STORYMIRROR

Mustafijur Rahman

Tragedy

4  

Mustafijur Rahman

Tragedy

অপভ্রংশ

অপভ্রংশ

4 mins
404


উচ্চতায় সে হয়তো আমার চেয়ে বেশি,কিন্তু চেহারায় মাধুর্য্য আছে।নামটাও মিস্টি,নীলা।তার বাবার দেওয়া নাম।একটাই মেয়ে,বড় আদরের।

আমিও বাবার একমাত্র ছেলে।আদরের তো বটেই,সেই সাথে অনেক স্বপ্নের।মাকড়সা যেভাবে জাল বোনে,ঠিক সেভাবে আমাকে ঘিরে আমার বাবার অনেক স্বপ্ন;সোনালী স্বপ্ন।

লম্বায় আমি কিছুটা ছোট,কিন্তু মনটা আমার আকাশের মতো এটা আমার বিশ্বাস।তার সাথে মিশে আছে সজীবতা,বাতাসের দূরন্ত প্রবাহ,নীল আকাশের প্রগাঢ় মহিমা।

নীলাকে আমার খুব ভাললাগে। তার গায়ের রঙ উজ্জ্বল না হলেও,ঠোঁট দুটি চমৎকার।তাকালে আর চোখ ফেরানো যায়না।হাতগুলো বেশ লম্বা,তার গঠনটাই বেশ লম্বা লম্বা।তার ঐ লম্বা গড়নই আমাকে দোলা দেয়।ওর চাহনিটা আরও সুন্দর,তবে নমনীয়তা তার সৌন্দর্য্যকে ছাড়িয়ে গেছে নির্মোহ নিরপেক্ষতায়।

আমাকে তার ভাল লাগে কিনা জানি না,কিন্তু সে খুব ভাল মেয়ে।অন্তত একজন বিশ্বস্ত বান্ধবী হিসাবে খারাপ না।তাকে আমার খুব মনে পড়ে। কল্পনা করতে ভাল লাগে।ভাবতে থাকি,তার সাথে বিকালে বেড়াতে পারার যে আনন্দ পেতাম,তা হত আমার জীবনের সব আনন্দেরে ঊর্দ্ধে।তার পবিত্র, সতেজ মুখ আমাকে আরও এগিয়ে যাবার দুর্বার প্রেরণা তো যোগাবেই,সাথে একজন জীবন সঙ্গিনী খোঁজার কঠিন কাজ থেকেও অব্যাহতি দিবে।

নীলা ক্লাস শেষ করে বাসায় ফিরছিল।আমার সাথে ওভারব্রীজের কাছে দেখা।অমাকে দেখে একপলক তাকালো।ওর তাকানোর অন্যরকম ভঙ্গি আছে।মনে হয় খেয়াল করেনি,কিন্তু সব দেখেছে।বললো,ক্লাস করোনি।

না,পড়া রেডি করতে পারিনি।

দ্বিতীয় কথাটা ও জিজ্ঞেস করতো না,আমি আগ বাড়িয়ে উত্তর দিলাম।

ও চলে যাচ্ছিল,দ্বিতীয় আরেকটি ওরকম চাহনি দিয়ে।আমি ডাকলাম,নীলা শোনো।

সে দাঁড়াল।

তুমি কপালে একটা টিপ পরো।টিপে তোমাকে ভাল মানাবে।

ও জবাব না দিয়ে চলে গেল।

আমার এ পরামর্শ দেবার কারণ ছিল ভিন্ন,যাতে আমার মতো তার গুণগ্রাহীদের নজর তার ঠোঁটে না পড়ে তার কপালে আটকে থাকে কিছুক্ষণ।

আমার মন তাকে খুব ভাল করে চেনে।সে আমার চিরচেনা,চির আপন।তার প্রতিটি নিশ্বাস আমি টের পাই।তার প্রতিটি পদক্ষেপ আমার পরিচিত।প্রতিটি কথা আমার মুখস্ত।তার চিন্তা আমার সাথে একাত্ম।তার গতিবিধি আমার কাছে প্রকাশ্য।আমি তার কাছে তার নিজের থেকেও অনেক অনেক বেশি আপন।

সে আমাকে কতটা মনে করে,তাতে আমার কিছু যায় আসেনা।আমাকে আমি চিনি ।খুব ভাল করেই চিনি ।অন্যের হৃদয় জয় করা বড় কঠিন কাজ।তবে আমার হৃদয়ে প্রবেশকারীর অনুমতি দাতা আমি নিজে।এখানে অন্য কারো খবরদারী নেই।এজন্য আমি নীলাকে আশ্বস্ত করতে পারি যে আমার হলে সে কখনো ঠকবে না।এতটুকু নিশ্চয়তা আমি তাকে দিতে পারি। 


নীলা টিপ পরা শুরু করে আমার বলার পর থেকে।কেন পরেছে জানি না।মানুষ কিছু কাজ এমনিতে করে।এটা কোন ইঙ্গিতও নয় আমাকে পছন্দ করার ক্ষেত্রে।

দুর্গা পূজায় নীলা তার বাসায় আমাকে দাওয়াত করলো।তার বাসার পাশে বড় একটা মন্ডপ আছে।দেবী দেখতে গেলাম।নীলা সময় দিয়েছে রাত ৮.০০-৯.০০ ।সময়মত হাজির হলাম।নীলা হাতে পলিশ করছিল।চুলগুলো একপাশে ফেলে রাখা।কপালে টিপ নেই।

নাড়ু খাবে তো?

চলবে।

সে নাড়ু দিলো ।আমি খা

ওয়া শুরু করলাম।

ওর ছোট একটা বোন আছে ,ক্লাস ফাইভে পড়ে।একবার আসল দেখা করতে।নাম জিজ্ঞেস করতে বললো,নীলার বোনের নাম কি হবে জানো না!

নাড়ু খেতে খেতে বললাম,কি হবে?

চুন্নি,আমার নাম চুন্নি।

নীলা পলিশে মনোযোগী ছিল।হঠাৎ চুন্নিকে বলল,তোর নাম ও কিভাবে জানবে?

ও না তোমার বন্ধু!

ও না,ওর একটা নাম আছে,পবন।

এই জায়গাটাতে নীলা জোর দিয়ে বলে,আমার নাম নিয়ে ওর এত জোর কীভাবে আসে কে জানে?

পানি খেতে খেতে বললাম, আমি তাহলে উঠি।

আজ অষ্টমী,মা লুচি আর সুজি করছেন,খেয়ে যাও।নীলা তাকাল একবার।

এত কিছু বলা লাগত না।ও কিছু না বললেও আমি থাকতাম।আমার বলাটা এজন্য বলা যাতে বোঝা যায় আর কতক্ষণ তার বাসায় থাকতে পারবো এটা জানার জন্য।


বিছানায় কাত হয়ে শুয়ে ছিলাম।দৃষ্টি ছিল আকাশে।আকাশের একটানা নিরেট,নির্ভেজাল নীল রঙ বড় ভাল লাগে আমার।নীলা আমাকে একটা ডায়েরী দিয়েছিল।ওকে বেশি মনে পড়লে ডায়েরীটা বের করে আমি লেখার চেষ্টা করি।তাকে আমি সত্যি সত্যি ভালবেসে ফেলেছি।লেখা আসছে না।ভালবাসার সংজ্ঞা আমার জানা নেই, কিন্তু তার জন্য আমার কষ্ট হয়।এই কষ্টকে যদি ভালবাসা বলে ,তবে আমি তাকে অনেক অনেক ভালবাসি।বিশেষ কিছু লেখা গেল না।কয়েকটা আঁকিবুকি করলাম।প্রত্যেক আঁকাআঁকিতে নীলা জ্বলজ্বল করছে।

দেখতে দেখতে আকাশের নীল রঙ সাদা মেঘে ছেঁয়ে গেল।নীলা সাদা ওড়না ব্যাবহার করে বেশিরভাগ সময়।আকাশটাকে নীলা বলেই মনে হয়।

ট্রাফিক জ্যামে আটকে আছি সাত রাস্তার মোড়ে।পাশে একটি কার ঘ্যাট করে এসে থামল।তাকিয়ে দেখি নীলা।গ্লাস নামালাম।নীলা,এই নীলা!

দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করলাম নানাভাবে।তাকাল অবশেষে।

কোথায় যাচ্ছ?

শপিংয়ে।

চুন্নি ভাল আছে?

আছে ভালই।তোমার কথা বলে প্রায়ই।এসো একদিন বাসায়।

যাবো,দেখি একদিন।

এই যাবার কথা শুধু যাবার জন্য বলা না, এতে যথেষ্ট আন্তরিকতা আছে।ওকে বলে দেয়াই যায় আমার ভাললাগার কথা।কিন্তু পরবর্তী ধাক্কা কে সামলাবে?সে ভীষণ অনুভূতিপ্রবণ মেয়ে।একবার আমাকে ভালভাবে গ্রহণ না করলে আর ওকে ফেরানো যাবে না।ও বন্ধু হয়ে থাক , সেই ভাল।তাকে আমি কখনো হারাতে চাইনা।

রাতে অনেকক্ষণ ঘুমায়নি,নীলার কথা মনে হচ্ছিল।সে পাশে থাকলে হাতটা ধরে তাকতাম।হাত ধরার ইচ্ছাটা আমার অনেকদিনের।সে আমার চাওয়া,পাওয়া;আমার প্রত্যাশা।


পার হয়ে গেল কয়েক বছর ।

টিপুর বাসায় গেলাম ব্যাবসায়িক আলাপ করতে।আলাপ হল।সামনে আমরা একটা ব্যাবসা শুরু করতে যাচ্ছি।সাপ চাষ।গোটা পঞ্চাশ লাখ টাকা হলে ব্যাবসাটা দাঁড় করানো যাবে বলে মনে হল।

বেলা বারটার দিকে আমি তার বাসা থেকে বের হবো।দেখি ও কাপড় চোপড় পড়ছে।বললাম,কোথাও যাবি নাকি?

বিয়ের দাওয়াত আছে,তুই যাবি,গেলে চল।

কার বিয়ে?

যে উত্তর আসল তা প্রত্যাশার অতীত,দু:স্বপ্নের অগোচর ।

আজ নীলার বিয়ে।আজ আমার স্বপ্ন শুধুই স্বপ্ন হবার পালা।আমার মন বিচূর্ণ হবার মোক্ষম সময়।আমার বহুদিনের অনেক কষ্টে লালিত প্রত্যাশা বাতাসের ঝড়ো গতিতে সময়ের স্রোতে পালহীন নৌকার মতো ভেসে চললো অজানার পথে।

১৭/০৯/২০০৩

বুধবার,যশোর



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy