Atrayee Sarkar

Inspirational Others

3  

Atrayee Sarkar

Inspirational Others

ভগবদ্গীতা

ভগবদ্গীতা

9 mins
474


 ভগবদ্গীতা মানে আমরা শুধু জানি শ্রীকৃষ্ণের বাণী। তবে সেটা  কি একবারও পড় দেখিনা।

কোন মা, বাবা ও তাদের সন্তানদের পড়ায় না ভগবদ্গীতা,, এই ভেবে সন্তান সন্নাসী হয়ে যাবে। সন্তানকে বলে, ভগবদ্গীতা সন্নাসীরা পড়ে। 

ভগবদ্গীতা পড়লে শ্রীকৃষ্ণ খুশি হন। 

শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন পিতামহ। কারণ, শ্রীকৃষ্ণ সকলের পিতা। ব্রহ্মার ও পিতা শ্রীকৃষ্ণ। মৃত্যুর সময় যদি চোখ বন্ধ করে কৃষ্ণকে ভালোবাসে মনেও করে, সে চলে যেতে পারে কৃষ্ণলোকে। সকল ঈশ্বরের পুজো আমরা করতেই পারি,, তবে শ্রীকৃষ্ণর পুজো আমাদের করতেই হবে। ভালোবেসে ওনাকে পুজো দিয়ে ওনার সেবা করলে উনি খুশি হন। 

এই পৃথিবীতে যা আছে সবকিছুই শ্রীকৃষ্ণের সৃষ্টি। আমরা যা পাচ্ছি, সেটাও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ই অবদান। তাই নিজেকে কখনও মালিক ভাবা উচিত নয়। মালিক একমাত্র ই শ্রীকৃষ্ণ। 

 আমরা ভাবি সবকিছুই আমাদের। টাকা কামিয়েই আমি পেয়েছি। মরে গেলে তো আমার এই দেহটাকেও পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হবে। যতদিন বেঁচে আছি, বলে জাই, এটা আমার, এটা আমার। মরে গেলে,, এটাও বলতে পারব না,, আমি কে। আমরা এতটাই অন্ধ, যে শুধু টাকা কামানের কথা ভাবি, ঈশ্বর কে হৃদয় দিয়ে ভালোওবাসিনা। ওই রোজ একটু পুজো করেনি। আর সংসার ছাড়া কিছুই চিনিনা। কুকুর বিড়ালের মতন একে অপরের সঙ্গে ঝগড়াও করি। কোটি টাকার মালিক হলে আনন্দে নাচতে থাকি। মরে গেলে কি একটা টাকাও আমার থাকবে? না। এমনকি ধীরে ধীরে মানুষ আমায় ভুলেও যাবে। আমরা এইরকম বদ্ধ হয়ে আছি। তাই সকল মানুষকে বদ্ধ জীব বলা হয়। বদ্ধ মানে, যারা নিজেদের কথা ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারে না। কিছু মানুষ ভাবে আমি ইঞ্জিনিয়ার হব, কেউ ভাবে ডাক্তার হব, কারোর ইচ্ছে হয় খেলোয়াড় হতে। বিভিন্ন মানুষের থাকে বিভিন্ন ইচ্ছে। কিন্তু আমরা কখনও ই ঈশ্বর দর্শনের কথা ভাবিও না। কথামৃত কে পড়বে? সবাই মনে করে, ধুর, ওসব কেউ পড়ে নাকি? চাকরি করে নিজের পায়ে দাড়া। আর যে মানুষটা তোকে এইসবের কথা বলছে তাকে পাত্তা দিবিনা। ফালতু। নেই কাজ তাই খই ভাজ। মানুষ হয়ে জন্মে আমরা এইসবই করি। আমাদেরকে এই বদ্ধ স্থান থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্যই শ্রীকৃষ্ণ বহু রূপে, পৃথিবীতে অবতরণ করেন। শ্রীকৃষ্ণ অবতরণ করেছিলেন বহু রূপে, মৎস রূপে, বামন রূপে, বৃন্দাবনে জন্মেছিলেন একজন সাধারণ মানুষ রূপে, কংস কে ধংস করতে,রামায়ণে, রাম রূপে, মহাভারতে কৃষ্ণ রূপে। কিন্তু আমরা এত অল্প বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ, যে আমরা চিনতেই পারিনা ওনাকে। ভাবি আমাদের ই মতন একজন মানুষ। শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন পরমেশ্বর। কোন ঈশ্বরকে যদি নাও পুজো করি,, আমাদের অন্তত উচিত শ্রীকৃষ্ণকে রোজ ভালোবেসে পুজো করা। যদি আমরা জীবের সব মায়া ত্যাগ করে শুধু ওনার ভক্ত হয়ে যাই, তাহলে আমাদের এই জড় জগতে আবার জন্ম নিতে হবে না। মানুষ মরতে পারে, কিন্তু তাঁর আত্মা নয়। আত্মা জন্মায়ও না, মরেও না, আত্মাকে ভেজানোও যায় না, সোকানোও যায় না, আত্মাকে মেরে ফেলাও যায় না। কর্মফল অনুযায়ী আত্মা এক দেহ থেকে অন্য দেহে চলে যায়। 

মানুষ হয়ে জন্মে আমি যদি করতে পারি খুবই ভাল কাজ, খুশি করতে পারি ঈশ্বরকে, তাহলে এই জড় জগতে দ্বিতীয়বার আমারা না ও জন্মাতে পারি।

  

এতো ভাল কাজ আমরা কেউই করতে পারব না। তাই আমাদের উচিত ভগবদ্গীতা পড়ে শ্রীকৃষ্ণকে খুশি করা। তবে সবকিছুই আমাদের নিজেদের মনের ওপর নির্ভরশীল। জোর করে কিছু করা যায় না। 


শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা যথাযথ


 অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ


(মূল সংস্কৃত শ্লোক ও অনুবাদ)


গীতা-মাহাত্ম্য


 


গীতাশাস্ত্রমিদং পুণ্যং যঃ পঠেৎ প্রযতঃ পুমান্।।১।।


ভগবদগীতার নির্দেশকে যথাযথভাবে অনুসরণ করতে পারলে, অতি সহজেই সমস্ত ভয় ও উদ্বেগ থেকে মুক্ত হওয়া যায়। এই জীবনে ভয় ও শোকাদি বর্জিত হয়ে পরবর্তী জীবনে চিন্ময় স্বরূপ অর্জন করা যায়।




গীতাধ্যায়নশীলস্য প্রাণায়মপরস্য চ। 


নৈব সন্তি হি পাপানি পূ্র্বজন্মকৃতানি চ।।২।।


“কেউ যদি আন্তরিকভাবে এবং অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে ভগবদগীতা পাঠ করে, তা হলে ভগবানের করুণায় তার অতীতের সমস্ত পাপকর্মের ফল তাকে প্রভাবিত করে না।”




মলিনে মোচনং পুংসাং জলস্নানং দিনে দিনে। 


সকৃদ্ গীতামৃতস্নানং সংসারমলনাশনম্।। 


“প্রতিদিন জলে স্নান করে মানুষ নিজেকে পরিচ্ছন্ন করতে পারে, কিন্তু কেউ যদি ভগবদগীতার গঙ্গাজলে একটি বারও স্নান করে, তা হলে জড় জীবনের মলিনতা একেবারেই বিনষ্ট হয়ে যায়।”




গীতা সুগীতা কর্তব্যা কিমন্যৈঃ শাস্ত্রবিস্তরৈঃ।


যা স্বয়ং পদ্মনাভস্য মুখপদ্মাদ্ বিনিঃসৃতা।।৩।। 


 যেহেতু ভগবদগীতার বাণী স্বয়ং পরম পুরুষোত্তম ভগবানের মুখনিঃসৃত বাণী, তাই এই গ্রন্থ পাঠ করলে আর অন্যকোন বৈদিক সাহিত্য পড়বার দরকার হয় না। গভীর নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে নিয়মিতভাবে ভগবদগীতা শ্রবণ ও কীর্তন করলে আমাদের অন্তর্নিহিত ভগবদ্ভক্তির স্বাভাবিক বিকাশ হয়। বর্তমান জগতে মানুষেরা নানা রকম কাজে এতই ব্যস্ত থাকে যে, তাদের পক্ষে সমস্ত বৈদিক সাহিত্য পাঠ করা সম্ভব নয়। সমস্ত বৈদিক সাহিত্য পড়বার প্রয়োজনও নেই। এই একটি গ্রন্থ ভগবদগীতা পাঠ করলেই মানুষ সমস্ত বৈদিক জ্ঞানের সারমর্ম উপলব্ধি করতে পারবে, কারণ ভগবদগীতা হচ্ছে বেদের সার এবং এই গীতা স্বয়ং ভগবানের মুখনিঃসৃত উপদেশ বাণী।  




 ভারতামৃতসর্বস্বং বিষ্ণুবক্ত্রাদ বিনিঃসৃতম্।


গীতাগঙ্গোদকং পীত্বা পুনর্জন্ম ন বিদ্যতে।।৪।। 


“গঙ্গাজল পান করলে অবধারিতভাবে মুক্তি পাওয়া যায়, আর যিনি ভগবদগীতার পুণ্য পীযুষ পান করেছেন, তাঁর কথা আর কি বলবার আছে? ভগবদগীতা হচ্ছে মহাভারতের অমৃতরস, যা আদি বিষ্ণু ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজেই বলে গেছেন। (গীতা- ভগবানের চরণপদ্ম থেকে উদ্ভুত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ভগবানের মুখ ও পায়ের মধ্যে অবশ্য কোন পার্থক্য নেই। তবে আমাদের এটি বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, ভগবদগীতার গুরুত্ব গঙ্গার চেয়েও বেশি।




সর্বোপনিষদো গাবো দোগ্ধা গোপালনন্দনঃ। 


পার্থো বৎসঃ সুধীর্ভোক্তা দুগ্ধং গীতামৃতং মহৎ।।৫।। 


“এই গীতোপনিষদ্ ভগবদগীতা সমস্ত উপনিষদের সারাতিসার এবং তা ঠিক একটি গাভীর মতো এবং রাখাল বালকরূপে প্রসিদ্ধ ভগবান শ্রীকৃ্ষই এই গাভীকে দোহন করেছেন। অর্জুন যেন গোবৎসের মতো এবং জ্ঞানীগুণী ও শুদ্ধ ভক্তেরাই ভগবদগীতার সেই অমৃতময় দুগ্ধ পান করে থাকেন।”




একং শাস্ত্রং দেবকীপুত্রগীতম্।


একো দেবো দেবকীপুত্র এব। 


একো মন্ত্রস্য নামানি যানি 


কর্মাপ্যেকং তস্য দেবস্য সেবা।।৭।। 


বর্তমান জগতে মানুষ আকুলভাবে আকাঙ্ক্ষা করছে একটি শাস্ত্রের, একক ভগবানের, একটি ধর্মের এবং একটি বৃত্তির। তাই, একং শাস্ত্রং দেবকীপুত্রগীতম্- সারা পৃথীবীর মানুষের জন্য সেই একক শাস্ত্র হোক ভগবদগীতা। একো  মন্ত্রস্তস্য নামানি-একক মন্ত্র, একক প্রার্থনা, একক স্তোত্র হোক তাঁর নাম কীর্তন-


 


শৌনক বলিলেন- হে সূত, ব্যাসদেব যেভাবে গীতার মাহাত্ম্য বর্ণনা করিয়াছিলেন তাহা সেভাবে বর্ণনা কর। ।।১।।  



সূত বলিলেন- মহাশয়, গীতার মাহাত্ম্য অতি গোপনীয়। তাহা ঠিকভাবে বলিবার শক্তি তো কাহারও নাই।।২।। 



শ্রীকৃষ্ণ ইহা সবচেয়ে ভাল জানেন, তবে অর্জুন, ব্যাসদেব, শুকদেব, যাজ্ঞবল্ক্য ও জনক রাজা ইহার কিছুটা জানেন।।৩।।



ব্যাসদেবের মুখে আমি যাহা শুনিয়াছি তাহাই আপনার নিকট বলিতেছি শুনুন।।৪।।



উপনিষদগুলি গাভীস্বরূপ, শ্রীকৃষ্ণ হইলেন সেই সব গাভীর দোহনকারী। অর্জুন সেই গাভীর বাছুর (বৎস) আর গীতার উপদেশরূপ অমৃত হইল সেই গাভীর দুধ।।৫।।



শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনের সারথিরূপে গীতামৃত দান করিয়া ছিলেন। আমি সেই জন্য শ্রীকৃষ্ণকে প্রণাম করি।।৬।।



যে ব্যাক্তি ঘোর সংসাররূপ- সমুদ্র পার হইতে চান তিনি গীতারূপ-তরণীর সাহায্যে সুখে পারাপার হইতে পারেন।।৭।।



গীতাগ্রন্থ পাঠ না করিয়া যে ব্যক্তি মুক্তি লাভ করিতে চায়, সেই ব্যক্তি অজ্ঞান। বালকেও তাহাকে উপহাস করে।।৮।।



যিনি রাত্রিদিন গীতা পাঠ করেন বা শ্রবণ করেন তিনি মানুষ নন দেবতুল্য।।৯।।



গীতাজ্ঞান হইলে ব্রহ্মতত্ত্ব জানা যায়। ব্রহ্মতত্ত্ব জানিলে স্বভাবতই ভক্তির উদয় হয়।।১০।।



গীতার আঠারটি অধ্যায়। তাহাতে ভক্তি-মুক্তির কথা আছে। তাহা জানিতে পারিলে ক্রমে ক্রমে চিত্তশুদ্ধি হয়।।১১।।



গীতাশাস্ত্র-জলে শ্রদ্ধার সহিত স্নান করিলে পাপ নষ্ট হয়, কিন্তু শ্রদ্ধাহীনের সব কিছু নষ্ট হয়।।১২।।



যে ব্যক্তি গীতার পঠন-পাঠন করে না, তাহার সমস্তই বিফল হয়।।১৩।।



যে ব্যক্তি গীতার মাহাত্ম্য জানে না, সে অজ্ঞান। তাহার জীবন বিফল।।১৪।।



যে গীতার অর্থ বুঝে না, সে অধম। তাহার শরীর আচরণ, বিত্তসম্পাদিতে ধিক।।১৫।।



যে গীতা জানে না, সে সকলের অধম। তাহার প্রারব্ধ, পূজা, প্রতিষ্ঠা, দান- সমস্তই বিফল।।১৬।।



গীতাশাস্ত্রে যাহার মন নাই, তাহার জ্ঞান, জ্ঞানদাতা, ব্রত, নিষ্ঠা সব বৃথা।।১৭।।



যে অর্থ বুঝিয়া গীতা পাঠ করে না, তাহার জ্ঞান আসুর জ্ঞান। তাহা নিষ্ফল হয়।।১৮।।



গীতা গ্রন্থ ধর্মময়। ইহা সমস্ত জ্ঞান দান করে। ইহার সমান পবিত্র আর কিছু নাই।।১৯।।



বিষ্ণুর পর্বদিনে যিনি গীতা পাঠ করেন, শত্রু কখনও তাহার কোন অনিষ্ট করিতে পারে না। ২০।।



শালগ্রামের নিকটে, দেবালয়ে, তীর্থস্নানে, নদীতীরে গীতাশাস্ত্র পাঠ করিলে অপার সৌভাগ্য লাভ হয়।।২১।।



দেবকীনন্দন শ্রীকৃষ্ণ গীতাপাঠে যত তুষ্ট হন, যজ্ঞ ব্রতাদিতেও তত তুষ্ট হন না।।২২।।



যে ভক্তির সহিত গীতা পাঠ করে তাহার অন্তরে পুরাণাদি সমস্ত শাস্ত্রের জ্ঞান ফুটিয়া উঠে।।২৩।। 



যোগস্থানে, সিদ্ধপীঠে, শিলাগ্রে, সজ্জনের সভায়, যজ্ঞে বা বিষ্ণু ভক্তের নিকটে গীতা পাঠ করিলে সিদ্ধিলাভ হয়।।২৪।।



প্রতিদিন গীতা পড়িলে বা শুনিলে অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল লাভ হয়।।২৫।।



যিনি গীতার অর্থ শোনেন, অন্যকে শোনান অথবা কীর্তন করেন, তিনি মুক্তি লাভ করেন।।২৬।।



যে ভক্তির সহিত গীতা দান করে তাহার ভার্যা প্রিয় ও গ্রহলক্ষী হয়।। ২৭।। 



সেই ব্যক্তি সৌভাগ্য আরোগ্য যশঃ ও সুখ লাভ করে। তাহার কোন দুঃখ হয় না।।২৮।। 



যে বাড়ীতে প্রতিদিন গীতার অর্চনা হয়। সে বাড়ীতে কোনরূপ দুঃখ বা অশুভ ঘটিতে পারে না।।২৯।।



সেই বাড়ীতে অধ্যাত্মিক, আদিভৈৗতিক ও আদি দৈবিক- এই তিনি প্রকার দুঃখ আসিতে পারে না।।৩০।।



প্রতিদিন গীতা পাঠ করিলে বিস্ফোটকাদি জন্মে না বরং কৃষ্ণের প্রতি একনিষ্ঠ ভক্তি লাভ হয়।। 



সর্বদা গীতা পাঠ করিলে সকলের সাথে বন্ধুত জন্মে।।৩২।।



গীতাপাঠী মহাপাপ এবং অতিপাপ করিয়াও পাপমুক্ত থাকে।।৩৩।।



গীতাপাঠী অনাচার ও অভক্ষ্য ভোজন করিলেও পাপ তাকে স্পর্শ করেন না।।৩৪।। 



গীতাপাঠী জানিয়া বা না জানিয়া যত পাপ করে গীতাপাঠের ফলে সমস্ত নষ্ট হয়।।৩৫।।



গীতাপাঠী যদি যেখানে সেখানে খায় বা যেখান সেখান হইতে দান গ্রহণ করে তথাপি সে পাপে লিপ্ত হয় না।।৩৬।।



গীতাপাঠী যদি অন্যায়ভাবে এই পৃথিবীও হরণ করিয়া লয়, গীতাপাঠের ফলে তাহার সেই পাপও নষ্ট হয়।।৩৭।।



যাহার মনপ্রাণ সর্বদা গীতায় নিবিষ্ট থাকে সেই ব্যক্তি পন্ডিত ও ক্রিয়াবান।।৩৮।।



যিনি দর্শনীয়, ধনবান, যোগী ও জ্ঞানী, তিনিই বেদার্থ দর্শক ও যাজ্ঞিক।।৩৯।।



যে গৃহে গীতাগ্রন্থ থাকে সেই গৃহ সর্বতীর্থের সার স্বরূপ।।৪০।।



যে প্রতিদিন গীতা পাঠ করে তাহার জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পর দেবগণ তাহাকে রক্ষা করেন।।৪১।। 



যেখানে গীতা পাঠ করা হয় সেখানে নারদাদি ভক্তগণসহ শ্রীকৃষ্ণ বিরাজ করেন।।৪২।।



যেখানে গীতার আলোচনা হয়,সেখানে শ্রীকৃষ্ণ রাধার সহিত বিরাজ করেন।।৪৩।।


 


শ্রীকৃষ্ণ বলিলেন- হে অর্জুন, গীতা আমার হৃদয়, গীতা আমার জ্ঞান, গীতাই আমার শ্রেষ্ঠ বল।। ৪৪।। 


 


গীতা আমার উত্তম স্থান। গীতা আমার পরমপদ, গীতা অতি গুহ্য বস্তু, গীতাই আমার গুরু।।৪৫।।


 


আমি গীতা আশ্রয় করিয়া থাকি। গীতাই আমার জীবন। গীতাকে আশ্রয় করিয়াই আমি ত্রিলোক পালন করি।।৪৬।।


 


গীতা আমার ব্রহ্মবিদ্যা। গীতা বাক্যাতীতা, সনাতনী ও মাত্রীরূপা।।৪৭।।


 


হে অর্জুন গীতার অনেক নাম। বলিতেছি শোন।।৪৮।।



 গীতার নাম সমূহ


গীতা, গঙ্গা, সাবিত্রী, সীতা, সত্যা, পতিব্রতা, ব্রহ্মাবলি, ব্রহ্মবিদ্যা, ত্রিসন্ধ্যা, মুক্তি-গেহিনী,অর্ধমাত্রা, চিতানন্দা, ভবঘ্নী, ভ্রানি-নাশিনী, বেদত্রয়ী, পরনন্দা, তত্ত্বার্থজ্ঞানমঞ্জরী।


 


যে ব্যক্তি স্থিরচিত্তে গীতা পাঠ করে তাহার সিদ্ধি জ্ঞান লাভ হয় এবং তিনি মৃত্যুর পর পরম পদ লাভ করেন।। ৫১।। 


 


সম্পূর্ণ গীতা পাঠে অসমর্থ হইলে অর্ধেক পাঠ করিলেও গো-দানের ফল লাভ হয়।।৫২।।


 


এক-তৃতীয়াংশ পাঠ করিলে সোমযোগের ফল লাভ হয়। আর ছয়ভাগের একভাগ পড়িলে গঙ্গাস্নানের ফল পাওয়া যায়।।৫৩।। 


 


প্রতিদিন গীতার দুইটি অধ্যায় পাঠ করিলে এক কল্পকাল ইন্দ্রলোকে বাস হয়।। ৫৪।।  


 


প্রতিদিন গীতার এক অধ্যায় পাঠ করিলে রুদ্রুলোক প্রাপ্তি হয়।।৫৫।।


 


গীতার অর্ধেক অধ্যায় বা এক- চতুর্থাংশ প্রতিদিন পাঠ করিলে শত বৎসর রবিলোকে বাস হয়।।৫৬।।


 


প্রতিদিনি অন্তত গীতার একটি শ্লোক পাঠ করিলেও অযুত বৎসরকাল চন্দ্রলোকে বাস হয়।।৫৭।।


 


গীতার দুই একটি শ্লোক পড়িয়া যে মারা যায়, সেই ব্যক্তি মৃত্যুর পর পরম পদ লাভ করে।।৫৮।।


 


মহাপাপীও যদি গীতা শ্রবন করে তবে তাহার মহাপাপ নষ্ট হয়, সে মুক্তিভাগী হয়।।৫৯।।


 


গীতা পুস্তক বুকে লইয়া যে প্রাণ বিসর্জন করে সে বিষ্ণুর সহিত বৈকুণ্ঠে বাস করে।।৬০।।


 


যে ব্যক্তি গীতার একটি অধ্যায় সঙ্গে লইয়া প্রাণ ত্যাগ করে সে পরজন্মে মানুষ হইয়া জন্ম গ্রহণ করে।।৬১।।


 


যে ব্যক্তি “গীতা” বলিতে বলিতে মারা যায়, তাহার শুভ গতি হয়।।৬২।।


 


গীতা পাঠ করিয়া যে কাজ আরম্ভ করা যায় সেই কাজই নির্দোষভাবে সুসম্পন্ন হয়। ৬৩।।


 


পিতৃশ্রাদ্ধে গীতা পাঠ করিলে পিতা সন্তুষ্ট হইয়া স্বর্গে গমন করেন।।৬৪।।


 


পিতৃগণ গীতাপাঠে সন্তুষ্ট হইয়া পুত্রকে আশীর্বাদ করিয়ো পিতৃলোকে চলিয়া যান।।৬৫।।


 


ধেনু পুচ্ছের সহিত গীতা দান করিলে তৎক্ষণাৎ দাতার বাসনা পূর্ণ হয়।।৬৬।।


 


ব্রাহ্মণকে স্বর্ণ সহিত গীতা দান করিলে দাতার পুনর্জন্ম হয় না।। ৬৭।।


 


একশত গীতা দানে ব্রহ্মলোক প্রাপ্তি হয়।।৬৮।।


 


গীতা গ্রন্থ দান করিলে সপ্তকল্পকাল বিষ্ণুর সহিত বাস হয়।।৬৯।।


 


গীতার ব্যাখ্যা শুনিয়া যে গীতা দান করে তাহার মনে বাসনা পূর্ণ হয়।।৭০।।


 


চারি বর্ণ মধ্যে মনুষ্য দেহ ধারণ করিয়া যে ব্যক্তি অমৃতময়ী গীতা পড়ে না বা শ্রবণ করে না, তিনি হস্তের অমৃত ত্যাগ করিয়া বিষ ভক্ষণ করেন।।৭১।। 


 


দুঃখার্ত ব্যক্তির যদি গীতাশাস্ত্রে জ্ঞান জন্মে তবে তাহার ভক্তি লাভ হয় এবং সুখী হয়।। ৭২।। 


 


জনকাদি রাজগণ গীতা পাঠ করিয়া মুক্তি লাভ করেন।। ৭৩।। 


 


গীতা জ্ঞান সম্পর্কে উচ্চ নীচে কলি ও প্রভেদ নাই ইহা সমগ্র জ্ঞানের পক্ষে সমান অর্থাৎ ব্রহ্ম জ্ঞানেরই সমান।।৭৪।।


 


যে ব্যক্তি গীতার নিন্দা করে সে প্রলয় কাল পর্যন্ত নরকে বাস করে।।৭৫।।


 


যে অজ্ঞান ব্যক্তি অহঙ্কার বশে গীতার অর্থ মানে না, সে কুন্তিপাক নরকে বাস করে।।৭৬।। 


 


যে নিকটে থাকিয়া গীতার অর্থ শ্রবণ করে না সে বার বার শূকর হইয়া জন্ম গ্রহণ করে।। ৭৭।। 


 


যে গীতা চুরি করিয়া আনে তাহার গীতা পাঠ বিফল হয়।।৭৮।। 


 


যে জন গীতার্থ শুনিয়া আনন্দ পায় না, পাগলের শ্রমের মত তাহার গীতাপাঠ বৃথা হয়।।৭৯।। 


 


গীতা পাঠ শুনিয়া যে যাহা দান করে, ভগভান শ্রীহরি তাহা সাদরে গ্রহণ করেন।। ৮০।।


 


বস্ত্রদ্রব্যাদি দিয়া গীতাপাঠককে তুষ্ট করিলে ভগবান শ্রীহরি তাহাতে সন্তুষ্ট হন।। ৮১।। 


 


সুথ বলিলেন- শ্রীকৃষ্ণ উক্ত এই গীতামাহাত্ম্য অতি পুরাতন। গীতাপাঠের পর মাহাত্ম্য পাঠ করিলে যথার্থ ফল লাভ হয়।। ৮২।। 


 


যিনি গীতা পাঠ করিয়া গীতার মাহাত্ম্য পাঠ করেন বা শ্রদ্ধার সহিত গীতা শোনেন, তাহার পরম গতি লাভ হয়।।৮৩।।


 


যিনি গীতার ব্যাখ্যার সহিত গীতার মাহাত্ম্য শোনেন, তাহার পুণ্য ফল ত্রিলোকে সর্ব সুখের কারণ হয়।।৮৫।।


 হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে

হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational