Rohit Das

Horror Romance Classics

4.8  

Rohit Das

Horror Romance Classics

:: অশরীরী ::

:: অশরীরী ::

7 mins
365


ভূত বলে কি কোনদিনও কিছু ছিল। বা ভূত কি এর উত্তরে আমরা সাধারণত যা বলি তা হল অশ্বরীরী, মৃত মানুষের আত্মা। তবে এর চাক্ষুষ প্রমাণ নেই, মৌখিক সবই । আজকের এই গল্পের শেষে এই ধারণা যে কতটা ভুল তা প্রমাণ হয়ে যাবে।


কলেজ শেষ। এখন অপেক্ষা শুধু রেজাল্ট বেরোনোর । হাতে আছে তিনটে মাস। আমরা মানে আমি আমার বন্ধু সুবিমল আর একমাত্র মহিলা সদস্য রীতু। পরীক্ষা শেষের আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম ছুটিতে বাড়ি ফিরব না একেবারে রেজাল্ট নিয়ে ফিরব। দিনের বেলা নিজের পার্ট টাইম জব আর রাত্রে ক্লাব যাব। যেমন কথা তেমন কাজ। পরীক্ষা শেষ হতেই এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে খুব বেশি কষ্ট হয়নি। এমনি করেই দিন পনেরো কেটে গেছে। এমন ই একদিন তিনজনে সবেমাত্র ক্লাবে গিয়ে বসেছি শীর্ষেন্দু আমাদের সামনে এসে দাঁড়ালো। রীতু হুট করে উঠে গিয়ে সামনের জানালার দিকে এগিয়ে গেল। আসলে একটা সময় এই শীর্ষেন্দুর ওপর ওর একটু ভালোলাগা ছিল বললেই চলে। কিন্তু শীর্ষেন্দুর দশটা আলাদা আলাদা মেয়ের সাথে উঠা বসাটা রীতুর ঠিক পছন্দ হয়নি।বিরক্ত হতে পারে একসময়। এখন তো সহ্য করতে পারো না আর ওকে। তাই আমরা দুজনে মিলেই ওর সাথে গল্প করতে শুরু করলাম। মিনিট দশেক পর শীর্ষেন্দু চলে গেলে রীতু আমাদের কাছে বসে। সুবিমল ওকে ঠান্ডা করার জন্য নানা ধরনের এদিক সেদিক কথা বলতে আরম্ভ করলো। আমি চারদিকটা ঘুরে ঘুরে দেখতে শুরু করলাম। হঠাৎ পিছন দিকের জানালাতে চোখ ফেরাতেই দেখলাম একটা বছর কুড়ির মেয়ে একভাবে আমার দিকে চেয়ে। প্রথমটা ঘাবড়ে গেলাম। পরে বুঝলাম আমার দিকে না আমার পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা শীর্ষেন্দু কে দেখছে। মেয়েটার অর্ধেক মুখ ওড়নায় ঢাকা। বাকিটা দেখে বোঝাই যাচ্ছে মেয়েটা বেশ সুন্দর দেখতে। আমি ওর কাছে এগিয়ে গিয়ে বললাম ওরম ভাবে কি দেখছেন কিছু বলার থাকলে সামনে গিয়ে বলুন। মেয়েটা চমকে উঠল ও বুঝতেই পারেনি কখন আমিও পাশে এসে দাঁড়িয়েছি। একটু হেসে বলল আরে না না আমি সেভাবে কিছু বলার জন্য দেখছি না। আসলে ওই মানুষটার প্রতি একদিন আমার অনেক ভালোবাসা ছিল। কিন্তু কি করবো বলো হাজারটা নারীর মন নিয়ে খেলার স্বভাবটা আমার কি পছন্দ হয়নি তাই আজ এক কোণে দাঁড়িয়ে। ও আচ্ছা তার মানে আপনি ও আমার বন্ধুর মতোই ওর অব্যর্থ প্রেমিকা। মেয়েটি হেসে বলল আপনার বন্ধু মানে?আমি রীতুর দিকে আঙুল দেখিয়ে বললাম ওই যে ওই মেয়েটা বসে আছে ও এককালীন আপনার মতই শীর্ষেন্দুর প্রেমে পরে ছিল,কিন্তু ঠিক আপনার মতই একই ভাবে পছন্দ হয়নি ওর ওই স্বভাবটা। ঠিক আছে আমি আসছি তুমি যাবে কি আমার সাথে আমার বন্ধুদের কাছে? মেয়েটা হেসে বলল না ঠিক আছে। আমি চলে এলাম। রীতু আর সুবিমল বুঝতেই পারিনি আমি কখন উঠে চলে এসেছি। নতুন একজনের সাথে আলাপের কথা ওদের বলতেই ওরা খুশি হলো। আমরা তার পরই সেদিন বাড়ি ফিরে এলাম।


পরদিন আমার ক্লাব যেতে একটু দেরি হয়েছিল। ক্লাবের সামনে পৌঁছে দেখি বাইরে ঈশিতা দাঁড়িয়ে আছে একটা কালো গাড়ির কাছে। আমি ওর কাছে গিয়ে বললাম কি ব্যাপার আজ বাইরে দাঁড়িয়ে? ভেতরে যাবার ইচ্ছা নেই নাকি? না আজ বাইরে বেশ ঠাণ্ডা হাওয়া দিচ্ছে তাই দাড়িয়ে আছি আরকি। তুমি আজ এত দেরিতে? হ্যাঁ একটু কাজ ছিলো আর কি। একটার পর একটা কথা বাড়তে থাকে সময় এগোতে থাকে প্রায়ই সারে দশটা নাগাদ হঠাৎ বলে উঠলো ও আজ আসি তাহলে। আমি বললাম চলো তবে তোমাকে বাড়ি পর্যন্ত ছেড়ে দিই। হাঁটতে হাঁটতে মিনিট কুড়ি পরে কালভার্টের কাছে দাড়িয়ে বলল এই গলিটার থেকে একটু গেলেই আমার বাড়ি তুমি চলে যাও বাকিটা আমি চলে যেতে পারব। আমি বললাম ঠিক আছে। এগিয়ে আসতে যাচ্ছি ও‌ হঠাৎ জিজ্ঞেস করে উঠলো এতকিছুর মাঝেও তোমার নামটা জানা হলো না। আমি বললাম রোহিত। তোমার? ঈশিতা। তো ঈশিতা গুড নাইট। বাই.....।


আজ সারাদিনের কাজকর্ম শেষ করে একটু তাড়াতাড়ি পৌছে গেছিলাম ক্লাবে। আমি পৌঁছানোর কিছু পরেই ঈশিতা এল। রীতু,সুবিমল এখনো এসে পৌঁছায়নি। ক্লাবে ঢুকে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল চলোনা আজ কোথাও ঘুরে আসি।সত্যি বলতে কি এই জায়গাটায় এখন বিরক্তি আসে। বাইরে বেশ হাওয়া দিচ্ছে। আমি না করলাম না ফোনে রীতু আর সুবিমলকে একটা মেসেজ করে বেরিয়ে পড়লাম ওর সাথে। চারমাথা মোড় থেকে শুরু করে ফুটপাত ধরে হেঁটে হেঁটে ঘুরে ঠিক চকের বাজারে এসে পৌঁছতেই ও বলল আজ অনেক ঘোরা হল অনেক রাত হল বাড়ি যায়। আমি এক গাল হেসে বললাম থ্যাংক ইউ এই সুন্দর রাতে এতটা পথ আমার সাথে হাঁটার জন্য এবং আমাকে এন্টারটেইন করার জন্য। ঈশিতা হাসতে হাসতে বলল তুমিও সত্যি খুব মজার মানুষ। তোমার সাথে সময় কাটিয়ে আমারও বেশ ভালই লাগলো। কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকার পর ও হঠাৎ জিজ্ঞেস করল আচ্ছা আজকের তারিখটা কত?? আমি বললাম কেন ২৮ শে মার্চ।


কিছু দূর যেতে না যেতেই হঠাৎই মেঘ ঝড় নেই কিছুই নেই বৃষ্টি নামলো। আশেপাশে রাস্তায় দাঁড়ানোর সে রকম কোন জায়গা নেই দেখে আমি বললাম চলো পাশেই আমার ঘর একটু দাঁড়িয়ে তোমাকে বাড়ি ছেড়ে দেবো।


বাড়ি পৌঁছে দেখি বৃষ্টি তখন আরো বেড়েছে। অগত্যা এই বৃষ্টিতে বেরোনো যাবে না বুঝে আমি বললাম এক কাজ করো বৃষ্টিতেতো অনেকটা ভিজে গেছো তুমি চেঞ্জ করে নাও। আমার কিছু জামাকাপর আর একটা তোয়ালে দিয়ে আমি ওকে চেঞ্জ করার জন্য পাশের রুমটাই পাঠিয়ে দিলাম। বাথরুমে গিয়ে আমিও শুকনো কাপড় পড়ে চলে এলাম। কাজের মাসি ইতিমধ্যে খাবার করে চলে গেছে। রাতে যখন 11:45 তখনও বৃষ্টি মুষলধারে পড়ছে দেখে ঈশিতা ঠিক করল আজ রাতটা আমার ঘরেই কাটাবে। ঈশিতাকে পাশের রুমে পাঠিয়ে আমিও শুয়ে পড়লাম।

সকালটা বেশ ঝরঝরে,রোদ্দুর উঠেছে। মুখ ধুয়ে পাশের রুম ঈশিতাকে ডাকতে যাব ঠিক সেই সময় রীতু আর সুবিমল এসে হাজির। কিরে কি খবর? দুদিন ধরে যে তোর পাত্তাই নেই বলল সুবিমল। আমি বললাম না রে সেরকম কিছু না আসলে কাল একটু ঈশিতার সাথে ঘুরতে বেরিয়েছিলাম। ঈশিতা সেটা আবার কে? রীতু একটু হেসে বলল বুঝছি বুঝছি সব বুঝছি। আমি বললাম দাঁড়া তোরা। পাশের রুমের দরজার কড়া নাড়তে যাব দেখি দরজাটা ভেজানো ্ দরজা খুলে ভেতরে গিয়ে দেখলাম ঈশিতা নেই ঘর ফাঁকা। ঘর একদম সাজানো-গোছানো কালকে রাতের মতো। আমি এদিক ওদিক ছাদ নিচের ঘরগুলো ভালো করে চেক করলাম না ঈশিতা‌ কোথাও নেই। আমার কাজকর্ম দেখে রীতু আর সুবিমল দুজনেই হতভম্ব। বোধকরি ওদের মাথায় কিছু ঢুকলো না আমায় টেনে চেয়ারে বসিয়ে বলল ব্যাপারটা কি একটু খুলে বলবি। কে ঈশিতা? আর কাল তোর ঘরের বাকি করছিল? আমি দুদিনের পুরো ঘটনা ওদেরকে খুলে বলাতে ওরা অবাক। রীতু বলল এত কিছু ঘটে গেছে তুই একবারও বলিস নি। সেদিন শুধু বললি অন্য এক জনেরও আমার মত নাকি শীর্ষেন্দু কে ভালোবাসে। তারপর এতো কিছু হয়ে গেছে কই বলিস নি তো। আমি উত্তেজিত হয়ে বললাম বলার সময় পেলে তবে তো বলব। কাল রাতে ফেরার পর তো ঘুমিয়ে গেছি তারপর তার কিছুই হয়নি আজ এলি তোরা। সুবিমল বলল অত চিন্তা না করে একটা ফোন কর না, হয়তো বাড়ি চলে গেছে ভোরে। আমি ফোনে ফোন নাম্বারটা ডায়াল করাতে বলল রং নাম্বার। তিন চারবার একই বলার পর আমি ফোনটা রেখে দিলাম। সুবিমল মাথা ঝাঁকিয়ে বললো কি এমন মেয়ে রে ভোর বেলায় এরকম না জানিয়ে চলে যায়,রং নাম্বার দেয়। আমি স্নান করি কাজে যাবার জন্য তৈরি হলাম।


এরপর দুদিন হয়ে গেছে ক্লাবে গেছি। কিন্তু ঈশিতার দেখার পায়নি। কোন ফোন মেসেজ কিছু করেনি। 


দেখা না পেয়ে আমার প্রাণটা আমি কিরকম একটা করছিল। সত্যি বলতে কি এই দুদিনের আলাপে ওর প্রতি কি রকম একটা অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে মুখে বলে বোঝাতে পারবো না। হঠাৎই আমার মাথায় এলো কালভার্টের কথা যার পাশের গলি দিয়ে সেদিন রাত্রে সে বাইরে যাবার কথা বলেছিল। আমি রীতু আর সুবিমল কে ফোন করে কালভার্টের কাছে দাঁড়ানোর জন্য বললাম। মিনিট দশেকের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম কালভার্টের কাছে। আমার পৌঁছনো সাথে সাথে এই রীতু আর সুবিমল পৌঁছালো। তিনজন মিলে একটার পর একটা বাড়ি গিয়ে খুজতে লাগলাম ঈশিতাকে। প্রায় আধঘন্টা খোঁজার পরেও যখন ঈশিতা নামে সেই গলিতে কাউকেই পেলাম না। তখন আমার মন প্রায় ভেঙে গিয়েছে। আমি বললাম ছাড় আর খুঁজে লাভ নেই ও হয়তো এখানে থাকেনা। রীতু বলল ওই দেখ আর একটাই বাড়ি আছে চল ওটা একবার দেখে আসি। সত্যি কথা বলতে কি আমার আর খোঁজার এ ইচ্ছে ছিল না কিন্তু ফিরে যেতে মন চাইছিলো না। তাই হাঁটতে হাঁটতে বাজার এর কাছে পৌঁছালাম। কলিং বেলটা বাজাতেই বাড়ির ভেতর থেকে এক বছর চল্লিশের ভদ্রমহিলা বেরিয়ে এলেন। তিনি ঠিক করে দাঁড়াতে পারছিলেন না। রীতু এগিয়ে গিয়ে বললো আচ্ছা এটা কি ঈশিতার বাড়ি।


রীতুর মুখে ঈশিতার নাম শোনা মাত্রই ভদ্রমহিলা রীতুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ওর বুকে কিল মারতে শুরু করলেন।আর জোরে জোরে বলতে শুরু করলেন তুই ঈশিতাকে মেরেছিস,তুই ঈশিতাকে মেরেছিস। চিৎকার শুনে ভেতর থেকে এক বছর পঞ্চাশের ভদ্রলোক ছুটে এলেন। তিনি ভদ্রমহিলা কে রীতুর ওপর থেকে তুলে ভেতরে নিয়ে গেলেন। সুবিমল রীতুর হাতটা ধরে ওকে দাঁড় করালো। ভদ্রমহিলা কে ভেতরে রেখে ভদ্রলোকটি বাইরে এলেন। আমাদের কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইতে চাইতে তিনি বললেন আসলে ঈশিতা মারা যাওয়ার পর ওর মা একেবারে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। বাইরের কারোর কাছে এসে তার নাম শুনলে তিনি এভাবেই তার ওপর লাফিয়ে পড়েন। আমি ঈশিতার বাবা।ঈশিতা মারা গেছে! বিস্ময়ের সাথে বলে উঠলো সুবিমল। হ্যাঁ আজ প্রায় চার বছর হল। আমি উত্তেজনার সাথে বলে উঠলাম কিন্তু সেটা কি করে সম্ভব ওতো...।আমার কথা শেষ করতে না দিয়ে ঈশিতার বাবা বলে উঠলেন বুঝেছি বেশ কিছুদিন ধরে তোমাকে দেখা দিয়েছে, তাই তো? আমি অবাক হয়ে বললাম হ্যাঁ, আপনি কি করে জানলেন? ও মারা যাওয়ার এক বছর পর থেকেই এই ঘটনা ঘটছে। তুমি তৃতীয় ব্যক্তি যেভাবে আমার বাড়িতে খুঁজতে এলে। রীতু কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলো কিভাবে মারা গেছিলো? শীর্ষেন্দু কে অ খুব ভালোবাসতো ষ। কিন্তু শীর্ষেন্দুর সাথে অন্য এক মেয়ে কে সম্পর্কের কথা জানা মাত্রই ঈশিতা ভঙ্গে পরে। এর একদিন পর ই ঈশিতা আত্মহত্যা করে। কথাটা বলেই ঈশিতার বাবা মাটিতে বসে পড়লেন তার চোখ দিয়ে জলের ধারা বেরিয়ে আসছে। চোখের জল মুছতে মুছতে তিনি বললেন চার বছর হয়ে গেল এই তো গত পরশু ২৮ শে মার্চ ২০২০ তে।




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror