অন্যরকম ভালোবাসা
অন্যরকম ভালোবাসা
অন্যরকম ভালোবাসা
পর্ব - ২৮
পরদিন সকালে আর্য গার্ডেনে বসানো ফুলগাছগুলিতে জল দিচ্ছিল, এমন সময় শ্রেয়সী গার্ডেনে এলো।
শ্রেয়সী এসে আর্যকে জিজ্ঞাসা করল,' কি করছো আর্য?'
আর্য বলল , 'এই কালকে বসানো ফুল গাছগুলোতে একটু জল দিচ্ছিলাম।'
শ্রেয়সী বলল,' তাই!
তোমার ফুল গাছ বসাতে এবং তার পরিচর্যা করতে ভালো লাগে?'
আর্য বলল,' হ্যাঁ, মোটামুটি ।'
শ্রেয়সী বলল,' আমার ফুল গাছ বসাতে খুব ভালো লাগে।বলতে পারো এটা আমার একটা শখ ।
তবে আমার খুব ইচ্ছা আছে একটা ফ্রেঞ্চ হাইড্রেঞ্জিয়া গাছ বসানোর।'
আর্য বলল,' তাই!'
শ্রেয়সী বলল,' হ্যাঁ,
তোমার কোন ফুল সব থেকে বেশি পছন্দের?'
আর্য বলল ,'আমার..... মমমম্ আমার গোলাপ ফুল খুব ভালো লাগে। আসলে আমার গন্ধযুক্ত ফুল খুব একটা ভালো লাগে না।'
আর্য বলল,' আন্টি তোমার কোন ফুল ভালো লাগে?'
শ্রেয়সী বলল,'আমার জুঁইফুল খুব পছন্দের। কিন্তু অদৃতও তোমার মতন গন্ধযুক্ত ফুল পছন্দ করেনা। তার নাকি জোরালো গন্ধযুক্ত ফুলে দমের কষ্ট হয়। তবে ওর ফ্রেঞ্চ হাইড্রেঞ্জিয়া খুব পছন্দের। অবশ্য ওই ফুলটা পত্রলেখারও খুব পছন্দের। ওর পছন্দের সাথে পত্রলেখার পছন্দের খুব মিল। '
আর্য বলল,'তাই!'
শ্রেয়সী বলল,'হ্যাঁ,পত্রলেখাও ফ্রেঞ্চ হাইড্রেঞ্জিয়া খুব পছন্দ করে । তাই ইচ্ছা আছে ফ্রেঞ্চ হাইড্রেঞ্জিয়ার একটা গাছ বসানোর।'
আর্য বলল,' ও আচ্ছা।
আন্টি বলছি পত্রলেখারা দিল্লীতেই থাকে?'
শ্রেয়সী বলল,' হ্যাঁ। এখানেই থাকে। আসলে ওরা কিছুদিনের জন্য গুজরাটে গিয়েছিল, কারণ পত্রলেখার দিদা হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।' আর্য বলল,' কি হয়েছিল?'
শ্রেয়সী বলল ,'বার্ধক্য জনিত সমস্যা আর কি।'
আর্য কিছুক্ষণ পর গাছে জল দিতে দিতে বলল,' পত্রলেখা খুব সুন্দরী।'
শ্রেয়সী বলল,' হ্যাঁ, বলিউডের অভিনেত্রী বলে কথা। বলিউডে যথেষ্ট নামডাক আছে ।'
আর্য বলল,'পত্রলেখা অদৃতের অনেকদিনের বন্ধু?'
শ্রেয়সী বলল,'আসলে ছোট থেকে পত্রলেখা আর অদৃত একপ্রকার একসাথেই বড় হয়েছে । পত্রলেখার বাবা আমার হাজবেন্ডের বন্ধু সেই সূত্রেই আমাদের আলাপ পত্রলেখার পরিবারের সাথে। পত্রলেখার বাবাও একজন বড় ব্যবসায়ী।'
তারা দুজনে কথা বলতে বলতে গার্ডেনে রাখা চেয়ারে গিয়ে বসলো।
শ্রেয়সী বলল,'এই শহরে ওদের সেইভাবে আপন বলতে খুব একটা কেউ নেই। আমাদের সাথে পরিচয় হওয়ার পর আমরাই একে অপরের পরিবারের আত্মীয়, বন্ধু সবকিছু হয়ে উঠেছি । তারপর থেকেই আমরা একে অন্যের বিপদে আনন্দে পাশে থাকি।আমাদের পরিবারের সাথে ওদের পরিবারের সম্পর্কের রসায়নটা এরকমই।
আর পত্রলেখা আমাদের আরেকটা মেয়ে। এতো শিক্ষিত, বুদ্ধিমতি মেয়ে আমি আর দুটো দেখিনি, কি সুন্দরভাবে সকলকে মূহূর্তের মধ্যে আপন করে নেয়।'
সমস্ত কথাগুলো শোনার পর আর্যর মনের মধ্যে একটা অদ্ভুত চাপা কষ্ট হতে লাগলো।
শ্রেয়সী তাকে জিজ্ঞাসা করল ,'আচ্ছা আর্য তোমার পত্রলেখা কে কেমন লেগেছে ?'
আর্য বলল,'হ্যাঁ, ভালো লেগেছে। খুব ভালো মেয়ে সত্যিই আজকাল এরকম মিশুকে প্রকৃতির মানুষ খুব কম দেখা যায়।'
শ্রেয়সী বলল,' সেই ছোটবেলা থেকে অদৃতের সাথে ওর বন্ধুত্ব । পরবর্তীকালে ওকে অদৃত কিছু কিছু ব্যবসার কাজও শিখিয়ে দিয়েছে। ওরা দু'জনে একসাথে মডেলিংও করে। ওদের মধ্যে বোঝাপড়াটা খুব সুন্দর।
জানো, পত্রলেখা সবার কাছে খুব ম্যাচিওর , কিন্তু একমাত্র অদৃতের কাছে ওর সকল ছেলেমানুষি প্রকাশ পায়। ওর সমস্ত খুনসুটি, ঝগড়া, আবদার সমস্তকিছু অদৃতের কাছে।'
ইতিমধ্যেই অদৃত পত্রলেখাকে নিয়ে গার্ডেনে এলো। পত্রলেখা বলল,'আন্টি....'
শ্রেয়সী বলল,'আরে পত্রলেখা যে এত সকাল সকাল কি ব্যাপার। তোরা কোথাও বেড়াচ্ছিস নাকি?
অদৃত তো আমাকে কিছু বলেনি।'
পত্রলেখা বলল ,'না , আসলে আমাদের কোম্পানির একটা কাজ আছে বলতে পারো। তোমার ছেলের কোম্পানির মডেল হতে হবে আমাকে। '
শ্রেয়সী বলল,' আমার ছেলের কোম্পানিতে মডেলিং এর কাজ ?'
অদৃত বলল,' হ্যাঁ মা । আসলে আমাদের কোম্পানির নেক্সট অ্যাডভার্টাইজমেন্টের জন্য আমরা পত্রলেখাকেই আমাদের কোম্পানির মডেল হিসেবে নির্বাচন করেছি। সেইজন্যই ওকে ডেকেছিলাম।'
অদৃত আর্যর দিকে তাকিয়ে বলল,' একি তুমি এখনো রেডি হওনি ?'
আর্য বলল,' আমি মানে আসলে.. আমি কালকের বসানো গাছগুলোতে একটু জল দিচ্ছিলাম।'
অদৃত সামান্য বিরক্ত হয়ে বলল,' বাড়িতে গাছে জল দেওয়ার লোকের অভাব নেই আর্য। তুমি যাও গিয়ে তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে এসো । নয়তো আমাদের দেরি হয়ে যাবে। '
শ্রেয়সী বলল,'আরে ওকে বকাবকি করছিস কেন?'
অদৃত বলল,'মা আমি ওকে বকছি না আমি শুধু ওকে বলছি ওর এই কাজগুলো না করলেও চলবে, বাড়িতে গাছে জল দেওয়ার লোকের তো অভাব নেই।'
আর্য আর কথা না বাড়িয়ে অদৃতের কথা মতোন রেডি হয়ে নীচে নামলো।
শ্রেয়সী পত্রলেখাকে জিজ্ঞাসা করল,' সকালের ব্রেকফাস্ট হয়েছে পত্রলেখা?'
পত্রলেখা অদৃতের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলল,' মমমমমম্ না । আসলে এতো সকাল সকাল আমি খেতে পারিনা।'
শ্রেয়সী বলল,'এখানেই ব্রেকফাস্ট করে যা। আয় বোস।'
অদৃত গম্ভীর গলায় বলে উঠলো,'তুমি আবার সেই শুরু করেছো , সকাল সকাল কিছু না খেয়েই বেরিয়ে যাওয়া। কতবার বলেছি সকালবেলায় খেয়ে বেরোবে যেখানে যত দরকারিই কাজ থাকুক না কেন। খাওয়া দাওয়ায় অনিয়ম করলে শরীরের ওপর প্রভাব পড়ে ।'
আর্য সমস্ত ব্যাপারটা লক্ষ্য করলো দূরে দাঁড়িয়ে। আজও পত্রলেখা অদৃতের পাশের চেয়ারে বসলো। পত্রলেখার পাশের চেয়ারে বসলো আর্য।
ব্রেকফাস্ট হয়ে গেলে অদৃত বলল,'মা আমরা আসছি।'
শ্রেয়সী বলল,'আর্যও যাবে তোদের সাথে?'
অদৃত বলল,'হ্যাঁ। আমাদের যাওয়ার পথে আর্ট গ্যালারি পড়বে। তাই যাওয়ার পথে আমরা সেখানে আর্যকে নামিয়ে দিয়ে যাবো।
আসছি তাহলে।'
শ্রেয়সী বলল,' ঠিক আছে। সাবধানে যাস।'
গাড়িতে ওঠার সময় অদৃত পত্রলেখার জন্য গাড়ির সামনের গেটটি খুলে দিলো, পত্রলেখা গাড়িতে উঠে বসলো। আর্য অভিমানী চোখে অদৃতের দিকে তাকালে অদৃত তার হাত ধরে বলল,'আর্য পত্রলেখা এখনো আমাদের সম্পর্কের বিষয়ে কিছু জানে না। আমারা যদি ওকে পিছনের সিটে বসিয়ে পাশাপাশি বসি সেটায় ও প্রশ্ন করতে পারে আর সেটা কোথাও গিয়ে ওর জন্য অপমানজনক হবে।'
আর্য বলল,'অপমানজক কেন হতে যাবে?'
এরই মধ্যে পত্রলেখা গাড়ির জানালার কাঁচ নামিয়ে বলল,' কিগো আর কতক্ষণ? যেতে হবে তো ওখানে তাড়াতাড়ি না পৌঁছাতে পারলে মিঃ. ত্রিপাঠী খুব চেঁচামেচি করবেন।'
অদৃত বলল,'হুম্ আসছি।
আর্য গাড়িতে ওঠো।'
অদৃত আর্যর জন্য গাড়ির পিছনের গেট খুলে দিলো। আর্য গাড়িতে উঠে বসলো।
পত্রলেখা অদৃতকে বলল,'আমরা এখন তোমার অফিসে যাবো তো?'
অদৃত বলল,' না, তার আগে আর্যকে ত্রিদিবের আর্ট গ্যালারিতে ছাড়তে হবে। '
পত্রলেখা বলল,'ত্রিদিব আর্ট গ্যালারি খুলেছে নাকি?'
অদৃত বলল,'হ্যাঁ।'
পত্রলেখা বলল,'ওর মেয়েটা কিন্তু খুব মিষ্টি। মনে আছে তোমার , আমরা যখন সেই একবার ঘুরতে গিয়েছিলাম সবাই বন্ধুরা মিলে, তখন সেখানে ত্রিদিব একমনে ছবি এঁকে যাচ্ছিলো কারোর সাথে গল্প করছিল না।'
তখন অদৃত বললো ,'হ্যাঁ, মনে আছে । শেষে রাইমা রেগে গিয়ে ওর খাতা, পেন্সিল ওর হাত থেকে কেড়ে নিয়েছিলো। আর ও কি সাংঘাতিক রেগে গিয়েছিলো।'
পথলেখা বলল ,'আর সেই মুহূর্তে আমরা ওকে না জানিয়েই ছবি তুলেছিলাম।
এখনো আমার ফোনে সেই ঘুরতে যাওয়ার ফটো গুলো আছে।'
অদৃত বলল,' এখনো রয়েছে ?'
পত্রলেখা বলল,' হ্যাঁ, এই দ্যাখো।'
আর্য এই সমস্তকিছু গাড়ীর পিছনের সিটে বসে লক্ষ্য করল। তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলতে থাকলো, আর্যর উপস্থিতি একপ্রকার যেন ভুলেই গেছে। আর্যর কোথাও গিয়ে পত্রলেখার ওপর খুব রাগ হতে লাগলো। কিছুক্ষণ ফোন নিয়ে ঘাটাঘাটি করার পর পত্রলেখা অদৃতের গায়ে হাত দিয়ে বলল,' এই দ্যাখো এই সেই ফটোটা বলেছিলাম আমার কাছে এখনও রয়েছে।'
অদৃত বলল,' তুমি এখনও যত্ন করে রেখে দিয়েছো।' পত্রলেখা আবেগঘন চোখে অদৃতের দিকে তাকিয়ে বলল,' এগুলোই আমার জীবনে কাটানো শ্রেষ্ঠ স্মৃতি ।
এখন তো আর আমাদের সময়ই হয়না ঘুরতে যাওয়ার । এরমধ্যে চলোনা একদিন সবাই মিলে কোথাও একটা ঘুরতে যাই।'
অদৃত বলল,' গেলে মন্দ হয় না কিন্তু ।'
অদৃত আর্যকে বলল,'কি বল আর্য?'
আর্য গম্ভীর হয়ে বলল ,'হ্যাঁ।'
পত্রলেখা বলল ,'ব্যস্, হয়েই গেল।'
পত্রলেখা আর্যকে জিজ্ঞাসা করল,'আর্য তোমার তো কলেজ শেষ হয়ে গেছে এবার কি করার ইচ্ছা আছে ?'
আর্য বলল,'সেরকম কিছু করার ইচ্ছা নেই, তবে ইচ্ছা আছে নিজে কিছু টাকা রোজগার করার।'
পত্রলেখা বলল,' তা সে তো ভালো কথা ।
কিন্তু কি করবে মানে চাকরি না বিজনেস ?'
আর্য বলল,' ইচ্ছা আছে চিত্রকর হওয়ার।'
পত্রলেখা আর্যর এই কথাটা শুনে একটু বাঁকা হাসি হেসে বলল ,'চিত্রকর ? আজকালকার দিনে চিত্রকরের সেরকম একটা মূল্য নেই।'
আর্য রেগে গিয়ে বলল,' মূল্য দিতে জানতে হয় , তবেই মূল্য দেওয়া যায়।'
আর্যর বলা এই কথাটা পত্রলেখার একটু গায়ে লাগলো ।
অদৃত বলল,' আচ্ছা, থাক্ না এখন এসব কথা।আর্য আর্ট গ্যালারি এসে গেছে।'
অদৃত গাড়ি থেকে নেমে পত্রলেখার জন্য গাড়ির দরজা খুলতে যাবে এমন সময় আর্য গাড়ি থেকে তাড়াতাড়ি করে নেমে গাড়ির দরজাটি সজোরে আওয়াজ করে বন্ধ করে দিয়ে চলে গেল।
অদৃত মনে মনে ভাবলো,'পত্রলেখার কথাটা আর্যর খারাপ লেগেছে বুঝলাম কিন্তু এতটা রেগে গেল কেন?'
ত্রিদিবের স্টুডিওতে অদৃত এবং পত্রলেখা প্রবেশ করতেই ত্রিদিব বলল ,'আরে পত্রলেখা যে, কত বছর পর তোর সাথে দেখা হলো। কেমন আছিস তুই ?'
পত্রলেখা বলল,' ভালো। তুমি কেমন আছো বলো?'
ত্রিদিব বলল ,'ভালো আছি ।'
পত্রলেখা জিজ্ঞাসা করল,' তোমার মেয়ে কেমন আছে? বৌদি ভালো আছেন?'
তখন ত্রিদিব বলল,' হ্যাঁ রে সবাই ভাল আছেন। তোরা কেমন আছিস?'
পত্রলেখা বলল ,'ভালো আছি সকলে।'
ত্রিদিব বলল,'আজকে আমার ভাগ্যটা সত্যি খুব ভালো বলতে হয় দু'জন সেলিব্রিটি একসাথে আজকে আমার আর্ট গ্যালারিতে এসেছে। তো বল কি খাবি? চা-কফি কিছু একটা বলি?'
তখন অদৃত বলল,' আজকে থাক্। আজকে আমাদের হাতে একটুও সময় নেই শুধুমাত্র আমরা আর্যকে ছাড়তে এসেছি। আমরা অন্য একদিন আসবো।'
পত্রলেখা বলল,' হ্যাঁগো আসলে একটা দরকারি কাজে বেরিয়েছি । আমরা অন্য কোনোদিন আসবো। '
ত্রিদিব বলল,' আচ্ছা ঠিক আছে আসিস একদিন। পরেরবার এলে আর্ট গ্যালারিটা ঘুরিয়ে দেখাবো।' পত্রলেখা বলল,' ঠিক আছে।'
অদৃত আর্যর দিকে তাকিয়ে বলল ,'আর্য আমরা আসছি। তোমার হয়ে গেলে আমাকে মিসড কল দেবে আমি তোমাকে নিতে আসবো।'
আর্য ঘাড় নাড়লো।
ছবি আঁকার মাঝে ত্রিদিব এসে আর্যকে বলল,' আর্য এক কাপ চা হবে নাকি?'
আর্য বলল,' হ্যাঁ, হলে ভালোই হয়।'
ত্রিদিব বলল,' আর্য তোমার আঁকা ছবিগুলো কিন্তু খুব ভালো বিক্রি হচ্ছে । ভাবছি একটা এক্সিবিশনের আয়োজন করবো।'
আর্য স্বল্প হাসি হাসলো।
আর্য চায়ের ভাঁড় হাতে নিয়ে বলল,' এর আগে আমি কখনও ভাঁড়ে চা খাইনি।'
কথাটা শুনে একটু অবাক হয়ে ত্রিদিব বলল,' তুমি কলকাতায় থেকে ভাঁড়ে চা খাওনি?'
আর্য মাথা নিচু করে বলল,' না খাওয়া হয়নি।'
চায়ে চুমুক দিয়ে ত্রিদিব বলল,' ভাঁড়ে চা খাওয়ার মজাটাই আলাদা । ভাঁড়ে চা খেতে বেশ লাগে, মাটির একটা সুন্দর গন্ধ অনুভব করা যায়। মাটির ভাঁড় তো আজকালকার দিনে একপ্রকার উঠে গেছে বললেই চলে।'
আর্য চায়ে চুমুক দিয়ে বলল,' হ্যাঁ এখন সবাই কাঁচের কাপ, কাগজের কাপ এসবেই বেশি অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।'
কিছুক্ষণ পর আর্য চায়ে টান দিতে দিতে বলল,' আচ্ছা দাদা তোমার পত্রলেখার সাথে কিভাবে আলাপ?'
ত্রিদিব বলল,' পত্রলেখার সাথে আমার পরিচয় অদৃতের মাধ্যমেই। অদৃতই আমাকে পত্রলেখার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। যখন আমার ওর সাথে পরিচয় হয়েছিল তখন ও সেলিব্রিটি হয়নি তখন পড়াশোনা করতো। অদৃত যদিও সেইসময় মডেলিং করত। এখনও করে এখন তো অনেক বড় সেলিব্রিটি বিজনেস ম্যান এবং মডেল। তবে পত্রলেখা মেয়েটা খুব ভালো, খুব মিশুকে প্রকৃতির মেয়ে। আমার স্ত্রী তো সবসময় বলে পত্রলেখার সাথে যদি কখনো অদৃতের সম্পর্ক হয় তবে খুব ভালোই হবে। আমাদের বন্ধুদের গ্ৰুপেও সকলে বলে ওদের একে অপরের সঙ্গে খুব ভালো মানায়। সত্যিই দু'জনকে কিন্তু বেশ মানায়। কি বল আর্য?'
আর্যর মুখে লেগে থাকা অভিমানী হাসিটাও ফ্যাকাসে হতে থাকলো। একটা খারাপ লাগার ছাপ তার মুখের মধ্যে ধরা পড়ল।
আর্য ঘাড়টা স্বল্প নেড়ে বলল,' হুম্....।'
আর্যর ছবি আঁকা শেষ হয়ে গেলে আর্য অদৃতের ফোনে মিসডকল করল , কিন্তু কোন উত্তর না পেয়ে সে পুনরায় তাকে ফোন করল । দু -তিনবার ফোন করার পরেও অদৃত ফোন ধরলো না । আর্য ভাবলো হয়তো ব্যস্ত আছে তাই আর সে ফোনে চেষ্টা করল না। সে আর্ট গ্যালারিতে অপেক্ষা করল অদৃতের জন্য। কিছুক্ষণ পর ত্রিদিবের আর্ট গ্যালারিতে অদৃতের ড্রাইভার এসে তাকে বলল ,'স্যার আর্য স্যারের কি হয়ে গেছে ?'
ত্রিদিব জিজ্ঞাসা করল ,'আপনি ?'
তখন অদৃতের ড্রাইভারটি বলল,' আমি অদৃত স্যারের ড্রাইভার। আমাকে স্যার আজকে আর্য স্যারকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য পাঠিয়েছেন।'
ত্রিদিব বলল,' আর্য তোমাকে অদৃতের ড্রাইভার নিতে এসেছেন।'
আর্য খুব অবাক হল। এখানে আসার পর সে যখনই কোথাও বেরিয়েছে তখন অদৃতই তার সঙ্গে থেকেছে। আর্ট গ্যালারিতে সে যতবার এসেছে তাকে দিয়ে গেছে এবং নিয়েও গেছে অদৃত । এই প্রথমবার অদৃত তার ড্রাইভারকে পাঠিয়েছে আর্যকে নিয়ে আসার জন্য । না এর আগে তো এরকম কখনো হয়নি, তবে আজ কেন? এই সমস্ত কথাই আর্যর মনে হতে থাকলো। আর্য কথা না বাড়িয়ে ড্রাইভারের সাথে বাড়ি ফিরলো। বাড়ি ফিরে দেখলো অদৃত তখনও বাড়ি ফেরেনি।
শ্রেয়সী বলল,' আর্য তুমি এসে গেছো।'
ইন্দ্রনীল বলল,'তাহলে আর্য এক্কেবারে ফ্রেশ হয়ে তাড়াতাড়ি নীচে নেমে এসো।'
শ্রেয়সী বলল,'হ্যাঁ, সেই-ই বরং ভালো। অনেকটা রাতও হয়ে গেছে । আর্য তুমি ফ্রেশ হয়ে নিয়ে নিচে নেমে এসো তারপর আমরা ডিনার করে নেবো।'
আর্য ভাবলো,'অদৃত কি তবে চলে এসেছে?'
আর্য নীচে নামলো যখন তখন শ্রেয়সী ডিনার টেবিলে ডিনার নিয়ে রেডি।
ইন্দ্রনীল বলল,'আর্য বোসো। অনেক রাত হয়েছে খেয়ে নাও।'
আর্য অদৃতকে না দেখতে পেয়ে শ্রেয়সীকে জিজ্ঞাসা করল,' আন্টি অদৃত খাবে না?'
শ্রেয়সী বলল,'আসলে পত্রলেখা ফোন করেছিল বলল আজকে ওরা দুইজনে বাইরে ডিনার করে আসবে। '
আর্যর মনের মধ্যে যেন জ্বলন্ত আগুনে ঘি পড়ল, কোথাও গিয়ে আর্যর ভীষন রাগ উঠলো অদৃতের ওপর । আর্যর খেতে ইচ্ছা হলো না , সে খাবার টেবিল ছেড়ে উঠতে যাবে এমন সময় শ্রেয়সী বলল,' একি আর্য ! খাবার থালা ছেড়ে উঠে যাচ্ছো কেন ?'
আর্য বলল,' আমার খাবার ঠিক ইচ্ছা নেই আন্টি।' ইন্দ্রনীল বলল,' তা বললে কি করে হবে। সকালে একটুখানি খেয়ে বেরিয়েছো; বিকেলে কি খেয়েছো তারও কিছু ঠিক নেই । এখন একটু অন্তত মুখে কিছু দাও নয়তো যে শরীর খারাপ করবে। ঠিক করে খাওয়া-দাওয়া না করলে কি করে চলবে? আর তোমার বাবা যদি হঠাৎ করে এসে দেখেন তুমি ঠিক মতোন খাওয়া- দাওয়া করছো না, তখন তোমার বাবার তো সন্দেহ হবে আমরা আদৌ তোমার ঠিক করে যত্ন নিয়েছি কিনা?'
আর্য একটু বাঁকা হাসি হেসে পুনরায় চেয়ারে বসলো তার খাওয়ার ইচ্ছা ছিল না তাই সে অল্প খেয়েই উঠে গেল। রাতের খাবার পর সে অদৃতের ঘরে তার জন্য অপেক্ষা করতে থাকলো।
To be continued......................

