বিজয় নিশান
বিজয় নিশান




সবাই স্পেস সেন্টারে বসে আছে অধীর আগ্রহে। পৃথিবীর দিকে ছুটে আসছে কোন নক্ষত্রের অংশ বা স্পেসশিপ। দূর থেকে এখনো সেটা বোঝা যাচ্ছে না। আসলে টেলিস্কোপে ধরা পড়ছে না ঠিকঠাক। পৃথিবী থেকে অনেক দূরে থাকায় মনে হয় এরকম হচ্ছে। কিন্তু এর গতি এত বেশি কিছু সময় পরে হয়তো ধরা পড়বে টেলিস্কোপে। সেই উদ্দেশ্যেই সবাই টেনশন নিয়ে বসে আছে এখানে।
কয়েক ঘণ্টা বাদেই সবার নজরে পড়লো তাদের সামনে রাখা কম্পিউটারের স্ক্রিনে ফুটে উঠেছে কোন একটা স্পেসশিপের ছবি। বাইরের কোন গ্যালাক্সি থেকে ছুটে আসছে সেটি। কিন্তু পৃথিবীর রাডারে ধরা পড়েনি। নিশ্চয়ই উন্নত প্রযুক্তির স্পেসশিপ। সবাই এখন আরো বেশি টেনশনে পড়ে গেল। বাইরে থেকে স্পেসশিপ আসা মানে অন্য গ্রহের প্রাণীরা আসছে। তাদের সম্পর্কে কোন তথ্যই নেই পৃথিবীর মানুষের।
ভিনগ্রহীরা ভালো হতে পারে আবার খারাপ হতে পারে। আক্রমণের কোন উদ্দেশ্য নিয়ে আসতে পারে। আর এরা যদি মানুষের চেয়ে বেশি উন্নত হয় তাহলে তো চিন্তার বিষয়। খুব সহজেই ঘায়েল হয়ে যাবে তাহলে মানুষের পৃথিবী।
ভিনগ্রহীদের পাঠানো সংকেত ফুটে উঠছে কম্পিউটারের স্ক্রিনে। কিন্তু সেগুলো উদ্ধার করতে পারছে না মানুষ। তাদের কম্পিউটারে লোড করা কোন ভাষার সঙ্গে এটা মিলছে না। তাই তারা কি ভাষায় সংকেত পাঠাচ্ছে এটা ধরতে পারছে না। স্পেস সেন্টারের সবার মাথায় হাত। এ কোন সমস্যার মধ্যে পড়া গেল। ভিনগ্রহীরা কিছু বলছে কিন্তু তা বোঝার ক্ষমতা তাদের নেই।
যে গতিতে মহাকাশে স্পেসশিপটা ছুটে আসছে তাতে কিছু সময়ের মধ্যে এখানে পৌঁছে যাবে। তখনকার কথা ভেবে সবাই শিঁউরে উঠছে। তাই এই খবরটা আর চেপে না রেখে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কানে পৌঁছে দিলো স্পেসস্টেশন চিফ। তাদেরকে যে কোন ঘটনার জন্য তৈরি থাকতে বলল। বিভিন্ন শাখার বিজ্ঞানীদের ঘটনাটা জানানো হলো। কাকে কখন লাগবে সেটা তো বোঝা যাচ্ছে না।
অবশেষে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করল ভিনগ্রহীদের মহাকাশযান। স্পেস স্টেশনের রাডারে ধরা পরল এক অন্যরকম রেডিয়েশন। সেটা ঠিক কী ধরনের তাও ধরতে পারছে না স্পেস স্টেশনের অত্যাধুনিক প্রযুক্তিও। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো ক্ষতির আশঙ্কা হয়নি। তবে হবে না একথা বলাও যায় না। ঝড়ের আগে যেমন প্রকৃতি শান্ত হয়ে যায় ঠিক তেমন অবস্থা।
মহাকাশযানটা যেখানে ছিল সেখানে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তার একটা অংশ খুলে গেল হাঁ করার মত। কিছুক্ষণ পরে সেখান দিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে ক্ষুদ্র জিনিস বেরিয়ে এলো বাইরে। সেগুলো ছুটে আসছে পৃথিবীর দিকে। কোন মারণাস্ত্রের প্রয়োগ করছে মনে হয় মহাকাশযান থেকে ভিনগ্রহীরা। কিন্তু কি সেটা বুঝতে পারছে না মানুষরা।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রক থেকে যে সর্তকতা নেওয়া হয়েছিল তাতে কোন কাজ হচ্ছে না। তাদের অস্ত্রশস্ত্রে মানুষের সঙ্গে লড়াই করা যায় কিন্তু এই ভিনগ্রহীদের সঙ্গে পারা যাবে না। গবেষকরা জানিয়েছেন ভিনগ্রহীরা স্পেসশিপ থেকে যা পাঠিয়েছে সেগুলো এক ধরনের ভাইরাস। এর আক্রমণ করেছে সারা পৃথিবীকে। প্রত্যেকের ঘরে ঘরে ঢুকে গেছে এই ভাইরাস।
ভিনগ্রহীরা তাদের স্পেসশিপ থেকে ছোট ছোট যানে করে ভাইরাসদের ইনজেক্ট করেছে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে। আর বর্তমানে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের যা অবস্থা তা এই ভাইরাসের একদম স্বর্গতুল্য। তারা এখানে এসে তাদের আক্রমণের ধার বাড়িয়ে তুলেছে।
মানুষদের মধ্যে এখন আর একতা নেই। তারা যে যার মত চলছে। কেউ কারো সাথে পাছে নেই। এই ভাইরাসের আক্রমণে তাই তারা নাজেহাল হয়ে পড়েছে। আগে ভাইরাস গুলো চোখে দেখা যেত না। কিন্তু এই ভাইরাসগুলি আকারে ছোট কিন্তু চোখে দেখা যায়। এরা একেবারে অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সজ্জিত। তার সামনে পৃথিবীর সবকিছুই বাচ্চা। এর উত্তর দেওয়ার ক্ষমতা পৃথিবীর মানুষের নেই। এরা দলবদ্ধ ভাবে কোন বাড়িকে টার্গেট করছে। আর সেখানে ঢুকে পড়ছে খুব সহজেই। কেননা এরা দলবদ্ধ আর মানুষ এখন দলভঙ্গ নিঃসঙ্গ একাকী। তাই তারা প্রতিরোধের কোনো সুযোগ পাচ্ছে না। তবু লড়াই চলছে তাদের সঙ্গে। এক অসম লড়াই। সে লড়াইয়ের শেষে মানুষের অস্তিত্ব থাকবে কিনা তা বলা যায় না।
অবশেষে পৃথিবীর একদল বিজ্ঞানী আবিষ্কার করল এই ভাইরাসদের পরাজিত করার রহস্য। কোন ইনজেকশন বা ভ্যাকসিন নয় একটা অন্য ধরনের প্রাচীন তত্ত্ব। একতার তত্ত্ব। মানুষ হিংসা বিবাদে জড়িয়ে একে অপরের থেকে দূরে সরে গেছে ক্রমাগত। তাদের মধ্যে আর একতা নেই। সেই সুযোগটাই নিয়েছে এই ভাইরাসরা। যদি মানুষকে জোটবদ্ধ করা যায় তবে এদের ক্ষমতা কমে যাবে। তখন মোক্ষম আক্রমণ করলে এদের বিনাশ সম্ভব।
আরো একটা জিনিস আবিষ্কার করেছে বিজ্ঞানীরা। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের যে পরিবর্তন হয়েছে সেটা ভাইরাসদের বসবাসের উপযোগী। বিষাক্ত সব গ্যাস ছড়িয়ে রয়েছে এখানে। মানুষের জন্য ক্ষতিকারক গ্যাসগুলি এই ভাইরাসদের শারীরিক গঠনের উপযোগী। তাই অতিসত্বর পৃথিবীতে সবুজায়ন প্রকল্প চালু করতে চলেছে তারা। সঙ্গে সঙ্গে বিষাক্ত গ্যাসের উৎস গুলিকে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যাতে করে এই বিষাক্ত গ্যাস বায়ুমন্ডলে ছড়িয়ে না পড়ে। তবে এর জন্য সময় প্রয়োজন। কিন্তু এত সময় নিলে ভাইরাসের কবলে মানুষ প্রজাতি বিলুপ্তির সম্মুখীন হয়ে যাবে। তাই কৃত্রিম উপায়ে বনসৃজন এর পদক্ষেপ নিয়েছে তারা।
বিজ্ঞানীরা যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে সেগুলি চালু হয়ে গেছে। ধীরে ধীরে ভিনগ্রহীদের পাঠানো ভাইরাসগুলির ক্ষমতা কমে আসছে। মানুষ একতাবদ্ধভাবে এদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে দিয়েছে। এতে অনেক মানুষ মারা গেলেও হাল ছাড়েনি তারা। তাদের প্রচেষ্টা পৃথিবী থেকে ভাইরাসকে নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছে।
ভিনগ্রহীদের মহাকাশযান পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল থেকে ফিরে যাচ্ছে তাদের গ্যালাক্সির দিকে। মানুষেরা জয়ী হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। পৃথিবীর বুকে তারা উড়িয়ে দিয়েছে মানুষের বিজয় নিশান।