Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!
Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!

Sayandipa সায়নদীপা

Romance

0.6  

Sayandipa সায়নদীপা

Romance

ভালো থাকিস

ভালো থাকিস

6 mins
1.0K


বিষয় --- প্রমিস ডে


রোজগার মত আজও পার্কটায় এসে বসল শ্রুতি। আজ কদিন ধরেই মনে হচ্ছে পার্কে যেন একটু বেশিই মানুষের আনাগোনা। ভালো লাগেনা শ্রুতির। ওর পছন্দ বিকেলের নির্জনতাই। শ্রুতির অদূরে একটা মেয়ে অনেকক্ষণ থেকে হাত ঘড়ি দেখছে আর উসখুস করছে। মেয়েটার বয়েস অল্প, সদ্য কলেজে ঢুকেছে হয়তো। বেশ কিছুক্ষণ অধৈর্য ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আচমকা মেয়েটা এসে বসল শ্রুতির পাশে। শ্রুতি নিছক কৌতূহল বশেই জিজ্ঞেস করল, 

--- কোনো সমস্যা হয়েছে?

---- হুঁ? 

চমকে উঠল মেয়েটা। তারপর মুখে জোর করে হাসি টেনে আনার চেষ্টা করে বলল, 

---- না না। আসলে একজনের জন্য অপেক্ষা করছি। 

শ্রুতি লক্ষ্য করলে মেয়েটার বামদিকে একটা গজ দাঁত, তাই হাসলে ভারী মিষ্টি দেখায় মেয়েটাকে। 

---- অধৈর্য হয়ো না, ঠিক আসবে।

---- প্রমিস করেছিল ঠিক টাইমে আসবে। আর আজকের দিনেও প্রমিস ভাঙল…

কথাটা সম্পূর্ণ করার আগে মেয়েটা হঠাৎ উঠে দাঁড়াল। শ্রুতি দেখল অদূরেই একটি ছেলে দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছে। মেয়েটা চলে গেল ছেলেটার দিকে। কিন্তু মেয়েটা যে বলল "আজকের দিনে…"

ভাবতে ভাবতেই শ্রুতির মনে পড়ে গেল আজ তো ১১ই ফেব্রুয়ারি, প্রমিস ডে। মনে মনে মৃদু হাসল শ্রুতি। সবই কম বয়েসের আবেগ। এই দিনগুলো নিয়েই কম বয়সে কত উৎসাহ উদ্দীপনা থাকে, কত বিশ্বাসে পরিপূর্ণ থাকে এই দিনগুলো। তারপর বয়েস বাড়ার সাথে সাথে বাস্তবের আসল রূপটা বেরিয়ে আসে বাইরে। আজকেও এই কচি কচি ছেলেমেয়েগুলো একে অন্যের কাছে থাকার, একে অন্যের পাশে থাকার অঙ্গীকার করবে, প্রতিশ্রুতি দেবে কখনও ছেড়ে না যাওয়ার। কিন্তু তারপর…? না না শ্রুতি খারাপটা ভাববে কেন! তার ক্ষেত্রে খারাপ ঘটেছে বলে ওদের ক্ষেত্রেও ঘটতে হবে তার কি মানে আছে! সব ভালো হোক ওদের। সব প্রতিশ্রুতি পালন করুক ওরা। আজকের দিনটাও সার্থক হোক ওদের জীবনে।

- শ্রুতি ? 

আচমকা অচেনা কন্ঠস্বরে চমকে উঠল শ্রুতি। তাকিয়ে দেখল সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কন্ঠস্বর স্মৃতির থেকে মিলিয়ে গেলেও চেহারাটা এখনও অমলিন। 

- অন্বয় তুই !

- কেন রে আমার কি এখানে আসতে নেই?

- না,মানে তুই তো...

-কি?

- তুই তো সব কিছু ছেড়ে চলে গিয়েছিলি হঠাৎ করে তাহলে আজ আবার কেন ফিরে এলি?

- কি ছেড়ে গিয়েছিলাম রে শ্রুতি?

-তুই... এই শহর।

- ছেড়ে যায়নি,অন্য শহরে শিফট করেছিলাম মাত্র।

- শিফট ! হুম ভালো।

- দাঁড়িয়ে আছি এতক্ষণ বসতে বললি না তো।

- পার্কের বেঞ্চ জনসাধারণের জন্য,এখানে বসতে হলে কারুর পারমিশন লাগে না।

- ওহ।হুম।

- বাই দ্য ওয়ে তুই কবে থেকে পারমিশন নেওয়া শুরু করলি?

- সরি?

-নাহ কিছু না।তোর খবর বল।

- ঠিকঠাক।

- অফিস কেমন চলছে?

-ওই চলছে আর কি।কিন্তু তুই কি করে...?

- আমিও ব্যোমকেশের শিষ্য স্যার।

- বুঝলাম।তা আপনি কার জন্য অপেক্ষা করছেন ম্যাডাম?বর আসবে নাকি?

- না।আমি একাই এসেছি।

- একা? 

-হ্যাঁ।

- কেন?

-এমনি।


[এটা আমার অভ্যেস অন্বয়। তুই সব ভুলে যেতে পেরেছিস, অন্য শহরের বুকে নিজের নতুন জীবন শুরু করতে পেরেছিস কিন্তু আমি সেই পুরোনো শহরের বুকে বাস করে পারিনি অভ্যেস গুলো পাল্টাতে বা তোর মত পুরোনো সব কিছু মন থেকে মুছে ফেলতে। তোকে কোনো একদিন প্রমিস করেছিলাম রোজ বিকেলে অন্তত দশ মিনিটের জন্য হলেও এখানে তোর সাথে দেখা করব। আমি প্রমিস ভাঙ্গিনি অন্বয়। আমি আজও প্রতিদিন এই পার্কটায় আসি নিয়ম করে। আমি আজও রোজ পাখি দেখি।পার্থক্য শুধু একটাই আজ আর কেউ আমার পাশে বসে না,আমার আঙ্গুলগুলোকে নিজের আঙুলের মধ্যে নিয়ে নেয় না।আজ আর এই পড়ন্ত বিকেলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে কেউ আমাকে গান শোনায় না।]


- কি হলো?চুপ করে গেলি কেন?

- নাহ কিছু না।বল।

- তা বিয়েটা কবে?

-বিয়ে?

- আকাশ থেকে পড়লি মনে হলো?

- তুই কি করে জানলি?

- ভুলে যাবেন না ম্যাডাম ফেলুদা আমার গুরুদেব ছিলেন।

- এখনো ফাজলামি করার অভ্যাস টা যায়নি তাহলে?

- আর তোর সিরিয়াস হওয়ার অভ্যেসটাও একই আছে দেখছি।

- আমি কোনোদিনই পাল্টে যায়নি অন্বয়।

- শ্রুতি

-বল

- তোর বিয়ে কবে বললি না তো

- আর দুমাস পর।

- বর কি করে?

- কলেজের লেকচারার।

- ওয়াও গ্রেট।তা ভালো করে খোঁজ খবর নিয়েছিস তো?

- কিসের?

- মানে ছেলেটার সম্বন্ধে

-হ্যাঁ

- সব ঠিকঠাক?

-ঠিকঠাক না হলে বিয়ে করতাম না নিশ্চয়

- হ্যাঁ তাও বা ঠিক।আমিই বোকা বোকা প্রশ্ন করে যাচ্ছি।

- আলাপ কোথায় হলো তোদের?

- মেজমাসিমনিদের রিলেটিভ।

- কোনো অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছিল?

- মানে?

- মানে তোদের প্রেম কোথা থেকে শুরু?

- অন্বয় !!

- কি হলো?

- এটা আরেঞ্জ ম্যারেজ।

- ওহ।


[আমাকে ভুলে যেতে পেরেছিস তাহলে !! বলতিস তো ভুলতে পারবিনা কোনোদিন। প্রমিস করেছিলি আমাকে ছেড়ে অন্য কারুর সাথে চলে যাবি না। আর আজ..! প্রেম হোক কি সম্বন্ধ আজ আমাকে ভুলে অন্য কারুর সাথে ঘর বাঁধতে যাচ্ছিস। আমার কথাটা কিছু ভুল ছিল না যে তুই প্রমান করে দিলি ... টাইম ইজ দ্য বেস্ট অবলিভিয়ন।]


- কি ভাবছিস রে?

- কিছু না।


[আমি জানি তুই কি ভাবছিস।ভাবছিস শ্রুতি অন্বয়কে ভুলে গেছে।ভাব তুই তোর মত করে।তুই তো এটাই চেয়েছিলি।তাই তো যাওয়ার আগে তোর সব ছবি ,সব চিঠি নিয়ে চলে গিয়েছিলি।তোর সব চিহ্ন মুছে ফেলতে চেয়েছিলি।কিন্তু তুই কোনোদিনও ভাবিসনি যে আমার মনের মধ্যে থাকা তোর ছবি গুলোকে কি করে মুছবো ! তোর পাতলা গোঁফের আড়ালে থাকা এক চিলতে হাসিটাকে কি করে ভুলবো? কি করে আমার কপালে তোর প্রথম চুম্বনের স্পর্শটাকে মুছে ফেলবো? আজ চার বছরে অনেক স্মৃতিই ফিকে হয়ে গেছে।কোনোদিনও তোকে ছাড়া বাঁচবো ভাবিনি কিন্তু আমি বেঁচে আছি আজও।কেউ কারুর জন্য মরে না,আমিও মরিনি।কোনোদিনও বিয়ে করবো না ভেবেছিলাম।আজ মা বাবাকে খুশি করতে সেটাও করে নিচ্ছি।আমার নিজের মতামত তো কোনোদিনই মূল্য পায়নি।তুই যা চেয়েছিলি তাই মেনে নিয়েছিলাম ,আজ মা বাবা যা চায় সেটাই করছি।]


- শ্রুতি

- হুম?

- তুই ভালো আছিস?

- হ্যাঁ।ভালো থাকবো না?সামনেই বিয়ে বলে কথা।

-বাহ্

- তা তুই বিয়ে করছিস কবে?

- করবো।দেখি।পরে।

-পরে কেন? বুড়ো হয়ে যাচ্ছিস তো

- হাঃ হাঃ হাঃ


[তুই সত্যিই ভালো আছিস?নাকি অভিনয় করছিস? তোর বিয়ের খবর পাওয়ার পর থেকে বুকের ভেতরটা কেমন যেন করতো তাই তোকে শুধু একবার দেখবার টানে আজ চার বছর পর এই শহরে আবার এসেছি কিন্তু তোর দেখা করার মতো মনের জোর পাইনি।আজ হঠাৎ এখানে এরকম কাকতলীয় ভাবে দেখা হয়ে যাবে ভাবিনি। আজ তো এখানে এসেছিলাম সেই পুরোনো দিন গুলোর ছোঁয়া পেতে যে দিন গুলো তোর মধ্যে বিভোর হয়ে কাটাতাম।আর আমি জানি তুই আমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্নের জাল বুনতিস কিন্তু কি করবো বল চিরকালই আমার আত্মবিশ্বাসটা কম।তাই তোর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে চাইনি,চাইনি আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে তুই কোনো আঘাত পা কোনোদিন।তাই তোর স্বপ্নের জালটা নিজের হাতে ছিন্নভিন্ন করেছিলাম।চাকরি পাওয়ার পর কেন জানিনা আর তোর সামনে এসে দাঁড়ানোর সাহস হয়নি।ভেবেছিলাম তুই হয়তো বিয়ে করে সংসারী হয়ে গেছিস।তোকে অন্য কারুর হয়ে যাওয়া অবস্থায় দেখতে চাইনি।তারপর এই কিছুদিন আগে ভাগ্যের ফেরে যখন তোর খোঁজ পেলাম তখন তোর বিয়ের ঠিক হয়ে গেছে।সারারাত ঘুমোতে পারিনি সেদিন।কেমন এক তীব্র কষ্টে শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম।আমার সারা জীবন টাই তো ভুলে ভরা।কোনোদিনও সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারলাম না।আমার দ্বিধাগ্রস্ত মনই আমার সব ছিনিয়ে নিলো। চাকরি পাওয়ার পর একবার কেন চেষ্টা করতে পারলাম না তোর কাছে ফেরার ! আমাকে কোনোদিনও ক্ষমা করিসনা শ্রুতি। কোনোদিনও না।]


- অন্ধকার নেমেছে।আমায় এবার যেতে হবে রে।

- হ্যাঁ আমাকেও।তোর বিয়ের জন্য আগাম শুভেচ্ছা।খুব সুখী হোস।

- থ্যাংকস।


[সুখী ! সুখ-দুঃখের সমীকরণ গুলোর হিসেব সেই কবেই মেলাতে ভুলে গেছি।তুই আর কোনোদিনও পেছন ফিরে তাকাসনি কিন্তু আমি তোর খোঁজ রেখে গেছি। তোর চাকরি পাওয়ার খবর শুনে নিজের অবচেতন মনেই আশা করেছিলাম তুই হয়তো আবার আসবি আমার কাছে কিন্তু তুই এলিনা কোনোদিন। অথচ এক সময় তুই কথা দিয়েছিলি আমায় ছেড়ে কোত্থাও যাবিনা, আমার হাতটা কোনোদিনও ছাড়বিনা। সেই এতো বছর পর আজ এমন সময় এলি যে সময় সব বোধহয় হাতের বাইরে। তবুও খুব ইচ্ছে করছে রে তোর মুখ থেকে একবার শুনতে -  'বিয়ে করিসনা শ্রুতি,ফিরে আয় আমার কাছে'। আমি সব ছেড়ে আবার তোর কাছে ফিরে যেতে রাজি আছি অন্বয়। একবার শুধু বলে দেখ। জানি তুই বলবিনা। অনেক প্রতিশ্রুতি দেওয়া, ভাঙা গড়ার মাঝেই যে প্রতিশ্রুতিটা নিজের কাছে করেছিলাম সেই প্রতিশ্রুতিটা আজও ভাঙ্গিনি আমি। নিজেকে কথা দিয়েছিলাম তোকে ভালো রাখব। আর তাই তো তুই যখন মুখ ফিরিয়ে নিলি আমার থেকে তখন কোনো অভিযোগ করিনি। তোর ভালো থাকা যদি আমায় ছাড়া হয় তাহলে তেমন করেই নাহয় ভালো রাখবো তোকে। ]


- মোস্ট ওয়েলকাম।


[ইচ্ছে তো করছে তোকে বলি শ্রুতি- 'ভেঙে দে তোর বিয়ে,ফিরে আয় আমার কাছে।দুজনে মিলে এবার নতুন জাল বুনব,স্বপ্নের নয় বাস্তবে।তোর মনের মতো করে আমাদের সংসারটা সাজাবো।'

কিন্তু আজ আর তোকে এসব বলার মুখ নেই আমার।তোকে যে আঘাত দিয়েছি তার প্রত্যুত্তর শুধু প্রত্যাখ্যানই হতে পারে। যখন থেকে তোকে নিজের মনটা দিয়েছিলাম তখন থেকে নিজের কাছে প্রমিস করেছিলাম যে যাই হয়ে যাক না কেন তোকে ভালো রাখবো। হয়তো আমি অনেক আঘাত দিয়েছি তোকে, তাও আজও আমি চাই তুই ভালো থাক, সেটা আমার মন্দ থাকার বিনিময়েও যদি হয় তবে তাই হোক। তোর নতুন জীবন সুখের হোক এখন এই আমার কাম্য।]


- ভালো থাকিস অন্বয়।

- তুইও ভালো থাক শ্রুতি।আসছি।


Rate this content
Log in

More bengali story from Sayandipa সায়নদীপা

Similar bengali story from Romance