STORYMIRROR

Bhaswati Ghosh

Romance Inspirational

2  

Bhaswati Ghosh

Romance Inspirational

অন্য মনে[last part]

অন্য মনে[last part]

4 mins
17.6K


তার বন্ধুদের বোনেদের বিয়ে দেবার জন্য কতবার তাদের মায়েরা বলেছে

তাকে।সকলেই জানে সিদ্ধার্থের মত ছেলের হাতে মেয়ে দিলে চিরকাল মেয়ে সুখে

থাকবে। কিন্তু সিদ্ধার্থ বিনয়ের সাথে এ়ড়িয়ে গেছে।এই প্রথম যেন বুকের

কাছটায় চিনচিনে ব্যাথা লাগে যেটা খুব অচেনা ঠেকে ওর কাছে।

দিগম্বর বাবু আর সাধু বাউল জানালার ধারেই বসেছিলেন।দুজনকে বাগানের মধ্যে

দেখতে পায় ওরা। সাধু বাউল বলেন-"বড় লক্ষীমন্ত মেয়েটা, দাদুভাই এর সাথে

মানাবে ভাল।দুজনের চোখে আমি ভালবাসার রূপ দেখেছি হে।দিগম্বর বাবু হেসে

বলেন-"সে আমিও দেখেছি।সিদ্ধার্থকে আমি হাতের তালুর মত চিনি। এতদিনে ওর মনে

বসন্তের উতল হাওয়া বয়েছে।তবে কি জান, জীবন বড় কঠিন আর বিয়ে ব্যাপারটা

তো জীবনের একটা বড় বাঁক, এখানে তাড়াহুড়ো করা ঠিক না। ওদের মন ওরা পড়ে নিক।

দুজন দুজনকে চিনুক, বুঝুক।দায়িত্বটা ওদের নিজেদের। এখানে তৃতীয় ব্যক্তির

ঢোকা উচিত না।"

"তা তুমি হক কথা বলেছ"-সাধু বাউল বলে।চোখ বন্ধ করে গান শুরু করে বাউল-

"ভোলা মন রে....কান্দিয়া আকুল ভব নদীর কূলেএএএএ মন তোরে কেবা পার

 করেএএএ"...........

দুজনে কাকভেজা হয়ে বারান্দায় উঠে আসে।পাখির ছানা গুলোকে নিয়ে কি করবে

ভেবে পায়না। সিদ্ধার্থও তার স্বভাবজাত গাম্ভীর্য ভেঙে ছোটাছুটি লাগায়

সপ্তপর্নীর সাথে।দুজনকে ভিজে দেখেই তো নমিতা রেগে আগুন।বাচ্ছা গুলোকে

নিজের হাতে নিয়ে ওদের ড্রেস চেন্জ করতে পাঠায়।

দুপুরের পর থেকে বৃষ্টিটা একটু বন্ধ হয়েছে।সপ্তপর্নী তার ঘরের জানালার

ধারে মাথা দিয়ে বসে একটা গান আনমনে গেয়ে চলেছে।সিদ্ধার্থ দুপুরের খাওয়া

দাওয়ার পর থেকেই বেরিয়েছে সাঁওতাল পাড়ার দিকে।ওখানে নাকি নদীর পাড় ভাঙছে,

সেই জন্য কয়েকটা ঘর কে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যেতে।সন্ধ্যা প্রায় হয়ে

এল, সকাল বেলায় ঝড়ের পর থেকেই লোডশেডিং।ছাদে গাছের পাতা জমে জল বেরোরার

নলটা আটকে গেছে। পাতাগুলো সরিয়ে দিগম্বর বাবু ছাদ থেকে নেমে সপ্তপর্নীর

ঘরের পাশ দিয়ে যাবার সময় সপ্তপর্নীর গলায় অস্ফুটে অল্প অল্প গানটা গুন

গুন করা শুনতে পান।

"বাঃ বড়ো চমত্‍কার গলাতো। এতদিন বলেনি তো মেয়েটা, যে ও গান পারে।"

ঘরে গিয়ে রাগ রাগ স্বরে বলেন, ''এক্ষুনি গানটা খোলা গলায় করো, না হলে খুব রেগে

যাব।''

সপ্তপর্নী একটু সংকোচে পড়ে যায়, তবে দিগম্বর বাবুর কথা ফেলতে পারে না তাই

চোখ বুজে গানটা খোলা গলাতেই শুরু করে-

"ঝুঁকো আয়ি বদারিয়া শ্রাবন কি মন ভাবন কি ঝুঁকো আয়ি  বদারিয়া শ্রাবন

কি.....''

সাধনবাউল গান শুনে সরে এসে বসে।নমিতাও কলতলায় যেতে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে।ঘরে

এসে দিগম্বর বাবুর পাশে এসে দাঁড়ায়।ঘরে একটা মোমবাতি জ্বলছে হালকা আলো

ঘরটায় ছড়িয়ে রয়েছে।বাগানের মালতি লতা ফুলের গাছটা থেকে মিষ্টি সুবাস ছেয়ে

রয়েছে ঘরে।সিদ্ধার্থ গেট থেকেই একটা মিষ্টি গানের সুর শুনতে পায়।বারান্দা

দিয়ে ওঠবার সময় বুঝতে পারে সপ্তপর্নীর ঘর থেকেই আসছে।ধীরে ধীরে ঘরের

চৌকাঠে গিয়ে দাঁড়ায়।দেখে সাধন বাউল নিবিষ্ট মনে গান শুনে যাচ্ছে চোখ বন্ধ

করে।দিগম্বর বাবু যেন ধ্যান মগ্ন।নমিতা দেখতে পায় সিদ্ধার্থকে, কিছু বলে

না।সিদ্ধার্থের আবিষ্ট ভাব নমিতার চোখ এড়ায় না। একদৃষ্টে সিদ্ধার্থ

তাকিয়ে রয়েছে সপ্তপর্নীর দিকে।সপ্তপর্নী চোখ বন্ধ করে নিবিষ্ট চিত্তে

গেয়ে চলেছে-

"শ্রাবন মে উমাঙ্গে যৌবনবা ছোর চলে পরদেশ বদরিয়া/সুধা না রহে

আবনকি/ঝুঁকো আয়ি বদরিয়া শ্রাবন কি..."

গান শেষ হতে সপ্তপর্নী লজ্জা পেয়ে যায় সিদ্ধার্থকে দেখে।দিগম্বর বাবু ঘরে

ডাকে সিদ্ধার্থকে।সপ্তপর্নী সকলের জন্য চা আনতে চলে যায়।পাঁপড় ভাজা আর চা

নিয়ে এসে সকলকে দেয়।

সিদ্ধার্থকে দিগম্বর বাবু জিজ্ঞেস করেন গ্রামের অবস্থা কিরকম?কতটা পাড়

ধ্বসেছে?

সিদ্ধার্থ বলে আপাতত সামাল দেওয়া গেছে, কয়েকটা বাড়িকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে কিন্তু বেচারারা এবারে দূর্গাপূজা করবে ভেবেছিল তা বোধহয় হবে না।

কেনো গো সিধুভাই? জিজ্ঞাসা করে সাধন বাউল।

টাকার অভাবে গো বাউল দাদু।আমি আর আমার বন্ধু রফিকুল মিলে কিছুটাকা দেব৷

কিন্তু তাও এখনো দশহাজার দরকার।ওরা ভেবেছিল গ্রামের মধ্যে তুলে

নেবে।কিন্তু এই অবস্থায়......

সপ্তপর্নী হঠাত্‍ বলে, "আমার থেকে কিছুটাকা নেবেন? এই পাঁচ হাজার মত।তার

বেশি তো......"

সবাই ঘরের চমকে ওঠে।

দিগম্বর বাবু বলেন-"না না, তা হয় না।তোর বাড়ির খরচ নিজের খরচ এরপরে তোর কি

থাকে।দিতে ইচ্ছা হলে হাজার পাঁচশো দিস।তার বেশি না।তোর চিন্তা নেই বাকিটা

আমি দিয়ে দেব।তবে একটা কথা ,পূজাতে তো তুই থাকবি, না তোর বাড়িতে চলে

 যাবি?"

 সিদ্ধার্থ হঠাত্‍ বলে ওঠে, "একদিন এখানে তো পূজা দেখে যেতে পারেন।জাঁকজমক

 নেই তেমন, কিন্তু নিষ্ঠা আন্তরিকতার অভাব নেই।"

 সপ্তপর্নী মনে মনে ভাবে এই কথাটাই তো আমি আপনার মুখে শুনতে চেয়েছিলাম-কে

 বলেছে থাকবনা!কিন্তু মুখে শুধু অস্ফুটে আচ্ছা বললো।

 সাধুবাউল চোখের ইশারায় বাইরে ডেকে নিলেন দিগম্বরবাবু কে।নমিতাও বেরিয়ে গেল।

 বাইরে আবার বৃষ্টি নেমেছে।সিদ্ধার্থ সপ্তপর্নী কে বলে-"জানেন, মা মারা যাবার

 পর থেকে আমাদের বাড়িতে লক্ষী পূজা হয় না।নমিতা দি বলে, মা ঠাকুরুন নে্‌ই ,তোর

 বউ এলে করবে।এবারে লক্ষী পূজা করবার ইচ্ছা হয়েছে বাড়িতে আমার খুব।দায়িত্ব

 নেবেন?"

 সপ্তপর্নী দুচোখ তুলে সিদ্ধার্থের দিকে তাকায় এক অসম্ভব ভাল লাগার

দৃষ্টিতে।কিছু বলতে পারে না শুধু বলে' "আপনি অনুমতি দিলেই......

 সিদ্ধার্থ দেখে বৃষ্টির ছাঁট এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে সপ্তপর্নীকে।কাছে গিয়ে

 হাত ধরে ওকে পাশে সরিয়ে দিয়ে জানালাটা বন্ধ করে দিয়ে রাগ রাগ স্বরে

 বলে-"শুধু অপরের খেয়াল রাখলেই হবে আর এদিকে নিজে ভেজা হচ্ছে।"বলে হেসে

 নিজের ঘরের দিকে চলে যায়।

 বাইরে তখন অঝোর ধারায় বৃষ্টি।সপ্তপর্নীর মনেতেও যেন বৃষ্টি নেমেছে। যা

 তার দুগাল ছাপিয়ে বয়ে চলে।দুচোখ বন্ধ করে ও প্রাণ ভরে শ্বাস নেয়।মনের

 মধ্যে যেন এক পাহাড়ি ঝরণা পঞ্চম স্বরে তান তুলেছে।তবে কি সিদ্ধার্থ তাকে

 ভালবাসে?সিদ্ধার্থ কি তবে তার হবে?

 পাশের ঘরে সাধু বাউল তখন গান ধরেছে, সপ্তপর্নী শুনতে পায়-  " আমার প্রানের মানুষ আছে প্রানে, তাই হেরি তায় সকল খানে, ওগো তাই দেখি

তায় যেথায় সেথায় তাকাই আমি যেদিক প্রাণে।।.....।।"


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance