ভালো আছি, ভালো থেকো, ভালো রেখো
ভালো আছি, ভালো থেকো, ভালো রেখো
"শোন, এই আমাদের লাস্ট কনভার্সেশন, আজকের পর থেকে আর আমায় কল করবিনা বা মেসেজ করবিনা, জানিসই ত আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে, তো মিছে মিছে আর কষ্ট পেয়ে কি লাভ বল",
: শ্রুতি এই কথাগুলো বলে সোজা অনির্বাণের চোখের দিকে তাকালো, না জানি কি উত্তর পাবার আশায়।
অনির্বাণ হাসলো, আর কি বা করার আছে তার। যাকে মনের মণিকোঠায় বসিয়ে রেখেছিল এতদিন, সেইই ছেড়ে চলে যাচ্ছে অন্য কারোর ঘরে চিরদিনের জন্য।বুকটা কষ্টে দুমড়েমুচড়ে উঠছে। হয়ত অজান্তেই অনির্বাণের চোখে দুফোঁটা জল বেরিয়ে পড়লো।
"এই কাঁদিস না, কাঁদবি কেনো দেখদেকি, আর মেয়ে নেই দুনিয়াতে, প্লিজ কাঁদিস না লক্ষ্মীটি আমার, তুই কাঁদলে যেতে পারবোনা যে, প্লিজ আমার মুখ চেয়ে কাঁদিস না", বলে শ্রুতি অনির্বানকে জড়িয়ে ধরলো, সেইভাবে যেভাবে প্রত্যেকবার অনির্বাণ কাঁদলে সে জড়িয়ে ধরে
, আলতো করে জাপটে, অনির্বাণের সব দুঃখ রন্ধ্রে রন্ধ্রে নেবার আশায়।
অনির্বাণ: "শোন ছাড় আমাকে, ছাড় বলছি, আর কাছে আসিস না , দূরে যেতে দে আমায়, কি দরকার মিছে রাগ, মিছে অভিমান, মিছে ক্ষোভ, মিছে দুঃখ রেখে, চলেই যখন যাবি, যাবার বেলায় আর আমায় পিছু ডাকিস না।"
শ্রুতি: " না ছাড়বোনা, কান্না থামা তাহলে; কেঁদে কোনো লাভ নেই; তোর চোখের জলের মূল্য আমি কোনোদিন চোকাতে পারবোনা রে।" বলে ডুকরে কেঁদে উঠলো শ্রুতিও।
অনির্বাণ:" একটা উপায় আছে কিন্তু মূল্য চোকানোর" বলে একটা হালকা হাসি দিল।
শ্রুতি (চোখ মুছতে মুছতে):" বল কিভাবে?"
অনির্বাণ :" তোর বিয়েতে নিমন্ত্রণ করবি?, যদি হ্যাঁ বলিস তাহলে বাকিটা বলবো।"
শ্রুতি: "তুই আসবি বললে?, তাহলে হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ।"
অনির্বাণ:" তাহলে বাকিটাও শোন, আমি আসবো নিশ্চয়ই। মনে আছে একদিন বলেছিলাম তোকে বিয়ের কনে হিসেবে দেখতে খুব ইচ্ছা করে, সেদিনই দেখবো না হয়, আমার গরিব ঘরে না হউক, অন্য কারো ঘরে তো নিশ্চই যাবি, আমি দেখলেই খুশি হবো, আমার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হবে, আর?" বলে থেমে গেলো।
শ্রুতি:" বল, থামিস না, বলে যা, তারপর?"
অনির্বাণ:" তুই সাতপাকে ঘোরার আগে বরের ধুতির সঙ্গে তোর শাড়ী আমাকে বাঁধতে দিস, ওই হবে তোর বরের হাতে আমার জীবনের সব খুশি , সব আনন্দ, সবকিছু সমর্পন করা। আর তোর বর যখন তোর সিথিতে সিঁদুর পড়াবে, সেই মুহূর্তের একটা ছবি আমি তুলবো রে, সেটা বাঁধিয়ে রাখবো আমার ঘরে, কারণ লাল সিঁদুর মাখানো আমার শ্রুতি কেমন দেখতে, সেদিনের পর তো আর দেখতে পারবোনা, দেখতে চাইওনা। ব্যাস তোর খুশি দেখতে চাই, এই আমার ইচ্ছা, আচ্ছা চলি তাহলে আজ, ভালো থাকিস, ভালো রাখিস।" বলে শ্রুতির দুটো হাত ছেড়ে দিল, শেষবারের মত।
শ্রুতি:" এত ভালবাসিস আমায়; আমিই হতভাগী রে" বলে ফেলফেল করে অনির্বাণের চলে যাওয়ার পথের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
চলে যাচ্ছে অনির্বাণ, মিশে যাচ্ছে তার ছায়াটা আস্তে আস্তে অন্ধকারে, অনেক দূরে চলে গেছে, বহুদূরের পথিক হতে।