অন্যরকম ভালোবাসা
অন্যরকম ভালোবাসা
অন্যরকম ভালোবাসা
পর্ব- ৩৯
সকালবেলায় ব্রেকফাস্ট টেবিলে ইন্দ্রনীল বলল,'অদৃত আজকে ছুটি আছে তোর?'
অদৃত বলল,'হ্যাঁ।'
ইন্দ্রনীল বলল,'তাহলে ভালোই হল আজকে তোর সাথে কিছু কথা আছে তোদের আশীর্বাদ নিয়ে।'
অদৃত বলল,'আমারও কিছু কথা বলার আছে তোমাকে।'
মাঝখান থেকে শ্রেয়সী বলল,'কি কথা বলার আছে?'
অদৃত কথার কোনো উত্তর করল না।
ইন্দ্রনীল বলল,'সৌনক আর অলিভিয়াকে তো দেখছি না, কোথাও বেরিয়েছে?'
শ্রেয়সী বলল,'হ্যাঁ ঘুরতে বেরিয়েছে আর বলছিলো কিছু কেনাকাটা করার আছে ওর পিসতুতো দিদির বাড়ি যাবে তাইজন্য।'
ইন্দ্রনীল বলল,'আচ্ছা। পিসতুতো দিদি বলতে যে দিদি নয়ডাতে থাকে সে?'
অদৃত বলল,'হ্যাঁ বাবা।'
আর্য আর্ট গ্যালারিতে যাওয়ার জন্য তৈরী হয়ে নীচে ব্রেকফাস্ট টেবিলে খেতে এলো।
ইন্দ্রনীল বলল,'আর্য আর্ট গ্যালারিতে যাচ্ছো?'
আর্য বলল,'হ্যাঁ আঙ্কেল।'
ইন্দ্রনীল বলল,'অদৃত তুই দিতে যাবি তো? তৈরী হয়েনে। '
শ্রেয়সী বলল,'না ওকে ড্রাইভার পৌঁছে দিয়ে আসবে। আর তাছাড়া আর্যতো কোনো বাচ্চা ছেলে নয় যে সবসময় অদৃতকে ওকে পৌঁছে দিয়ে আসতে হবে।'
ইন্দ্রনীল বলল,'আচ্ছা ঠিক আছে । এইভাবে বলার কি আছে তারজন্য?'
শ্রেয়সী চুপ করে রইলো, অদৃত এবং আর্য কথাটা শুনে একে অপরের দিকে তাকালো ।
ইন্দ্রনীল বলল,' আজকে তাহলে সবাই মিলে সন্ধ্যাবেলায় কোথাও ঘুরতে গেলে হয় না ? বা বাইরে কোথাও ডিনার করলে কেমন হয় ?'
শ্রেয়সী বলল,'আজকে অদৃত যেতে পারবে না। কারণ আজকে আমি একটা পাঁচতারা হোটেলে পত্রলেখা এবং অদৃতের ডিনারের ব্যবস্থা করেছি। অদৃত সেখানেই যাবে।'
অদৃত বিরক্ত হয়ে বলল,'না । আমি যাবো না ।'
শ্রেয়সী বলল,'কেন? তোমাদের সামনেই বিয়ে এখন দুইজনে একে অপরের সাথে যত সময় কাটাবে তত তোমরা একে অপরকে আরো বেশি করে জানতে পারবে , চিনতে পারবে তাইজন্যই আমি ঠিক করেছি।'
অদৃত বলল,'আমার আজকে সন্ধ্যাবেলায় আর্যর সাথে বেড়ানোর আছে। '
ইন্দ্রনীল বলল,'শ্রেয়সীতো ভালোই বলেছে তোদের সামনেই বিয়ে। এখন একে অপরকে যত সময় দিবি ততই ভালো। এমনিতেই তোরা দুইজন সবসময় ব্যস্ত থাকিস, সেরকমভাবে কোথাও বেড়ানোর খুব একটা সুযোগ হয় না। আজকে সুযোগ আছে বেরিয়ে পর। আর আর্যর সাথে ঘুরতে যাওয়ার সময়তো অনেক আসবে।'
অদৃত রেগে গিয়ে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,'আমি যাবো না ব্যাস্।
বাবা আমার তোমার সাথে কিছু কথা বলার আছে।'
ইন্দ্রনীল বলল,'কি ব্যাপার বলোতো তোমাদের? সকাল থেকে লক্ষ্য করছি তুমি আর তোমার মা অদ্ভূত ধরনের আচরণ করে চলেছো। কি হয়েছে একটু বলবে?'
আর্য বেড়িয়ে গেলে অদৃত ইন্দ্রনীলকে বলল,'বাবা
আমি এই বিয়েতে রাজি নই ।'
ইন্দ্রনীল অবাক হয়ে বলল,'কেন? হঠাৎ এইরকম কথা কেন বলছিস? কিছু হয়েছে তোর আর পত্রলেখার মধ্যে?'
অদৃত বলল,'না।'
ইন্দ্রনীল বলল,' তাহলে? সমস্তকিছু ঠিক হয়ে গেছে আর তুই এখন এইসব কথা বলছিস? সেইদিনওতো তুই বলতে পারতিস। সেইদিনতো তুই রাজি ছিলিস। তাহলে আজকে এইসব কথা আসছে কোথা থেকে?'
অদৃত বলল,' আমি এই বিয়েটা নিয়ে কখনোই রাজি ছিলাম না।'
ইন্দ্রনীল অবাক দৃষ্টিতে শ্রেয়সীর দিকে তাকালো, শ্রেয়সী অদৃতের দিকে তাকিয়ে বলল,' তোমাকে আগেও বলেছি এখনও বলছি আমরা যা করছি তোমার ভালোর কথা চিন্তা করেই করছি। '
ইন্দ্রনীল বলল,' হ্যাঁ আমরা যা করছি তোমার ভালোর জন্যই করছি। কিন্তু তুমি সেইদিনতো কিছু বলোনি । তুমি যদি রাজি না থাকতে তাহলে তুমি সেইদিনইতো বলতে পারতে। তাহলে আজ কেন বলছো ?'
অদৃত বলল,' বাবা আমি একবারও কি সেইদিনকে হ্যাঁ বলেছিলাম বা আমি কি বলেছিলাম আমি রাজি আছি এই বিয়েতে, একবার মনে করে দ্যাখো ।'
ইন্দ্রনীল ভেবে দেখলো, সত্যিই সেইদিন অদৃত তার কোনো মতামতই জানায়নি।
অদৃত বলল,'আমি সেদিন বলতে পারিনি কারণ সবার সামনে আমি যদি তোমাদের সোজাসুজি না করে দিতাম সেটা অনেক অপমানজনক হতো। তাই আমি সেদিনকে কিছু বলিনি।'
ইন্দ্রনীল জিজ্ঞাসা করল,' তাহলে তুমি কি অন্য কোনো মেয়েকে ভালোবাসো তাহলে বলো।'
অদৃত বলল,'হ্যাঁ আমি একজনকে ভালোবাসি। কিন্তু.....'
কথার মাঝখানেই শ্রেয়সী বলল ,'দ্যাখো তুমি কিন্তু বলেছিলে আমরা যাকে পছন্দ করব তোমার জন্য, তুমি তাকেই বিয়ে করবে তোমার মনে আছে ?' ইন্দ্রনীল একটু বিরক্ত হয়ে বলল ,' আহ্ তুমি কথার মাঝখানে কেন ব্যাঘাত ঘটালে শ্রেয়সী । ও কাউকে ভালোবাসে আগে কথাটা বলতে দাও আমি শুনি।' শ্রেয়সী বলল,' আরে ছাড়ো না। ওতো বলেছিল আমাদের, আমরা যাকে পছন্দ করব ওরজন্য ও তাকেই বিয়ে করবে।'
ইন্দ্রনীল বলল,' আমার কেন মনে হচ্ছে শ্রেয়সী তুমি কিছু চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছো ? আর তাছাড়া জন্মদিনের রাত থেকে দেখছি তুমি কেমন অন্যমনস্ক এবং অস্থির হয়ে আছো। কি হয়েছে তোমার?'
শ্রেয়সী বলল,'আমার কিছু হয়নি।'
ইন্দ্রনীল অদৃতকে জিজ্ঞাসা করল ,'বলো কাকে পছন্দ তোমার? কে সেই মেয়ে ? কেমন দেখতে তাকে ?'
অদৃত বলল,' বাবা আ...আ....আ.....আমি একজন ছেলেকে ভালোবাসি ।'
যে মুহূর্তে সে কথাগুলো বলছিল সেইমূহূর্তে অদৃতের মধ্যে এক অদ্ভূত ভয় এবং চিন্তা কাজ করছিল। কথাটা শুনে ইন্দ্রনীল বলল ,'কি বলছিস?'
অদৃত বলল ,'হ্যাঁ বাবা আমি একটা ছেলেকে ভালোবাসি।'
ইন্দ্রনীল বলল,' আমি কিছু বুঝতে পারছিনা। আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না তুই এইসব কি বলছিস?'
শ্রেয়সী কঠোর গলায় বলে উঠলো,' ও আর্যকে ভালোবাসে।'
ইন্দ্রনীল কিছু না বুঝতে পেরে অদৃতের দিকে তাকিয়ে বলল,'কি? কিন্তু আর্যতো তোর বন্ধু হয়। আর একজন বন্ধুকে তো বন্ধু ভালোবাসবে এটা তো স্বাভাবিক। সব সম্পর্কে ভালোবাসা থাকাটা জরুরি, তেমন বন্ধুত্বেও ভালোবাসা থাকাটা দরকার ।'
শ্রেয়সী বলল,' তুমি ভুল ভাবছো। এটা বন্ধুত্বের ভালোবাসা নয় ওকে জীবনসঙ্গী হিসেবে ভালোবাসে অদৃত । একটা ছেলে যেমন একটা মেয়েকে ভালোবাসে অদৃতও আর্যকে তেমনভাবে ভালোবাসে।'
ইন্দ্রনীল চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,' এইসব কি অদৃত? তুমি এগুলো কি বলছো আমাকে? তুমি আর্যকে ভালোবাসো ? কিন্তু ও তো তোমার বন্ধু হয়।'
অদৃত বলল,' হ্যাঁ মানছি ও আমার বন্ধু হয়।
ও আমার কাছে একজন প্রেমিকের থেকেও অনেক বেশি ভালো একজন বন্ধু এটা যেমন সত্যি তেমন এটাও সত্যি আমি ওকে ভালোবাসি একজন জীবনসঙ্গী হিসেবে।'
ইন্দ্রনীল বলল ,'তুমি....তুমি কি গে? তুমি কখনো ভেবে দেখেছো সবাই সমস্তকিছু জানতে পারলে তোমাকে গে, হোমোসেক্সুয়াল বলে চিহ্নিত করবে।'
অদৃত কথাটার কি উত্তর দেবে তা বুঝতে পারল না। সে শান্তভাবে বলল,' গে? না আমি হয়তো পুরোপুরি গে নই। আমি এর আগে একটা মেয়েকে ভালবাসতাম। তাই আমাকে পুরোপুরি গে বলা যায় না আর যদি এখন কেউ বলেও তাতেও আমার কিছু যায় আসে না । অন্তত গে, লেসবিয়ান, স্ট্রেট এগুলো একটা মানুষের পরিচয় হতে পারে না। হ্যাঁ আমি মানছি মানুষের বিভিন্ন সেক্সুয়ালিটি আছে কিন্তু তার সেক্সুয়ালিটিটা তার ব্যক্তিত্বের পরিচয় হতে পারে না বাবা। আর আমরা তো অর্ধেক সংখ্যক মানুষ জানিই না আমাদের সেক্সুয়ালিটির বিষয়ে। যার ফলে আমরা অনেকে বিয়ের পর সমস্যায় পড়ি, নয় মানাতে পারি না আর না হয় মানতে পারি না। তারপর ডিভোর্স, কোর্ট - কাছারী সমস্তরকম বিষয়ে পড়ি। আর যদি ভবিষ্যতে আমাকে কেউ লোকসমাজে 'গে' বলে পরিচয়ও দেয় বা চিহ্নিত করে তাতে আমার খারাপ লাগবে না । কারণ আমি কোনো অপরাধ করিনি। আর যদি ভালোবাসাটা অপরাধ হয় তাহলে পৃথিবীর সব মানুষই এই অপরাধে অপরাধী। '
ইন্দ্রনীল রেগে গিয়ে টেবিলের ওপর হাত দিয়ে সজোরে মেরে বলল ,'আমি অতশত জানিনা বিয়ে যদি তোমায় কাউকে করতেই হয়, ভালো যদি তোমায় কাউকে বাসতেই হয় তাহলে তুমি পত্রলেখাকেই ভালবাসবে, পত্রলেখার সাথেই তোমার বিয়ে হবে ব্যাস্ এটাই ফাইনাল।'
অদৃত বলল,' না বাবা তা হয় না । কারণ আমি কাউকে ঠকাতে পারবো না। জোর করে আর যাইহোক ভালোবাসাটা হয় না। আর একজনকে ভালোবেসে অন্য একজনকে বিয়ে করাটা অন্যায়, অপরাধ। আর এই বিয়েটা করলে আমি একসাথে অনেকগুলো মানুষকে ঠকিয়ে ফেলবো বাবা। প্রথমত ঠকাবো পত্রলেখাকে এবং তারপর আর্যকে আর তার সাথে সাথে পত্রলেখার পরিবারকে। আমি পারবো না আমি সব সত্যিটা পত্রলেখাকে বলবো ।'
ইন্দ্রনীল রেগে গিয়ে বলল ,'তুমি কি চাও? তুমি কি চাও আমাদের সমাজে সম্মানহানি হোক? তুমি কি চাও আমাকে একটু বলবে অদৃত?'
অদৃত বলল,' আমি আর্যকে ভালবাসি আমি আর্যর সাথেই সারাটা জীবন থাকতে চাই ,আমি ওকে বিয়ে করতে চাই। আর আমার মনে হয় না এটায় কারোর কোনো সম্মানহানি হবে।'
ইন্দ্রনীল এবার শান্ত হয়ে বলল,' দ্যাখ বাবা তুই আমাদের একমাত্র সন্তান । তুই ছাড়া আমাদের আর কেউ নেই। অদৃত তোর যদি পত্রলেখাকে পছন্দ না হয় তুই যদি বলিস এই বিয়েটা করতে চাস না ঠিক আছে। আমরা অন্য মেয়ে দেখবো। পত্রলেখার থেকেও অনেক ভালো মেয়ের খোঁজ আমরা নিয়ে আসবো তোর জন্য। দেখবি সে তোর উপযুক্ত হবে তোকে যে খুব ভালবাসবে এমন কাউকে নিয়ে আসবো। কিন্তু তুই প্লিজ আর্যকে ভুলে যা। আর্য একটা ছেলে ,এই সম্পর্কের কোন ভবিষ্যৎ নেই।' অদৃত বলল,' বাবা একটা ছেলে কি আরেকটা ছেলেকে ভালবাসতে পারে না ? শুধু কি একটা ছেলে একটা মেয়েকেই ভালবাসতে পারে ? বা একটা মেয়ে কি একটা ছেলেকেই ভালবাসতে পারে? বাবা আমরা কেন এইভাবে ভাবি বলোতো, আমরা তো অন্যভাবেও ভাবতে পারি বলো।'
ইন্দ্রনীল বলল,' না ভাবতে পারিনা। কারণ একটা ছেলে আর একটা মেয়ের সম্পর্কই স্বাভাবিক, এই সম্পর্ককেই সমাজ স্বাভাবিক চোখে দেখে। তোমার যদি অন্য কোনো মেয়েকে পছন্দ না হয়ে থাকে তাহলে তোমার বিয়ে পত্রলেখার সাথে ফাইনাল। এটাই আমার শেষ কথা। '
অদৃত বলল,'বাবা আমি আর্যকে ভালোবাসি। তোমরা ছোট থেকে আমাকে যা বলেছো আমি তাই-ই করেছি। আমার ছোট থেকে ইচ্ছা ছিল আর্টস নিয়ে পড়ার কিন্তু তোমরা বলেছিলে সাইন্স নিয়ে পড়তে কারণ তাতে আমার ভালো হবে আমি তাই করেছি। আমি সারা জীবন চেয়েছিলাম উকিল হতে। কিন্তু তোমরা বলেছিলে, আমাদের ব্যবসার হাল ধরতে, তাই-ই করেছি। কিন্তু তোমরা কখনো আমার চাওয়া পাওয়ার কথা ভাবোনি। তোমরা ভাবোনি আমি ঠিক কি চাই? আমি এগুলো পেয়ে আদৌ খুশি কিনা?'
অদৃত বলল,'আর আজ যখন আমার বিয়ের কথা হচ্ছে তখনও একই ঘটনা ঘটছে। জীবনের সবথেকে বড় সিদ্ধান্তটাও আমার কাঁধে জোর করে চাপিয়ে দিচ্ছো তোমরা।'
ইন্দ্রনীল বলল,'আমরা চাপিয়ে দিতাম না যদি না তুমি এইসব অস্বাভাবিক কথা শোনাতে আমাদের। আর না বলতে মিথ্যে কথা । তুমি যদি অন্য কাউকে চাইতে আমরা অবশ্যই রাজি হতাম কিন্তু এক্ষেত্রে নয়।'
অদৃত বলল,'আমি মানছি আমি মিথ্যে কথা বলেছি,কিন্তু আমি পরে তোমাদের সবটা বলতাম।আর বাবা এটায় অস্বাভাবিকের কি হয়েছে?'
ইন্দ্রনীল বলল,'তোমার সেই কথা বোঝার বোধটাই তৈরী হয়নি তাই তুমি এই কথাটা আমাকে জিজ্ঞাসা করছো। শোনো যদি দরকার পরে আমি তোমার মানসিক চিকিৎসা করাবো তাও ভালো কিন্তু তোমার সাথে আর্যর সম্পর্ক কখনোই আমরা মেনে নেব না। তুমি খুব ভুল করছো।'
শ্রেয়সী বলল ,' দ্যাখ অদৃত একবার বিয়েটা হয়ে গেলে দেখিস সমস্তকিছু ঠিক হয়ে গেছে। এখন তুই মানা করিস না আর । এটা আমার মনে হচ্ছে তোর মতিভ্রম,এ ছাড়া আর কিছু নয়। এটা ভালোবাসা নয় অদৃত । তুই আমার সন্তান হস আমি জানি তুই এটা করতে পারিস না।'
অদৃত বলল,' মা আজকাল তোমাকে আমি চিনতে পারছিনা। ও একটা ছেলে বলেই তুমি আজকে এটা বলতে পারছো যে এটা ভালোবাসা নয়, আর আজ যদি আর্য মেয়ে হত তাহলে তুমি এই কথাটা বলতে পারতে তো?'
শ্রেয়সী কিছু মুহূর্ত চুপ করে থাকার পর বলল,' আজকাল আমাকে তুই চিনতে পারছিস না, নাকি আমি তোকে চিনতে পারছি না । কোনটা?'
অদৃত বলল,' মানে?'
শ্রেয়সী ইন্দ্রনীল - এর দিকে তাকিয়ে বলল ,'তুমি সেইদিন রাত্তিরে ঠিকই বলেছিলে জানো আমাদের অদৃত পাল্টে গিয়েছে আজকাল কথা বলতে গিয়ে বড্ড তোতলায়। যেন মনে হয় কোন মিথ্যা কথা বলছে। কোনো সত্যি আড়াল করার চেষ্টা করছে। তুমি ঠিক ছিলে জানো । '
অদৃত তাদের দুজনের দিকে তাকালো।
ইন্দ্রনীল বলল,' কি হয়েছে ?'
শ্রেয়সী বলল,' আর্য কার ছেলে জানো?'
প্রশ্নটা কানে যেতেই অদৃতের গায়ের রক্ত যেন হিম হয়ে গেল।
ইন্দ্রনীল জিজ্ঞাসা করল ,'কার?'
শ্রেয়সী বলল,' তমাল সেনের ছেলে । এখন যার সাথে আমাদের সবথেকে বড় শত্রুতা রয়েছে ।' ইন্দ্রনীল বলল,' অদৃত তুই আমাদের মিথ্যে বলেছিলিস ।'
অদৃত কি বলবে তা ঠিক করে উঠতে পারল না।
শ্রেয়সী বলল,' আমি কথাটা যখন শুনেছিলাম সৌনকের কাছ থেকে এক মুহূর্তের জন্য বিশ্বাস করতে পারিনি । ভেবেছিলাম আমাদের ছেলে আমাদের কখনো মিথ্যা কথা বলতেই পারে না। যে নিজের প্রাণের থেকেও তার মা-বাবাকে বেশি ভালোবাসে, সে কখনো এমন কাজ করতে পারে না। কিন্তু আমাদের ভাবনাকে ভুল প্রমাণ করে দিলো অদৃত । আজ একটা বাইরের ছেলের জন্য ও আমাদেরকে মিথ্যা কথা বলল, আমাদেরকে ঠকালো ।'
কথাগুলো অদৃতের কানে বিষের মতোন ঠেকলো।ইন্দ্রনীল বলল,'সত্যি তুই বদলে গেছিস রে । সত্যিই তুই বদলে গেছিস। আমি যে তোকে আর চিন্তে পারছি না । একি সেই অদৃত যে সবার আগে নিজের মা-বাবার কথা ভাবতো?'
কথাগুলো বলতে বলতে ইন্দ্রনীলের চোখ ছল ছল করে উঠলো। ইন্দ্রনীল রেগে ঘরে চলে গেল।
শ্রেয়সী বলল,'আরেকবার ভেবে দেখ তুই।'
শ্রেয়সী ঘরে ঢুকলে ইন্দ্রনীল বলল,'আমাকে একটু একা থাকতে দাও আমর মাথাটা কাজ করছে না।'
শ্রেয়সী বলল,'তুমি এরকম কোরোনা।'
ইন্দ্রনীল বলল,'প্লিজ আমাকে একটু একা থাকতে দাও। আর যাওয়ার সময় দরজাটা ভেজিয়ে যেও।'
শ্রেয়সী দরজা ভেজিয়ে রেখে চলে গেল।
ইন্দ্রনীল বিছানায় বসে খুব ঘামতে লাগলো, অদৃতের কথাগুলো শোনার পর তার মনের মধ্যে যেমন দুশ্চিন্তা হচ্ছে ঠিক তেমন একটা আকস্মিক ভয় তাকে ক্রমশ গ্রাস করছে। শরীরের মধ্যেও বেশ অস্বস্তি অনুভব করল সে।
সে ভাবলো ,'অদৃত একটা ছেলেকে ভালোবাসে? ছিঃ!ছিঃ!ছিঃ! আমি মানুষ করতে পারিনি আমার ছেলেকে। আজকে আমার অদৃত আমার মুখের ওপর কথা বলল। আচ্ছা সবাই যদি জানতে পারে লোকে কি বলবে? পাড়া - পরশী, আত্মীয় - স্বজনের কাছে মুখ দেখাবো কি করে আমরা ? সবাই ধিক্কার করবে।'
এইসব কথা ভাবতে ভাবতে সে অনুভব করল তার বুকের বাম পাশটা ক্রমশ ভার হতে শুরু করেছে, একটা চিনচিনে ব্যাথা ক্রমাগত তাকে অস্বস্তি দিচ্ছে।
শ্রেয়সী গাছে জল দিয়ে ড্রয়িং রুমে এসে দেখলো তখন ঘড়িতে বাজে দুপুর দুটো। সে জোরে চেঁচিয়ে বলল,' নিরঞ্জন খাবারগুলো টেবিলে নিয়ে এসো। আমি ইন্দ্রনীল আর অদৃতকে ডাকছি।'
শ্রেয়সী ইন্দ্রনীলকে ঘরে ডাকতে গিয়ে দেখলো, ইন্দ্রনীল জ্ঞান হারিয়ে অচৈতন্য অবস্থায় বিছানার ওপর পড়ে রয়েছে।
To be continued.........................

