ভালোবাসার ঘর
ভালোবাসার ঘর


বিয়ের সানাই এর সুর বেজে উঠলো তখন সন্ধ্যে প্রায় ৬টা।
মিত্র বাড়িতে চূড়ান্ত ব্যস্ততা চলছে একটু পরেই বর ঢুকবে। তারই তোড়জোড় চলছে।
অতিথিরা আসতে শুরু করেছে । আলো, ফুলের শোভা, লোকজন, হৈচৈ, হাসি মজায় জমটি পরিবেশ ।
উপেন মিত্র পাড়ার নামকরা ব্যবসায়ী তারই ছোট মেয়ে অঞ্জনা যার আজ বিয়ে। বিয়েতে আয়োজনের কোনো ত্রুটি নেই এলাহী ব্যপার।
উপেন বাবুর বড় মেয়ে রঞ্জা আর ছেলে সঞ্জয় এর বিয়ে হয়েছে তা অনেক দিন হলো।
উপেন বাবুই ছোট মেয়ের জন্য নিজে এই পাএ দেখেছেন ।
আরেক ধনী ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে । ছেলে গ্রাফিক্স ডিজাইনার , বিয়ের পর অঞ্জনাকে নিয়ে নিউজার্সি থাকবে। পরিবারের সবাই এই বিয়েতে ভীষণ খুশি।
বিদেশ থাকা পাএকে বরণ করবে বলে উপেন বাবুর স্ত্রী দীপা ও অসাধারণ সেজেছেন।
সাবেকি স্টাইলে শাড়ি পরেছেন। মাথায় চমৎকার একটা খোঁপা।
দীপার বোনের রাও এই বিয়েতে এসেছে । আলোচনা করছে নিজেদের মধ্যে , "দিদি তোর ভাগ্য দেখে সত্যি ইর্ষা হয়, দুটো মেয়ের বরই জিনিয়াস।"
দীপা বলে উঠলো, "সবই তোদের জামাইবাবুর জন্য ,বেছে বেছে সেরা ছেলে গুলো কে বেছে নেয় ।"
পাশ থেকে দীপার ননদ বললো, "আর দাদার বউমা পছন্দ তো বললে না ...! সঞ্জয় এর বউ একেবারে ডানাকাটা পরী। "
দীপার বনেরা বলে উঠলো, " সত্যি দিদি ইশানী খুব স্মার্ট ..."
সঙ্গে সঙ্গে উপেন বাবু ঢুকলেন,
রাশভারী মেজাজ বলে উঠলো, "তোমারা কি এখানে জটলাই করবে ....নাকি অতিথিদের সাথে একটু কথাও বলবে ...?
আর অঞ্জনাকে তো এখনো বসানো হয়নি দেখলাম ... কখন বসবে ও....
ওদিকে সঞ্জয় এর অফিস এর কলিগরা ঢুকবে।সাড়ে ৬টায় মধ্যে শেখরের গাড়িটাও ঢুকবে। আমার সঙ্গে এইমাত্র ফোনে কথা হলো।
বউমাকেও দেখছি না, কোথায় সে...।"
দীপা র ননদ বলে উঠলো, " দাদা আসলে পার্লারের মেয়েরা এখনো সাজানো শেষ করেনি বোধহয় ওদিকে তো রঞ্জা , বউমারা আছে।
দীপা বললো, "আমি দেখছি ...তুমি মাথা ঠাণ্ডা করো।"
দীপা রঞ্জাকে ডাকলো আর বললো, "কখন বসাবে অঞ্জনাকে , ওদিকে তোর বাবা রাগারাগি করছে।
আর শোন...বউমা কে বল... গেষ্টদের কাছে আসতে । দাদার অফিস এর কলিগরা ঢুকবে।"
রঞ্জা বললো, "আচ্ছা আমি দেখছি..।"
রঞ্জা যাচ্ছে অঞ্জনার ঘরের দিকে ঠিক তখনই ওদের রাঙা কাকিমা হেসে রঞ্জাকে ধরে বলে উঠলো, "বাহ্ কি সুন্দর লাগছে রে তোকে...! এটা কাঞ্জিভরম তাই না ? এই নীলচে রানীর কম্বিনেশনটা দারুন ..।"
রঞ্জা হেসে বললো, "হ্যাঁ গো...।"
রাঙা কাকিমা আবার বললো,
"তা... তোর বর কোথায় ? দেখছি না.."
রঞ্জা বললো,
"আর বলো না ওর সব কিছুতেই দেরি হয় ঠিকমতো কোনো কিছু যদি ও গোছাতে পারে ,আমার শাশুড়ি ও আসবে ওর সাথে।"
রাঙা কাকিমা আবার বলে উঠলো,
"তা তুই ওর সবটা গুছিয়ে আসিস না কেন...?"
রঞ্জা তাড়াতাড়ি বলে উঠলো,
"ও তো বলবে কি পরবে? বললাম পাঞ্জাবি পারো..! কিছু বললোই না... কি বলবো বলো !"
রাঙা কাকিমা বললো,
"তোর শাশুড়ি তো খুব গোছানো মানুষ ।"
রঞ্জা বলে উঠলো,
" সে আর বলতে ওনার মতটাই শেষ কথা।"
হঠাৎ সঞ্জয় এর স্ত্রী ইশানী মাথার চুলে ফুল টা ঠিক করতে করতে আসছে।
তখনই রঞ্জা বলে উঠলো, "বউদি ...বাবা তোমায় খুঁজেছিল , দাদার অফিস কলিগ রাও এসে যাবে তুমি ও দিকটায় যাও। আর অঞ্জনাকে কে বসাছে না কেন এখনো ?.. .."
ইশানী বললো, "হয়ে গেছো... এবার নিয়ে আসছে... কথা তা বলেই রাঙা কাকিমার দিকে তাকিয়ে, বাব্বা ...রাঙা কাকিমা.... তোমার গলা নেকলেস টা কি দারুন গো কি সুন্দর লাগছে.. "
রাঙা কাকিমা মুখটা টিপে বলে উঠলো, "চুপ করো তো, ননদের বিয়ে বলে তো নিজে পরীর মতো সেজেছো আর আমাকে বলছো ।"
ইশানীর তখন এক মনভালানো হাসি...। তারপর বললো, "চলুন কাকিমা কফি খাবেন..."
রঞ্জা অঞ্জনার ঘরে টোকা দিয়ে বললো, "হয়েছে তোমাদের।"
মেকআপ আর্টিস্ট উওর দিলো, " হয়ে গেছে দিদি জাস্ট মাথার মুকুটটা ... সোজা করতে হবে তাহলেই হয়ে যাবে।"
রঞ্জা বললো, " আচ্ছা ওকে নিয়ে এসো তোমরা।"
অঞ্জনার বন্ধু উপালীকে একবার রঞ্জা ডাকলো বাইরে।
কিছু ক্ষন পর অঞ্জনার সাজগোজ শেষ হলো ।
ঘরের মেয়েরা সবাই বেরিয়ে গেলো।
গুঞ্জা একা, উপালী ঘরে ঢুকে বললো, "নে চল.. এবার।" অঞ্জনা বললো, "ও... এসেছে.. দেখলি ..?
উপালী বললো,
"বর আসলে কি পা টিপে টিপে আসবে যে তুই শুনতে পাবি না.. কি সব কথা তোর।"
অঞ্জনা বললো,
"আরে না না...আমি বিতনুর কথা বলছি.."
উপালী তখন বললো,
"কেউ আসে ..! সত্যি করে বলতো তুই হলে পারতি..।"
উপালীর হাত টা চেপে অঞ্জনা বললো, " তুই বল ও কি পারতো না ...
আমাকে এখান থেকে নিয়ে যেতে।
ও যদি একবার বলতো তবে আমি এ বিয়ে করতাম না কিছু তেই না.."
উপালী বললো,
" দেখ আঙ্কেল এর বিতনুকে পছন্দ নয়। সেটা জেনে তোকে বিয়ে করা মানে বাড়িতে তুমুল অশান্তি হতো বিতনুদা সে সব ভেবেই হয়তো আর জোর করেনি তোকে ।"
অঞ্জনা বলে উঠলো কাঁদো কাঁদো স্বরে,
"আর এতদিনের ভালোবাসার কোনো দাম নেই.. বাবার মতটাই ওর কাছে বড় হলো । আমি কেউ না.. । কি নিষ্ঠুর জানিস....
যেদিন শেষবার গেছিলাম ওদের বাড়ি , ও কে বললাম, আমার বিয়ের কার্ড ,
ওর হাতটা যখন ধরেছিলাম আমার চোখের জলের ফোঁটা পড়তেই সরিয়ে নিলো....
আমার দিকে একবারও তাকালো না ভালো করে।
উপালী বলে উঠলো,
" তুই ওর অভিমান টাও বুঝছিস না অঞ্জনা। শুধু ওর চুপ থাকাটাকে নিষ্ঠুরতা ভাবলি। "
উপালীরকে ধরে অঞ্জনা বললো, " .. আমি জানি না কি করে ওকে ভুলে...,, আমি জানি না ! ....,কি করবো আমি.. আমি জানি না...।" বলেই দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।
উপালী আবার বললো,
"প্লিজ শান্ত হো.. আর কিছুক্ষন পর তোর বিয়ে .. নতুন একটা অধ্যায় , জীবনে সব ভালোবাসা সত্যি হয় না, সবার জীবনে ভালোবাসার বিয়ে হয় না তা বলে কি জীবন এগোবে না।... প্লিজ শান্ত হো । ....আয় আমার সাথে বসবি চল,
বাড়িতে এত লোকজন আর উহ্ তুই কাঁদছিস কেন.... কাজলটা পুরো ধ্যবড়ে যাবে এবার, দাড়া... এ নে রুমাল নে...। চল...।"
ওদিকে ইশানীকে দেখে সঞ্জয় অস্তে আস্তে বিরক্তি প্রকাশ করে বললো, "চোখের উপর এগুলো কি দিয়েছো ? ইস..
তোমার এই ধরনের সাজ আমার জাস্ট বিরক্ত লাগে কোনো সোপিস্টিকেশন নেই।"
ইশানী ও বলে উঠে, "সে তো তোমার সাজটাও বোরিং, সঞ্জয় প্লিজ সিন করো না। এক তুমি ছাড়া আমার সাজের সবাই ফ্যান। তোমার আমার পছন্দ কোনোদিনই মিলবে না, জানি..। বাবার ভয়ে আমায় বিয়ে না করলেই পারতে। তাহলে রোজ তোমায় অসহ্য হতে হতো না। যাকে পছন্দ ছিলো তাকে আনতে পারতে। "
সঞ্জয় আবার বিরক্ত হয়ে বললো, " বাজে কথা বন্ধ করো..।" ইশানীর দিকে তাকিয়ে বললো, ". তোমার ফুলের এপাশে চুল থেকে খুলে গেছে ঠিক করো।"
ইশানী তখন বললো, "কোথায় ...
সঞ্জয় ঠিক করে দিলো।
তারপর বললো,
"দেখো রঞ্জার শাশুড়ি, মিলন ঢুকছে ...যাও ওনার সাথে কথা বলো।"
ইশানী সঞ্জয় কে থ্যাংকস বলে এগিয়ে গেলো হাসি মুখে...
কিছু ক্ষন পর বর ঢুকলো সবাই ব্যস্ত হয়ে উঠলো।
বরণ শেষ করলো দীপা।
যথাস্থানে বর গিয়ে বসলো।
সঞ্জয় এবং উপেনবাবু দুজনেই বরযাত্রীর সমস্ত লোক নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলো।
দীপা এসে রঞ্জা কে বললো, "যাও শাশুড়ির সাথে কথা বলো ঠিক ভাবে ওদের কি লাগবে না লাগবে দ্যাখো। আর হাজবেন্ড কে নিয়ে কাকিমার কাছে নিন্দে না করে মানিয়ে নিতে শেখো বুঝলে...। মিলনের মতো ছেলে হয় না !"
রঞ্জা বলে উঠলো, "মা.. এসব কি বলছো ?
দুটো কথাও বলতে পারবো না। আর মিথ্যে প্রশাংসার তো কিছু নেই। আর এমন কিছু সোনায় গড়া ছেলে মিলন মোটেও নয়। আর মানিয়েই তো নিয়েছি।"
কথাটা বলেই ওখান থেকে চলে গেলো অন্যদিকে।
ধীরে ধীরে সময় এগিয়ে গেল ...
অঞ্জনাকে একেপর এক গেস্ট এসে উপহার দিচ্ছে। আর ও হাসিমুখে তাদের সাথে কথা বলছে।
সঙ্গে মাঝেমধ্যেই উপালীর সাথে বিতনুর কথা বলছে আর মুখভার করছে।
তারপর শুরু হলো ফোটো তোলা। পরিবারের বিভিন্ন সদস্যদের সাথে, কখনো অন্য গেষ্টদের সাথে।
শেষ পর্যন্ত বিয়ের লগ্ন এসে গেলো ...
অঞ্জনার সাথে শেখর এর বিয়ে হয়ে গেলো।
হৈচৈ ভালোমন্দ মিশিয়ে বিয়ের দিন পেরিয়ে গেলো।
ওদিকে বিতনু তার বাড়িতে টেবিলের উপর গালে হাত দিয়ে বসে আছে। বিতনুর বৌদি ঘরে ঢুকলো, বললো, " মনখারাপ ... ?...এভাবে বসে আছো? কাল অঞ্জনা র বিয়েটা হয়ে গেলো, উপালী বলছিলো।
তুমি এটা ভেবো না যেনো, ও অন্য জায়গায় বিয়ে করছে বলে, ও তোমায় ভালোবাসেনি।
ও কিন্তু সত্যি...।"
সঙ্গে সঙ্গে বিতনু বলে উঠলো, "প্লিজ ...বৌদি ও কি পারতো না বিয়েটা না করতে , নাকি নিউজার্সিতে যাবার লোভটা সামলাতে পারলো না।"
বলেই বিতনু তার দু হাত নিজের মুখে ঘোষলো। আর বলে উঠলো, "কেন এমন হলো বলতো বউদি..."
বিতনুর বউদি বলে উঠলো,
"তুমিও তো ওকে বলোনি,
ওর পাশে থাকো নি.., ও বেচারি কি করবে.. উপেনবাবু রাগি মানুষ শুনেছি। তুমি পাশে থাকলে হয়তো সাহস পেতো।
ওতো সেদিন কাঁদতে কাঁদতে বললো আমাকে , "আসছি বউদি।"
তুমি আর ওকে ভুল বুঝোনা। সবাই জীবনে কি ভালোবাসার ঘর পায়.. বলো..!
তুমি একজন শিল্পী।
মানুষের মনটা, আশাকরি....
অন্তত ,
অঞ্জনার মনটা ভালোই বুঝেছো।
মনখারাপ করে থেকো না। জীবনটাকে তো চালাতে হবে।"
বিতনুর শুরু হলো জীবনের ওঠা পড়া, একদিকে অঞ্জনা কে ভুলতে না পারার যন্ত্রণা । অন্য দিকে বিতনু ছিল একজন চিএশিল্পী
তার জীবন ছিল না ওতোটাও মসৃন। প্রতিমুহূর্তে তাকে নিজের যোগ্যতার পরীক্ষা দিতে হয়। আর এই ভাবেই সময় এগোচ্ছে.....।
কেটেছে অনেক গুলো বছর...।
ওদিকে নিউজার্সি থেকে শেখর আর অঞ্জনা এখন আছে মুম্বাই তে। অঞ্জনার এখন পাঁচ বছরের ছেলে টিঙ্কা ।
সেদিন তখন দুপুর বেলা টিঙ্কা স্কুলে । শেখর হঠাৎ অফিস থেকে একটা জরুরী ফাইল এর জন্য এলো। অঞ্জনা দরজা খুলতে ই খুব তাড়াতাড়ি ঢুকে পড়লো গোটা ঘর ফাইলটা ওলটপালট করে খুঁজতে থাকলো আর অঞ্জনাকেই দোষ দিতে থাকলো না পাওয়ার জন্য । আলমারিটা সবটা ঘেঁটে ফেলে ছড়িয়ে শেষে ফাইলটা টেবিলের বড় ডয়ার থেকে পাওয়া গেলো। যেটা শেখরের কাজের টেবিল সেখান থেকে। শেখরের এরকম আচরনে অঞ্জনা বিরক্ত হলো শেখর দিকে তাকিয়ে বিব্রতবোধ করছে। শেখর ফাইল হাতে নিয়ে বললো, " প্লিজ... সবটা গুছিয়ে নিয়োও । আমি আসছি।"
শেখর অঞ্জনার সাথে এরকম আচরন সবসময়ই করে আসছে অঞ্জনা কে নানাভাবে অপমান , এমনকি গায়ে হাত আর তারপর কাজের দোহাই, কাজের জন্য এই আচরণ সে করে ফেলছে। এভাবেই চলে আসছে। আর অঞ্জনা তার জীবনকে এভাবে মানিয়ে চলছে। অঞ্জনা এই কয়েকটা বছরে কোলকাতায় আসেনি একবারে ও খানিকটা অভিমান থেকেই। ফোনে অঞ্জনা তার মা এবং দিদির সাথে কথা বলে। অঞ্জনা কতবার তার মা কে জানিয়েছে শেখরের আচরনের কথা কিন্তু তার মা তাকে বলে অ্যাডজাস্ট করতে।
একদিন তখন রাত্রে অঞ্জনা সমস্ত কাজ করে জাস্ট বসেছে ক্লান্তি তে । টিঙ্কা পাশের ঘরে ঘুমিয়ে পড়েছে । শেখর ল্যাপটপ নিয়ে। হঠাৎ বলে উঠলো, যাও কফি বানিয়ে আনো। অঞ্জনা রাজি হলো না বললো সে পারবে না তার আর ভালো লাগছে না এত রাতে কফি বানাতে । সঙ্গে সঙ্গে শেখর রিয়েক্ট করলো, বলে উঠলো, "সারাদিন তো শুয়ে বসেই কাটাও ....।" এভাবে কথার পিঠে কথা বাড়লো, নিজের কাজের লম্বা লিস্ট শেখর শোনাতে থাকলো।
অঞ্জনা বলে উঠলো, "এখন তুমি কোনো বিশেষ কাজ করছো না শুধু অফিস এর বান্ধবীর সাথে চ্যাট করছো। অথচ নিজেকে মিথ্যে ব্যস্ত বলে আমাকে কথা শোনাচ্ছো।"
এই কথা বলার সাথে সাথেই শেখরের সাথে অঞ্জনার তুমুল অশান্তি হয় । শেখর অঞ্জনার গায়ে হাত ও তোলে। অঞ্জনা জানায় সে আর শেখরের সাথে থাকতে চায় না।
আরোও বলে , "যেখানে কোন ও সন্মান নেই সেখানে আমি আর থাকবো না। দিনের পর দিন তোমার অসভ্য আচরন সহ্য করেছি। টিঙ্কার কথা ভেবে । আমি টিঙ্কাকে নিয়ে কোলকাতায় ফিরবো। "
শেখর জানায়," টিঙ্কা আমার ছেলে, ও আমার কাছে থাকবে।"
অঞ্জনা বলে উঠে," তুমি ওর কোন দায়িত্ব পালন করেছো? শুধু নিজের জগৎ নিয়ে আছো ওর ভালোমন্দ এমনকি ওর সাথে কোনোদিন সময় কাটিয়েছো?"
এরপর
টিঙ্কাকে নিয়ে ফিরে আসে অঞ্জনা কোলকাতায়।
অঞ্জনার বাবা মা দুজনেই তাকে নানা কটু কথা বলে,
অঞ্জনার বউদি ইশানী বলে উঠে, "জানেন বাবা মনে হয় ও শেখরের সাথে নিশ্চিত কোনো বাজে আচরন করেছে তাই ...। "
সঙ্গে সঙ্গে সঞ্জয় বলে উঠে, "ইশানী... প্লিজ বাবার কাছে এসব বাজে কথা না বলে যদি অঞ্জনার কাছ থেকে সত্যিটা শুনতে তাহলে ভালো হতো।"
উপেনবাবু বলে উঠলো, " অঞ্জনা, তুমি তাহলে পারলে না থাকতে, সোসাইটি তে আমার মানসন্মান কে এভাবে ধুলোয় মেশালে।"
সঞ্জয় বললো, "বাবা তুমি অঞ্জনার দিকটা এক বারোও দেখবে না শুধু নিজের স্ট্যাটাস
নিয়ে ভাববে ।"
দু-এক দিন পর রঞ্জা এলো সবটা শুনলো আর বলে উঠলো, "বাবা চিরকাল তার শাসন দিয়ে আমাদের ইচ্ছে অনিচ্ছের কোনো দাম দেয়নি। আর বাবার পছন্দ করা কোনো কিছুই ঠিক ছিল না। শুধু স্ট্যাটাস, অর্থ,
উহঃ এভাবে... আমাদের ইচ্ছে কে থামিয়ে রেখেছে।
মিলনের সঙ্গে আমি কিভাবে আছি , তা আমিই জানি। আর আমি কি জানি না বউদির সাথে দাদার কোনোদিন ঠিক মতো হয় না।
ইশানী এসব শুনতে পেয়ে মন্তব্য করে ওঠে, "তোমরা ভাই বোনেরা তো সব ধোয়া তুলসী পাতা যত দোষ অন্যদের, তোমার দাদার পুরনো প্রেম সেসব কি আমি জানি না।"
রঞ্জা আবার বলে, "হ্যাঁ... ঠিকিই দাদা একজনকে ভালোবেসে ছিল , বাবা মত দেয়নি ঠিক অঞ্জনার মতোই।
তা বলে বিয়ের পর থেকে আমার দাদা তোমার কোন জিনিসটার অভাব রেখেছে বলো....,
সে কি তোমায় ভালোবাসে না, তোমার প্রতি কোন দায়িত্ব পালন করেনি বলো । বরং তুমি দাদার কি খেয়াল রাখো তা জানতে বাকি নেই। তুমি তো বাবার যোগ্য বউমা কিন্তু ভালো স্ত্রী হতে পেরেছো কি....?"
ইশানী মাথা নিচু করে চেয়ারে বসে পড়ে।
দীপা বলে উঠলো," আচ্ছা তোমরা এত কথা কেন বলছো ..?
"অঞ্জনা, শোনো, আমি এবং তোমার বাবা তোমার শ্বশুর বাড়ী যাবো ওদের সাথে বলতো, সব সংসারেই এমন হয় আবার ঠিক হয়ে যায়।"
অঞ্জনা জানায় তার পক্ষে শেখরের সাথে থাকা সম্ভব নয়।
সে টিঙ্কাকে নিয়ে এখানেই থাকবে ।
সঞ্জয় ও বলে, " অঞ্জনা যদি ভালো না থাকে ওখানে, তবে জোর করছো কেন?"
উপেন বাবু বলেন," কিন্তু টিঙ্কা তার কথাটা কি ভাবচ্ছো..?"
অঞ্জনা তখন বলে, " দ্যাখো বাবা ছেলের কথা ভেবে ই আমি এতদিন চুপ করেছিলাম, আর আমার পক্ষে সম্ভব নয়, আমি শেখরের সাথে কোনো সম্পর্কই রাখতে চাইনা, টিঙ্কাকে আমি একাই মানুষ করবো।"
ওদিকে শেখর টিঙ্কাকে ফেরত চাইল
কিন্তু অঞ্জনা সম্পর্কে কোনো উৎসাহ দেখালো না।
উপেনবাবু শেখরকে বললো," অঞ্জনার সাথে কি তুমি আর থাকতে চাও না? "
শেখর বললো,
"অঞ্জনা নিজেই এই সম্পর্ক চায় না। তাছাড়া ও আমার সাথে অ্যাডজাস্ট করতেই পারেনা। আমি আমার ছেলেকে নিয়ে যেতে চাই।"
অঞ্জনা বললো, " টিঙ্কা আমারও..."
শেখর জানালো, " বেশ তবে এবার কোর্টে ই দেখা হবে।"
আর এইভাবে শেখর আর অঞ্জনার ডির্ভোস এবং ছেলে কার কাছে থাকবে এই নিয়ে কোর্ট প্রসিডিওর শুরু হলো।
অঞ্জনার বান্ধবী উপালী সব জানতে পারলো।
উপালী অঞ্জনা কে বললো, "এতদিন বাদে তোর সাথে দেখা হলো কিন্তু তোর এরকম অবস্থা আমি সত্যি ভাবতে পারছি না ।"
টিঙ্কা ঘরে ঢুকলো , আর বললো, "মাম এটা কে.. ?" উপালী বললো, "তোর ছেলে বাহ্ খুব মিষ্টি দেখতে হয়েছে.."
অঞ্জনা টিঙ্কা কে বললো, " এটা একটা মাসি হয় তোমার।"
উপালী বলে উঠলো, "টিঙ্কার জন্য সত্যি আমার খুব খারাপ লাগছে এত ছোট বয়সে বাবা সম্পর্ক এ এসব ওর মনে নিশ্চই চাপ পড়ছে।"
অঞ্জনা বললো, "আমি তো এতদিন টিঙ্কার জন্যই চেষ্টা করলাম। অসম্ভব একেবারে... আচ্ছা
উপালী , বিতনু কেমন আছে রে.... ?"
উপালী বললো,
"প্রথমদিকে তোর জন্য সারাক্ষণ.... এখন একটা আর্ট স্কুল জয়েন করেছে। ভালোই নাম করছে । ওদের আর্ট এগজিবিশনে আমি গেছিলাম এই তো মাসখানেক আগে বিতনুদার সাথে দেখা হয়েছিল। তোকে এখনো খুব ভালোবাসে ।
বিতনুদা যে ছবিগুলো এঁকেছিলো সেখানে ফিগার গুলো তোর মতো দেখতে, বিতনুদা আজোও নারী মুখ আঁকলে চোখ দুটো তোর মতোই হয়ে যায়।
আমি এতবার দেখেছি , চিন্তে আর ভুল হয় না।"
অঞ্জনা বললো,
"আমি একবার ওর সাথে দেখা করবো ভাবছি,
একবার ফোন করবো ভেবেছিলাম... কিন্তু এত নার্ভাস লাগছিল ...তাই আর করতে পারিনি। এই এতগুলো বছরে ওকে অনেক বার ভেবেছি ফোন করবো, কিন্তু করতে পারিনি জানিস । বারবার মনে হয়েছে ওতো পারতো সেদিন আমায় বেঁধে রাখতে, রাখলো না কেন?.....।"
উপালী বলে উঠলো, "তোদের দুজনের এত অভিমান জমে জমে পাহাড় হয়েছে, জানি না কিভাবে ."।.
বেশ কিছুদিন পর...
উপালী বিতনু কে সবটা জানায় আর তারপর একদিন বিতনুর সাথে অঞ্জনার দেখা হলো।
সেদিন ছিল এক শীতের দুপুরবেলা, মিঠে রোদের হালকা ঝাঁজ। উওরে মাঝেমধ্যে দমকা হাওয়া হচ্ছে। ঘুঘু র ডাক শোনা যাচ্ছে।
অঞ্জনা কে দেখে বিতনু প্রথমে একটু হতাশ হলো তারপর অনেকক্ষন তাকিয়ে ছিল।
অঞ্জনা বিতনুর কে বললো, "তুমি কি এখনো আমার উপর রাগ করে আছো ...? তুমি নিশ্চয়ই উপালীর কাছ থেকে সবটা শুনেছো ?
তুমি থাকবে না আমার পাশে ...?
বিতনু বলে উঠলো, "আমি তো সবসময় চেয়েছি... তুমিই তো ভরসা করতে পারনি । সেদিন তো তুমিই তো আমাকে ছেড়ে....
আমি খুব সাধারণ একজন শিল্পী, আমার রোজগার ও কম আর তাই তোমার বড়লোক বাবা আমাকে পছন্দ করেনি। ভেবেছিলাম তুমি আলাদা, ভালোবাসার দাম টাকার থেকে বেশি হবে ভেবেছিলাম অন্তত তুমি দেবে ভেবেছিলাম ...."
অঞ্জনা বিতনুর হাতটা ধরে ক্লান্ত গলায় বলে উঠলো, কেন বলছো ..তুমি এসব ?..তুমি কি আমায় বিশ্বাস করো না ?
হ্যাঁ মানছি বিয়েটা আমি করেছিলাম , তুমি ও তো আমায় আটকাওনি, বলোনি তো অঞ্জনা আমায় ছেড়ে যেও না, আমার একা লাগছে ...
আমি কি করতাম ...
বাড়ির একটা চাপ ছিল আর বাবাকে তো তুমি জানো,
কোনো দিন নিজের মত ছাড়া অন্য কারোর কথা শুনবে না।
তুমি যদি আমাকে একবার বলতে আমি সব ছেড়ে সেদিন তোমার কাছে আসতাম।"
বিতনু বললো, "আমি ভেবেছিলাম নিজেই তুমি বুঝবে ...
কিন্তু তুমি তোমার বিয়েটা এখন ভাঙছো কেন..?. এতগুলো বছর পর .
. তোমাদের ছেলেও তো আছে. শুনলাম....
অঞ্জনা বললো,
"অনেক চেষ্টা করেছি শেখর শুধু নিজেকে বোঝে, ছেলের প্রতি ও ওর কোনো দায়িত্ব পালন করেনি.. এখন ছেলেকে চাই বলে দাবি করছে..
দিনরাত আমাকে অপমান করতো, যখন তখন গায়ে হাত তুলতো...
আমি আর চাই না এভাবে থাকতে।"
বিতনু অবাক হয়ে বলে উঠলো, " কিন্তু কেন..?
একটা মানুষ... এরকম কেন করতো তোমার সাথে।
ওরা তো তোমাকে পছন্দ করেই ...তাহলে..."
অঞ্জনা আবার বললো,
"শেখরের অফিসে কাজ আর ওর অনেক বান্ধবী আছে, তাদের নিয়েই সর্বক্ষণ ,
আমি কোনোদিন ইমপোর্টেন্ট ছিলাম না।
জানি না এতদিন কিভাবে ছিলাম, তারপর একদিন ডেসপেরটলি টিঙ্কাকে নিয়ে...
বিতনুর খুব কাছে ওর দিকে তাকিয়ে তোমার থেকে দূরে গিয়ে প্রতিমুহূর্তে তোমার কথাই ভেবেছি।"
বিতনু তখন বললো,
"তোমার এত সমস্যা কোই আগে তো কোনো দিন বলোনি এতবছরে।"
অঞ্জনা বলে উঠলো,
"তোমাকে বিব্রত করতে চাইনি তাই.."
বিতনু আবার বলে উঠে অঞ্জনা কে ধরে, তুমি আমায় বিব্রত করবে তবে আমি বিব্রত হবো এটা ভাবলে কি করে।"
অঞ্জনার ততক্ষনে জলভরা চোখ টলটল করছে...।
বিকেলের সূর্য তীব্র হয়ে উঠেছে...
একটু পর বিকেল নামবে....
বিতনু অঞ্জনার মুখ থেকে চুল সরিয়ে
তুমি আর আগের মতো সাজো না কেন ?
মনখারাপ বলে...
অঞ্জনা বলে উঠে,
"তুমি তো বেশি সাজ পছন্দ করতে না..."
বিতনু হেসে তাকালো....
মাঝখানে কেটে গেলো বেশ কিছু সময়....
শেখরের সাথে অঞ্জনার ডিভোর্সটা হয়ে গেলো। টিঙ্কা ছোট বলে কোর্ট থেকে ও মায়ের কাছে থাকার পারমিশন পেলো কিন্তু শেখরের সাথেও তার দেখা করাতে হবে মাসে মাসে এমন তাই কোর্ট থেকে নির্দেশ ছিল যতদিন না টিঙ্কা সাবালক হয়ে নিজে কিছু না বলে।
কলকাতায় এসে টিঙ্কা স্কুলে ভর্তি হয়েছিলো।
একদিন তখন বিকেল স্কুল থেকে ফেরার পথে বিতনুর সাথে দেখা টিঙ্কা ততদিনে বিতনুকে চিনে গেছে।
বিতনুর সাথে তার বেশ বন্ধুত্ব ও হয়েছে।
টিঙ্কা চিৎকারে বললো, "আঙ্কেল...
মাম দেখো আঙ্কেল।"
বিতনু টিঙ্কার ডাক শুনে কাছে এলো বললো, "টিঙ্কা কেমন আছো?
তোমরা স্কুল থেকে ফিরছো।"
অঞ্জনা বললো, "হ্যাঁ , তুমি এখানে..?
বিতনু বললো, " আমার এক স্টুডেন্টর একটা ওর্য়াকসপ আছে সেই ব্যপারেই..."
অঞ্জনা বললো,
"খুব ব্যস্ত তুমি তাহলে.."
বিতনু হেসে বললো, "তা একটু,
তারপরেই টিঙ্কাকে কলে তুলে কিন্তু আমি যতই ব্যস্ত থাকি । আজ টিঙ্কা আর আমি পুরো বিকেল ঘুরবো আর আইসক্রিম খাব..
কি তাই তো..."
টিঙ্কা তো খুব খুশি...
পুরো বিকেলটা হৈচৈ করে কেটে গেলো...
রাত তখন প্রায় ১০টা
অঞ্জনা নিজের ঘরে বিছানা তে মশারি লাগাচ্ছে। আগে এই ঘরটায় ও আর ওর দিদি থাকতো এখন ও ছেলেকে নিয়ে এই ঘরটায় থাকে।
টিঙ্কা হঠাৎ বলে উঠলো, " আচ্ছা মাম ...আঙ্কেল তো বন্ধু ছিলো তোমার,
তাহলে তুমি আঙ্কেল কে কেন বিয়ে করলে না ?"
অঞ্জনা বিছানার পাশে চেয়ারে বসে পড়লো বিমর্ষ ভাবে।
উপেন বাবু ওদের ঘরে ঢুকছিল কথাটা শুনে থমকে দাড়ালো।
টিঙ্কা আবার বললো, "আঙ্কেল যদি আমার বাবা হতো তো কত্ত মজা হতো , মাম বলো না.."
অঞ্জনা বলে উঠলো,
"টিঙ্কা অনেক রাত হয়েছে শুয়ে পড়ো।"
টিঙ্কা বলে উঠলো, "না আমি আঙ্কেলের মতো ছবি আঁকবো এখন.."
বলেই ড্রয়িং খাতাটা নিয়ে বসে পড়লো।
উপেনবাবু ঢুকলো ঘরে।
উপেনবাবুকে কে দেখে " বাবা কিছু বলবে?"..
উপেন বাবু বলে উঠলো,
"টিঙ্কা কে ড্রয়িং এ দিলে কেমন হয় রে...
বিতনু আজকাল খুব নাম করছে তাই না..।
অঞ্জনা বলে উঠলো,
বাবা......
উপেনবাবু শান্ত গলায় বলে উঠলো,
"একদিন আমারই ভুলে তোর এমন হলো, সেদিন বাঁধা না দিলে হয়তো আজ ...
অঞ্জনা বললো, "না বাবা সবই আমার ভাগ্য.."
উপেনবাবু আবার বললো,
ভালোবাসা কে মূল্য দিতে আমি সত্যি ভুলে গেছিলাম।
বিতনুকে একবার আসতে বলো... জানি আমি তাকে অনেক অপমান করেছি তাই তার কাছে ক্ষমা চাওয়া বাকি আছে।"
কেটে গেলো বেশকয়েকটা বছর...
সেদিন তখন সকাল ঝলমল করছে আলো । সাজানো একটা ঘরে , কোনের টেবিলে গ্ল্যডিওলাস আর একপাশে বইএর তাক, সোফা , সেন্টার টেবিল।
জানলার পরদা গুলো দুলছে হাওয়ায়।
সেই ঘরটায় ঢুকেই টিঙ্কা কাঁধে ব্যাগ টা গোছাতে গোছাতে চিৎকার করে বললো, " মা..
শোনো আমি কলেজ যাচ্ছি ফিরতে দেরি হবে। ওখান থেকে সোহিনীর বাড়ি যাবো । ওর বার্থডে তে আমাদের নিমন্ত্রণ আছে ।
অঞ্জনা বলে উঠলো, "সেকি... আমি ভেবেছিলাম আজ কড়াই শুঁটির কচুরি করবো তুমি তো ভালোবাসো, আর দ্যাখো উপালীমাসি এসেছে তো কোই তুমি আগে বলোনি তো।
উপালী এসে বললো, " ছেলে বড়ো হয়েছে আর ওর নাগাল পাবে না.... কিরে টিঙ্কা কেমন আছিস ? কেমন চলছে সব কিছু,,
ঘরে দেখলাম ক্যানভাসে ছবিটা ,,কার আঁকা রে?
বিতনুদা আর টিঙ্কার তুলির টান যেনো একি...."
টিঙ্কা বলে উঠলো,
"মাসি তুমি আজ থাকছো তো ?..তুমি আর মা এক হলেই তো বকবকম, ও আমি সন্ধ্যে ফিরে মাসির সাথে গল্প করবো।"
অঞ্জনা বললো, "উপালী আমার কতদিনের বন্ধু সুখে দুখে বিপদে সবসময় তাই তো.... "
টিঙ্কা বললো, "মাসি তুমি কিন্তু আজ থাকবে আমি ফিরে এসে.. "
বলে টিঙ্কা বেরিয়ে গেলো।
উপালী অঞ্জনা কে বললো, "দেখতে দেখতে কতগুলো বছর চলে গেলো, টিঙ্কাটা কত্ত বড়ো হয়ে গেলো .... ওর আঁকা গুলো একদম বিতনুদার মতো, কে বলবে ওদের কোনো রক্তের সম্পর্ক নেই..."
অঞ্জনা বলে উঠলো, " হ্যাঁ মনে হয় যেনো সেদিনের কথা।
বিতনু টিঙ্কাকে নিজের মনের মতো মানুষ করেছে আমি কখনো তাতে বাধা দিইনি।
টিঙ্কা শেখরকে মানতেই পারেনি, বিতনুই ওর কাছের হয়ে উঠলো।
টিঙ্কা সহজে চেয়েছিল বলেই হয়তো সেদিন বিতনুর সাথে আমার আবার বিয়েটা হয়েছিল।"
উপালী বলে উঠলো, "হ্যাঁ ... আর বাকিরা ও সবাই চেয়েছিলো বিতনুদার বৌদি কি যে ভালো তাই না আর আঙ্কেল এর এত পরিবর্তন...
অঞ্জনা বললো, " হ্যাঁ বৌদি তো খুবই ভালো প্রথম থেকেই চাইতো ।"
উপালী আবার বললো,
"কি অদ্ভুত না... সেই তুই বিয়ের দিন কত কাঁদলি আর তারপর কতগুলো বছর পর বিতনুদাকে তুই আবার ফিরে পেলি ...
তোর ভালোবাসার ঘর..."
অঞ্জনা উপালীর দিকে তাকিয়ে এক নিশ্চিন্তের হাসি হাসলো।
আর গোটা সময় তারপর দুজনে পুরনো দিনের সব গল্পে ফিরে গেলো ।
কয়েকটা দিন পর সেদিন বেশ সকাল
মিষ্টি পরিবেশ।
অঞ্জনা স্নান করে ড্রেসিং টেবিলের সামনে চুল আঁচড়াছে ।
বিতনু টেবিলে মন দিয়ে কাজে ব্যস্ত ।
অঞ্জনা বলে উঠলো, "এই শোনো...তুমি আমার আর কোনো ছবি আঁকো না কেন? .. আমি খুব বুড়িয়ে গেছি, আমায় কি সাজলেও খুব বয়স্ক লাগে
এই.... বলো না..."
বিতনু তখন,
"হুঁ ..কি ... কিসের ছবি.."
অঞ্জনা তড়িঘড়ি বিতনুর টেবিলের কাছে গিয়ে কাজ থামিয়ে বলে উঠে,
"তুমি তো শুনচ্ছোই না আমার কথা.."
বিতনু হেসে , " বলো...
অঞ্জনা ছেলেমানুষের মতো বলে উঠলো,
" তুমি আমার ছবি আর আঁকো না কেন ?
আমি বুড়িয়ে গেছি বলে..."
বিতনু বলে, " কোই দেখি কোথায় .. কোথায়..বুড়িয়ে গেছো .."
অঞ্জনার লাজুক ..হয়ে মাথা নামিয়ে..
বিতনু বলে উঠে, "তুমি তো আমার মনের ক্যানভাসে চিরকাল আছো আর সেটা তো ভীষণ রঙিন.....
তুমি কি সেটা জানো না...!"
অঞ্জনার সরল হাসি তারপর বিতনুর বুকে মুখ গুঁজে...
বিতনু ও আলতো করে জড়িয়ে নিলো অঞ্জনাকে।
জানলা দিয়ে তখন ঝিকিয়ে পড়েছে পুবের নরম রোদ আর বাতাসে ভেসে আসছে পাখির কিচিমিচি সুর...।