Sanchaita Roy Chowdhury

Romance Inspirational Others

2.9  

Sanchaita Roy Chowdhury

Romance Inspirational Others

অন্যরকম ভালোবাসা

অন্যরকম ভালোবাসা

4 mins
297


     অন্যরকম ভালোবাসা 

           পর্ব-১


বাইরের আকাশ ঘন কালো মেঘে আচ্ছন্ন, বৃষ্টি পড়ছে ঝিরঝির করে। আর্য কলেজে যাওয়ার জন্য তৈরী হয়ে বসে আছে নিজের বিছানার ওপর।সে তার বিছানায় বসে দেখলো,তার ঘরের কাঁচের দেওয়ালে বিন্দু বিন্দু বৃষ্টির জল জমাট বাঁধছে।এমনি সময় তাদের বাড়ির ড্রাইভার আর্যকে কলেজ যাওয়ার জন্য ডাকলো।সে নিজের পড়ার টেবিল থেকে ব্যাগ নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।আর্য সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামার সময় দেখলো, তার মা তার ছোট বোন মিয়াঙ্কাকে কলেজের জন্য তৈরী করছেন।মিয়াঙ্কা আর্যর থেকে মাত্র দুই বছরের ছোট।


আর্য যখন গাড়িতে,তখন বায়রে খুব বৃষ্টি শুরু হয়েছে।ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট করলো। আর্যর বাবা তমাল সেন কলকাতার একজন বড়ো ব্যবসায়ী।আর্যর মা শারীরিক দুর্বলতা নিয়ে মারা গিয়েছিলেন আর্যর জন্মের কিছু মাস পরেই। আর্যর বাবা তারপর আর একটি বিয়ে করেছিলেন।কিন্তু তার নতুন মা তার কোনোদিনও কোনো যত্ন নেয়নি।আসলে যত্ন নেওয়া তো দূরের কথা তাকে কোনোদিন কোলে পর্যন্ত নেয়নি।আর্য তার বাড়ির কাজের লোকেদের কাছেই মানুষ হয়েছে।তার বাবা তো তার কোনোদিনও কোনো খেয়াল করেননি।আর্যর বাবার ইচ্ছা ছিল যেন তার প্রথম সন্তান একটি মিষ্টি মেয়ে হয়।কিন্তু তা হয়নি। যার ফলস্বরূপ মিয়াঙ্কাকে তার বাবা খুব ভালোবাসেন। আর্যর বাবা কলকাতার এক বড়ো কলেজে মিয়াঙ্কাকে ভর্তি করেছেন,কিন্তু আর্যকে ভর্তি করেছেন একটি সাধারন কলেজে। আর্যকে তার বাবা সবকিছুই দিয়েছেন,সে না চাইতেই। কিন্তু সেই উপহারগুলোতে যত্ন এবং ভালোবাসার বড্ড অভাব। আর্য তার বাড়িতে সবার মাঝে থেকেও, সে যেন বড়োই একা।তার কথা শোনার কেউ নেই, তার সাথে কথা বলারও পর্যন্ত কেউ নেই।



আর্য গাড়িতে বসে ভাবলো,'আচ্ছা! আজ যদি আমার নিজের মা বেঁচে থাকতো, তাহলে মাও কি আমার সাথে এরকম করতো।আমি কি বাবার মতোন তার কাছেও অদৃশ্যের মতোনই থাকতাম?'

হঠাৎই ড্রাইভার বলে উঠলো,' আর্যবাবা কলেজ এসে গেছে।'

আর্য গাড়ি থেকে নেমে গেলো।আর্য কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।ক্লাসে দরকার ছাড়া সে খুব একটা কারোর সাথে মেশেনা,শুধুমাত্র রাজদীপ ছাড়া। রাজদীপ তার ছোটবেলার বন্ধু।একসাথে তারা স্কুলে পড়াশোনা করেছে,আর এখন তারা কলেজেও একসাথে পড়াশোনা করে। আর্যর সবথেকে ভালো বন্ধু হয়ে উঠেছে রাজদীপ। রাজদীপ দেখলো আর্যর মনটা খুব খারাপ হয়ে আছে,সে তার বন্ধুর মুড ঠিক করার জন্য তার সাথে গল্প করতে লাগলো।কিন্তু আর্য সেসব কথার কোনো উত্তর করলো না।রাজদীপ বলল,'শুনলাম আঙ্কেলের সাথে নাকি বিখ্যাত ব্যবসায়ী অদৃত রায়ের খুব সমস্যা চলছে!অদৃত রায় কিন্তু ছেলেটা দারুণ।যেমন দেখতে,তেমন গুণী।এত বড় ব্যবসা সামলে কি সুন্দর মডেলিং করে,শুনেছি খুব সুন্দর ব্যাডমিন্টনও খেলে।সত্যিই ভগবান যাকে দেয় সব উজার করে দেয়রে।আমি মেয়ে হলে ওকেই বিয়ে করার স্বপ্ন দেখতাম ।' আর্যর আজকে এইসব কথা শোনার একটুও ইচ্ছা নেই,তাও শুনতে হবে নয়তো রাজদীপের খারাপ লাগবে। রাজদীপ বলল,'শুনেছি ছেলেটা নাকি খুব ভদ্র,ওতো বড়লোক দেখলে বোঝা দায়।আজ পর্যন্ত কেউ তার সম্বন্ধে কটুকথা বলেনি।সেরা ব্যবসায়ীর পুরস্কার তো এবার অদৃত রায়ই পেয়েছেন।আচ্ছা! তুই কখনো অদৃত রায়কে সামনাসামনি দেখেছিস?'

আর্য বলল,'হ্যাঁ, একটা পার্টিতে।'

এরমধ্যেই ক্লাসে অধ্যাপক প্রবেশ করলেন ।


ঘড়ির কাঁটায় তখন বিকেল ৪টে বেজে ৩০মিনিট ।বৃষ্টি এখনও থামেনি।তাদের ক্লাস শেষ হয়েছে সবে ।কলেজ থেকে বেরিয়ে আর্য আর রাজদীপ একটা দোকানের ছাউনির নীচে গিয়ে দাঁড়ালো। রাজদীপ প্রত্যেকদিন আর্যকে গাড়িতে তুলে দিয়ে, তারপর সে নিজের গাড়িতে ওঠে।কিন্তু আজকে হঠাৎই তার প্রেমিকা প্রীতির সাথে দেখা হয়ে যায়। তাই আজ রাজদীপ তাড়াতাড়ি বিদায় নিলো।যাওয়ার সময় আর্যকে বলে গেলো,'ভাই আর্য আজকে আমি তাড়াতাড়ি চলে যাচ্ছি।জানিসই তো এখন না গেলে প্রীতি রেগে যাবে। তুই সাবধানে বাড়ি ফিরিস।'এই কথা বলেই সে চলে গেলো।


আজকে আর্যর ড্রাইভার আঙ্কেলের খুব দেরি হচ্ছে আসতে।তাই একবার ফোন করল, কিন্তু তাকে ফোনে পেল না।তাই অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন উপায়ও রইলো না।তার একা থাকতে খুব ভয় করে,যতক্ষণ সে রাজদীপের সাথে বা অন্য কারোর সাথে থাকে ততক্ষণ সে এত ভয় পায় না , কিন্তু কেউ না থাকলেই তার মনের মধ্যে এক অদ্ভুত ধরনের ভয় হতে থাকে। সে যেন কোথাও একা হতে ভয় পায়।আর তাছাড়া রাজদীপকে আকতি-মিনতি করে রেখে দেওয়ার ক্ষমতাও তার নেই,কারণ সে তার মা-কেই তো নিজের কাছে রাখতে পারেনি,তাহলে সে আর অন্য কাউকে কিভাবে নিজের কাছে রাখবে;এইসব কথাই সে ভাবতে থাকলো।


এইসব ভাবতে ভাবতে সে একবার তার ড্রাইভার আঙ্কেলকে ফোন করল,ড্রাইভার আঙ্কেল আর্যকে মেইন রোডের দিকে এগিয়ে আসতে বলে।আর্যর কলেজ একটি গলির ভেতর, আর্য ড্রাইভার আঙ্কেলের কথামতোই মেইন রোডের দিকে ছাতা মাথায় এগোতে থাকলো। বৃষ্টি পড়ার দরুন আজ গলিতে খুব একটা মানুষজন নেই।আর্যর হঠাৎই খেয়াল হল তার পিছনে আসা ধূসর রঙের একটি গাড়ির দিকে।গাড়িটি তাকে অনবরত কলেজ থেকে পিছু করে যাচ্ছে।সে ঠিক করল সে কোথাও একটা দাঁড়াবে,সে একটু এগিয়ে একটা পুরনো বাড়ির কাছে দাঁড়ালো,সেখানে সে ব্যতীত আর কেউ নেই,এবার তার খুব ভয় হতে লাগলো।গাড়িটি তার সামনে আসতেই দুটো লোক গাড়ি থেকে নেমে তাকে জোর করে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করতে লাগলো।সে ভয়তে চিৎকার করলো।কিন্তু সে কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার নাকের কাছে তারা ক্লোরোফর্মযুক্ত রুমাল চেপে ধরল।আর্য সঙ্গে সঙ্গে অচৈতন্য হয়ে পড়ল।


আর্য যখন চোখ খুলল তখন দেখলো , সে একটা জাঁকজমকপূর্ণ,সাজানো গোছানো ঘরে রয়েছে।আর্য এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো,ঘরের মধ্যে থাকা জিনিসগুলো দেখে মনে হচ্ছে খুব শৌখিন এবং অত্যন্ত দামী।আর্য মনে মনে ভাবলো,'এটা কোথায়?আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছে এরা? আমার সাথে কেনো এরকম করলো? আর ওরাই বা কারা ছিল ?'

এরইমধ্যে দরজায় আওয়াজ হল 'খট্' করে।

আর্য ভয় পেয়ে বলে উঠলো,'কে??'

সে দেখলো দরজা খুলে একটি ছেলে তার দিকে এগিয়ে আসছে। ছেলেটি খুব একটা রোগা নয়, বেশ লম্বা দেখে মনে হচ্ছে তার উচ্চতা হবে ছয় ফুট , পরনে তার কালো স্যুট,তার চোখে কালো সরু ফ্রেমের চশমা পড়া ,দাঁড়ি-গোফ পরিষ্কারভাবে কামানো,হাতে দামী ঘড়ি,খুব ফর্সা সুন্দর দেখতে একজন ব্যক্তি তার দিকেই এগিয়ে আসছে।কিন্তু এই ব্যক্তিটিকে আর্যর খুব চেনা লাগলো।সে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আচমকাই বলে উঠলো,'অদৃত রায়!আপনি এখানে??'


 চলছে.......




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance