STORYMIRROR

Sanchaita Roy Chowdhury

Romance Inspirational Others

4  

Sanchaita Roy Chowdhury

Romance Inspirational Others

অন্যরকম ভালোবাসা

অন্যরকম ভালোবাসা

7 mins
259

অন্যরকম ভালোবাসা


পর্ব-১৮


আর্য বলল,'আপনি মিথ্যে কথা বললেন কেন?'

অদৃত আর্যর দিকে তাকিয়ে বলল,'আমি মিথ্যে কথা বলিনি। আমার সত্যিই তোমার সাহায্য লাগবে। আমার হাতে বেশি সময় নেই, বেশকিছু গোছগাছ করা এখনও বাকি আছে, আমাদের কালকেই রওনা হতে হবে।'

আর্য অবাক হয়ে ভুরু কুঁচকে বলল,'আমাদের? আমাদের মানে? আমি আপনার কথা ঠিক বুঝতে পারলাম না।'



অদৃত বলল,'কালকে তুমি আমার সাথে যাবে।'

আর্য বলল,'কিন্তু কেন?'

অদৃত বলল,'বলেছিলাম না তোমার কোথাও যাওয়া হবে না। এখন নাও তোমার সমস্ত দরকারি জিনিসপত্র গুছিয়ে নাও। কালকে আমাদের সকাল এগারোটা বেজে পনেরো মিনিটে ফ্লাইট। যদি কোনোকিছুতে সাহায্য লাগে আমাকে জানিও।'

আর্য বলল,'কিন্তু আপনি তো আমাকে আগে কিছু জানাননি?'

অদৃত ঠান্ডা মাথায় বলল,'হ্যাঁ , জানাইনি কারণ তখন আমি ঠিক করিনি যে তোমাকে আমার সাথে নিয়ে যাবো।'

আর্য বলল,'তাহলে হঠাৎ করে এখন কেন? এমনিতে আমিও তো জানতাম আপনি একাই যাবেন।'

অদৃত বলল,'আমি অনেক ভেবে দেখলাম যে, তুমি এখন আমার দায়িত্বে আছো, আমি এখানে তোমাকে রেখে চলে যাওয়ার পর তোমার যদি কোনো বিপদ হয়, তখন কিন্তু তোমার বাবা আমাকে ছেড়ে দেবেন না।'

আর্য বলল,'আমার কিছু হলে আমার বাবার কিছু যায় আসবে না। তাই আপনি নিশ্চিন্তে যেতে পারেন।'

অদৃত বলল,'হতেই পারে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করতেই পারেন।আমি কোনো ঝুঁকি নিতে চাইনা।'

আর্য ভাবলো,'ওহ্! আপনি আমাকে এই জন্য নিয়ে যাচ্ছেন তাহলে। আর আমি ভাবলাম হয়তো আপনার আমার জন্য মন খারাপ করছে বলে নিয়ে যাচ্ছেন।' 

আর্য বলল,'আপনি অকারণ ভাবছেন। আমি কিছুতেই আপনার সাথে যাবো না, আমি রাজদীপদের বাড়িতেই থাকবো।'

অদৃত বলল,'কেন ?অসুবিধাটা কোথায়?জেদ কোরো না। কথা শোনো।'

আর্য বলল,'আমি গেলে কিন্তু আপনার বাবা-মা অনেক প্রশ্ন করবেন,তখন? আর আমি কি পরিচয়ে থাকবো?'

অদৃত বলল,'সেটা না হয় আমি বুঝে নেবো। এখন যাও গিয়ে তোমার ব্যাগ গুছিয়ে নাও।'

আর্য বলল,'বললাম তো আমি যাবো না ।' 

অদৃত বলল,'আমি যখন একবার বলেছি তোমাকে আমার সাথে যেতে হবে তার মানে তুমি আমার সাথেই যাবে। আমি তোমার জিনিসপত্র গুছিয়ে দেবো চলো।'





সমস্তকিছু গোছানো শেষ হয়ে গেলে 

অদৃত বলল,' আর্য ,এসো এখানে এসে বোসো।' আর্য অদৃতের কথা মতোন তার পাশে গিয়ে বসলো। অদৃত বলল,'কিছু কথা তোমাকে বলে রাখা দরকার। বাড়িতে গেলে হয়তো এই কথাগুলো বলতে পারবো না।' 

আর্য ভাবলো,'কি বলতে চাইছেন আবার?'

অদৃত বলল,'আমি যতদিন না আমার বাড়ির লোককে বলছি তুমি তমাল সেনের ছেলে ততদিন এই কথাটা তুমি আমার বাড়ির লোককে বোলো না। তুমি জানো যে তোমার বাবার সাথে আমার অশান্তির কথা সবাই জেনে গেছে তো বুঝতেই পারছো। আমি চাইনা তোমাকে কেউ ভুল বুঝুক।'

আর্য বলল,'ঠিক আছে। কিন্তু এখনও সময় আছে আপনি একা ফিরে যান। আমার কথা আপনাকে ভাবতে হবে না। আর আপনি আমার জন্য এতো কিছু কেন করছেন?'

অদৃত বলল,'আরেকটা কথা আমাকে আজ থেকে আপনি বলবে না তুমি বলবে।'

আর্য তার দিকে অবাক হয়ে তাকালে, 

সে বলে,'ইয়ে মানে আমি বললাম কারণ বাড়ির লোক আপনি বললে তারা সন্দেহ করবে তুমি হয়তো আমার সেইভাবে চেনা পরিচিত নও,তাই বললাম। আর তাছাড়াও আপনিটা ডাকলে কেমন যেন দূরের সম্পর্কের মনে হয়।' 

আর্য বাঁকা হাসি হেসে বলল,'আমি তো এমনিতেও আপনার কেউ নই।'

অদৃত আর্যর দিকে তাকালো।







রাতে আর্য বিছানায় শুয়ে ফোনে রাজদীপের সাথে চ্যাটে কথা বলতে ব্যস্ত, আর অদৃত তখন তার পাশে বসে গল্পের বই পড়ছে। 

আর্য রাজদীপকে লিখলো ,'রাজদীপ, অদৃত বলেছেন আমাকে ওনার সাথে দিল্লিতে নিয়ে যাবেন।'

রাজদীপ লিখলো,'বাহ্! এতো ভালো খবর। কবে যাচ্ছিস?'

আর্য লিখলো,'কালকে।'

রাজদীপ হতবাক হয়ে লিখলো,'কালকে??? '

আর্য লিখলো,'হ্যাঁ।'

রাজদীপ লিখলো,'ঠিক আছে। এমনিও তো তোর মন খারাপ করছিল। একদিকে ভালোই হয়েছে।'

আর্য লিখলো,'সত্যি বলতে আমি প্রথমে চেয়েছিলাম আমি যেন ওনার সাথে থাকতে পারি, কিন্তু.....এখন যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে আমার ওনার সাথে না থাকাটাই ভালো।'

রাজদীপ লিখলো,' তুই এরকম কেন বলছিস?'

আর্য লিখলো,'আমি বলছি তার কারণ আছে।'

রাজদীপ লিখলো,'কি কারণ?' 

আর্য লিখলো,'আমি যদি ওনার সাথে দিনের পর দিন থাকি তাহলে আমি আরো দুর্বল হয়ে পড়বো ওনার প্রতি।আমার ওনার প্রতি হওয়া অনুভূতিগুলো ভোলা তো দূরের কথা আটকে পর্যন্ত রাখতে পারবো না। উনি চাননা এইসব কিছু হোক। সেটা উনি সরাসরি আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন, তারপরেও যদি এরকম কিছু হয় সেটা খুব খারাপ হবে রাজদীপ। আমি যেতে চাইনা রাজদীপ। হ্যাঁ, ওনাকে না দেখতে পেলে আমার খুব কষ্ট হত এটা আমি মানছি, কিন্তু তাতে অন্তত আমি ওনাকে ভুলে তো থাকতে পারতাম।'

রাজদীপ লিখলো,'তুই ভুল ভাবছিস আর্য, তোর তখনও মনে পড়তো। যতই হোক তুই ওনাকে ভালোবাসিস।'

আর্য লিখলো,'আমি ভালোবাসি তো কি হয়েছে, উনিতো আর আমাকে ভালোবাসেন না।'

রাজদীপ লিখলো,'হুম্ ...দেখা যাক। আমি কালকে একবার তোর সাথে দেখা করতে যাবো।'

আর্য সবে লিখতে যাবে, এমন সময় অদৃত বলল,'আর্য এবার ঘুমিয়ে পড়ো। কাল সকাল বেলায় উঠতে হবে। দাও ফোনটা। '

আর্য ফোনটা অদৃতকে দিলো। অদৃত ফোনটা পাশে রেখে , চশমা খুলে শুয়ে পড়ল।











পরদিন সকালে অদৃত খুব ব্যস্ত। আজ সকাল সকাল মাসি চলে এসেছে। মাসি চোখ মুছতে মুছতে বলল,'অদৃতবাবা আবার কবে আসবে? এইবার অনেকদিন ছিলে, তাই চলে গেলে খুব ফাঁকা লাগবে। বলেছিলে আর্যবাবাকে এখানে রেখে যাবে,কই তাকেও তো দেখি সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছো। তাও আর্যবাবা থাকলে বাড়িটা ফাঁকা লাগতো না। এই কয়েকমাস ছিলে কিভাবে হইহই করে সময় কেটে গেল বুঝতেই পারলাম না। বলছি আর কটা দিন থেকে গেলে হত না?'

অদৃত বলল,'না মাসি। বাড়িতে গিয়ে অনেক কাজ আছে। আর তাছাড়া অনেকদিন হল বাবা-মা'কে দেখিনি। আর ওনারাও বা কতদিন একা একা থাকবেন।'

মাসি বলল,'সাহেবরাও তো আর আসেন না। সেই একবারই এসেছিলো। একদিন একসাথে এসো না সবাইকে নিয়ে।'

অদৃত বলল,'হ্যাঁ, আসবো।'

মাসি মুচকি হেসে বলল,'তবে এবার এলে কিন্তু তুমি আর একা একা এসো না এলে জোরায় এসো।'

অদৃত বলল,'মানে?'

আর্য পাশের ঘর থেকে পোশাক পাল্টে সবে বেরিয়েছে, এমন সময় মাসি বলল,'মানে আবার কি! পরের বার তোমাকে তোমার বউয়ের সঙ্গে দেখতে চাই।'

অদৃত মাথা নীচু করে গম্ভীর গলায় বলল,'তোমার এই এক কথা।'

মাসি বলল,'এক কথা আবার কি? বিয়ে তো করতে হবে নাকি?'

এইসমস্ত কথা শুনে আর্যর কোথাও গিয়ে যেন কষ্ট হল।

অদৃত বলল,'বাদ দাও না মাসি ওইসব কথা এখন।' এইসব বলতে বলতে হঠাৎই তার চোখ গেলো আর্যর দিকে। সে দেখলো আর্য তার দেওয়া সেই নীল রঙের শার্টটি পড়েছে, কিন্তু আর্যর মুখটা কেমন একটু বিষণ্ণ দেখাচ্ছে। 

মাসি বলল,'এইতো আর্যবাবা চলে এসেছে। দেখ না আর্যবাবা আমি অদৃতবাবাকে বলছিলাম পরেরবার যেন একটা বিয়ে করে বউ নিয়ে আসে। কিন্তু দেখো সেটা শুনে কেমন করছে।'

আর্য চুপ করে রইলো। অদৃত মাসিকে রেগে গিয়ে বলল,'তুমি চুপ করবে। সারাক্ষণ খালি কথা বলো। বাদবাকি যে কাজগুলো আছে,ওগুলো সেরে ফেলো তাড়াতাড়ি আমরা এক্ষুনি বেরাবো।'

মাসি বলল,'আচ্ছা,যাচ্ছি।'

অদৃত বলল,'আর্য শার্টটা পরে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে তোমাকে। তোমার কোনো কিছু আর নেওয়ার নেই তো?'

আর্য ঘাড় নেড়ে জানালো 'না।'

অদৃত বলল,'ঠিক আছে।'











পাঁচ মিনিট পর কলিং বেলের আওয়াজ হল। কলিং বেলের আওয়াজ শুনে অদৃত দরজা খুলল। দরজা খুলে দেখলো রাজদীপ তার হাতে বেশকিছু জিনিসপত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অদৃত তো এই দৃশ্য দেখে অবাক। 

অদৃত বলল,'তুমি এখন?'

অদৃত ভাবলো,'ও এখন কি করছে এখানে? জানেনা নাকি যে আর্য আমার সাথে যাচ্ছে? নাকি...... ও আর্যকে নিতে এসেছে ? আর্য তো আজকেই চলে যাওয়ার কথা বলেছিলো।'

রাজদীপ বলল,'ভিতরে আসতে পারি?'

অদৃত বলল,'হ্যাঁ অবশ্যই । এসো ,ভিতরে এসো।'

রাজদীপ ঘরে ঢুকে সোফায় বসলো। অদৃত বলল,'আসলে আজ আমরা দিল্লি ফিরে যাচ্ছি। এক্ষুনি আমরা বেরাবো।'

রাজদীপ বলল,'আমি জানি, আমাকে গতকাল রাতে আর্য বলেছে। তাইজন্যই আমি দেখা করতে এসেছি।'

অদৃত হালকা হেসে বলল,'আচ্ছা। তুমি বোসো। আর্য পাশের ঘরে আছে আমি ওকে ডেকে দিচ্ছি।'

রাজদীপ বলল,'একটা মিনিট আমার আপনার সাথে কিছু কথা আছে।'

অদৃত ভুরু কুঁচকে বলল,'আমার সাথে?'

রাজদীপ বলল,'হ্যাঁ।'

অদৃত বলল,'বলো কি বলার আছে।'

রাজদীপ বলল,'হয়তো ছোট মুখে বড়ো কথা হয়ে যাবে, তাও বলছি । আর্য আপনাকে খুব ভরসা করে দয়া করে আপনি ওকে কখনো ঠকাবেন না। আমি জানি আপনি কিছু ভালো বুঝেছেন তাই আর্যকে আপনার সাথে নিয়ে যাচ্ছেন। ও না সবার সাথে সেইভাবে মিশতে পারেনা তাইজন্য ওকে অনেকে খারাপ ভাবে, ভুলবোঝে । আসলে ওর মনটা কিন্তু খুব ভালো। আপনি ওকে যা দিয়েছেন তা ওকে কেউ দেয়নি, এমনকি ওর পরিবারও নয়। আর্য খুব কম মানুষকে আপন করে নেয়, আর তার মধ্যে আপনি একজন। ও আপনার কাছে আশা রাখে। আর্য সারাটা জীবন কষ্ট পেয়েছে, একটু দেখবেন যেন ও কষ্ট না পায়। দয়াকরে আপনি কখনো আর্যকে ছেড়ে যাবেন না, ওর আপনার প্রতি গড়ে ওঠা বিশ্বাসটাকে ভাঙবেন না, এটা আমার অনুরোধ। '

অদৃত বলল,'আমি যথোপযুক্ত চেষ্টা করবো আর্যকে খুশি রাখার। তুমি নিশ্চিন্তে থাকো। আর নিজেও ভালো থেকো।'

অদৃত মনে মনে ভাবলো,'রাজদীপের মুখ থেকে এরকম কথা আমি আশাই করিনি।'

অদৃত বলল,'আমি আর্যকে ডেকে দিচ্ছি।'














আর্য এসে বলল,'তুই এসেছিস?'

রাজদীপ বলল,'হ্যাঁ। আমার বেস্টফ্রেন্ড চলে যাচ্ছে আর আমি আসবো না, এটা হতে পারে না কি? তাই সকাল সকাল চলে এলাম।এইনে তুইতো নারকেলের নাড়ু খেতে খুব ভালোবাসিস মা তোর জন্য বানিয়ে দিয়েছেন।'

আর্য বলল,'কাকিমা কেন এতকিছু করতে গেল?'

রাজদীপ বলল,'আগেই বানিয়ে রেখেছিল। ভেবেছিল তুই আমাদের বাড়িতে যাবি সেইজন্য।'

আর্য মুখটা নীচু করে বলল,'সরি!'

রাজদীপ বলল,'ধুর পাগল। সরি কেন বলছিস? আচ্ছা শোন এই গুলোতে অল্পস্বল্প খাবার আছে খেয়ে নিস। আর হ্যাঁ এইযে এইটাতে আছে তোর সবচেয়ে প্রিয় রসমালাই, মা তোর জন্য কিনে পাঠিয়েছেন।'

আর্য রাজদীপকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল। রাজদীপের চোখও ছলছল করে উঠলো,সে তার পিঠে হাত বুলিয়ে বলল,'কাঁদছিস কেন? তোর কত ভাগ্য তুই অদৃত রায়ের সাথে ওনার বাড়িতে যাচ্ছিস, এরকম ভাগ্য কতজনের হয় বল! দেখি, যাওয়ার সময় কেউ এইভাবে কান্নাকাটি করে।'

রাজদীপ আরো বলল,'বাহ্! এই জামাটা পড়ে তোকে তো খুব সুন্দর লাগছে! কবে কিনলি?'

আর্য বলল,'এটা অদৃত দিয়েছেন।'

রাজদীপ বলল,'ওহো! দারুণ মানিয়েছে। লোকটার পছন্দ আছে বলতেই হচ্ছে।'

এরই মধ্যে অদৃত এসে বলল,'আর্য চলো এবার আমরা বেরাবো। '

বেরানোর সময় মাসিকে ফ্ল্যাটের চাবি দিয়ে গেল অদৃত। 








নীচে নেমে গাড়িতে ওঠার সময় আর্য রাজদীপকে বলল,'আমি আসছি।'

রাজদীপ বলল,'হ্যাঁ,সাবধানে যাস। ফোন করিস।'

অদৃত বলল,'এলাম তাহলে রাজদীপ।'

রাজদীপ বলল,'হ্যাঁ । এখানে এলে আমাদের বাড়িতে আসবেন কিন্তু। আর আরেকটা কথা, আর্যর খেয়াল রাখবেন।'

অদৃত হেসে বলল,'হ্যাঁ ।'

অদৃতের গাড়ি স্টার্ট দিলো। তারা এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা হল।











To be continued........................


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance