ভোটের ভূত
ভোটের ভূত
ভোটটা এবার কিন্তু দিতে হবে কাকিমা।
জয়ের মাথায় রক্ত ওঠে, মোটেও না অমলা, কোনও কালপ্রিটকে না।
হে হে করে দাড়িওলা ছেলেটা এগিয়ে আসে, কী বলে কাকু! বিপ্লব দেখাচ্ছেন! এতদিন মাস্টারি করছেন, গণতন্ত্রের কাজে বাধা দিচ্ছেন?
চমকে ওঠে জয়, এভাবে গুন্ডামি-মাস্তানি করে...
ছেলেটা বলে, আজকের দিনে আপনি যেমন সূর্য সেন হতে পারবেন না, আমিও কোনও ক্ষুদিরাম হতে পারব না। এখন স্বদেশী শাসন, সশস্ত্র আন্দোলন মানে কিশেনজি, হতে পারবেন? কাকিমাকে ভোটটা দিতে দেবেন, এটা গণতন্ত্র।
আপনি মাস্টারি করেন, আমরা সমাজসেবা। বাধা দেবেন না। ছেলেগুলো চলে যায়।
সিঁড়ি বেয়ে জয় ছাদে এসে দাঁড়ায়। দূরে জংলি গাছগুলোর আড়ালে কয়েকটা লাইট। বুনো সাপের মতো এঁকেবেঁকে। এই রাস্তায় চাল যায়, টাকা যায়। জয় সোজা হয়। আকাশে কাস্তে চাঁদের দিকে চেয়ে ফিসফিস করে, গণতন্ত্র লুট হচ্ছে মার্কস।
অমলা পাশে এসে দাঁড়ায়, তুমি কাল ভোটে যাবে, আমার ভয় করছে। ওরা করুণাদির বাড়িতে শাসিয়ে গেছে, ভোট না দিলে মা-মেয়েকে...।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে জয়, কারা প্রতিদিন ধর্ষণ করতে চায় মাকে, মেয়েকে, দেশকে?
****
ভোটের ডিউটিতে যেতে ইচ্ছে করে না জয়ের। বউ বলে, কতজন নির্দলে দাঁড়ায়, তুমি পারো না?
সে জবাব দিতে পারে না।
ডিসিআরসি থেকে বুথে পুঁছাতে রাত আটটা বেজে যায়। কয়েকজন ছেলে সামনে, আপনারা?
আমরা পোলিং এজেন্ট।
বেশ তো, কাল আসুন।
ছেলেগুলো সোজা চোখে চেয়ে থাকে। টিমের ফার্স্ট পোলিং অফিসার বলে, স্যার সেন্ট্রাল ফোর্স?
আছে, তবে তাদের কাজ নেই। শান্তিপূর্ণ এলাকা, আমরা নির্বিঘ্নে ভোট করাই। ছেলেগুলো এগিয়ে আসে।
একটা কথা স্যার...। মুহূর্তে লোডশেডিং। ছেলেগুলো আরও সামনে, এবারে পঞ্চায়েতটা কিন্তু আমাদের চাই স্যার।
অন্ধকারে একটা ভৌতিক আলোড়ন ওঠে। একজন হি-হি করে হাসে, দরকারে কিছু ভোট আমরা দেব।
মানে! জয়ের বুক দুরু-দুরু।
যে ভোটারগুলো আসবে না...। ছেলেগুলো পিছন ফেরে। হাঁটতে থাকে। সেকেন্ড পোলিং অফিসার বলে, জায়গা সুবিধার নয় স্যার।
কয়েকটা কুকুর ডাকে, উপরে বাঁশগাছ দোল খায়। অমলার মুখটা ভাসে, দুর্গা দুর্গা...।