STORYMIRROR

Sanchaita Roy Chowdhury

Romance Inspirational Others

4  

Sanchaita Roy Chowdhury

Romance Inspirational Others

অন্যরকম ভালোবাসা

অন্যরকম ভালোবাসা

6 mins
223

অন্যরকম ভালোবাসা 

পর্ব -৩


আর্যর ঘুম ভাঙলো পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে। সে প্রকৃতির এত সুন্দর রূপ এর আগে কখনো দেখেনি। কিন্তু এইসমস্ত কিছুর মধ্যেও সে কিছুতেই একবছর আগে তার সাথে পরিচয় হওয়া অদৃত রায়কে এই অদৃত রায়ের সাথে মেলাতে পারছে না। হঠাৎই ঘরের দরজায় ঠক্ঠক্ করে আওয়াজ হলো, কিন্তু সেইদিকে আর্যর কোনো খেয়াল গেল না। অদৃত আর্যর ঘরে প্রবেশ করে বলল,'আর্য উঠে পড়েছো! তবে তুমি চোখমুখে জল দিয়ে নাও তারপর আমরা জলখাবারটা খেয়ে নেবো।'

আর্য অদৃতের কথা মতো ফ্রেশ হয়ে নিলো। গতরাতে যে লোকটি তাকে খাবার দিতে এসেছিলেন,সেই লোকটিই জলখাবার দিতে এসেছেন । লোকটির হাতের ট্রেতে দুটি টোস্টের থালা এবং দুটি জুসের গ্লাস রয়েছে। অদৃত লোকটির হাতে থাকা ট্রের থেকে থালা এবং গ্লাস দুটি নামিয়ে নিলো। অদৃত বলল,'আর্য,হয়ে গেছে তোমার! এসো এখানে বসে খাওয়া যাক্।'

আর্য এই প্রথম কারুর সাথে একসাথে বসে সকালের জলখাবার খাচ্ছে।তার বাড়িতে তাকে সকালের জলখাবার তার ঘরে দেওয়া হয়,যার ফলস্বরূপ তার অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তাকে একা একা খেতে হয়। অদৃত আর্যর দিকে তাকিয়ে বলল,'আমি জানি আর্য তোমার এখানে থাকতে অসুবিধা হচ্ছে।কালকেই তোমার বাবা আসবেন, চিন্তা কোরো না কেমন!'

আর্য কিছু বলল না।অদৃত বলল,'আর্য আমি আজকে একটা কাজে বেরোবো, তোমার কোনো অসুবিধা হলে সমর আঙ্কেলকে বোলো।'

আর্য বলল,'সমর আঙ্কেল...?'

অদৃত বলল,'যিনি আমাদের খাবার নিয়ে এসেছিলেন, উনিই সমর আঙ্কেল।'

আর্য বলল,'আচ্ছা,ঠিক আছে।'

অদৃত বলল,'আমি তৈরী হতে গেলাম তাহলে।'এই বলে অদৃত ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।

কিছুক্ষণ পর আর্য মনে মনে ভাবলো,'এটাই সুযোগ আমার পালানোর।কিন্তু...সেটা কি ঠিক হবে? কারণ কালকেই তো আমার বাবা আসবেন আ..'

অদৃত আর্যর ঘরের দরজা খুলে বলল,'আমি আসছি আর্য,সাবধানে থেকো আর কোনো অসুবিধা হলে সমর আঙ্কেলকে বোলো।'এই কথা বলে সে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর অদৃতের গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার আওয়াজ পেলো আর্য।

সে বুঝতে পারলো অদৃত রায় বেরিয়ে গেলো। এবার তার সামনে পালানোর রাস্তা পুরো খোলা। সে ভাবলো,'যতই হোক অদৃত রায় আমাকে অপহরণ করলেও আমার সুবিধা অসুবিধার দিকে তো যথেষ্ট নজর দিয়েছেন।আমার ওপর তো কোনো ধরনের অত্যাচারও করেননি।তবে কিছু না বলে চলে যাওয়াটা কি ঠিক হবে? না কোথাও যাবো না।আর তাছাড়া কালকেই তো বাবা আসবেন।' তারপরই তার মনে হতে লাগলো,'কিন্তু যদি অদৃত রায় মিথ্যে বলেন!কালকে যদি উনি বাবাকে না আনেন তখন? আর তাছাড়াও আমার কাছে কি প্রমাণ আছে যে উনি সব সত্যি বলছেন। যে নিজের ব্যবসার জন্য অপহরণ করতে পারে, সেসব করতে পারে। আমি কি কোনোদিনও ভেবেছিলাম যে উনি এরকম করবেন।না,আর দেরি করলে হবে না। এখনি কিছু একটা করতে হবে।' তার মনের মধ্যে যথেষ্ট দ্বন্দ্ব-সংঘাত চলতে থাকলো।সে দেখলো তার ঘরের জানলাটিতে কোন রড নেই,সে জানলার কাছে বাইরের দিকে নীচু হয়ে দেখলো জানালাটি মাটির থেকে বেশ একটু উঁচু ।দেখে মনে হচ্ছে দু'তলার একটি জানলা। সে আর দেরী না করে জানলা দিয়ে নামার চেষ্টা করল। কিন্তু সে পিছলে গিয়ে সজোরে মাটিতে পড়ল। সমর আঙ্কেল তখন নীচের রান্নাঘরে তাদের দুপুরের খাবারের আয়োজন করছিলেন, হঠাৎই তার কানে এলো পড়ে যাওয়ার আওয়াজ। সে তার হাতের সমস্ত কাজ ফেলে রেখে দৌড়ে গেলো ওপরে দু'তলায়, আর্যর ঘরের দিকে। সে দরজা খুলে দেখলো আর্য নেই।সে ঘর থেকে বেরিয়ে আসবে এমন সময় তার চোখ গেলো জানলার দিকে। সে জানালার বাইরে নীচু হয়ে দেখলো আর্য মাটিতে পড়ে আছে। সে সঙ্গে সঙ্গে আর্যকে উদ্ধার করে। আর্যর ডান হাতের তালু ছোড়ে গিয়ে রক্ত পড়ছে। দুই পায়ের হাঁটুতে আঘাত লেগেছে। সমর আঙ্কেল তার পায়ে-হাতে বরফ লাগিয়ে দিচ্ছেন।

সে বলল,'অদৃত বাবাকে খবর দিয়েছি, বলল এক্ষুনি চলে আসছে।'ইতিমধ্যে সমর আঙ্কেল ডাক্তারকে ডেকেছেন,ডাক্তার এসে আর্যকে দেখে গেছেন।

একটু পরেই অদৃত ফিরে আসে।সে এসে দেখলো সমর আঙ্কেল তার হাতে ওষুধ লাগিয়ে দিচ্ছে। অদৃত সমর আঙ্কেলকে বলল,'সমর আঙ্কেল, তুমি যাও আমি দেখছি। ওষুধটা আমাকে দিয়ে যাও।আর হ্যাঁ,ডাক্তার কি বললেন?'

সমর আঙ্কেল বলল,'ডাক্তার বলেছেন ভয়ের কিছু নেই।ওষুধগুলো ঠিক মতোন পড়লেই ঠিক হয়ে যাবে।'

অদৃত বলল,'ডাক্তার কিছু জিজ্ঞাসা করেননি?'

সমর আঙ্কেল বলল,'হ্যাঁ করেছিলো।কিভাবে এরকম হলো? আমি বলেছি জানলায় বসে থাকার সময় আচমকাই পড়ে গেছে ।'

অদৃত বলল,'যাক্।'

তারপর সমর আঙ্কেল অদৃতের কথামতোন তার হাতে থাকা ওষুধটি অদৃতের হাতে দিয়ে চলে যায়।অদৃত দেখলো ,আর্য ভয়ে মাথা নীচু করে বসে আছে। অদৃত বিছানায় বসে আর্যকে বলল,'আর্য , পালাতে যাচ্ছিলে কেন?'

আর্য কি বলবে বুঝতে পারল না। আর্য বলল,'না...না..আ..মি পা...পা....পালাচ্ছিলাম না।'

অদৃত দেখলো,আর্য খুব ঘামছে।অদৃত তার মুখটা আর্যর কানের কাছে নিয়ে গিয়ে বলল,'মিথ্যে কথা কেন বলছো আর্য!'

আর্য বলল,'না,মি..মিথ্যে বলছি না।'

অদৃত বলল,'তাহলে কেন এতো ভয় পাচ্ছো! আমার দিকে তাকাও। আমাকে বিশ্বাস করতে পারছো না তো?আজকে কত বড়ো বিপদ হতে পারতো তার কোনো ধারণা আছে তোমার?'

আর্য ভাবলো,'উনি কি করে বুঝলেন যে আমি ওনাকে বিশ্বাস করতে পারছি না!'

আর্যর হাতের তালুটা অদৃত দেখে বলল,'দ্যাখোতো কতটা কেটে গেছে!'

অদৃত তার হাতে ওষুধ লাগিয়ে দিলো আর বলল,'আজকে ডান হাত দিয়ে কিছু কোরো না। আর হ্যাঁ, দ্বিতীয়বার পালানোর চেষ্টাও কোরোনা তার ফল কিন্তু ভালো হবে না।'

রাতে খাবারের সময় অদৃত তার ঘরে এলো খাবার নিয়ে। অদৃত আর্যকে জিজ্ঞাসা করল,'হাতের ব্যথাটা আগের থেকে একটু কম আছে?'

আর্য বলল,'হ্যাঁ।'

অদৃত বলল,'আর পায়ের চোটটা ঠিক আছে?'

আর্য বলল,'আগের থেকে অনেকটাই কম আছে। কিন্তু আমার খুব খারাপ লাগছে আপনাকে আমার জন্য এত ব্যস্ত হতে হলো।'

অদৃত বলল,'তুমি এখন আমার কাছে আছো,তাই এখন তোমার যা হবে তার সমস্ত দায়িত্বই আমার।'

অদৃত বলল,'আজকে আমি তোমাকে খাইয়ে দেবো। হাতটা ঠিক হয়ে গেলে তুমি নিজে হাতে খেও।' তার মুখের সামনে অদৃত খাবার তুলে ধরলো,কিন্তু আর্য একটু দ্বিধাবোধ করলো।অদৃত বলল,'আর্য,দ্বিধা কোরোনা,খেয়ে নাও। এখানে আমি আর সমর আঙ্কেল ছাড়া কেউ নেই তাইজন্য আমিই..'

অদৃতের কথাটা শেষ হওয়ার আগেই আর্য বলল,'ঠিক আছে,আমার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।'এই কথাটা বলে সে অদৃতের হাতের খাবারটি খেলো। খাওয়ার সময় আর্য জিজ্ঞাসা করল,'আপনি খাবেন না?'

অদৃত বলল,'তোমাকে খাইয়ে দিয়ে আমি খেতে যাবো।'

আর্য বলল,'আমার জন্য আপনার দেরী হয়ে গেলো।'

অদৃত আর্যর দিকে তাকিয়ে বলল,'ঠিক আছে,আমার অভ্যাস আছে।'আর্যকে অদৃত খাইয়ে দেওয়ার পর ওষুধ খাইয়ে ,নীচে নামল খেতে।

রাত্রে ঘুমাতে যাওয়ার সময় অদৃত আর্যর ঘরে এলো। আর্য দেখলো অদৃত হাতে একটা বালিশ নিয়ে তার ঘরে ঢুকছে।আর্য বলল,'আপনি?'

অদৃত বলল,'আজকে আমি তোমার ঘরেই থাকবো।'

আর্য বলল,'কিন্তু আমিতো এখন ঠিক আছি।'

অদৃত বিছানায় উঠে বসে বলল,'কে বলতে পারে, তুমি আবারও পালানোর চেষ্টা করবে না।'

আর্য মনে মনে ভাবলো,'ওহ্..! নিজের দরকারে আমাকে এত চোখে চোখে রাখছে।'অদৃত বলল,'নাও এবার শুয়ে পড়ো।'

আর্য বলল,'আমি ছোট থেকেই একা ঘুমাতে অভ্যস্ত। আমি কারুর সাথে ঘুমাতে পারি না ।'

অদৃত বলল ,'তার মানে? আমি এখান থেকে কোথাও যাবো না। আমি বুঝতে পারছি তুমি কেনো এসব বলছো যাতে তুমি আবারও পালিয়ে যেতে পারো।কিন্তু এবার আর তা হবে না, আমার কাছ থেকে পালানো এত সহজ নয়।আমি সোফায় শুয়ে পড়ছি, তাহলে হবে তো?'

আর্য মনে মনে ভাবলো,'এত সন্দেহ?'

আর্য বলল,'হুম্।'

অদৃত আলো নিভিয়ে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।আর্যর কিছুতেই ঘুম এলোনা, এপাশ ওপাশ করতে থাকলো। অবশেষে সে আর শুয়ে থাকতে না পেরে উঠে বসলো। বেডরুমের নাইট ল্যাম্পের হলুদ আলো অদৃতের মুখের ওপর পড়ে তার রূপের ঔজ্জ্বল্য যেন আরো বাড়িয়ে তুলেছে।আর্য অনেকক্ষণ অদৃতের দিকে তাকিয়ে থাকলো। সে ভাবলো,'আমার জীবনে আমার খুব কম মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে,কিন্তু তার মধ্যে আপনি একদম অন্যরকমের। যা আমার পরিবারের মানুষ এতবছরে দেয়নি, তা আপনি এই একদিনে দিয়েছেন। কত যত্ন করছেন আমার,কত খেয়াল রাখছেন।' এইসব ভাবতে ভাবতে সে আনমনে আলতো হাসি হেসে উঠলো, কোথাও যেন আজকের পর থেকে তার এখানে এসে খুব ভালো লাগছে। তার সাথে একসাথে বসে তার বাড়ির কেউ কোনোদিনও সকালের জলখাবার খায়নি,বরং তাকে তার ঘরে সকালের জলখাবার দিয়ে দেওয়া হয়। তার শরীর খারাপ হলে তার বাড়ির কাজের লোকেরা তার যত্ন করে,কিন্তু তার বাবা কখনোই করেননি। হঠাৎই অদৃত বলল,'ঘুম আসছে না নাকি?'

আর্য বলল,'আপনি ঘুমাননি?'

আর্য দেখলো অদৃত চোখ বুজে শুয়ে আছে।আর্য বলল,'ওহ্!আমি তো ভাবলাম আপনি ঘুমিয়ে পড়েছেন।'

অদৃত বলল,'আমার দিকে কেউ তাকিয়ে থাকলে আমার ঘুম আসে না ।'

আর্য লজ্জা পেয়ে বলল,'সরি।'

অদৃত মুচকি হেসে বলল,'ঠিক আছে, এবার শুয়ে পড়ো।কাল অনেক সকাল সকাল উঠতে হবে নাও ঘুমিয়ে পড়ো আর্য।'আর্য কিছুক্ষণ পর ঘুমিয়ে পড়ল।


চলছে.......


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance