টি কে। যে এখন প্রায় পঞ্চাশঊর্ধ নারী। তার নাম কাবেরী , কাবেরী রায়।
খুব অবাক লাগলো সে এখনো কাবেরী রায় ,চ্যাটার্জী নয়
কেন? আমাদের পাড়াতে থাকতো। বয়েসে আমার থেকে বেশ ছোট। মেডিকেল পড়তো। কিছুতেই মেলাতে পারছি না কাবেরী কৃষ্ণেন্দু র জুটি কে। মনে মনে অনেক হিসেবে নিকেশ ই আজ মিথ্যে হয়ে গেলো।
আমি যখন সবে স্নাতকোত্তর হয়ে ইকোনোমিস্ট হিসেবে PSU তে join করি তখন শুনেছিলাম কৃষ্ণেন্দু ছোট খাটো একটা বিসনেস করে। কি করে তাও জানতাম না। খালি জানতাম বাস্তব ভীষণ কঠিন ,পিছনে ফিরে দেখা ঠিক নয়। ভয় পেয়েছিলাম সেই কঠিন বাস্তবে যেন সেই ছোট বেলার নির্মল ,স্নিগ্ধ ভালোবাসা না ক্ষত বিক্ষত হয়ে যায়। স্বচ্ছ কাঁচের মতো ভালোবাসা কে মনের গহনে সযত্নে আগলে রেখে ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে চলেছিলাম।
আজ মনে হয় সত্যি কি কাবেরী ভালোবাসায় আমাকে টেক্কা দিতে পেরেছে ? তবে কেন তার ফেইসবুক প্রোফাইল ফটো এতো সাদা মাটা ? বিবাহিত মহিলার কোনো নিদর্ষণ নেই। পাগলের মতো খুঁজেও কৃষ্ণেন্দু র কোনো ফটো মা বা মেয়ের ফেইসবুক এ পেলাম না ,খালি পেলাম : Family details:
Father 's Name : Krishnendu Chatterjee
Mother 's Name : Dr.Kaberi রায়
অবশ্যই Collected from facebook of Krishnakali Chatterjee .
সবশেষে মার্ক জুকেরবার্গ জানাই তোমাকে হাজারো কুর্নিশ। আজ কিছুক্ষনের জন্যে হলেও তুমি ৩০ বছর আগের কিছু স্মৃতি কে জীবন্ত করে তুলেছো আদৃজা র মনে।
কিছু অজানা প্রশ্নের মুখোমুখি করেছে দৃঢ় চেতা অদৃজা কে। হয়তো আশায় বেঁচে থাকবে আমাদের অদৃজা আবার কোনো আষাঢ়ের ঝোড়ো হাওয়ায় হঠাৎ দেখা হবে দুজনার।
