বেডরুম
বেডরুম
আমরা ভাবি আমরা একাই একশো , আমরা সহজে ঠোকব না । আমরা শুধুই জিতবো হারবো না । বাস্তবে কি তাই সম্ভব হয় ! না হয়না , আমাদের ধারণার বাইরেও অনেক কিছু হয় । তার সঠিক বিশ্লেষণ করা হয় না কারণ আমরা আমাদের মনের সব কথা শেয়ার করি না । কচ্ছপ তার পিঠের খোল টাকে বোঝা মনে করে সে জানে ওটাই তার বর্ম তবুও ওটাকে পরিত্যাগ করতে চায় । সেফটি কে ডিঙিয়ে যেতে চায় কেন সবাই ! কারণ জীবন মানে শুধুমাত্র বেঁচে থাকা নয় । নেত্রলেখা কে সবাই একটু কড়া ধাতের মেয়ে বলেই জানে । তার উপরে একটা কড়া ভাবমূর্তির খোলস তাকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে যেন ! নেত্র আত্মসচেতন একজন মেয়ে , বিয়ে করে শশুর বাড়ী এসে থেকে তার অঙ্গুলী হেলনেই সব কাজ সম্পন্ন হয় । তার স্বামী শুভ তুলনায় একটু শান্ত , হাসি মুখে লেগে থাকে এমন ছেলে । শুভ লক্ষ করে কিছুদিন ধরেই নেত্র ঘুমের মধ্যে কেঁদে ওঠে , বিড়বিড় করে কিসব বলে । শুভ তার ঘুম ভাঙ্গিয়ে তাকে কি হয়েছে জানতে চাইলে এড়িয়ে যেতে চায় । বলে স্বপ্ন দেখছিলাম । শুভ কিছুই বুঝে উঠতে পারে না । এদিকে দিন দিন একটা পরিবর্তন ঘিরে ধরছে নেত্র কে ।
শেষে এক নিশি রাতে তাকে নিজের মতো করে বুঝিয়ে রাজি করে কি হয়েছে বলতে । কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর নেত্র বলে কিছু দিন ধরে আমি এক আজব স্বপ্ন দেখছি শুভ । আমি জানি ওটা স্বপ্ন আর স্বপ্নে যা ঘটেছে বাস্তবে তা ঘটা অত সহজ নয় তবু আমি ভেঙে পড়ছি নিয়ত । তুমিই বলো আমি তো নারীবাদী , ফেমিনিস্ট । আমি তো সহজেই কোন অন্যায় মেনে নি না ! তুমি কোন অন্যায় যদি ভবিষ্যতে আমার সাথে করো , আমি তো তোমার পায়ে পরবই না যে উপরন্ত আমি ঘুরে আঘাত হানবো তোমার দিকে । সেটা আমি কেন সবাই জানে । তার পরও এই বেসলেস একটা স্বপ্ন আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে । আমি স্বপ্নে দেখি আমার বাপের বাড়ি থাকার সময় তুমি একটা বিয়ে করে বউ এনেছ ঘরে । ফিরে এসে দেখি তুমি তোমার মা তাকে নিয়েই ব্যস্ত । সে আমার বেডরুম , তোমাকে , এই সংসারকে অজগরের মত জড়িয়ে ফেলেছে । আমি হতবাক হয়ে নিজের ঘরে ঢুকতে গেলে বাধা পাই , সে আমায় জানায় তোমরা এখন ব্যস্ত ! তুমি আদুল গায়ে তার সাথে বসে আছো বিছানায় । আমার বুক ফেটে যায় , মনের মধ্যে রক্ত ক্ষরণ ঘটে ওসব দেখে । তোমার মা আমায় বলে বৌমা থাকবে থাকো তবে খোকার ঘরে তোমার জায়গা নেই ! অন্য কোন ঘরে তুমি থেকো । তুমি ছলনা করে আমাকে বোঝাও যে তুমি বাধ্য হয়ে এটা করছো , আমি সব বুঝতে পারি তবু তোমাকে বিশ্বাস করতে চাই । তোমার মাকে দোষ দিয়ে তোমাকে রক্ষা করতে চাই । অথচ আমি খুব জানি এটা তোমার সম্মতি ছাড়া সম্ভব নয় । তাকে তুমি একটু ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বলো আমার সাথে কথা বলবে বলে । সব তোমার মিথ্যা নাটক আমি বুঝেও বুঝতে চাইনা । আমি তোমাকে ভালো সাজিয়ে , তোমার দোষ গুলো মিথ্যা প্রমান করে তোমাকে ফিরে পেতে চাই । যে সংসারে আমি গিন্নি সেই সংসার আজ তৃতীয় নারীর হাতে তুলে দিয়েছ তুমি , সেই তোমাকে আমি ফিরে পেতে চাই । স্বপ্নের মধ্যেই আমার ফেমিনিস্ট মন আমাকে সজাগ করে যে আমি থাকতে তুমি দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারো না । আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ করেছ তুমি , এটা সম্ভব নয় । আমার ফেমিনিস্ট মন আমাকে বলে , কেন কুকুরের মত শুভর পিছু পিছু ছুটছিস । ও তোর অপরাধী , ওর শাস্তি প্র্যাপ্য ! যে তোকে ঠকাচ্ছে তাকে শাস্তি পেতে হবে । শাশুড়ি কে ভিলেন বানিয়ে শুভ কে কেন আড়াল করছিস ? আমি সব শুনেও না শোনা করি আর সেই হেনতেন প্রকারে তোমাকে ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে পড়ি । আমার হাতে যেন এক মুঠো বালি ... আমি তা মুঠো বন্দি করে রাখতে পারছি না কিছুতেই ! সব আমার হাত ফসকে পড়ে যাচ্ছে একটু একটু করে ।
এপর্যন্ত বলে ডুকরে কেঁদে ওঠে নেত্র । শুভ তাকে জড়িয়ে ধরে । তার কপালে এঁকে দেয় স্নেহের পরশ । শুভ বলে যা পাগলী এটা কি সম্ভব ? তুমি থাকতে এমন কে আছে যে আমার সংসারে আমার মনে দখল নেবে ? আর যদি আমি চাইতাম ও তো তুমি কি আমাকে ছেড়ে দিতে ? আমার স্থান হতো জেল হাজতে তাই না ! বিবাহিত হয়ে আমি কি করে অন্য বিয়ে করতে পারি ? এগুলো সবই তুমি জানো নেত্র আর তোমার অবচেতন মনে ও এই উত্তর গুলো আছে যা যা আমি বললাম এতক্ষণ । আসলে কি জানো নেত্র , তুমি ভালোবাসতে বাসতে এমন সীমা অতিক্রম করে গেছো যে আমার জন্য তুমি নিজের আত্মসম্মান , ন্যায় অন্যায় বোধ সব ত্যাগ করতে পারো । আর এই সংসার যাকে তুমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তৈরি করে এসেছ তার প্রতি আসক্তি থেকেই তোমার স্বপ্নের সৃষ্টি । হে প্রিয়তমা অনেকটা পথ যে চলার বাকি ... ভয় নেই আমি আছি তোমার সাথে ... শুধুই তোমার হয়ে । নেত্রলেখা শুভর বুকে মুখ গুঁজে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে , হ্যাঁ তার ভয়কে সে জয় করে ফেলেছে । জানালার বাইরে একফালি চাঁদ দেখতে দেখতে দুজনে মিলে গুনগুনিয়ে ওঠে একসাথে .....
বাইরে মাতাল হওয়া , বন্ধ দুয়ার
বন্ধ কাঁচঘর হৃদয় শুধু খোলা
চোখের সামনে সবুজ চায়ের খেত
এঁকেবেঁকে তিস্তা চলে যায় ,
ওখানে কি রোদ উঠেছে মেয়ে
নাকি এখন হিমেল হওয়া বয় !
জড়িয়ে গায়ে শীতের গরম চাদর
কেমন আছো দশটি বছর পর ?
শীতের শেষে বইবে ফাগুন হওয়া
ফুটবে পলাশ রঙিন হয়ে গাছে
চোখের সামনে আজও গড়ের মাঠ
ওড়না ওড়া সময় বয়ে যায়
জনারণ্যে পথ পাড়ি দিই আজও
দুজনে মিলে জড়িয়ে দুটি হাত ।

