ঔষধ:-
ঔষধ:-


প্রচণ্ড দুশ্চিন্তায় আছে পল্লবী। থেকে থেকে শুধু ভাবছে কিভাবে কি করবে এখন? আসলে পল্লবী আটকা পড়েছে রাস্তায়। এই লক ডাউনের সময়ে পল্লবীকে আজ বেরোতে হলো বাড়ি থেকে। পল্লবীর মা সুমিত্রা দেবীর হাইপো থাইরয়েডের সমস্যা। প্রত্যেক দিন ৫০ এম. জির টেবলেট নিতে হয় ওনাকে। পল্লবী কে অন্য সময় তিনিই মনে করিয়ে দেন থাইরয়েডের টেবলেট ফুরিয়ে এলে। কিন্তু এইবার করোনার ভয়ে তিনি নিজেই এত আতঙ্কগ্রস্ত যে ওষুধের কথা আর মনে করিয়ে দিতে পারেন নি। আর পল্লবীরও খেয়াল ছিল না মায়ের ওষুধের কথা। আজ সকালে সুমিত্রা দেবী ওষুধ খেতে যাবেন তখন লক্ষ্য করলেন আর একটি ট্যাবলেটও অবশিষ্ট নেই। একবার মনে মনে ভাবলেন ওষুধ পল্লবী কে কিছু বলবেন না। তারপর ভাবলেন ওষুধের সেবন হঠাৎ করে বন্ধ করে দিলে যদি কিজূ হিতে বিপরীত হয়, তাই সাত পাঁচ ভেবে স্থির করলেন পল্লবী কে ব্যাপারটা জানাবেন। পল্লবী কে জানাতেই সে তড়িঘড়ি তার মোবাইলে চেক করছিল অনলাইনে যদি সম্ভব হয় তাহলে অনলাইনে কিনে নেবে ওষুধটা। ঘরে পৌঁছেও যাবে ওষুধ। কিন্তু বিধি বাম। যেমন ভেবেছিল তেমনটা হলো না। কোনো অনলাইন ড্রাগস্টোর ওষুধ টা ডেলিভারী করতে পারবে না কারণ ডেলিভারী করার জন্য পর্যাপ্ত স্টাফ নেই এই মুহূর্তে। বাজ পড়ে পল্লবীর মাথায়। সুমিত্রা দেবী নিজেও তাজ্জব বনে গেছেন, ব্যাপারটা আগে খেয়াল করেন নি।
অনেক ভেবে স্কুটিটা নিয়ে বের হয় পল্লবী। রাস্তা এখন শুধু কাক পখির কব্জায়। সারা রাস্তা খা খা করছে। একটা জনপ্রাণী দেখা যায়না। যেতে যেতে একটা ওষুধের দোকানে পেয়েও গেলো সে প্রয়োজনীয় ওষুধটা। একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো সে। কিন্তু তার কপালে আরোও যে সমস্যা অপেক্ষ
া করে আছে সেটা জানা ছিল না পল্লবীর। স্কুটিটা স্টার্ট করতে যাবে এমন সময় স্কুটি টাও যন্ত্রণা শুরু করে দিলো, কিছুতেই স্টার্ট হচ্ছে না। বার কয়েক চেষ্টা করেও স্টার্ট হচ্ছে না। দরদর করে ঘামতে শুরু করে পল্লবী। কি করবে এবার? ধারেকাছে কোনো মেরামতির দোকানও নেই। থাকলেও লকডাউনের কারণে বন্ধ। প্রচণ্ড দুশ্চিন্তায় পল্লবী। স্কুটি টাকে ধাক্কা দিয়ে দিয়ে বাড়ি অব্দি নিয়ে যাওয়াও অসম্ভব এ মুহূর্তে। খালি রাস্তায় স্কুটিটা রেখে হেঁটে হেঁটে বাড়ি যাওয়াটাও যুক্তি সংগত নয়। এসব আকাশ পাতাল ভাবছে যখন তখন পল্লবী দেখতে পেলো বড় এক সাদা রঙের স্করপিয়ো গাড়ী এগিয়ে আসছে। সেটা পুলিশের গাড়ী। পেট্রলিং করছে পুলিশ। একটু ভরসা পেলো সে। পুলিশের গাড়িটি এগিয়ে এসে পল্লবীর কি হয়েছে জানতে চাইলে পল্লবী খুলে বললো সমস্ত ঘটনা। দেরি না করে চটপট পুলিশের গাড়ীতে উঠতে বললেন অফিসার সান্যাল, তিনি পৌঁছে দেবেন তাকে বাড়ি অব্দি। পল্লবীর স্কুটি টি কে স্করপিয়ো গাড়ীর পেছনে ঢোকানো হলো। পল্লবী তখন মনে মনে ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করছে এই অসময়ে তার সাহায্যের জন্য স্যান্যাল বাবু সহ তার টিমকে ওই জায়গায় পৌঁছানোর জন্য। পল্লবী কে বাড়ির গেটের কাছে নামিয়ে ফিরতে উদ্যত হলেন সান্যাল বাবুর পুলিশটিম। পল্লবী ধন্যবাদ জ্ঞাপন করার পরেই দূরে চলে যেতে লাগলো গাড়ী টি। পল্লবী তার স্কুটারটি নিয়ে তখনও চেয়ে আছে গাড়ীটির দিকে। ভাবছে করোনা ত্রাস এড়িয়েও পুলিশ প্রশাসন ব্রতী আছে সাধারণ মানুষকে প্রয়োজনীয় সাহায্য টুকু করার জন্য। এখান সকলে যেখানে ঘরে শুয়ে বসে নিজেকে সুরক্ষিত রাখছে সেখানে এই পুলিশ বাহিনী তটস্থ সকল মানুষের সুরক্ষার তরে।