STORYMIRROR

Rima Goswami

Drama Romance Fantasy

2  

Rima Goswami

Drama Romance Fantasy

ভালোবাসার স্কোর যেখানে শুন্য ৩

ভালোবাসার স্কোর যেখানে শুন্য ৩

14 mins
201

ভালোবাসার স্কোর যেখানে শুন্য

(অথ মারমূখী আয়ুশমান)


উত্তরা  কোন ভাবেই নিজের ছেলের সামনে আসতে পারছিল না , কেন তার উত্তর জানা নেই । সকাল থেকেই উত্তরা কে কেউ দেখতে পাচ্ছিল না । কাল পর্যন্ত যে সমৃদ্ধর প্যান্ট হলুদ হয়ে গেছিল পিসীমাকে দেখে সেও উত্তরাকে আর দেখতে পাচ্ছিল না । উত্তরা আয়ুশকে দেখা না দিতে পেরে সোজা চলে যায় সমৃদ্ধর ঘরে , ওকে ভয় দেখিয়ে সব সত্যি রেকর্ড করে আয়ুশ এর হাতে তুলে দেবার জন্য । সমৃদ্ধর ঘরে গিয়ে তারা আর সমৃদ্ধকে ওই অবস্থায় দেখে উত্তরা বুঝে যায় সমৃদ্ধ সাময়িক ভাবে ভয় পেলেও এখন সে স্বাভাবিক রয়েছে । আর ইচ্ছা করেই সমৃদ্ধ আয়ুশ এর সামনে নাটক করে যাচ্ছে । তাই আয়ুশ যখন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল উত্তরা শেষ চেষ্টা করে , সমৃদ্ধর ঘরের দরজা শব্দ করে খুলে দেয় । সমৃদ্ধ পিসিকে দেখতে পায়নি আর আদিম ক্রিয়ায় রত অবস্থায় দরজা খোলার শব্দটা ও নোটিশ করেনি । উত্তরা শিওর ছিলোনা যে আয়ুশ সমৃদ্ধর ঘরে আসবে তবে ও শেষ চেষ্টা করে আর সফল হয় । সমৃদ্ধ আচমকা ওই অবস্থায় আয়ুশ কে দেখে চমকে যায় আর বুঝে যায় তার খেল শেষ । তারা ওখান থেকে নিজের পোশাক সামলে বেরিয়ে যায় আর আয়ুশ সমৃদ্ধকে ওই উলঙ্গ অবস্থাতেই বার করে আনে বেডরুম থেকে । আয়ুশ সমৃদ্ধকে ডাইনিং রুমে এনে ঠেলে ফেলে দেয় আর রাগে চিৎকার করে বলে , সালা বানচোত নিমকহারাম আমার কৈশোরে করা একটা ভুলের মাশুল তুই এভাবে নিবি মারা ! সারা বাড়িতে যত কাজের লোকজন ছিল আয়ুশ এর চিৎকার শুনে সবাই সেখানে জড়ো হয়ে যায় । সমৃদ্ধ সম্পূর্ণ উলঙ্গ অবস্থায় পড়ে আছে আর আয়ুশ এর মারমূর্তির সামনে না পারছে কিছু বলতে না পারছে উঠতে । আয়ুশ বলে সালা আমি তো মদের ঘোরে তোর সামিয়ার সাথে শুয়েছিলাম , আর সামিয়া ! সে তো স্বইচ্ছায় আমার সাথে শুয়ে ছিল ? তার মানে তোকে ও কোনদিন সিরিয়াসলি নেইনি রে । ওটা আমার দোষ ছিল তাই তো ? সেই থেকে তুই আমার পিছনে লেগে গেলি মারা । আমার আর কন্যার এম এম এস বানিয়ে লিক করে দিলি । কন্যা আমার জীবন থেকে চলে গেল তাতেও তুই থামলি না রে বোকাচোদা ! তুই আমার বুড়ো বাপটার গলায় নিজের প্রেমিকা শক্তিকে গছাতে চাইলি ! আসলে তুই আমাকে হিংসা করিস , আমার সমস্ত সম্পত্তির দখল চাস । আমি তো কোনদিন তোকে বলিনি যে আমি তোকে ব্যবসাতে জয়েন করতে দেব না ! আমি তো কাঞ্জিলাল ইন্ডাস্ট্রির একজন অংশীদারই ভেবেছি তোকে । তুই আসলে আমাকে বঞ্চিত করে সব দখল দিতে চাস তাই না ? ভাগ্যিস মা নেই ! থাকলে হয়ত নিজের ভাইপোর কীর্তি দেখে লজ্জায় মরে যেত । আমি সব সহ্য করেছি এত দিন , কন্যাকে ভুলতে ভিন্ন ভিন্ন মেয়ের শরীরে নিজেকে ডুবিয়ে দিয়েছি । মদ , গাঁজা , কোকেন কিছুই বাদ রাখিনি নেশা তে নিজেকে ডুবিয়ে দিতে তবু কন্যাকে ভুলতে পারিনি । আজ যখন সুযোগ পেয়েছি নিজেকে নির্দোষ প্রমান করে আবার কন্যাকে জিতে নেবার তখন তুই আমার সাথে ডবল গেম খেলছিস ? তুই পাগল সাজছিলি এতক্ষন ! আর তার পর আমাকে বোকা বানিয়ে , আমার হারার ব্যবস্থা পাকা করে তারার সাথে বিছানাতে খেলা হচ্ছিল ? সালা আমি যদি কন্যাকে না পাই মারা তোকে আমি নিজের হাতে শেষ করে জেল খাটবো , ফাঁসিতে ঝুলব । সমৃদ্ধ ভয়ে গুটিয়ে গেছে , উত্তরা কে কেউ দেখতে না পেলেও সমৃদ্ধর ঘরের দরজার কাছে সে দাঁড়িয়ে সব শুনছে আর চোখের জল ফেলছে । আয়ুশ হিসহিসিয়ে বলে তুই এই অবস্থাতেই আমার সাথে চল সালা মাদারফাকার , এই বলে সমৃদ্ধকে টেনে হিঁচড়ে বাইরে নিয়ে যেতে থাকে । সমৃদ্ধ অনুনয় করে , ভাই আমাকে ছেড়ে দে আমি জামাকাপড় পড়ে তোর সাথে যাচ্ছি চল । আয়ুশ কোন কথা না শুনেই ওকে টেনে নিয়ে যেতে থাকে । সদর দরজা পেরতে যাবে এমন সময় দরজার কাছে উত্তরার যে ছবিটা লাগানো ছিল মাটিতে পড়ে ঝন ঝন করে ভেঙে যায় । আয়ুশ দাঁড়িয়ে যায় , মায়ের ছবিটা এভাবে পড়ে যাওয়াটা কেমন যেন ওর কাছে সংকেত বলে মনে হয় । মা হয়ত তাকে শান্ত হতে বলছে , মায়ের হয়ত সমৃদ্ধর সাথে করা আয়ুশ এর ব্যবহারটা পছন্দ হচ্ছে না । আয়ুশ সমৃদ্ধকে বলে দু মিনিটে রেডি হয়ে আসতে , ওকে আয়ুশ এর সাথে পাঞ্জাব যেতে হবে । সমৃদ্ধ বলির পাঠার মত কাঁপতে কাঁপতে রেডি হতে চলে যায় । আয়ুশ জ্বলন্ত দৃষ্টিতে কাজের লোকেদের দিকে তাকাতে ওরা যে যার মত নিজেদের কাজে ফিরে যায় , এতক্ষণ ওরা পুরো নাটকটা এনজয় করছিল । উত্তরা নিজেই নিজের ফটোটা ফেলে দেয় ছেলের সামনে যাতে সে দাঁড়ায় একটু শান্ত হয়ে যায় মৃত মায়ের ছবিটা দেখে । যতই হোক রাগের মাথায় এ ভাবে সমৃদ্ধকে নগ্ন অবস্থায় নিয়ে যাওয়া যায়না ! সমৃদ্ধ উত্তরার আত্মাকে কাবু করতে সারা বাড়ি গঙ্গা জল ছিটিয়ে দিয়েছিল আর এক বাবাজী কে বলে উত্তরার আত্মাকে জব্দ করার ব্যবস্থা করেছিল । বাবাজী বলেন উত্তরা পেত্নী তাই বাবাজী তাকে শেষ তো করতে পারবে না কিন্তু এ ব্যবস্থা করবে যাতে উত্তরা কাউকে দেখা না দিতে পারে । সমৃদ্ধ ভেবেছিল যে পিসিমা কাউকে দেখা না দিতে পারলে আর কোন টেনশন নেই কিন্তু ওই জাঁদরেল মহিলা যে এভাবে সমৃদ্ধকে জব্দ করবে তা ওর মাথায় আসেনি । অগত্যা পিতৃপুরুষের দান নিজের প্রাণটা রক্ষা করতে ওকে ইচ্ছা না থাকলেও যেতে হবে পাঞ্জাব । 

শক্তির মুখে সমৃদ্ধর নাম শুনে অবাক কন্যা ! শক্তি জানায় সমৃদ্ধ বলেছে তাকে কন্যা আর আয়ুশ এর ব্যাপারে । কন্যার ছবি শক্তি দেখেছে আয়ুশ এর অফিসে বা ওর বাড়িতে । শক্তি তখন নতুন জয়েন করেছে কাজে । কাঞ্জিলাল হাউসে এসে ঘুরতে ঘুরতে শক্তি আয়ুশ এর অবর্তমানে ওর রুমে ঢুকে পড়ে ভুল করে আর সেখানে  কন্যার একটা পেন্টিং দেখেছিল সেদিন । সমৃদ্ধর কাছে শক্তি জানতে পারে যে আয়ুশ খুব ভালো পেন্টার আর ও নিজের প্রেমিকা কন্যার ছবি এঁকে নিজের বেডরুমে রেখেছে । শক্তি পরবর্তী সময়ে বার বার দেখেছে আয়ুশমান কেমন উদাস থাকে আর সবসময়ই নেশাগ্রস্ত থাকে । হয়ত বহু নারীতে গমন তার কন্যাকে ভুলে থাকার চেষ্টাতেই ! গতকাল অজ্ঞান হয়ে যাবার আগে চোখের সামনে কন্যাকে দেখে চিনে ফেলেছিল শক্তি , ডুবন্ত মানুষ যেমন খড় কুটোকে আশ্রয় করে বাঁচার চেষ্টা করে তেমনই ও কন্যাকে আশ্রয় করে বাঁচার চেষ্টা করে এই স্বজনহীন ভূমিতে । 

চলবে

ভালোবাসার স্কোর যেখানে শুন্য

(অথ পাঞ্জাবে আয়ুশ সমৃদ্ধ শক্তি )


শক্তি পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে জানালো সব কন্যাকে । তার সমৃদ্ধর সাথে সম্পর্ক , আয়ুশ এর মায়ের মৃত্যুর পর তার হার্ট ট্রান্সফার , সমৃদ্ধর ষড়যন্ত্র আর তার পর কাঞ্জিলাল বাবুর সাথে বিয়ে । সব শেষে শক্তির পালিয়ে আসা । কন্যা জানতে চায় শক্তির প্রেগন্যান্সির কারণ কি সমৃদ্ধ ? শক্তি সম্মতি জানায় । এখন কন্যার কাছে এটা পরিস্কার যে হয়ত আয়ুশ বাস্টার্ড কিন্তু ওর থেকেও বড় চুতিয়া সমৃদ্ধ । কন্যা ভাবে সেদিন ওই সমৃদ্ধর ভালো সাজাটা পুরোটাই হয়ত নাটক । তবে বিতর্ক অনেক দূর এগিয়ে গেছে তাই আর পিছিয়ে আসা যায় না । আয়ুশ প্রমান করুক না হলে কন্যা আগামীকাল রোদ্দুরের গলায় মালা দেবে । আয়ুশ এটাই ডিসার্ব করে , সেদিন ওর ওই ফাকিং বিচ কথাটা কেন জানি না কন্যা আজও ভুলতে পারে না । আয়ুশ এর এটাই শাস্তি যে ওকে প্রমান করতে হবে যে সেদিন ও এম এম এস লিক করেনি । এই খেলায় আয়ুশ এর জিত মানেই কন্যার জিত । এবার অপেক্ষা করতে হবে কাল পর্যন্ত । 

পাঞ্জাবের দিকে রওনা দিয়েছে আয়ুশ আর সমৃদ্ধ , সাথে একটা ট্রলি যাতে আছে আয়ুশ এর কাপড় জামা । সমৃদ্ধর শাস্তি ওকে আয়ুশ এর সেট আপ না হওয়া পর্যন্ত এক কাপড়ে থাকতে হবে তাই সে কোন ব্যাগ বইছে না আপাতত । সমৃদ্ধ মনে মনে গাল পারছে আয়ুশ কে , শালা বোকাচোদা হারামখোর একটা কুত্তির পিছনে পড়ে আছে । মারা একটা জাঙ্গিয়া পর্যন্ত নিতে দিলো না ! তোর হচ্ছে দাঁড়া বাস্টার্ড । আমি তোকে ঠিক সময়ে বরবাদ করবো , তার পর তুই আর এ অবস্থায় থাকবি না যে আমায় কিবে । ফ্লাইট নিয়ে তার পর প্রাইভেট কার বুক করে ওরা পৌঁছে গেল কন্যার বাড়ি । আয়ুশ ওখানে পৌঁছাতেই কন্যার মা ওকে চিনতে পারে আর স্পষ্ট জানিয়ে দেন তার মেয়ের বিয়েতে বাধা দেবে এমন কাউকে উনি অল্যাও করবেন না । আয়ুশ হাজার চেষ্টা করেও ওনার সিদ্ধান্তের বদল ঘটাতে পারেনা । কন্যা এর মধ্য এসে পড়ে আর সে তার মাকে রিকোয়েস্ট করে আয়ুশমান সমৃদ্ধকে বাড়িতে থাকতে দিতে কারণ ওরা কন্যার বিজনেস পার্টনার বর্তমানে । ওদের কন্যাই নিমন্ত্রণ করেছিল তাই ওরা এসেছে । কন্যার মা বাধ্য হয়ে রাজি হন তবে স্পষ্ট বলে দেন আয়ুশ যেন কন্যার কাছে ঘেঁষার চেষ্টা না করে । আয়ুশ মাথা নেড়ে সম্মতি জানায় । সমৃদ্ধ আর আয়ুশ এর গেস্ট রুমে ঠাঁই হয় , রোদ্দুর এসে ওদের ওয়েলকাম করে আর নিজের ব্যাচেলর পার্টিতে ইনভাইট করে । আয়ুশ মেকী হাসি দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে দেখায় আর মনে মনে রোদ্দুরের চোদ্দ গুষ্টির মা বাপ এক করে । সারাদিন পেটে দানা পড়েনি সমৃদ্ধর উপরন্তু আয়ুশ এর গালাগাল আর মার , খিদেতে ওর পেটে ছুঁচো দৌড়াচ্ছে । পাঞ্জাবে এরা কি এভাবে অতিথি আপ্যায়ন করে ! এসে থেকে এত ক্ষন হয়ে গেল কিন্তু কোন খাবার দেবার নাম নেই । কিছু বলাও যাবে না , একেই তো আসতে না আসতে তাড়িয়ে দিচ্ছিল তার পর আবার রোদ্দুরের ব্যাচেলর পার্টির নিমন্তন্ন ! আয়ুশ তো রেগে গুম হয়ে আছে , সমৃদ্ধ ট্যা ফু করলে ওকে এখানে মেরে ও পুঁতে দেবে । 

উত্তরাও এসেছে ওদের সাথে পিছু পিছু  , যদিও ও তো চুটকি মেরে এখান থেকে ওখানে যাওয়া আসা করতে পারে । প্লেনে চাপার বড়ই শখ ছিল জীবন কালে কিন্তু বড্ড ভয় ছিল ওই মিনসে কাঞ্জি বুড়োর তাই আর চাপা হয়নি । ওরা যেখানেই গেছে বরাবরই ট্রেনে গেছে । মরে গিয়ে কেমন বিনা পয়সার প্লেনে চেপে পড়লো উত্তরা সেটা ভেবেই এখন হাসি পাচ্ছে । ওদিকে কাঞ্জি বুড়ো পরে আছে হাসপাতালে , মরুকগে ! ওকে দেখার জন্য ম্যানেজার আছে , ডাক্তারেরা আছে । আপাতত বাবুর বিবাহ অভিযান বেশি গুরুত্বপূর্ণ । 

সমৃদ্ধর উপর ভরসা নেই , যখন তখন পাল্টি খাবে । সেরকম হলে উত্তরা নিজেই না হয় ময়দানে নামবে । 

আয়ুশ ভাবছে এ বিয়ের পাত্র তো সে নিজেই , তাই ব্যাচেলর পার্টি ও তার । তাই একটু সাজুগুজু করে না হয় সে যাবে পার্টিতে , সারাদিন ধকল গেছে একটু রেস্ট দরকার আর কন্যাকে প্রমান কাল দিতে হবে যেমন টা কন্যা চায় । 

কন্যা এখন অনেকটা নিশ্চিন্তে আছে , আয়ুশ যখন এসেছে তখন হয়ত সব ভালোই হবে । তবে শক্তিকে এখনো সে জানায়নি যে সমৃদ্ধ এসেছে । সমৃদ্ধর থেকে পালানোর জন্য শক্তি এখানে এসেছে আর আফটার মিসক্যারেজ ওকে মানসিক চাপ দেওয়া হয়ত ঠিক হবে না । 


ভালোবাসার স্কোর যেখানে শুন্য

(অথ ব্যাচেলর পার্টির কেতা )


রোদ্দুরের ব্যাচেলর পার্টির আরেঞ্জমেন্ট হয়েছে কন্যাদের বাড়ির লবিতে । মদের ফোয়ারা ছোটা শুরু হয়েছে প্রথম থেকেই আর আছে হুকো , বিভিন্ন মাদকের ব্যবস্থা । সমৃদ্ধ এক জামাকাপড় পরেই আছে এসে থেকে আর ওটা পরেই এসেছে পার্টিতে । আয়ুশ এসেছে রীতিমতো সাজসজ্জা করে , এসে থেকে ও মজে আছে গড়গড়া টানতে । রোদ্দুরের বাকি সব বন্ধুরা আছে , পার্টি জমে উঠেছে বেশ । কয়েকজন ব্যালে ডান্সারের ও জোগাড় আছে যারা আপাতত কোন ডান্স করছে না শুধু বিকিনি পরে এদিক ওদিক করছে আর গেস্টদের এন্টারটেইন করছে । এদিকে কন্যার তরফ থেকে কোন পার্টিই সে দেয়নি , যেটা পাঞ্জাবের বিয়েতে খুব একটা ঘটে না । কন্যা ভীষণ টেনশনে আছে , এদিকে আয়ুশ এর মতিগতি বোঝা ভার ওদিকে শক্তি অসুস্থ । সে নিজের ঘরে ঢুকে বসে আছে শক্তিকে ওষুধ খাইয়ে শুয়ে এসে । সমৃদ্ধ শেষ পর্যন্ত খাবার খেতে পেয়ে একটু শান্তি পেয়েছে । ডাল মাখানি , তন্দুর চিকেন , শাহী পানির , বাটার নান , লাসসি এসব কিছু খাবার তাদের রুমে দিয়ে গেছে কন্যার বাড়ির মেড এসে দুপুরের দিকে । সব গোগ্রাসে গিলে সমৃদ্ধ সন্ধ্যায় এসেছে পার্টিতে । মদ খেয়ে শেষমেষ টোল হয়ে আয়ুশ কে জানায় সে রুমে গিয়ে রেস্ট নিতে চায় । আয়ুশ তাকে যেতে বলে আর নিজে সবার অগোচরে চুপিচুপি কন্যাকে খুঁজতে বেরোয় । এসে থেকে আর দেখা নেই মেয়েটার । সমৃদ্ধ এদিক ওদিক করে নিজের রুমে যেতে গিয়ে অন্য গেস্ট রুমে ঢুকে যায় যেখানে শক্তি ছিল । ডিম লাইটে সে বুঝে উঠতে পারে না বেডে কেউ আছে তাই ওখানেই সে শুয়ে পড়ে । আয়ুশ জানে না কন্যার রুম কোনটা এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে সে দেখে কন্যার মা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কারো সাথে কথা বলছে । আয়ুশ দেখে কন্যার মায়ের সামনে পড়ে গেলে তার খবর আছে । কন্যার মা তাকে দেখে তার আগেই সে বাঁচতে পাশের একটা রুমে ঢুকে পড়ে । রুমে ঢুকে সে বোঝে এটা কন্যার মা অপলার রুম । আচ্ছা বেগতিক ! সামনে কুয়ো পিছনে খাই । আয়ুশ দেখে রুমের ওয়ার্ডরোব টা পুরো হাটপাট খোলা । বাঁচতে ওখান থেকে একটা শাড়ি নিয়ে আপাদমস্তক জড়িয়ে মাথায় ঘোমটা নিয়ে আয়ুশ বেরিয়ে আসে ঘরটা থেকে । তার পর অতিপাতি করে খুঁজতে থাকে কন্যাকে । এদিক ওদিক করে সে পৌঁছে যায় শেষমেষ কন্যার ঘরে । কন্যা একটা ব্লু কেপরি আর রেড স্লিভলেস টপ পরে বেডের উপর বসে ছিল । আয়ুশ হরমর করে ঢুকে পড়ে আর ঘোমটা শাড়ি তে থাকা আয়ুশ কে কন্যা চিন্তে পারেনা । ও ভাবে কোন মেড । তাই কন্যা বলে দিদি একটু আমার পিঠ টা টিপে দেন প্লিস । আয়ুশ নিজের পরিচয় দিতেই যাচ্ছিল তবে কন্যার পিঠ টেপার সুযোগ পেয়ে সে চুপ থেকে যায় । তার পর কন্যার টপটা খুলে দেয় আস্তে আস্তে । কন্যার রেড ব্র্যা আর সেখান থেকে উঁকি দেওয়া ক্লিভেজ দেখে আয়ুশ পাগল হয়ে ওঠে তবু চুপচাপ কন্যার পিঠ টিপতে থাকে । কন্যার ও কেমন অস্বস্তি বোধ হয় , যেন ওর কান দুটো গরম হয়ে যাচ্ছে । পিঠ ঘুরে শুয়ে থাকতে থাকতে বির বির করে কন্যা বলে তুমি কোথায় আয়ুশ ! আই এয়াম গেটিং হট । আয়ুশ শুনতে পায় কন্যার ফিসফিসানি আর কন্যার কথা গুলো ওকে সিডিইউস করতে থাকে । কন্যার পিঠে ঠোঁট দিয়ে খেলা করতে শুরু করে ও । কন্যা ভয় পেয়ে চিৎকার করে ওঠে , কি হচ্ছে এটা ! আয়ুশ ওর মুখ চেপে ধরে আর নিজের ঘোমটা সরিয়ে দেয় । কন্যা অবাক হয়ে যায় আয়ুশ কে দেখে । আয়ুশ সুযোগ দেয়না কন্যাকে কিছু বলার লাল টপটা দিয়ে কন্যার মুখ বেঁধে দেয় ও আর ঝাঁপিয়ে পড়ে ওকে নিয়ে বিছানায় । 

শক্তির ঘুম ভেঙে যায় আর ও দেখে পাশে কেউ শুয়ে আছে , ভয় পেয়ে ও ঢাকা সরিয়ে দেখে সমৃদ্ধকে । ও গুটিয়ে যায় নিজের মধ্যে , এক দৃষ্টিতে ঘুমন্ত সমৃদ্ধর দিকে তাকিয়ে থাকে । 

চলবে


ভালোবাসার স্কোর যেখানে শুন্য

(অথ শক্তির শক্তি প্রদর্শন )


ঘুমন্ত অবস্থায় মুখে আচমকাই যদি ঠান্ডা জল এসে পড়ে হরমরিয়ে ! কেমন লাগে তখন ? সমৃদ্ধর মুখে এসে পড়লো এক জগ জল আর আচমকা আক্রমনে হাপুচুপু খেয়ে ধড়মর করে উঠলো সে । এই শালা কে রে মারা ! সমৃদ্ধ ঢুলু ঢুলু চোখে চারদিকে দেখে । সামনে দাঁড়িয়ে আছে শক্তি , হ্যাঁ শক্তিই তো ! সমৃদ্ধ অবাক হয়ে যায় । বিছানা থেকে উঠে সে দাঁড়ায় আর নিজেকে চিমটি কেটে শিওর হয় যে সে স্বপ্ন দেখছে না । শক্তির মুখে বাঁকা হাসি । এই তুমি কোথায় পালিয়েছিলে আমার সব পন্ড করে হ্যাঁ ! এখানে তুমি কি করে এলে ! এইবার বুঝেছি সব ওই পাষন্ড আয়ুশ এর চাল মারা । তাই বলি বাপের বিয়েতে বাধা দিচ্ছেনা কেন ? সমৃদ্ধ একটানা কথা গুলো বলে যায় । শক্তি কটমট করে তাকালে ও চুপ করে যায় । শক্তি একরাশ হতাশাকে নিজের বুকে চাপা দিয়ে বলে , আর কত নীচে নামতে পারে মানুষ বলো ? তুমি না থাকলে জানাতে ও পারতাম না মানুষ কত ছোটলোক হয় সমৃদ্ধ । আমাকে তুমি কোনদিন ভালোবাসোনি আমাকে তুমি ব্যবহার করে গেছ । আর যখন আমি তোমার কাঠপুতুল হয়ে থাকতে চাইছি না তখন তুমি আমাকে অপমান করছো ? একবারও তো জানতে চাওনি আমি কেমন আছি ? কোথায় ছিলাম এতদিন ? লজ্জা হচ্ছে আমার নিজের উপর যে আমি তোমাকে বেছে নিতে চেয়েছিলাম নিজের জীবন সঙ্গী করে । 

সমৃদ্ধ আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছে , মিউ মিউ করা ভিজে বেড়াল শক্তি শেরনী কি করে হয়ে গেল ? রাগে অষ্টাঙ্গ জ্বলে যাচ্ছে সমৃদ্ধর । ও চিৎকার করে বলতে শুরু করে এই শালী তুই বেঁচে আছিস কার দয়াতে ? আমি যদি উজিয়ে হার্ট ট্রান্সফার না করতাম পিসিমার তা হলে তো আজ পিসিমা বেঁচেই থাকতো , ওকে বাঁচানো যেত । শুধু রান্ড তোকে বাঁচাতে আমি নিজের পিসিকে মারলাম ঠান্ডা মাথায় । আমি তোর জীবনদাতা তোর মালিক তুই আমার ইচ্ছে মত চলবি । আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল সমৃদ্ধ কিন্তু একটা তাবড় চড় এসে পড়াই সে ঘুরে বিছানায় পড়ে যায় । শক্তি রাগে কাঁপছে , একটা মানুষ কত নিষ্ঠুর হতে পারে ! শুধুমাত্র শক্তিকে নিজের দাসীবাদী বানিয়ে রাখতে পিসীমাকে.... 

শক্তি জোর গলায় চিবিয়ে চিবিয়ে বলে ভালো হয়েছে সমৃদ্ধ তোমার সন্তান এ পৃথিবীর মুখ দেখলো না । সেও হয়ত তোমার মতোই ইতর হতো , কথায় আছে সন্তান তার বাবা মায়ের দর্পন মাত্র । আমি তো জন্মগত ত্রুটি নিয়ে ছিলাম , ডোনার মিললে মিলত না হলে মরে যেতাম তুমি কে একজনের জীবন মরণের সিদ্ধান্ত নেবার ? সমৃদ্ধ কনফিউজড শক্তি কি বললো ? ও কেন বললো তার সন্তান আসার আগেই .... 

এই তুমি কি বললে হ্যাঁ আমার সন্তান মানে কি ? বাজে এক্সকিউস দেবে না । শক্তি বলে আমি প্রেগনেন্ট ছিলাম আর তোমাকে বললে তুমি নিশ্চিত ভাবে এ বাচ্চা রাখতে চাইতে না আর আমি কাঞ্জিলালের নাম আমার সন্তানকে দিতে চাইনি তাই আমি পালিয়ে যেতে বাধ্য হই । আমি অজান্তেই পাঞ্জাবের ট্রেনে উঠে পড়ি আর অমৃত্সর এসে পৌঁছাই । এখানে এসে আমার এক্সিডেন্ট হয় আর আমার মিস্ক্যারেজ হয় । তখন আমাকে কন্যা উদ্ধার করে ওর বাড়ি নিয়ে আসে । আমার যা হবার হয়েছে এবার তোমার সব পোল আমি আয়ুশ এর কাছে খুলে দেব । শক্তি গটগট করে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় । সমৃদ্ধর মাথায় হাত , এবার কি হবে ? বাচ্চা তার দরকার নেই ওটা বাদ গেছে ভালো হয়েছে তার সাথে শক্তিটা গেলেই বা ক্ষতি কি ছিল ! একে তো এক কাপড়ে কাটাতে হবে তার পরে আবার শয়তান মেয়ে সব ভিজিয়ে দিলো । 

শক্তি ঘর থেকে বেরিয়ে ছুটে ছাদে চলে আসে আর এক বুক কান্না যা ও সমৃদ্ধর কাছে লুকিয়ে রেখেছিল তা দমকা হাওয়ার মত বেরিয়ে আসে । ভেঙে পড়েছে শক্তি , আর পারছে না এই জীবন বইতে যা কারোর প্রানের বিনিময়ে অর্জিত । এক পা এক পা করে ও এগিয়ে যায় ছাদের কালভার্ট এর দিকে । চোখ বুজে মারণ ঝাঁপ দিতেই যাবে এমন সময় একটা হাতের হ্যাঁচকা টানে সে ঘুরে এসে ছাদের মেঝেতে পড়ে যায় । নিজেকে একটু সামলে নিয়ে সে দেখে তার পরিকল্পনা ভেস্তে দেবার ব্যক্তিটিকে । এ তো মিসেস উত্তরা কাঞ্জিলাল ! তা হলে কি ছাদ থেকে না পড়েই মরে গেছে শক্তি ? উত্তরা এক মুখ হাসি নিয়ে এসে বসে শক্তির পাশে । কি রে চেমরি ভয় লাগে আমায় দেখে ? ভাবছিস এ তো মরে গেছে ? ভূত ! ওরে ছুরি হ্যাবলার মত তাকাস কেন ? শক্তি মিনমিন করে বলে না মানে আপনি কি বেঁচে আছেন না ভু ভু ভূত হয়ে গেছেন ? 

কন্যাকে মুখ বেঁধে রেখে আয়ুশ প্রবল পরাক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়ে ওর উপর । প্রথমে বাধা দিলেও ধীরে ধীরে কন্যাও উপভোগ করতে থাকে আদরের সাগরকে । কন্যার ঘাড়ে গলায় সর্বত্র ছাপ রেখে যায় আয়ুশ । 

চলবে



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama