Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!
Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!

অপূর্ণ চাঁদের আলো:-

অপূর্ণ চাঁদের আলো:-

5 mins
609


রাধানাথ সরণির ১৭নম্বর বাড়ির সামনে পাড়ার মহিলাদের জটলা। গুজগুজ ফিসফাস চলেই আসছে। আর জটলার বিষয় রাধানাথ সরণিরই নিবাসী অশেষ রায়ের পুত্রবধূ মীরাকে নিয়ে। ১৭নম্বর বাড়ির গিন্নি রূপালী দেবী বাকিদের সাথে এই গম্ভীর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন যে মীরা যা করছে তা ঠিক করছে কিনা! রূপালী দেবীর মতে মীরাকে দেখে যদি সরণির অন্য মেয়েরাও এমন কিছু করার সিদ্ধান্ত নেয় তখন পরিবারের সম্মানটা কিভাবে বজায় থাকবে!


তেনাদের আলোচনা সমালোচনা চলতে থাকাকালীনই রূপালী দেবী দেখতে পান মীরা আসছে। মীরা, সে রায় বাড়ির বৌমা, রশ্মির মা আর রোহিতেশের বিধবা। তার গোল্ডেন হাইলাইট করা গ্র্যাজুয়েট কাট চুল। ঠোঁটে মোকা কালারের ম্যাট লিপস্টিক। কানে ছোট্ট দুল। পরনে কালো রঙের জিন্স আর একটি টপ।


রূপালী দেবী মীরাকে দেখে ঠোঁট বেঁকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, " তা চললে বুঝি ডিউটি করতে "?


মীরা একটু স্মিত হেসে বললো, " হ্যাঁ কাকিমা, আপনি ভালো আছেন "?


রূপালী দেবী চোখ মুখ কুঁচকে উত্তর করলেন, " হ্যাঁ গো বাছা ভালই আছি এখনো, কিন্তু যা দিনকাল পড়েছে আর লোকজনের যা কীর্তিকলাপ শুরু হয়েছে তাতে না জানি আর কত দিন ভালো থাকবো...!" 


মীরা আঁচ করতে পারলো কটাক্ষটা তাকেই করছেন রূপালী দেবী, তাই আর কথা না বাড়িয়ে বিদায় নিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো। এদিকে রূপালী দেবী সহ বাকিদের মধ্যে মীরাকে নিয়ে আলোচনা আরো গভীর রূপ ধারণ করে নিয়েছে ইতিমধ্যে।


মীরা বাসস্ট্যান্ডে বসে আছে, একটু পরেই একটা বাস এলে পর পড়িমরি করে তাতে উঠে বসলো সে। বরাত জোরে জানালার ধারে বসার জায়গা পেয়ে গেলো। বাস ছেড়ে দিয়েছে, মৃদুমন্দ বাতাস ছুঁয়ে যাচ্ছে মীরাকে। সে মোবাইলে ইয়ারপ্লাগটা লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে গান চালিয়ে দিল। ধীমে তালে বাজছে গান আর সে হারিয়ে যাচ্ছে স্মৃতির গহনে।


রোহিতেশ আর মীরার সম্বন্ধ করে বিয়ে হয়েছিল। মীরার সারল্য রোহিতেশ সহ পরিবারের সকলকেই আকর্ষণ করেছিল ভীষণ। এমন কি রূপালী দেবীও রায় বাড়ির এই নতুন বৌমাটির প্রশংসায় তখন পঞ্চমুখ ছিলেন। মীরার সারল্য মাখা হাসি মন জয় করতো সবার। রোহিতেশও ছিল মীরা বলতে অজ্ঞান। বিয়ের দুবছরের মাথায় মীরা আস্বাদন করে মাতৃত্বের স্বাদ, মীরা আর রোহিতেশের জীবন আলো করে আসে তাদের ভালোবাসার অংশ তাদের কন্যা রশ্মি। রোহিতেশের প্রেয়সী, রশ্মির ভালোবাসার উৎস এবং শ্বশুর শাশুড়ির স্নেহধন্যা মীরার জীবনে তখন সুখ উপচে পড়ছে। মীরা তখনও জানত না ভবিষ্যৎ কতটা অন্ধকারাচ্ছন্নতা নিয়ে আসছে তার জীবনে।


সেদিন রশ্মি খুব কাঁদছিল রোহিতেশকে আঁকড়ে ধরে যে বাবা আজ কাজে যেও না, ঘরে থাকো। কিন্তু রোহিতেশের সেদিন কাজ কামাই করা সম্ভবপর ছিল না। যেনোতেনো প্রকারেনো তাকে অফিসে যাওয়ার ছিল, জরুরী মিটিং তাই কিছুতেই সেদিন অফিস কামাই করা চলবে না, কিন্তু আমরা সাধারণ লোকেরা ভাবি এক আর অদৃষ্টে লেখা থাকে আরেক। সেদিন আর রোহিতেশের পক্ষে মিটিংয়ে যোগদান করা সম্ভব হয়নি। সময়ে পৌঁছানোর তাগিদে জোর গতিতে মোটরসাইকেল চালানো রোহিতেশের জন্য নিয়ে এলো সম্ভাব্য বিপদ, যে বিপদের ব্যাপারে সে কিয়ৎক্ষণ আগেও ছিল অনভিজ্ঞ। মোটর সাইকেলের ব্যালান্স বিগড়ে লরি চাপা পরে সেখানেই মৃত্যু রোহিতেশের।


রায় বাড়িতে ঘনিয়ে আসে অন্ধকার। মীরা তখন দিকবিদিক শূন্য। হাতের শাঁখা পলার দিকে চেয়ে পাথরের ন্যায় বসে আছে সে। রোহিতেশের মৃতদেহের পাশে বসে রশ্মি চেঁচাচ্ছে, "ও বাবা ওঠো না, শুয়ে আছো কেন চোখ বন্ধ করে, ওঠো তা নাহলে কিন্তু কমলা লেবুর খোসার রস নিংড়ে দেবো তোমার চোখে, ওঠো না বাবা। খেলবে না আমার সাথে....", অশেষবাবু রশ্মিকে কোলে নিয়ে পুত্রশোকে আবোল তাবোল বকে চলেছেন আর রোহিতেশের মা তিনি পুত্রের এভাবে অকালে চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারেন নি, রোহিতেশের অসাড় দেহটা দেখে বুকে হাত দিয়ে কঁকিয়ে ওঠেন তিনি। হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে ছেলের সাথে ইহলোকের মায়া ত্যাগ করে ওই একই দিনে তিনিও পাড়ি দেন অচিনপুরের উদ্দেশ্যে। তখন মীরা, রশ্মি, তথা অশেষবাবুর মানসিক দশা বলাই বাহুল্য।


জোরে ব্রেক কষে বাসটি দাঁড়িয়ে যায়। মুহূর্তে অতীত থেকে বর্তমানে পদার্পণ মীরার। হ্যাঁ এই স্টপেজেই নামতে হবে মীরাকে। ওই তো দেখা যাচ্ছে তার কর্মস্থানটি। 'স্মগ কার্টার বার', হ্যাঁ এখানেই কাজ করে মীরা। রোহিতেশের মৃত্যুর পর যখন সমাজের বাস্তব চরিত্রের সম্মুখীন হয় তখন মীরা পাশে পায়নি কাউকে। এমন কি আত্মীয়-স্বজনেরাও ধীরে ধীরে আড়াল হতে লাগলেন তখন, সেই পরিস্থিতিতে এক ছোট্ট শিশু এবং বৃদ্ধ শ্বশুরমশাই এর দায়িত্ব মীরার উপরেই বর্তায়। মীরা অনেক চেষ্টা করেছিল রোহিতেশের অফিসে যদি কোন চাকরি পাওয়া যায়! কিন্তু না, অনেক কাঠখড় পুড়িয়েও কিছু হয় নি। হতাশ, বিধ্বস্ত, মানসিক দিক দিয়ে নিপীড়িত মীরা তখন উপায়ন্তর না দেখে এই স্মগ কার্টার বারে 'বার অ্যাটেন্ডারের' চাকরি নেয়।


বাস থেকে নেমে একটু হেঁটে গিয়ে বারে ঢোকে মীরা। তার সহকর্মীদের সাথে অভিবাদনটুকু সেরে মীরা ঢোকে ওয়াশ্রুমে। পরনের জিন্স টপ খুলে পরে নেয় ফরমাল সাদা শার্ট, তার ওপর নেভি ব্লু রঙের ওয়েস্টকোট, এংকেল লেংথের নেভি ব্লু ট্রাউজার। হালকা আইমেকআপ করে তার সারল্য ভরা চোখগুলোকে করে তোলে আত্মবিশ্বাসী চোখ। রোহিতেশের মৃত্যুর পর মীরা বুঝেছিল যে থমকে গেলে চলবে না, স্বনির্ভর তাকে হতেই হবে নাহলে এই সংসারটি আর সংসার থাকবে না। চোখের জল মুছে মীরা অবতীর্ণ হয় জীবন সংগ্রামে। তখন সমাজের তোয়াক্কা সে করেনি, সে বিধবা বলে আঁচল টেনে ঘরে বসে একাদশীর উপোষ, ব্রত, পুজো এসব নিয়ে ধর্ম রক্ষা করতে চায় নি। যদিও সে জানত যে ক্ষু-নিবৃত্তির জন্য পরের দেওয়া দানের উপর ভরসা রাখলে সে প্রশংসিত হতো অধিক, কিন্তু মীরা অন্যের প্রশংসার জন্য নয় নিজের এবং সংসারের বাকি দুজনার পেটের দায়ে নিজেকে বদলে ফেলে 'বার অ্যাটেন্ডারের' চাকরিটি নিতেও পিছ পা হয় নি। সেই করুণাময়ী, স্বল্পভাষী, সারল্যে ভরা মীরা এখন আত্মবিশ্বাসী, বাস্তবিক এবং স্বয়ংসিদ্ধা। মীরা নিজের সাথে সাথে তার সংসারটিকে ভালোবেসে, সংসারের কথা ভেবেই নিজের মধ্যে বদল আনে।


অনেকেই অনেক কিছু বলেন মীরার বারে কাজ করা নিয়ে, অনেকেই এই মত পোষণ করেন যে ভদ্রঘরের বৌ তার উপর বিধবা সে কিনা বারে কাজ করছে! খদ্দেরকে মাদক দ্রব্য বিতরণ করছে, না জানি পয়সার লোভে আরো কি কুরুচিকর কাজ করছে। কিন্তু মীরা জানে যে যাই বলুক সে তার নিজ চরিত্রে কোনো দাগ লাগতে দেয় নি। সে জানে রশ্মি আর অশেষবাবুর ভরসার স্থল একমাত্র সে নিজেই। সে যদি ভেঙে পড়ে তাহলে রশ্মি এবং অশেষ বাবুর মনোবল তলানিতে গিয়ে ঠেকবে। মীরা যে এখন বদলে গেছে, মীরা যে নিজের মধ্যে খুঁজে পেয়েছে জীবনীশক্তি। চাঁদ যেমন ষোলোকলায় পূর্ণ না হয়েও আলোক প্রদান করে মীরাও তেমনি রোহিতেশের বিরহে অপূর্ণ চাঁদ হয়েই নিজের ভাঙ্গা সংসারটিকে আলোকিত করে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা করছে। সত্যি, ভালো থাকুক মীরার মতন জীবন সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়া স্বয়ংসম্পূর্ণা নারীরা। সমাজের রক্তচক্ষু এবং কটাক্ষগুলোর পরোয়া না করেই এগিয়ে যাক মীরার সংগ্রামী বিজয় রথ.....


Rate this content
Log in

More bengali story from Mitali Chakraborty

Similar bengali story from Inspirational