STORYMIRROR

Sanchaita Roy Chowdhury

Romance Inspirational Others

3  

Sanchaita Roy Chowdhury

Romance Inspirational Others

অন্যরকম ভালোবাসা

অন্যরকম ভালোবাসা

7 mins
156

অন্যরকম ভালোবাসা


পর্ব-২১


গার্ডেনে বসে কত গল্প করল তারা। কখনো অদৃতের মা অদৃতের ছোটবেলার গল্প শোনালো, কখনো বা তার বাবা তাদের ভ্রমণ কাহিনী শোনালো, আবার কখনো শোনালো অদৃতের বাবার জীবনে ঘটে যাওয়া হাস্যকৌতূক কোনো কাহিনী। এইসব গল্পে বেশ জমে উঠলো আড্ডার আসর। আর্যর খুব ভালো লাগলো, এই প্রথম সে এইভাবে আড্ডা দিচ্ছে, পুরো বিষয়টা সে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছে। তার বাড়িতে গল্প তো দূরের কথা পাত্তাই দিতো না কেউ তাকে। সে কখনো ভাবেনি , কোথাও গিয়ে সে এত সম্মান, ভালোবাসা পাবে কখনো। হঠাৎই অদৃতের মায়ের ফোনে একটা ফোন এলো। 

শ্রেয়সী বলল,'ব্যস্! হয়ে গেলো।'

অদৃত সাথে সাথে বলে উঠলো,'নিশ্চয়ই দিদা। যাও গিয়ে কথা বলে নাও।'

ইন্দ্রনীল বলল,'আমিও এবার উঠি তবে।'



বেশ কিছুক্ষণ গার্ডেনের চেয়ারে অদৃত এবং আর্য বসে থাকলো। 

বেশকিছুকণ বসে থাকার পর অদৃত বলল,'চলো আর্য তোমাকে পুরো বাড়িটা ঘুরিয়ে দেখাই।পুরো বাড়িটা তো ঘুরে দেখা হয়নি।চলো।'

আর্য বলল,'চলো।'

তাদের বাড়ির ঘর, ছাদ , সুইমিং পুল, জিম সমস্ত জায়গা ঘুরিয়ে দেখালো অদৃত তাকে।

অদৃত জিজ্ঞাসা করল আর্যকে,'কেমন লাগলো আমাদের বাড়ি?' 

আর্য বলল,'খুব সুন্দর।'

আর্য বলল 'একটা কথা বলবো?'

অদৃত বলল,'হ্যাঁ বলোনা।'

আর্য বলল,'এই বাড়িটার সাথে কলকাতার ফ্ল্যাটটার আকাশ পাতাল তফাৎ।'

অদৃত বলল,'কোনটা বেশি পছন্দের তোমার? এই বাড়িটা না ওই ফ্ল্যাটটা।'

আর্য বলল,'ওই ফ্ল্যাটটা।'

অদৃত অল্প হেসে বলল,'এই প্রথম আমাকে কেউ বলল এই বাড়িটার থেকে তার আমার নিজের হাতে সাজানো ফ্ল্যাটটা বেশি পছন্দের। ওখানে তো কিছুই সেরকম নেই। ওই ফ্ল্যাটের কি ভালো লাগে তোমার?'

আর্য বলল,' সবকিছুই।'

অদৃত বলল,'কেন?'

আর্য বলল,'ঠিক জানি না। একটা অদ্ভূত ভালোলাগা কাজ করতো।'

অদৃত হেসে আবেগঘন চোখে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,'তুমি একদম অন্য ধরনের একজন মানুষ আর্য। খুব ভালো মানুষ, এরকমই থেকো সারাজীবন।'

আর্য বলল,'কি?'

অদৃত গলা খাকরিয়ে বলল ,' বলছিলাম ফ্ল্যাটটা যখন ভালোই লেগেছিল তবে রাজদীপের সাথে চলে যাচ্ছিলে কেন? আমি যদি না নিয়ে আসতাম তাহলে মনে হয় এতক্ষণ রাজদীপদের বাড়িতেই থাকতে।'

আর্য মাথা নীচু করে মুচকি হাসলো।

এরই মধ্যে আর্যর ফোনে রাজদীপের ফোন বেজে উঠলো। অদৃত আর্যর ফোনের দিকে মুখটা একটু বাড়িয়ে দেখলো রাজদীপ ফোন করছে। 

অদৃত বলল,'ফোনটা ধরে নাও।'

আর্য একটু সংকোচ করে বলল,'হ্যাঁ ধরছি।'

সে একটু দূরে গিয়ে রাজদীপের ফোনটা ধরলো।

অদৃত মনে মনে ভাবলো,'শয়তানের নাম নিতেই সে হাজির।'


রাজদীপ বলল,'কি রে তুই তো পৌঁছে ফোন করলি না?'

আর্য বলল,'আমি তোকে রাতে ফোন করতাম।'

রাজদীপ বলল,'পৌঁছাতে কোনো অসুবিধা হয়নি তো?'

আর্য বলল,'না রে। এই জানিস অদৃতদের বাড়িটা কত বড়ো। ওর বাবা-মা ও খুব ভালো।'

রাজদীপ বলল,'তোর ভালো লাগছে তো ওখানে?'

আর্য খুশিতে ডগমগ হয়ে বলল,'হ্যাঁ, খুব ভালো লাগছে।'

রাজদীপ বলল,'আজ অনেকদিন পর তোকে এইভাবে এতো খুশি হতে দেখলাম। কিন্তু বিশ্বাস কর ভাই আমি তোকে খুব মিস করছি।' 

আর্য বলল,'আমারও খুব খারাপ লাগছে।'

অদৃত একরাশ কৌতূহল নিয়ে একটা কোণায় দাঁড়িয়ে আর্যর ওপর নজর রাখল। 

সে ভাবলো,'কি এতো কথা বলছে ?? উফ্! এই ছেলেটা যে কি এতো কথা বলে আর্যর সাথে কে জানে? না, অনেকক্ষণ হয়ে গেছে এবার ডাকতেই হবে।'

অদৃত আর্যকে জোরে ডেকে বলল,'আর্য..., হল কথা তোমার? '

আর্য বলল,'হ্যাঁ, আর একটু অপেক্ষা করো আমি আসছি।'

রাজদীপ ফোনের ওপার থেকে বলল,'তুমি...... তা তুমিটা কে শুনি?'

আর্য অল্প লজ্জা পেয়ে বলল,'শোন অদৃতই বলেছে ওকে তুমি ডাকতে। আচ্ছা শোন আমি তোকে পরে ফোন করবো।'

রাজদীপ বলল,'ঠিক আছে। তুই সাবধানে থাকিস আর নিজের খেয়াল রাখিস।'

আর্য বলল,'তুইও।'

আর্য ফোন কেটে অদৃতের সামনে গিয়ে বলল,'চলো।'



অদৃত বলল,'রাজদীপ ফোন করেছিল?'

আর্য বলল,'হ্যাঁ।'

অদৃত বলল,'কি বলছিল? না মানে ইচ্ছা না হলে নাও বলতে পারো এমনিই জিজ্ঞাসা করলাম।'

আর্য বলল,'জিজ্ঞাসা করছিল আমি ঠিক মতোন পৌঁছেছি কি না। আমার কেমন লাগছে এইসব।'

অদৃত বলল,'ওহ....।'

আর্য বলল,'আর বলছিল যে ও আমাকে মিস করছে।'

অদৃত ভুরু কুঁচকে বলল,'মিস করছে? কেন?'

আর্য বলল,'এটাইতো স্বাভাবিক আমরা দু'জন দু'জনের কত ভালো বন্ধু হই। আমারও খুব খারাপ লাগছে কোথাও গিয়ে । ছোট থেকে বন্ধু বলতে ওকেই চিনেছি, বিপদে আপদে আমরা একে অপরের পাশে থেকেছি।'

অদৃত বলল,'ঠিক আছে ঠিক আছে। এইবার ভিতরে চলো।'


সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় অদৃত তাকে বলল,'এবার তোমাকে আমার ঘর দেখাতে নিয়ে যাবো।' 

আর্য বলল,'আপনার ঘর?'

অদৃত বলল,'হুম্ । আমার ঘর।'

অদৃত তার ঘর দেখাতে আর্যকে নিয়ে গেল। ঘরের ভিতর ঢুকে আর্য দেখলো তার ঘরের সমস্ত জিনিস সুনিপুণভাবে গোছানো। বাড়ির যতগুলো ঘর আছে তার মধ্যে থেকে আর্যর অদৃতের ঘরটাই বেশি পছন্দ হল। অদৃতের ঘরটা এই বাড়ির অন্য ঘরগুলোর তুলনায় একটু অন্যরকম। অদৃতের ঘরে রাখা প্রতিটি জিনিস খুব দামী, ঘরের মধ্যে রয়েছে একটি অ্যাকোরিয়াম, যেখানে রঙ-বেরঙের মাছ খেলা করছে। অদৃতের ঘরের কাঁচের দেওয়াল দিয়ে তাদের বাড়ির সুইমিং পুলের পুরো অংশটি দেখা যায়। ঘরের টেবিলে একটা ছোট কাঁচের ফুলদানিতে রাখা আছে বেগুনি রঙের ফ্রেঞ্চ হাইড্রেনজিয়া। ঘরটি অত্যাধুনিকভাবে সুসজ্জিত। ঘরটির মধ্যে আরও একটি দরজা আছে। আর্য প্রথমে একটু অবাক হলো, তারপর ভাবলো হয়তো বারান্দা রয়েছে দরজাটির ভিতরে। 

আর্য বলল,'এই দরজার ভিতরে কি বারান্দা রয়েছে?'

অদৃত আর্যর কাঁধের কাছে মুখ রেখে বলল,'ওইটা আমার সবথেকে প্রিয় জায়গা। ওটা আমার সিক্রেট।আমি সচরাচর কাউকে এই জায়গার হদিশ পেতে দিই না।'

আর্য বলল,'ওহ্। থাক তবে। '

অদৃত বলল,'থাক মানে? আমি তোমাকে আমার প্রিয় জায়গা দেখাবো না বা আমার সিক্রেট তুমি জানবে না তা আবার হয় নাকি। এসো ভিতরে।'

আর্য বলল,'কিন্তু আমি আপনার সিক্রেট কেন জানবো?'

অদৃত কথাটির উত্তর না দিয়ে আর্যর হাত ধরে দরজার সামনে নিয়ে গেল। দরজা খুলতেই আর্য অবাক হয়ে গেল। পুরো ঘরটাই বইয়ে ভর্তি, ঘরের প্রতিটা তাক বইয়ে পরিপূর্ণ। দেখে মনে হচ্ছে ছোটখাটো একটা গ্রন্থাগার। পুরো ঘরটাই বইয়ের তাকে সাজানো। ঘরের শেষ প্রান্তটি ঠিক কোথায় তা বইয়ের ভিড়ে বোঝা দায়। ঘরের ভিতর ঢুকলে কোথায় দরজা তা বোঝা মুশকিল। ঘরে একটি ছোট টেবিল আর চেয়ার রয়েছে। ঘরটিতে বিভিন্ন ধরনের বই রয়েছে। এত বই আর্য কোনোদিনও দেখেনি।

আর্য বলল,'আমি এতো বই কখনো কোনো বাড়িতে দেখিনি। এখানে কি কি ধরনের বই আছে?'

অদৃত বলল,'কি বই চাই তুমি বলো? এখানে ভূতের গল্প, প্রেমের গল্প, রহস্যের গল্প ইত্যাদি সমস্তকিছু আছে।'

আর্য বলল,'এতো ভালোবাসো গল্পের বই পড়তে?'

আর্য বলল,'আমি যদি আমার কাজের পর আর কিছু ভালোবাসি তবে তা হল গল্পের বই। তুমি জানো আমি গোটা একটা সপ্তাহ একবার এই ঘরে বইয়ের মধ্যে কাটিয়ে ছিলাম।'

আর্য বলল,'এতো ভালোবাসো। আর আমার তো খুব একটা বই পড়তে ভালোই লাগে না। তবে একদম যে পড়ি না তা নয়, মাঝেমধ্যে ইচ্ছা হলে পড়ি।' 

অদৃত জিজ্ঞাসা করল,'উপন্যাস পড়তে ভালো লাগে?'

আর্য বলল,'হ্যাঁ।'

অদৃত জিজ্ঞাসা করল,'কোন উপন্যাস সবথেকে প্রিয়?'

আর্য বলল,'বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের লেখা "চাঁদের পাহাড় " উপন্যাসটা। পড়ে দেখতে পারো ভালো লাগবে।' 

অদৃত বলল,'ঠিক আছে।' 

আর্য বলল,'আমার ইংরেজি উপন্যাস পড়তে খুব একটা ভালো লাগে না ।'

অদৃত বলল,'হুম্ মনে আছে, তুমি বলেছিলে।'

আর্য বলল,'তবে আমি নিকোলাস স্পার্কস-এর "দি নোটবুক" বইটা পড়েছিলাম একদম একটুখানি আপনার ফ্ল্যাটে। কিন্তু সেদিন পড়তে পড়তে চোখটা লেগে এসেছিল, তাই আর পড়া হয়ে ওঠেনি।'

অদৃত বলল,'কি বললে, তুমি পড়েছিলে?'

আর্য বলল,'হ্যাঁ। কেন আমি কি পড়তে পারি না?'

অদৃত বলল,'সেটা নয় আসলে আমি ভাবতে পারছি না তুমি আমার সাজেস্ট করা বই পড়েছো।'

আর্য বলল,'আমি সেভাবে পড়িনি কিন্তু ।'

অদৃত হাসলো। 

আর্য বলল,'কিন্তু এখানে একটাও বাংলা বই নেই কেন? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থাকলেও তা দেখছি ইংরেজীতে লেখা।'

অদৃত বলল,'আসলে আমি ঠিক করে বাংলা পড়তে পারি না, জানি এটা অত্যন্ত লজ্জার একটা বিষয়। ছোট থেকেই এখানে মানুষ। এখানে বাংলা ওইভাবে শেখানো হয় না । তাই হিন্দিতে পড়তে হয়েছিল।'

আর্য বলল,'এটা নিয়ে মন খারাপ কোরো না।এটা তো তোমার হাতে ছিল না ।

আচ্ছা এমন কোনো গল্পের বই আছে যেটা তোমার পড়ার খুব ইচ্ছা কিন্তু এখনো পড়ে উঠতে পারোনি?'

অদৃত বলল,'হ্যাঁ আছে। জেমস প্যাটারসানের লেখা "হোপ টু ডাই " উপন্যাসটা। ওটা এখনো কিনে হয়ে ওঠা হয়নি। বইটা কিনে পড়ার খুব ইচ্ছা আছে।'




আর্য অদৃতের বইগুলো এদিক ওদিক করে দেখছে তখন অদৃত জিজ্ঞাসা করল,'আর্য তোমার আঁকা ছাড়া আর কি করতে ভালো লাগে?'

আর্য বলল,'মোবাইল গেম খেলতে বেশ ভালো লাগে ।'

অদৃত বলল,'তাই। আমারও খুব একটা খারাপ লাগে না।'



















রাতে খাওয়া দাওয়ার পর আর্য ঘরে এলো শুতে। আজ অনেকদিন পর সে একা শুচ্ছে। কিন্তু আর্যর শুয়ে কিছুতেই ঘুম এলো না। একটা সিঙ্গেল বেডকে আজ তার ডবল বেডের সমান মনে হচ্ছে। এপাশ ওপাশ করেও আর্যর কিছুতেই ঘুম এলো না। 

সে বলল,'অদৃত তুমি আমার একা ঘুমানোর অভ্যাসটা একদম নষ্ট করে দিয়েছো। এতবড় ঘরে বড্ড গুমোট লাগছে। এখন কটা বাজে? একবার অদৃতের ঘরে গিয়ে দেখবো ও কি করছে? না সেটা ঠিক হবে না।' 

আর্য ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো তখন বাজে রাত একটা।

আর্য বলল,'এত রাতে যাওয়াটা কি ঠিক হবে? যদি ঘুমিয়ে পড়ে? ধুর্, আমার আর ভালো লাগছে না।' আর্য ঘরের মধ্যে কয়েকবার পাইচারী করল, তারপর বলল,' না, একবার গিয়েই দেখি। যদি দরজা ধাক্কানোর পর দরজা না খোলে তবে চলে আসবো।'

















অন্যদিকে অদৃত তখন ল্যাপটপে নিজের কাজ করতে ব্যস্ত। হঠাৎই অদৃতের ফোনে পত্রলেখার ফোন এলো। অদৃত মুখে বিড়বিড় করে বলল,'ইস্......একদম ভুলে গিয়েছিলাম পত্রলেখাকে ফোন করার কথা। মা বলেছিল ফোন করতে।'

ফোন ধরতেই ওপরপ্রান্ত থেকে মিষ্টি গলার স্বরে পত্রলেখা বলল,'হ্যালো!'

অদৃত বলল,'হ্যালো! কেমন আছো তোমরা? তোমার দিদা কেমন আছেন?'

পত্রলেখা বলল,'আমরা ভালো আছি। কিন্তু দিদার শরীরটা একটু খারাপ হয়েছে, যার জন্য আমরা গুজরাটে এসেছি। খুব ইচ্ছা ছিল তুমি যেদিন বাড়িতে আসবে , আমি উপস্থিত থাকবো। কিন্তু...'

অদৃত বলল,'কোনো দরকার নেই । আমার বাড়িতে তো মা-বাবা আছেন। তুমি দিদার খেয়াল রেখো আর আঙ্কেল এবং আন্টিরও খেয়াল রেখো।'

পত্রলেখা বলল,'আমি খুব তাড়াতাড়ি ফিরবো। চিন্তা কোরো না ।' 

এরই মধ্যে অদৃত দরজায় ঠক্ঠক্ করার শব্দ পেলো। 

সে বলল,'পত্রলেখা আমি এখন ফোনটা রাখছি। অনেকটা রাত হয়েছে এবার শুয়ে পড়ো।' 

পত্রলেখা কিছু বলতে যাচ্ছিলো, অদৃত তা খেয়াল না করেই ফোনটা কেটে দিল।

অদৃত তাড়াতাড়ি গিয়ে দরজা খুলল, দরজা খুলে দেখলো আর্য বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।








To be continued................


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance