বেষ্ট প্যারেন্টস
বেষ্ট প্যারেন্টস
একটা প্রায়ান্ধকার রাস্তা দিয়ে ছুটে চলেছে উৎসা,পিছনে একপাল বিকৃত কাম দো পায়া জন্তুর দল। ওদের হাতে পরলে রক্ষা নেই আর, মাংস খুবলে খাবে। কিন্তু পথটা শেষ হচ্ছে না, আর পারছে না উৎসা, ছুটতে ছুটতে গলা শুকিয়ে এসেছে। শরীরে বিন্দুমাত্র শক্তি অবশিষ্ট নেই। পা জড়িয়ে যাচ্ছে উৎসার.......
তেষ্টায় গলা ফেটে যাচ্ছিল, ঘামে শরীরটা ভিজে জবজব করছে। মাঝ রাতে একটা উদ্ভট স্বপ্ন দেখে শরীরটা খারাপ লাগছিল খুব। উঠে বসে উৎসা জলের বোতলটা নিতে গিয়ে দেখে জল নেই। রাতে ভরে নিতে ভুলে গেছিল। উঠে ডাইনিংএ আসে। ঘড়িতে রাত একটা।
পাশে ফাগুনের ঘর থেকে দরজার ফাঁক দিয়ে হাল্কা আলোর রেখা ড্রইংরুমের মেঝেতে এসে আলপনা কাটছে। আলোর কম্পন দেখে উৎসা বোঝে ছেলে এখনো কম্পিউটারে কাজ করছে। এ বছর ক্লাস টেনের পরীক্ষা দেবে ফাগুন। পড়ার চাপে প্রায় প্রতিদিন রাত করে শোয়। বরাবর সে পড়ার ব্যপারে সিরিয়াস, ক্লাসে ফার্স্ট হয়। পড়ার জন্য ওকে বলতে হয় না। নিজের টুকু নিজেই করে নিতে পারে। দুজন টিচার আছে অবশ্য। একজন সায়েন্স গ্ৰুপ পড়ায়, একজন লিটারেচার করায়। বাবিন অফিসের কাজ আর ট্যুরের ফাঁকে সময় পায় না ছেলেকে দেখার। উৎসা নিজের এনজিওর কাজ সামলে মাঝে মধ্যে একটু দেখে নেয় ফাগুনকে। জল খেয়ে আলতো পায়ে ছেলের ঘরের দিকে এগিয়ে যায় উৎসা।
ঘরে ঢুকেই মনিটরে চোখ চলে গেছিল উৎসার। কিন্তু এ কি দেখছে!! ফাগুন..! এসব .! এই বয়সে. !এভাবে রাত জেগে..!
পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল উৎসা। বিশ্বাস হচ্ছিল না সে আবার স্বপ্ন দেখছে নাকি বাস্তব ! ফাগুন এতোটাই মগ্ন হয়ে কম্পিউটারে ডুবে ছিল যে মায়ের উপস্থিতি টের পায় নি। পা টিপে টিপে বেড়িয়ে যায় উৎসা। ডাইনিং টেবিলের সামনে গিয়ে ইচ্ছা করে আওয়াজ করে একটা বোতল ফেলে দেয়। শব্দ করে ফ্রিজটা আবার বন্ধ করে। মেঝেতে আলোর কম্পন বন্ধ হয়। ফাগুন বেরিয়ে এসে বলে -"এখনো ঘুমাওনি মা?"
-'শরীরটা খারাপ লাগছে। জল খেতে এসেছি রে।" নিজের গলাটা নিজের কানেই কেমন অন্যরকম লাগে। ছেলের দিকে তাকাতে পারে না মা।
"এতো রাত জেগো না মা। শুয়ে পড়ো। তোমায় তো প্রচুর ভোরে উঠতে হয়।"
-" তুই এত রাত জেগে পড়িস না বাবু। এবার শুয়ে পড়। আমার ঘরে এসি চলছে। সেখানে শুবি?"
-'' তুমি যাও, আমি একটু পরেই যাচ্ছি।" ,ফাগুন আবার নিজের ঘরে ঢুকে পড়ে। উৎসা এগিয়ে যায় নিজের ঘরে। মাথায় হাজারটা প্রশ্ন গিজগিজ করতে থাকে। তাদের এতো আদরের , এত ভাল ছেলে ফাগুন এ সব কি দেখছিল!! পেপারে বা টিভিতে শুনেছে বয়ঃসন্ধির সময় বাচ্চাদের মনে নানা রকম কৌতূহল তৈরি হয়? যেহেতু প্রপার কোনো সেক্স এডুকেশন এদেশে নেই অনেকেই বিপথগামী বা দিকভ্রান্ত হয় এসময়। তাই বলে তাদের ছেলে ?? বাবিন জানলে কিভাবে নেবে কে জানে? বরাবর ফাগুনের সব দোষের ভাগি হয় উৎসা। বাবিন সংসারের কোনো দায়িত্ব নিতে চায় না কখনো। ফাগুনই বা এসব ব্যপারে কতদূর এগিয়েছে কে জানে!! স্কুলটা বয়েজ, এটাই আপাতত সান্ত্বনা। কদিন আগে মৌলী বলছিল ওর মেয়ের কোএড স্কুলে বাথরুমে কনডোম পড়ে ছিল। এই নিয়ে ভালোই ঝামেলা হয়েছিল। টিভিতেও খবর হয়েছিল।
ফাগুন এসে ওধারে ছোট ডিভানটায় শুয়ে পড়ে। কিন্তু সারারাত উৎসার আর ঘুম আসে না। ফাগুনকে নিয়ে চিন্তায় মাথা ছিঁড়ে যায়।
কদিন কোনো কাজেই মন দিতে পারে না উৎসা। আজকাল রাতের দিকে বারবার উঠে দেখে ফাগুনকে। ছেলেও একটু বিরক্ত বোধহয়। বাবিন ফিরলেও বলে উঠতে পারে নি উৎসা।
এনজিওর কাজে ডাক্তার মেহুল জানার সাথে উৎসার অনেকদিনের পরিচয়। এক সপ্তাহ ধরে ভেবে চিন্তে শিশু মনস্তত্ববিদ ডাঃ জানাকে সব খুলে বলেছিল উৎসা। ডাঃ জানা মন দিয়ে সব শুনে বলেছিলেন ছেলেকে বেশি সময় দিতে। ওর সব ব্যাপারে খোঁজ নিতে। যেহেতু ফাগুনের মেয়েদের সঙ্গে মেশার সুযোগ কম ওকে সম্ভব হলে একটু মেয়েদের সাথে মিশতে দিতে। আরও বলেছিলেন এ সব ব্যাপারে কখনোই ওকে প্রশ্ন করতে না। আর ও যৌনতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন করলে ওকে ভুল উত্তর না দিয়ে বুঝিয়ে বলতে।
উৎসা বলেছিল -"ওর একটা কাউনসিলিং যদি ..."
-" সেটাও হবে। তবে এই মুহূর্তে ওকে চেম্বারে ডাকলে ও সেটা কিভাবে নেবে!! তার চেয়ে একদিন আপনি সপরিবারে আমার বাড়ি আসুন না হয়। প্রথমে ওর সাথে বন্ধুত্ব করি। ওর ক্রাইসিসটা বোঝার চেষ্টা করি।বাকিটা আমি সামলে নেবো।"
উৎসা কি উত্তর দেবে ভেবে পায় না। বাবিন কে না জানিয়ে এ ভাবে .......। বলে -"আপনি এত ব্যস্ত। আমার খারাপ লাগছে এ ভাবে আপনার মুল্যবান সময়..."
" না, না, আপনার ছেলের জন্য আমি আছি ম্যাডাম। আপনি ওকে নিয়ে আসুন। এটা কিন্তু এখনি ঠিক না করলে ভবিষ্যতে বড় আকার ধারণ করবে। এই যে যৌনতা নিয়ে উল্টোপাল্টা সাইট দেখে ওর মনে একটা ভুল ধারণা তৈরি হচ্ছে এটা থেকে ওকে বার করে আনতে হবে। আপনাদের অনেক বন্ধুত্ব পূর্ণ ব্যবহার করে ওর সাথে মিশে ওর মনের ভুল ধারণা গুলো দূর করতে হবে।" ডাঃ জানা ভরসা দেয়।
আজকাল কোনো কিছুই ভাল লাগে না ফাগুনের। সবাই কেমন বদলে যাচ্ছে। পড়ার বাইরে পৃথিবীটা কেমন দুর্বোধ্য লাগে। এই নতুন পর্না মিস জয়েন করার পর থেকেই ফাগুনের অস্বস্থিটা শুরু হয়েছে। সদ্য এমএ পাশ করে পর্না মিস জয়েন করেছে ওদের স্কুলে। সায়েন্স টিচার। প্রথম দিনেই মিসকে ভীষণ ভাল লেগেছিল ফাগুনের, পড়াতে পড়াতে মিস কি সুন্দর করে বোঝায়। মিসের তাকানো , ঐ হাতদিয়ে কপাল থেকে চুল সরানো, পিছন ফিরে বোর্ডে কিছু লেখা, উফ.. আর ভাবতে পারে না ফাগুন। বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে। একবার ডাইনিং এ গিয়ে দেখে আসে, মা আজকাল কারণে অকারণে যখন তখন ঘরে চলে আসে। ওর সাথে কারণে অকারণে কথা বলে। বিরক্ত লাগলেও মুখে কিছু বলতে পারে না ফাগুন। মা এর অন্ধকার বন্ধ বেডরুম দেখে নিশ্চিন্ত হয়ে নেটটা কানেক্ট করে সে। কিন্তু কদিন ধরে পর্না আসছেই না। একটা ফেক প্রোফাইল খুলে ফাগুন এখন পর্নার ফেসবুকে আছে। তবে পর্নার অনেক বন্ধুর মধ্যে এই অর্চি ছেলেটার সাথে পর্নার মাখামাখি ভীষণ চোখে পরে ফাগুনের। আজ আবার কয়েকটা ফটো শেয়ার করেছে অর্চি। ছেলেটা ইঞ্জিনিয়ার, শক্ত প্রতিদ্বন্দী । তবে ব্যাঙ্গালোরে থাকে, এটুকুই রক্ষা। কাল বিজু বলছিল পর্না কে দেখে ওর ও কুছ কুছ . । তখন কিছুই বলে নি ফাগুন। তবে প্রাকটিক্যাল ক্লাসে সলিউশনটা ইচ্ছা করেই ওর হাতে ফেলে দিয়েছিল। অসাবধানতার অভিনয় টুকু কেউ ধরতেই পারে নি। গুডবয়ের ইমেজটা ওকে সাহায্য করেছিল বরাবরের মতো। তবে পর্না বিজুকে হাত ধরে টেনে নার্সের রুমে নিয়ে গেছিল। পনেরো মিনিট পর পর্না একাই ফিরেছিল।
পর্নার ওয়াল ঘুরে ফাগুন চলে আসে ওর প্রিয় সাইটে। একবার আড় চোখে দেখে নেয় দরজাটা। কম্পিউটারের পর্দায় ফুটে ওঠে আদিম রিপুর কিছু বীভৎসতা। মেয়েগুলোকে ধরে বেঁধে কষ্ট দিয়ে পুরুষ গুলো যে আনন্দ পায় তা দেখেই তৃপ্ত হয় এই সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া ছেলেটা। নারীদের উপর অত্যাচারের এই সব দৃশ্য দেখে এক অদ্ভুত পরিতৃপ্তি পায় ও। সাধারণ যৌনসংসর্গ ওর দেখতে ভাল লাগে না।
আজ জীবনে প্রথম ফাগুনের স্কুলে গার্জিয়ান কল হয়েছে। বাবিন আর উৎসা দু জনেই ছুটে এসেছে তাই। চুপ করে ঘরের কোনে দাঁড়িয়ে আছে ফাগুন। প্রিন্সিপাল ছাড়াও একজন অল্পবয়স্ক টিচার আর আরেকজন ভদ্রলোক বসে রয়েছেন। ফাগুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও মিস পর্নাকে নিয়ে এই ভদ্রলোকের ছেলের সাথে মারপিট করেছে। ছেলেটির মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। ফাগুন চুপ, কারো কোনো প্রশ্নের জবাব দেয় না ও। সারা রাস্তা একটাও কথা বলে না কেউ। বাবিনকে রাতে সব খুলে বলে উৎসা, ডাঃ জানার কথাও বলে। পরদিন সকালে তিনজনেই ডাঃ জানার চেম্বারে যায়।আলাদা করে তিনজনের সাথেই কথা বলেন ডাঃ জানা।
ফাগুন কে ভেতরের ঘরে নিয়ে অনেকক্ষণ কথা বলেন। ওকে কয়েকটা ম্যাগাজিন আর বই দেন পড়তে। ওকে ভেতরে বসিয়ে রেখে বাইরে এসে উৎসাদের বলেন -" ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আসলে আমাদের দেশে এই বয়ঃসন্ধির বাচ্চাদের সঠিক যৌন শিক্ষা দেওয়া হয় না। এদিকে হাতের কাছে ইন্টারনেট আর ভুলভাল কিছু সাইট মজুত। পড়ার জন্য ওরা ল্যাপটপ ,স্মার্ট ফোন সব হাতে পাচ্ছে। অন্য দিকে বয়েজ্ স্কুলে পড়ে মেয়ে দের সাথে না মিশতে পেরে একটা হীনমন্যতায় ভুগছে। মন খুলে কথা বলার লোক নেই। সেই সময় অল্প বয়স্ক লেডি টিচার ওর কেন ক্লাসের অনেকের মনের কোনেই জায়গা করে নিয়েছেন। বাড়িতে বন্ধু নেই।সময় কাটাতে আবার সেই ভার্চুয়াল দুনিয়া। এসব থেকে সরিয়ে ওকে আবার স্বাভাবিক করতে সময় লাগবে। আপনাদের সহযোগিতা লাগবে। ওকে একটু সময় দিন। কৈশোর থেকে পশ্চিমের দেশগুলোতে স্কুলে সঠিক যৌন শিক্ষার ক্লাস শুরু হয়। অব্যাহতভাবে ধর্ষণ রোধ ছাড়াও, পর্ণোগ্রাফি যে বাস্তব নয় এবং ‘রিভেঞ্জ পর্ণ’ বা সম্পর্ক ত্যাগের পর বিশেষ সম্পর্কের ছবি প্রতিশোধমূলকভাবে ইন্টারনেটে পোস্ট না করা, মিথ্যা প্রলোভন বা ফাঁদে যাতে না পড়তে হয় এজন্যে সচেতনতা সহ যৌনতা নিয়ে সঠিক আচরণ শিক্ষা দেয়াই এধরনের ক্লাসের লক্ষ্য। ধর্ষণ ও সঠিক সময়ে দুজনের সম্মতিতে যৌন সম্পর্ক যে কখনোই এক নয় এবং ধর্ষণের পর মানসিকভাব বিপর্যস্ত হয়ে পড়া যে কোনো মেয়েকে স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে আনা এসব নিয়ে কাউনসিলিং হয়। এধরনের শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে পর্ণোগ্রাফির ছোবল ও ইন্টারনেটের অপব্যবহার থেকে তারা যেন নিজেদের রক্ষা করতে পারে।
আজকাল দেখা যায় কিশোর কিশোরীরা অহরহ যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে বা পড়তে বাধ্য হচ্ছে। যা পরবর্তীতে তাদের ভবিষ্যত চলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কিশোরী বয়সে গর্ভবতী হওয়া ছাড়াও রিভেঞ্জ পর্ণ বা প্রতিশোধমূলক বিশেষ সম্পর্কে ছবি প্রকাশ করে দেয়ায় অনেকে বিপত্তিতে পড়ছে। আবার অনেকেই এটাকেই অর্থ উপার্জনের পথ করে নেয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা মোবাইল ফোনে যৌন আবেদনময় ছবি ও তথ্য আদান প্রদান বেড়ে যাওয়া এ সবের জন্য দায়ী।’’
দু দিন পর আবার আসতে বলেছিলেন উনি।
স্কুলে গরমের ছুটি পরে গেছিল। উৎসা এই দু দিন ছেলের সাথে সময় কাটাতে চেষ্টা করেছে।দুদিন পর আবার অনেকক্ষণ ফাগুনের সাথে কথা বলার পর একাই উনি বেরিয়ে আসেন। ওনার আ্যসিস্ট্যান্ট ফাগুন কে নিয়ে পাশের আরেকটা ঘরে যায়।
বাবিন ও উৎসা অনেক আশা নিয়ে ওনার দিকে তাকায়। উনি বলেন -" আসলে আমাদের মন একটা সাদা কাগজের মতো। কচি বাচ্চাদের মন আরও পরিষ্কার। ফাগুন খুব ভালো ছেলে কিন্তু ওর বন্ধুর অভাব আপনাদের আগেই বলেছি। পড়ার বাইরে ওর দুনিয়াটা বড্ড ছোটো। ও হয়তো কখনো দেখেছে - ওর বাবা, মা কে ডমিনেট করছে , যা অনেক পরিবারেই হয়ে থাকে। ও শিখেছে মেয়েদের দাবিয়ে রাখতে হয়। " বাবিন চোখ নামিয়ে নেয়।
-"তাছাড়া মা এর এনজিওর পেছনে ব্যস্ততা ওকে আরও একা করে দেয়। আপনাদের কাজের মেয়েটির উপর তার স্বামী প্রতিদিন অত্যাচার করে,যে ঘটনা গুলো মেয়েটি রোজ এসে আপনাদের বলে। ওর কানে প্রতিনিয়ত কথা গুলো যেতে থাকে এবং ওর অবচেতন মনে গভীর দাগ কাটে। বাবার কোনো কলিগ কে তার বর মারে , অত্যাচার করে এ গল্পটাও ও জানে। ফোনে মা কে এনজিওর বিভিন্ন অত্যাচারিত দের কথা অনেককে বলতে শোনে যেগুলো ওর মনে গেঁথে যায়। এছাড়া ইন্টারনেটের যুগে বাচ্চারা অনেক কিছুই নিজে নিজে জেনে যায়। ওর বন্ধু কম থাকায় ও একা একাই নিজের একটা অবাস্তব দুনিয়া বানিয়ে নিয়েছিল। ঠিক এই সময় মিস পর্না ওদের স্কুলে আসে। ফাগুনের থেকে আট ন বছরের বড় মিসকে ওর ভীষণ ভালো লেগে যায়। ও মিসকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে। মিসের সাথে রোজ চ্যাট করে ফেক আইডি বানিয়ে। এর পর ও জানতে পারে মিসের বয় ফ্রেন্ড আছে। ও সেখানে ভাঙ্গচি দিতে চায়। এদিকে স্কুলের অনেক বাচ্চাই মিসের প্রতি আকৃষ্ট, তারা ও ওর দুর্বলতা লক্ষ্য করেছিল। ও অ্যাসিড ঢেলে একজনের হাত পুড়িয়ে দেয় কয়েকদিন আগে। এ বার আরেকজনের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। আপাতত কাউন্সিলিং এর পাশাপাশি দরকার ওর মনের এই ক্ষত গুলোকে মেরামত করা। প্রথমেই বলবো কোথাও ঘুরে আসুন ওকে নিয়ে। ওর সামনে নিজেরা ঝগড়া করবেন না। এনজিও বা অফিসের আলোচনাও নয়। ওকে তিরস্কার করবেন না। ওকে সময় দিন। পড়া ওর হয়ে যাবে। ওর দরকার বন্ধু। ভারচুয়াল বন্ধু নয় সত্যিকারের বন্ধু। ওকে সপ্তাহে দুদিন করে এনজিওতে নিয়ে যেতে পারেন। শিশুদের সাথে খেলতে পারবে,মিশতে পারবে , খোলা হাওয়াতে শ্বাস নিতে পারবে। এছাড়া ওকে সাঁতার বা কোনো খেলায় দিতে পারেন। ভাল বই এনে দিন। গেমের সিডি নয়। বাড়িতে নেটে কিছু সাইট লক করে দিন।ওর প্রশ্নের ঠিক উত্তর দিন। যৌন-জীবন সম্বন্ধে ওর ভুল ধারণা ভেঙে না দিলে ও সুস্থ হবে না। সুস্থ যৌন জীবন সবার প্রয়োজন। যৌনতাকে ও যে ভাবে দেখছে সেটা যে ভুল ওকে বোঝাতে হবে। দরকারে ভাল ইংলিশ সিনেমা দেখান ওকে। ছেলে বড় হয়েছে। লজ্জা না পেয়ে ওকে সঠিক শিক্ষা দিন। তবে একসাথে চাপ দিয়ে নয়। সময় নিয়ে আস্তে আস্তে। আপনাদের ও নিয়মিত কাউন্সিলিং দরকার। ওর কোন কথায় ওকে কি উত্তর দেবেন,কতটা জানাবেন। তাই আপনাদের ও ওর সাথে আসতে হবে আরও কয়েক বার।তবে ও ভীষণ কো-অপারেট করছে। আর কয়েকটা সিটিংএই ও সুস্থ হয়ে যাবে আশা করছি। " ডাঃ জানা একটা বেল বাজাতেই ওরা ফাগুনকে দিয়ে যায়। উৎসা আর বাবিন চুপ।
ফেরার পথে বাবিন সবাইকে সিটি সেন্টারে নিয়ে গেল। বহুদিন পর মুভি দেখে, বাইরে ডিনার করে অনেক ঘুরে বাড়ি ফিরল সবাই। পরদিন সকালে মন্দারমনি। তিনটে দিন সমুদ্রের বুকে কাটিয়ে তিনজনে খুব আনন্দ করলো। বাবিন এবং উৎসা বুঝতে পেরেছিল ওদের ত্রুটিটা কোথায়। দেরি না করে ওরা ভুল গুলো শুধরে নিয়েছিল দ্রুত। ডাঃ জানার দেওয়া ম্যাগাজিন গুলো খুব কাজে লেগেছিল ওদের।এর সাথে চলেছিল তিনজনের কাউন্সিলিং। বাবা মা আর ছেলে বন্ধু হয়ে গেছিল সব সম্পর্কের ঊর্ধ্বে গিয়ে।
পরীক্ষা শেষ, সবে আন্দামান ঘুরে ফিরেছে তিনজনেই। বাবিন আবার অফিসের কাজে চেন্নাই। উৎসা একটু এনজিওর কাজে মন দিয়েছে। শেষ ছয় মাস ডাঃ জানার ট্রিটমেন্টে ফাগুন এখন স্বাভাবিক। উৎসার সাথে মাঝে মধ্যে এনজিওতেও যাচ্ছে ও। উৎসা আর বাবিন নিজেরাও নিজেদের বদলে ফেলেছে।
সেদিন রাতে আবার ঘুমটা ভেঙে গেছিল উৎসার। কি মনে করে ফাগুনের ঘরের দিকে উঠে গেছিল সে। আবার মেঝেতে আলোর ঝলকানি দেখে চমকে উঠেছিল উৎসা। এতো ট্রিটমেন্ট, এতো কাউন্সিলিং সব কি তবে বিফলে গেলো!! অনেক কষ্টে শরীরটাকে টেনে ফাগুনের দরজায় পৌঁছে মনিটরের দিকে চোখটা তোলে উৎসা। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চোখের কোন ভিজে ওঠে।
ফাগুন আন্দামানের ছবি গুলো একটা এ্যালবামে সাজাচ্ছে। ওদের তিনজনের একটা ছবিকে এডিট করে নিচে লিখল বেষ্ট প্যারেন্টস্ ফর এভার।