STORYMIRROR

শিপ্রা চক্রবর্তী

Romance Tragedy Others

3  

শিপ্রা চক্রবর্তী

Romance Tragedy Others

অসম ভালোবাসা

অসম ভালোবাসা

3 mins
186

শহর থেকে দূরে সবুজে ঘেরা অন্নপূর্না অ‍্যাপ‍ার্টমেন্ট। অনেক কটা টাওয়ার নিয়ে বেশ বড় কমপ্লেক্স। একসাথে অনেক ফ‍্যামেলির বসবাস। কিন্তু কেমন যেন! সবাই থেকেও না...থাকার মত, সবাই নিজ নিজ লাইফে ব‍্যস্ত।সিদ্ধার্থ বাবু যখন বাবা, মাকে হারিয়ে গ্রামের বাড়ির সাথে একেবারে যোগাযোগ ছিন্ন হল, তখন এইখানে চলে আসেন পাকাপাকি ভাবে, আসলে গ্রাম ছেড়ে শহরে এসে কেমন দম বন্ধ হয়ে আসত সিদ্ধার্থ......... বাবুর, তাই একটু সবুজ এবং নিরিবিলির সন্ধানে এইখানে ফ্ল‍্যাট কেনেন।

কিন্তু এই বছর চারেক গিন্নী মারা যাবার পর বড্ড একা হয়ে পরেছেন সিদ্ধার্থ বাবু। আসলে সিদ্ধার্থ বাবুর জীবনে সব সুখ ছিল শুধুমাত্র সন্তান সুখ বাদে। কি আর করা যাবে!!! তবে অনেক বার ভেবেছিলেন দত্তক নেবেন, কিন্তু রক্ষনশীল পরিবার এবং বাবা, মার মনোভাবের জন‍্য সেটাও করে ওঠা হয়নি!!! আসলে সিদ্ধার্থ বাবু কোনদিনও বাবার বিরুদ্ধে গিয়ে কোন কাজ করেন নি। তবে এই নিয়ে সেই রকম কোন আফশোস নেই সিদ্ধার্থ বাবুর! কারন এখন সন্তান থেকেও বৃদ্ধ বাবা, মার আশ্রয় হয় বৃদ্ধাশ্রমে তাই সন্তান থাকা আর না.. থাকা প্রায় সমান।

এই অন্নপূর্না অ‍্যাপাটমেন্টে সিদ্ধার্থ বাবুদের, বৃদ্ধ বৃদ্ধা মিলে সাতজনের একটা গ্রুপ ছিল, সবাই সারা দিনের একাকিত্বের শেষে একটু প্রান খুলে মনের কথা বলে নিজেদের মত করে সময়টা কাটাতেন। কিন্তু সেটাও এখন প্রায় ভেঙ্গে গেছে! এখন শুধু সিদ্ধার্থ বাবু আর অনিলা দেবী আছেন। অনিলা দেবীর একছেলে, এক মেয়ে, ছেলে বৌমা আর নাতি-নাতনি নিয়ে ভরা সংসার। অনিলা দেবীর স্বামী রোড অ‍্যাকসিডেন্ট মারা যান অনেক বছর আগে, তখন অনিলা দেবীর বয়স খুবই অল্প, এবং দুটো ছোট ছোট ছেলে মেয়ে, একা হাতে ঘর-বার সামলে নিজের সন্তান দের মানুষের মত মানুষ করেন অনিলা দেবী।তারা আজ নিজ নিজ জায়গায় সফল এবং প্রতিষ্ঠিত, আর স্বামীর সম্পত্তি বলতে অনিলা দেবীর কাছে ছিল এই জায়গাটা যেখানে অন্নপূর্না অ‍্যাপার্টমেন্ট গড়ে উঠেছে তাও ছেলে মেয়েদের ইচ্ছায়।


প্রত‍্যেক দিন বিকেলে কমপ্লেক্সের সামনে পার্কে বেশ একটা জমজমাট আড্ডা বসতো ওনাদের।কিন্তু এখন আর হয়না!!! কেউ কেউ বৃদ্ধাশ্রমে পাড়ি দিয়েছে, আবার কেউ কেউ না.... ফেরার দেশে, তবে সিদ্ধার্থ বাবু আর অনিলা দেবী যেতেন, গল্প করতেন নিজেদের একাকিত্ব দূর করার চেষ্টা করতেন। ওনাদের মধ‍্যে এক স্নেহ, যত্নে ঘেরা অসম ভালোবাসায় ভরা বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। কিন্তু সে সম্পর্কও বেঁচে থাকল না। বেশকিছু মাস আগে এক বৃষ্টিভেজা বিকেল বেলায় সিদ্ধার্থ বাবু আর অনিলা দেবী বসে গল্প করছিলেন নিজেদের ফেলে আসা দিনগুলো নিয়ে। সত‍্যি স্মৃতি কত মধুর এবং আবেগ মিশ্রত হয়। সিদ্ধার্থ বাবু সযত্নে অনিলা দেবীর চোখে আসা জল মুছিয়ে দিয়ে, একটা ভরসার হাত বাড়িয়ে দিয়ে ছিলেন, কিন্তু অনিলা দেবীর ছেলে, মেয়ে, জামাই আর বৌমা এসে এমন ভাবে ওনাদের সম্পর্কটাকে ব‍্যাখা করলেন সবার সমনে যে... অনিলা দেবী মেনে নিতে পাড়লেননা! বাড়ির বাইরে বেরোন বন্ধ করে দিলেন, নিজেকে গুটিয়ে নিলেন। আর একাকিত্বকেই সঙ্গী করে নিলেন বাকি জীবনের, এবং একটু একটু করে শেষ হতে লাগলেন সকলের অন্তরালে।

সমাজ! এটা কেই কি সমাজ বলে। সত‍্যি আমাদের সমাজ বড় নিচ, এবং নিষ্ঠুর। তাই সিদ্ধার্থ বাবু এবং অনিলা দেবীর এই অসম ভালোবাসার সম্পর্ককে মেনে নিতে পারলনা। আর তার থেকেও নিচ সমাজে বাসকরা মানুষের মানসিকতা।


সমাজের নিচ মানসিকতায় ভরা

প্রত‍্যেক আনাচে কানাচে,

অসম ভালোবাসা তার ইতিহাস

নিয়ে বেঁচে আছে।




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance