Paula Bhowmik

Drama Romance Inspirational

4.0  

Paula Bhowmik

Drama Romance Inspirational

বাঘমতীর তীরে

বাঘমতীর তীরে

2 mins
168


গোকর্ণ বাজারের কাছে একটা ছোটো খাটো মুদির দোকান আছে পারমিতার বাবার। পারমিতা ওদের একমাত্র মেয়ে। এখন ওর ক্লাস টেনের পড়া শেষ, ফাইনাল পরীক্ষাও হয়ে গেছে। যখন হেঁটে টিউশন পড়তে যেতো তখন প্রথম প্রথম কয়েকদিন মা রাস্তা চিনিয়ে দেবার পর ও একাই যাতায়াত করেছে। তবুও মায়ের তত চিন্তা হতো না ।


কিন্তু যবে থেকে প্রজ্ঞাদিদির স্কুটিতে করে কাঠমান্ডু যাচ্ছে সপ্তাহে তিনদিন, মায়ের যেন রাতের ঘুম উড়ে গেছে। কি যে ভাবে এতো কে জানে! বড় শহরের কমপিউটার স্কুলের ব্যাপারই আলাদা। গোকর্ণেও ব্যবস্থা আছে বটে কিন্তু ততটা গোছানো ও প্রফেশনাল নয় গুলো। তাই ও একটু জেদ করেই কাঠমান্ডুতে ভর্তি হয়েছে।


বাবা প্রথমে আপত্তি করেছিলেন যাতায়াতের কথা ভেবে। কিন্তু যখন শুনলেন ওনার বি.এ পাশ ভাইঝি প্রজ্ঞা নিজে ওই ইনস্টিটিউট এর টিচার আর পারমিতাকে আনা নেওয়ার দায়িত্ব ও নিজে থেকেই নিতে চেয়েছে তখন আর আপত্তি করার কোনো মানে হয় না।


কিন্তু একদিন দুই বোনে মিলে ফেরার পথে হঠাৎ গোকর্ণেশ্বর মন্দিরে চলে গেছে হুট করে । মন্দিরে কোনো পর্ব উপলক্ষে যে ভান্ডারা খোলা হয়েছে সে খবরটাও দিয়েছিলো প্রীতম। ওদের বাড়ি ঐ কাঠমান্ডুতেই । একসাথেই চাকরি করে ওরা দুজন।

বেশ বন্ধুত্ব দুজনের।


প্রজ্ঞাদির মুখে যেটুকু শোনে তার চেয়ে একটু বেশিই কল্পনা করে নেয় পারমিতা। প্রীতমদা নিজের বাইকেই এসে পৌঁছেছে গোকর্ণেশ্বরের মন্দিরে একই সময়ে, একসাথেই। তখন পূজো শেষ হলেও রান্না শেষ হয়নি। ভোগের খিচুড়ি রাধার পরেও আরও কয়েক হাঁড়ি খিচুড়ি রান্না হবে মনে হচ্ছে আয়োজন দেখে।


বাঘমতীতে একটু নেমে পা ডুবিয়ে মাথায় জল ছিটিয়ে নেয় তিনজনেই। শরীর, মন যেন আরও প্রশান্ত হয়ে ওঠে। নদীর পাশেই ডাঁই করে রাখা প্রচুর খড়ি। বোধ হয় মাঝে মাঝেই জঙ্গল থেকে খড়ি কুড়িয়ে জমা করে রাখা হয়।


হ্যাঁ শুধু পারমিতা নয়, এখানকার কেউই গাছ কাটার কথা ভাবতে পারেনা। অরণ্যের সম্পদ গাছ। যদিও সব পাহাড় ওদের কাছে পাহাড় নয়, শুধুই টিলা। তবুও অকারণে গাছ কাটা হয়না বলেই আশে পাশে এখনও রয়েছে এতো সবুজের সমারোহ।


কোথা দিয়ে রে সময়টা ফুরিয়ে গেল ! মন্দির থেকে প্রীতম কাঠমান্ডুতে ফিরে যায় । আর ওরা বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যে হয়েই গেল। প্রজ্ঞা লক্ষ্য করে পারমিতার মায়ের মুখ অন্ধকার। 


"কি রে এতো দেরি হলো যে !"


পারমিতা চুপ। প্রজ্ঞাই উত্তর দেয়,


 _______ঐ একটু গোকর্ণেশ্বরের মন্দিরে গিয়েছিলাম তো তাই। এতো চিন্তার কি আছে ! আমি তো আছিই সাথে। কোন ছোটোবেলায় গিয়েছি! ভালো করে মনেই ছিলনা। জানো কাকিমা, অবাক কান্ড! শিবমন্দির হলেও ওখানে রাধাকৃষ্ণের মূর্ত্তীও আছে।


ওদের পরিবার বাঙালি বলে প্রজ্ঞা ভুলেই যায় যে পারমিতার মা বাঙালি নন। বাঙলা ভাষা বোঝেন মাত্র! অল্প স্বল্প বলতে পারেন। স্বামীর কাছে যেটুকু শিখেছেন তাতে কাজ চলে যায়।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama