Mustafijur Rahman

Tragedy Others

4  

Mustafijur Rahman

Tragedy Others

আরক

আরক

8 mins
378


আমার জীবনের অধিকাংশ সময় কেটেছে শহরে। কিন্তু আমার জন্মস্থান গ্রামের সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক,সেখানকার মানুষের প্রতি আমার অবিচ্ছেদ্য সৌহার্দ।

গ্রামে আমাদের অবস্থান বেশ সম্মানজনক পর্যায়ে ছিল। আমার বাবা জমিদার না হলেও তার কথা লোকে শ্রদ্ধাভরে মান্য করত। কিন্তু রেহান চৌধুরীর সাথে আমাদের ছিল ছুরি কাটাকাটি সর্ম্পক। অবশ্য সেটা জমিজমা সংক্রান্ত।

জীবন এত জটিল হয়ে উঠবে আগে ধারণা করতে পারিনি। ছোটকালে কত ফুর্তিতে বন্ধুদের সাথে গ্রাম চষে বেড়িয়েছি। এমন কোন জায়গা ছিল না যে আমরা চিনতাম না, যেতাম না। কিন্তু ঐ রেহান সাহেবের সীমানার ধারে কাছেও ঘেষতাম না।

পঞ্চম শ্রেণী পাস করেছি গ্রামের স্কুল থেকে। আমাদের সাথে রেহান সাহেবের মেয়ে পায়েল পড়ত। তখন অতটা বুঝতাম না- তার চেহারাটা প্রত্যাশার চেয়ে কিছুটা ঊর্ধ্বে ছিল।

ষষ্ঠ শ্রেণীতে শহরের স্কুলে ভর্তি হই ,বড় আপার বাসায় থেকে পড়াশোনা করতাম। তারপর একে একে জীবনের অনেকগুলো বছর কেটে গেল নীরবে। আই.এ. পরীক্ষার পর গিয়েছিলাম গ্রামে। সবকিছু কেমন জানি নতুন নতুন লাগছিল।

বাবা আমার জন্য ভ্যান ঠিক করে রেখেছিলেন। গ্রামের রাস্তায় পা দিতেই ভ্যান ওয়ালা ছোট বাবু বলে আমন্ত্রণ জানাল। আসলে এসময় রাস্তায় যানবাহনের খুব আকাল থাকে- তাই আমার বাবার এ কাঙ্ক্ষিত বাড়াবাড়ি । কিছুদুর এগুতে গিয়ে দেখলাম একটা সমবয়সী মেয়ে হেটে যাচ্ছে গ্রামেরই দিকে-পোশাক পরিচ্ছদ দেখে সম্ভ্রান্ত বলেই মনে হচ্ছে। তার সম্পর্কে ভ্যান ওয়ালা রতনের কাছে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই মেয়েটি বলল, এই ভ্যান যাবে?

রতন কাল বিলম্ব না করে বলে দিল,না। আমি অবাক হলাম। আমরা তো ওদিকেই যাচ্ছি। তাহলে-

আগ পিছ কিছু ভাবার ব্যর্থ চেষ্টায় পরাজতি হবার সাথে সাথে রতনকে থামিয়ে মেয়েটির উদ্দেশ্য চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলাম,আপনি আসুন।

প্রথমে সংকোচ করলেও শেষে আমার জোরাজুরিতে আমার পাশে এসে বসল। জীবনে কারও দিকে চেয়ে থাকার সাহস খুব একটা না হলেও আজ দু-তিন বার তাকে দেখেছিলাম। টকটকে লাল ফর্সা, দোহারা গড়ন। ওষ্ঠ আর ভুবন ভুলানো অধর মিলনতলে ঘনিষ্ঠ অথচ নাম না জানা খেলা খেলে চলেছে নিরন্তর, টানা টানা ধারালো চোখ-সহসাই বুকের ভিতর দূরন্ত অন্বেষণ করে শেষটায় আত্মায় গিয়ে শ্রান্ত হয়- সত্যিই তার বিক্ষিপ্ত দৃষ্টি ছিল প্রকৃতই অর্ন্তভদেী। সে কিছু একটা আমার ভিতর খুঁজে চলেছে অবিরামহীন ভাবে। তার সেই ক্ষুরধার চাহনিতে মিতালী হবার সাহস আমার হল না।

শেষে একসময় রতনকে থামিয়ে তার প্রাপ্য পাওনা দিতে চায়লে আমি ঘোরতর আপত্তি তুলেছিলাম- কেন তা জানিনা। ব্যর্থ হয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নেবার সময় মৃদু হেসে- যে হাসিতে সজীবতা না থাকলেও গোপন কোন নিগূর তাৎপর্য ছিল- শেষবারের মতো চেয়েছিল আমার দিকে। অবাক হয়ে দেখছিলাম তার চাহনির ভঙ্গি-বলে বোঝাতে পারব না ভয়ঙ্কর সুন্দর সে দর্শন !


রতনের মুখে শুনেছিলাম মেয়েটি রেহান সাহেবের। আজই ফিরল। একেবারে দমে গেলাম। শত্রুর সাথে আত্মীয়তা সমীচীন না। ভেবেছিলাম এবার গ্রামে বেশ মজা করা যাবে, কিন্তু মনটা কেমন জানি করতে লাগল।

বিকালে বেরিয়ে ছিলাম একাকী। পথিমধ্যে চৌধুরী বাড়িটা দেখে বুকের মধ্যে ছ্যাৎ করে উঠল। বাড়িটা ঐতিহ্যবাহী কিন্তু পুরানো ,হয়তো গ্রামের মধ্যে বলে পরিচর্যা করে না। ঐ বাড়ির সামনে প্রকান্ত এক তেঁতুল গাছ। গাছ ভরা ফল। কাঁচা থেকে শুরু করে সব রকমই আছে। গাছটার ডালপালা প্রায় রাস্তায় এসে পড়েছে। গাছতলা বেশ অন্ধকার। রাস্তা দিয়ে চলেছি। একটা আমন্ত্রণে পেঁছনে ফিরে তাকালাম , তেঁতুল খাবেন? চেয়ে দেখি সেই মেয়েটি--- তার মুখে সেই হাসি। তেঁতুলের প্রতি লোভ আমার অনেকদিনের- তারপরওে পাকা, না করলাম না।

তেঁতুলগুলো তখন খায়নি। জামার পকেটে ছিল। রাতে খাওয়ার সময় মায়ের পাশাপাশি চেয়ারে ছিলাম আমি। বাবা ছিলেন সামনা সামনি। পায়েল অনেকগুলো তেঁতুল গুজে দিয়েছিল পকেটে, কেউ চায়লইে বুঝতে পারবে ওখানে কিছু আছে। সেগুলোর কথা ভুলেই গিয়েছিলাম হঠাৎ বাবার নজর পড়ছে জিজ্ঞেস করলেন, তোর পকেটে ওগুলো কিরে?

চাইতেই দেখলাম কাজ সেরেছে। গ্রামে তেঁতুল গাছ একটাই। আর আমি শহর থেকে তেঁতুল আনিনি। পরে বাবা কঠিন গলায় বললেন, নিজে পেড়েছিস?

পায়েলের কথা বললে বাবা একেবারে শেষ করে ফেলবেন। জীবনে প্রথমবারের মতো মিথ্যা বললাম। বাবা হুঁশিয়ারী জারি করলেন, দুই একের ভেতর শহরে চলে যাবি-তোর গ্রামে থাকার দরকার নেই।


সেই থেকে অনেক দিন গ্রামে যাইনি।এদিকে পড়াশুনা দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। শহরের যানজট, বেঁচে থাকার প্রতিযোগিতা, প্রতিকূলতার মাঝে ভালই আছি।

বড় আপার দুই ছেলে-মেয়ে। বড়টা অন্তু, মেয়েটি ছোট চামেলী। বড় ভক্ত ওরা আমার। গ্রাম থেকে আনা তেঁতুলগুলোর কিছুটা খেয়েছিলাম- বেশ দারুন, বাকিগুলো অন্তু আর চামেলীকে দিতে গিয়ে বিপত্তি বেঁধে গিয়েছিল।

না মামা আমি তেঁতুল খাবনা আম্মুর নিষেধ আছে,অন্তু বলল।

চামেলী বলল, মামা ওগুলো তুমি আমাকে দাও। খেতে খেতে বলল, এগুলো কে দিয়েছে?

বিপত্তি এড়াতে অন্য প্রসংঙ্গ তুলছিলাম।

আমার প্রতিদিনের রুটিন: ভার্সিটিতে যাওয়া-আসা, বাসায় এসে পড়াশুনা, বিকেলে অন্তু আর চামেলীকে নিয়ে একটু বের হওয়া। দুলাভাই বাড়ি আসেন রাত ৯ টার দিকে। অন্তু আর চমেলী আগে খেয়ে নেয়। শেষে আমরা তিনজন খাওয়ার পর্ব শেষ করি।

এভাবেই চলতে থাকে নিত্যদিনের আর্বতন। গ্রামের কথা খুব একটা মনে পড়েনা। আর পড়লেও তেঁতুল গাছটার কথা স্মৃতির অন্তরালে উঁকি দেয়।


শেষে পড়াশোনার পালা শেষ ,অনেক দিন ঘুরে ঘুরে একটা চাকরি পেলাম, সরকারী। ভাবলাম যাক বাবার আশাটা পূরণ হল। জীবনটা আমার সাজিয়ে নেবার পালা। অন্তু আর চামেলীও বড় হতে লাগলো। আমার ওই একটাই আপা।

এখন অনেকটাই ফ্রি মনে হয় নিজেকে। হাতের কাছের কাজ ইচ্ছে হলে করি ,না হলে করিনা। আপুর বাসার বাজার করার দায়িত্বটা আমার। বেশ অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে ,তাছাড়া একটা আলাদা মজা আছে এর মধ্যে।

মাঝে বাবা-মা দু’জনেই এসেছিলেন শহরে। কয়েকদিন ছিলেন। তখন জমিজমার ব্যপারে কি এক জটিলতায় দুলাভাইয়ের সাথে পরামর্শ করতে এসেছিলেন।

আমার এসব একবারে ভাল লাগে না। কি হবে ওসব দিয়ে? আর শুধু শুধু কারও সাথে শত্রুতা করেওবা কি লাভ? মানি বাবা অনেক বিজ্ঞ, অভিজ্ঞতা অনেক। কিন্তু তাই বলে এত পর্যন্ত করাটা বাড়াবাড়ি।

নিজের প্রভাব বজায় রেখে চলা ভাল, কিন্তু সংকীর্ণ মনোভাব কোন কালেও আমার ভাল লাগেনা। বাবাকে বোঝাবে কে? বোঝাতে গেলেই রেগে আগুন হয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকেন।

আর বাবার সংকীর্ণতায় উসকানি দেন আপা আর দুলাভাই। খুব রাগ হয় আমার। প্রতিবছর বাবাকে কেন্দ্র করে গ্রামে জটিলতা সৃষ্টি হয় ঐ রেহান সাহেবের সাথে। রেহান সাহেবের মাঝে খারাপ কিছু আছে বলে তো মনে হয় না। কিন্তু আমি একা। আমার সাধ্য নেই- এর বিরুদ্ধে যাবার।

সেবার গ্রামের মেলা বসেছিল মহা ধুমধামে। হঠাৎ দু-পক্ষের মাঝে জিনিস কেনা-কাটা নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। শেষে আমি গিয়ে একটা ফয়সালা করার পর নির্ঘাৎ রক্তক্ষয় থেকে নিরীহ মানুষগুলো বাঁচল। দোষটা দু-পক্ষের থাকলেও বাবার আধিপত্যকামী মানসিকতা যতো নষ্টের গোড়া।


আজ আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছে দলে দলে। পরিবেশটা থমথমে। সকাল সকাল বাসায় ফিরেছি। বাসার সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আবহমান চিরন্তন রাত আসল যথোপযুক্ত গাম্ভীর্য নিয়ে। একটু পরে ঝড়ো হাওয়া শুরু হল। জানালা গুলো জোরে জোরে আঘাত হানছে পাল্লার সাথে। আকাশে বিজলির ঝলকানি আর ফির ফিরে হিমেল হাওয়ায় মনটা কেমন জানি করছিল। মাথায় কোন চিন্তা নেই। মস্তিষ্ক একেবারে ঠান্ডা। হঠাৎ জানালার পাশ দিয়ে একটা ভুলে যাওয়া স্বর শুনে তাকালাম- তেঁতুল খাবেন? আরে এ যে পায়েল! এতরাতে বাসা থেকে এখানে। তার ঠোঁটে তখনো সেই হাসি- সেই অর্ন্তভদেী দৃষ্টি। শুনেছি শহরে পড়াশোনা করে, কিন্তু হঠাৎ এখানে-

আবার জিজ্ঞেস করল, কি হল, আজ নিবেন না?

আমি কি করব বুঝতে পারলাম না।

নিতে সাহস করলাম না। এখনো ভয় ঢোকেনি মনে। বললাম, বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে, আপনি ভেতরে আসবেন?

কোন উত্তর দেয় না।

কি হল, কিছু বলছেন না যে!

হঠাৎ একটা দমকা বাতাসে জানালা গুলো বন্ধ হয়ে গলে । দ্রুত জানালা খুলে তাকিয়ে দেখি কেউ নেই ,আর আমার রুমের জানালার পাশে কোন বারান্দা/ বেলকনি যাই হোক না কেন, কিছু নেই। তিনতলা থেকে কেবলমাত্র নিচে মাটিতে বৃষ্টি পড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে।

জীবনে অনেকদিন ভয় পাইনি। আজকের ঘটনায় কেমন জানি মনে হতে লাগলো।

কাউকে কিছু বলিনি। সেদিন আকাশ ফর্সা। রাতে আকাশও তারায় তারায় ঝলমলে। রুমে ঢুকতেই কেমন একটা সুবাস মতো। বিছানার কাছে সুবাসটা মৌ মৌ করছে। মনে হচ্ছে বিছানায় কেউ বসে আছে আর তার কোমল শরীর থেকেই সেটা পুরো ঘরটাকে আমোদিত করে রেখেছে।

সাহস করে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই অদৃশ্য সৌন্দর্য আমাকে আকড়ে ধরল- ইচ্ছে করেও ছাড়াতে পারছি না। বউয়ের আদর কেমন হয় আমি জানি না- কিন্তু সেই চুম্বন, সেই উষ্ণ স্বত্বার আলিঙ্গন মনে হয় সম পর্যায়ের ছিল। কথা বলতে চাইলেও পারছি না।

কখন ঘুমিয়ে ছিলাম মনে পড়ে না। জেগে গিয়েছি শেষরাতে। হঠাৎ সেই স্বর,তেঁতুল খাবেন? কি আর্শ্চয্য ! আপনি ওখানে কি ভাবে দাঁড়িয়ে আছেন? উঠে গিয়ে দেখতে যাওয়ার আগেই অদৃশ্য হয়ে কোথায় মিলিয়ে গেল জানিনা, কিন্তু সেই অজানা স্বত্বা আমাকে আবার আলতো করে জড়িয়ে ধরল। নিষেধ করার শক্তি আমার নেই।নড়তেও পারছি না।

সকালের দিকে রেহাই পেলাম। সে রাতে আর এমন কিছু হয়নি। ভাবলাম যাক বাঁচা গেল। পরদিন মাঝরাত পর্যন্ত ঘুম আসেনি। কারও জন্য মনটা ছটছট করছে। হঠাৎ করেই সেই পরিচিত স্বর- তবে একটু অন্যভাবে-

চাঁদ দেখবেন?

উত্তর না দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি আমার পিছু নিয়েছেন কেন?

আপনি না, বল তুমি।

আচ্ছা বললাম, কেন নিয়েছ?

আপনাকে আমার ভাললাগে।

কেন?

আপনার মধ্যে শুদ্ধ একরকম নির্যাস আছে,তেঁতুলের মতো ।

নির্যাস !


আর কিছু বলার আগেই মিলিয়ে গেল কোথায় জানি না। সকালে আপা বলল, দ্রুত গুছিয়ে নে, মেয়ে দেখতে যেতে হবে।

তোমার যেমন কথা, ওঠ ছুড়ি তোর বিয়ে!

যা বলছি তাই কর।

কথা বাড়ালাম না। যেতে যেতে জানাল যে মেয়ে তার বান্ধবীর। সুন্দরী, সুশিক্ষিতা-

দেখতে গিয়ে অবাক হয়ে গেলাম- চেহারা পায়েলের সাথে হুবহু মিল- সেই হাসি, সেই ঠোঁট, সেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। আমি ঘেমে যাচ্ছিলাম।

আপা বলল, কিরে তুই ঘামছিস কেন?

এমনিতেই।

মেয়ে আমার পছন্দ হয়েছে কিন্তু দুজনের চেহারার এত মিল! রেহান চৌধুরীর সাথে আপার বান্ধবীর কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু-

এ কয়দিন রাতে আর কিছু ঘটেনি। আগামীকাল আমার বিয়ে।


বিয়ে সুম্পন্ন হল। সন্ধ্যা সমাগত। রাতের দিকে ভিড় কিছুটা কমল। রুমে ঢুকেই সেই বকুল ফুলের গন্ধ। সারা ঘর ভরে আছে। মনে হল ও বুঝি সুগন্ধি মেখেছে। প্রথম রাত তাই কিছু জিজ্ঞেস করিনি। কিন্তু মনের থেকে সন্দেহ যাচ্ছে না।

শেষে বিচলিত হয়ে বললাম, তুমি কি তেঁতুল খেতে পছন্দ কর?

ছেড়া ছেড়া শব্দে জানাল যে, তার সমস্যা থাকায় টক খাওয়া ছোটবেলা থেকে নিষেধ।

অন্তুত একটা জিনিস নিশ্চিন্ত হওয়া গেল। এভাবে অনেক্ষণ চুপচাপ। আমি সহজ হতে পারছি না। একপলক তাকিয়ে দেখলাম নিঘুর্ম দুটি চোখ চঞ্চল হয়ে উঠেছে। তার নামটা কবুল বলার সময় পেয়েছিলাম- প্রেমা।

গভীর রাত, প্রেমা ঘুমিয়ে পড়েছে। আমিও পাশ ফিরে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। হঠাৎ সেই অদৃশ্য স্বত্বা আমাকে আলিঙ্গন করল খুব শক্ত করে সামনের দিক থেকে। প্রেমা আমার পেছন দিকে, অতএব সে গুড়ে বালি।

তাকে কিছুতেই সরাতে পারছি না। সে আমার সাথে একেবারে মিশে আছে। কথা বলার শক্তি বা সাহস কোনটাই আমার নেই। কি জ্বালারে বাবা! পাশে বিয়ে করা নতুন বউ। কিন্তু আমি কথা বলতে গিয়েও পারছি না। কেউ যেন বলতে দিচ্ছে না।

সকালে প্রেমার ডাকে ঘুম ভেঙেছিল। নিজেকে কেমন অপরাধী মনে হচ্ছিল। কোন মতেই সহজ হতে পারছি না। প্রেমা আর আমার মাঝে দেয়াল তৈরি হয়ে আছে। ভাবলাম ডাক্তার দেখানো দরকার। বিকালে গেলাম ডাক্তাররে কাছে। সমস্যার কথা জানালাম। শেষে উত্তরের অপেক্ষায়। অনেকগুলো টেষ্ট করতে দিলেন। পরের দিন রিপোর্ট দেখলেন। মন্তব্যে জানালেন সবকিছু ঠিক আছে। ভয়ের কিছু নেই। আশ্বস্ত করলেন বারবার। শেষে কোথাও গিয়ে কিছুদিনের জন্য বেড়িয়ে আসার জন্য বললেন।


সবেমাত্র বিয়ে করেছি। নতুন বৌকে ছেড়ে এখন কোথায় আর যাব। ভাবলাম কিছুদিন পরে গ্রাম থেকে প্রয়োজনের কথা বলে ঘুরে আসি। তাই করলাম। প্রেমার কাছ থেকে বিদায় নিলাম। যেতে যেতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল। এখন ভ্যান পাওয়া খুব একটা সমস্যা হবে না। খোঁজে খোঁজে রতনকে বের করলাম। আসছি দু’জনে।

ইচ্ছে করে পায়েলের কথা তুললাম। রতন একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল যে বছর তিনেক আগে পায়েল রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে শহর থেকে গ্রামে আসার সময়।

আমি একেবারে নিথর হয়ে গেলাম।

শেষে সেই তেঁতুল গাছ তলা অতিক্রম করার সময় হঠাৎ সেই চিরচেনা স্বর বলে উঠল,তেতুঁল খাবেন? আমি একেবারে চমকে উঠলাম। ভয় এড়াতে রতনকে জিজ্ঞেস করলাম কিছু শুনতে পেয়েছে কিনা।

রতন অপকটে জানাল যে কেউ যেন তেঁতুল খাওয়ার জন্য বলছিল। ভ্যান আস্তে চলছিল। কন্ঠস্বর আবার ভেসে আসল -আমি ভালবাসি, আপনার ভেতরের আপনাকে ভালবাসি ! তেঁতুলের নির্যাসের মতো ভালবাসি!!

দিক হতে দিগন্তে সে স্বর ভেসে কোথায় জানি মিলিয়ে গেল। রতন শুনতে পেয়েছিল কি না জিজ্ঞেস করিনি।


২৮/০৮/২০০৪

শনিবার,যশোর


 


 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy