মলিন মর্ম মুছায়ে
মলিন মর্ম মুছায়ে
আগুন ঝরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে ঋতেশেের দিকে মানালি।ও ভাবতেও পারছে না ও কি ঠিক শুনলো!এই রকম সুযোগের অপেক্ষায় প্রকাশজির মত প্রকাশক বসে আছে, আর সেই মানালি কোনো রকম স্বার্থ ছাড়াই ঋতেশকে সুযোগটা দিয়েছিল! মানালির মনে হচ্ছে ওকে কেউ উলঙ্গ করে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে কলকাতার জনবহুল রাস্তায়। নিজেকেই চড়াতে ইচ্ছে করছে ঐ রকম একটা ফুল স্টুপিড্ অনুভূতিহীন ছেলেকে এতটা গুরত্ব দিয়ে ফেলায়।নেহাত ঋতেশ এর হ্যান্ডসাম টল ফিগারটা প্রথমদিন থেকেই মানালিকে পাগল করে তুলেছিল তাই।প্রথম পোর্টফালিওর দিন ঋতেশ কে ফাস্ট দেখেছিল মানালি, উফ জাস্ট দুচোখে জ্বালা ধরিয়ে দিয়েছিল ছেলটা। না হলে কি আছে ওর? এ নিডি লোয়ার ক্লাস ক্যামেরাম্যান।তবে ঋতেশ প্রথমদিন থেকেই বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল, বিনিমযচেষ্টা ছিলনা।মানালির আবার অত ছুঁত্মার্গ নেই শরীর,প্রেম এইসব ব্যাপারে।টিন এজার এজ থেকেই মানালি নিজের চার্মিং ফিগারটাকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে পুরুষদের মাথায় চড়ে ধীরে ধীরে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে হয় সেটা আয়ত্ত্ব করে নিয়েছিল ।সেটা স্কুল বা কলেজ লাইফে সিনিয়র এর থেকে এডুকেশনাল হেলপ নেওয়াই হোক বা রেগুলার ওকে বাড়ি থেকে রিসিভ করা বা পৌঁছে দেওয়াই হোক বা এডুকেশনাল ট্যুরে গিয়ে লাগেজ বয়ে দেবার জন্য স্তাবকদের কাজে লাগানোই হোক।তার বিনিময়ে একটু ওর ঠোঁটের লিপস্টিক এর স্বাদ নিতে দিতে ওর আপত্তি ছিল না।কিন্তু এইটুকু চাহিদাতেই মানালির লক্ষ্যের শেষ ছিল না।গ্র্যাজুয়েশন শেষ করবার পর থেকেই ও বুঝে গিয়েছিল এতদিনে টেনেটুনে পড়াশোনাটা চালালেও ওর দ্বারা বিরক্তিকর এই দিকে এগোনো আর সম্ভব নয়।তখনই স্তাবকদের ভীড়ের মধ্যে কেউ একজন গদগদ হয়ে মডেলিং এর দিকটা ওর মাথায় ঢোকায়।আর সেখানেও মানালি ওঠার সিঁড়ি হিসাবে প্রথম থেকেই ওর চোথের ঝিলিক কে কাজে লাগাতে শুরু করে।কিন্তু সবার মধ্যে এই প্রথম ব্যতিক্রম হিসাবে চোথে পড়ল ঋতেশকে।মানালির চোখের ঝিলিক যেথানে কোনো কাজেই আসলনা।তবে এই নয় যে ঋতেশ মানালিকে সহ্য করতে পারত না বা কাছে ঘেঁসতে দিত না।ঋতেশ মানালির যে কোনো প্রয়োজনে নির্দ্বিধায় হাত বাড়িয়ে দিত,তবে সেটা শুধুই বন্ধুত্বপূর্ণ।মানালি ঋতেশকে যে ভাবে কাছে আসার সুযোগ দিয়েছিল তা যেকোনো আচ্ছা আচ্ছা লোককে দিলে তারা বর্তে যেত।এই রিসেন্ট মানালি যে অ্যডটায় মডেলিং এ আছে তার প্রযোজক প্রকাশজি তো একটা ফ্ল্যাট মানালিকে দেবে বলে আগাম বুক করে রেখেছে বাটানগরের নামকরা অ্যাপার্টমেন্টে।এর বিনিময়ে শুধু প্রকাশজি একটা রাত মানালির সাথে কাটাবার সুযোগ চায়।কিন্তু মানালি এখন সুতোটা নিয়ে একটু খেলানোয় ব্যস্ত।শরীরের ব্যাপারে ছুত্মার্গ ওর নেই।কিন্তু ও জানে, আর একটু খেলালে ফ্ল্যাটের সাথে একটা অল্টো কার এর চাবিও হাতে এসে যাবে।তাই তানানানা সুরটা এখন ভেঁজে চলেছে।মানালি মনে করে কোনো কিছুর বিনিময়ে কোনো কিছু নিলে দো তাতে ওর কিছু যায় আসেনা।আরে বাবা-মার আদর্শ,সতীত্ব নিয়ে চললে তো ঐ এঁদো গ্রামে একতলা বাড়িতেই কেটে যেত বাকি জীবনটা ।মানালি রয় এইভাবে জীবনটা শেষ করে দিতে জন্মায়নি বলে মানালি মনে করে।মানালির এই শরীরটা তাতে যদি একটু কাজে লাগায় কি অশুদ্ধ হয়ে যাবে!ও তো জাস্ট লেন দেন করছে।কিন্তু একমাত্র ঋতেশকেই কেন জানে না ও লেন দেনের বাইরে রেখেছিল।যার থেকে ফ্ল্যাটের চাবি,অল্টো কার না পেলেও নিজেকে সঁপে দিতে দ্বিধা ছিল না ওর।অনেক বার ই আকারে ইঙ্গিতে সেটা মানালি ঋতেশ কে বোঝাতে চাইতো।কিন্তু ঋতেশ যে কে সেই নির্বিকার।সেদিন সন্ধ্যাতে মানালির হাতে কোনো কাজ ছিল না।প্রকাশজি ও দিল্লিতে গিয়েছে ব্যাবসার কাজে।কিছুক্ষণ আগেই ফোন করে জানালো পরের দিন ফিরবে আর মানালির জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।মানালির বুঝতে দেরি লাগেনি সারপ্রাইজটা কি।একসপ্তাহ আগেই মানালি আর প্রকাশজি পার্ক স্টিটের একটা নামী রেস্টুরেন্টে ডিনার এ গিয়েছিল। সেখানেই মানালি আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছিল ওর কি চাই প্রকাশজির থেকে।তবেই মানালি প্রকাশজির দিল খুশ করে দেবে।ঝানু ব্যাবসাদার প্রকাশজির বুঝতে সময় লাগেনি এটা।মানালির ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে প্রকাশজি বলেছিল,-"ওক্কে মাই এন্জেল দিল্লী থেকে ফিরে আসি, দেখি এবার তোমায় পাই কিনা....হাহাহাহা।'' প্রকাশজির ফোনটা পাওয়ার পর থেকেই মানালির দিল দিবানা লাগছিল ।দু'পেগ বিয়ার গলায় ঢেলে নিজেকে রানি রানি মনে হচ্ছিল।আর নেশাতুর চোখে ভেসে উঠেছিল ঋতেশের হ্যান্ডসাম ফিগারটা।ফোন করে খুব দরকার বলে ডেকে পাঠিয়েছিল ঋতেশকে।ঋতেশ আধঘন্টার মধ্যে পৌঁছেছিল।মানালি তখন একটা পাতলা নাইট গাউন পরে নিজের বেডরুমে ডেকে এনেছিল ঋতেশকে।কিন্তু এখনো ঋতেশ নির্বিকার।নির্লিপ্ত ভাবে জিজ্ঞাসা করেছিল,-"কি দরকার বলো?এত তাড়াহুড়ো করে ডেকে পাঠালে খুব দরকার বললে?" মানালি হিসহিস স্বরে বললো, -"আমি তোমাকে ভালবাসি, তোমাকে আমি চাই একদম নিজের করে।" ঋতেশ দু'হাত পিছিয়ে গেল ছিটকে।কেটে কেটে বললো,'' আমি তোমাকে বন্ধুত্বের বাইরে কিছু দেখি না আর এইসব কথা আমায় ফারদার বলবে না। আমি যাচ্ছি।" ঋতেশ দরজার দিকে পিছন ফিরল, কিন্তু মানালির তখন অপমানে রাগে দুচোখে আগুন ঝরছে।ও মানালি রয়, চিরকাল পুরুষরা ওর পায়ের তলায় কুকুরের মত ঘুরে বেড়ায় একটু ওর সান্নিধ্য লাভের জন্য। সেখানে এই একটা 'লোয়ার ক্লাস' ছেলে....না, কিছুতেই ওকে মানালি ছেড়ে দেবে না।মানালি ছুটে গিয়ে একটানে ঋতেশকে বিছানায় ফেলে ওর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ক্ষুধার্ত বাঘিনীর মত।জামাটা ফালা ফালা করে ছিঁড়ে দিল ঋতেশের।ঋতেশ প্রথমে ভ্যাবাচ্যাকা ভাবটা কাটিয়ে চুলের মুঠিটা ধরে মানালিকে পাশে সরিয়ে দুগালে চড় বসায়।মানালি নিজেকে কিছুটা সামলাতে সময় নেয়।রাগে সারা শরীর ওর কাঁপতে থাকে।ঋতেশ দরজা দিয়ে বেরিয়ে যেতে যাচ্ছে দেখে মানালি চিৎকার করে বলে ওঠে,-"তোর এত সাহস তুই আমার গায়ে....তোর অনেক ভাগ্য আমি মানালি রয় তোকে এত সুযোগ দিলাম, নেহাত তোকে আমি ভালবেসেছি বলে.... " ঋতেশ ঘুরে দাঁড়িয়ে শ্লেষ ভরা কন্ঠে বলে,-"ভালবাসা!এই শব্দটার মানে কি বোঝো তুমি?তোমার কাছে তো ভালবাসা মানে শরীর তাই না?ভালবাসা এই শব্দটা দয়া করে উচ্চারণ কোরো না।''মানালি বলে,-"ও তাই বুঝি?তাহলে তোমার কাছে ভালোবাসা কী?'' ঋতেশের ঠোঁটের কোনে অল্প হাসি দেখা দেয়।ঋতেশ বলে,-"কাল সকালে তোমাকে 7টার সময় এসে একজায়গায়
নিয়ে যাব, তৈরি থাকবে।ভালবাসা মানে কি যদি একটু হলেও বুঝতে পারো।'' পরের দিন সকালে ঋতেশ একটা ট্যাক্সি নিয়ে হাজির হল মানালির বাড়িতে।ওরা যেখানে পৌঁছালো জায়গাটা শহর থেকে দু-তিন মাইল দূরে।একটা মফঃস্বল এরিয়া।ওদের ট্যাক্সি গিয়ে থামল বাগানঘেরা একটা বিরাট বড় পুরানো আমলের বাড়ির সামনে।তবে বাড়িটা রীতিমত মেনটেনেন্স করা হয় তার ছাপ স্পষ্ট, কারন পুরানো হলেও বাড়িটাতে জীর্ণতার ছাপ নেই।ওরা ট্যাক্সি থেকে নামতেই দশ বারোটা বাচ্ছা ছুটে এল ঋতেশের দিকে।ঋতেশ ওদের জিজ্ঞাসা করল, "প্রিয়া দিদি কোথায়,প্রেয়ার রুমে?" '' হ্যাঁ চল, আমাদের এবার প্রেয়ার শুরু হবে।''বলে ওরা ঋতেশের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে ছুটলো প্রেয়ার রুমের দিকে।মানালিও ওদের পেছন পেছন গিয়ে দাঁড়ালো একটা হল ঘরের দরজায়।একটা মেয়ে পিছন ফিরে বসে।ঋতেশ মেয়েটির পিছনে গিয়ে দাঁড়ায়।মেয়েটি প্রেয়ার শেষ করে ঘুরে দাঁড়ায়।ঋতেশের দিকে তাকিয়ে হাসে।ঋতেশ কাছে গিয়ে ওর হাতটা ধরে।কিন্তু মানালি আর এগোতে পারে না সব চলৎশক্তি হারিয়ে ফেলে মেয়েটিকে দেখে।উঃ, কি বিভৎস সারা মুখটা! পুড়ে কালো হয়ে গেছে।ক্ষত-বিক্ষত পুরো মুখটা।দুটো চোখ পাতা ছাড়া মণি হীন পাথরের দৃষ্টি।মেয়েটিকে ঋতেশ কিছু বলে, মানালির কানে পৌঁছায় না।মানালি দেখতে পায় মেয়েটির হাত ধরে ঋতেশ নিয়ে এসে দাঁড়ালো ওর সামনে।মেয়েটি এসে মানালির হাতটা ধরে বললো,-''তোমার কথা কাল রাতেই ঋতেশ বলেছে, খুব ভাল লাগল তুমি এসেছো।" মানালির অবাক জিজ্ঞাসা ভরা দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে ঋতেশ অল্প হেসে বললো,-"এর নাম প্রিয়া।আর একমাস পরেই ওর সাথে আমার বিয়ে।প্রিয়া আর আমি কলেজ লাইফ থেকেই দুজন দুজনকে ভালবাসি।"মানালি নিজেকে ধাতস্থ করে নিল কিছুক্ষণ. তারপর অস্ফুটে জিজ্ঞাসা করলো, -"কিন্তু এই রকম অবস্থা ক্কি..''সম্পূর্ণ কথাটা শেষ করতে পারে না মানালি।ঋতেশ কিছুক্ষণ বাচ্ছাগুলোর দিকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে৷ এরপরে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে শুরু করে,-" এই বাড়িটা একটা জমিদার বাড়ি।প্রিয়ার বাবা আর তার থেকে অনেক ছোট এক ভাই ছিল এই বাড়ির উত্তরাধিকার।প্রিয়া ওর বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান।আর ওর কাকার ছিল একটা তিনবছরের ছেলে।প্রিয়ার কলেজ লাইফ থেকেই ইচ্ছা একটা অনাথ আশ্রম করবে।ওর বাবা তাই বাড়িটার একটা ভাগ অনাথ আশ্রমকে লিখে দেন নিজের ভাগের থেকে।কলেজ শেষ করে আমি,প্রিয়া আর হাসিবুল তিনজন মিলে দুইজন অনাথ বাচ্ছাকে নিয়ে আজ থেকে পাঁচ বছর আগে এই আশ্রমটা শুরু করি।মোটামুটি দুইমাস হয়েছে আশ্রমটা শুরুহয়েছে এইরকম একটা দিনে আমরা তিনজন আশ্রম সংক্রান্ত একটা কাজ মিটিয়ে একটুরাত করে ফিরছি।হঠাৎ করে আমার মাথায় এক বাড়ি, তারপর সব কিছু 'ব্ল্যাক-আউট'।সেন্স এলে দেখলাম হাসিবুলের ধড় আর মাথা...."প্রিয়া এর মধ্যে একটা অস্ফুট আওয়াজ করে বসে পড়ে।ওর দুচোখে জলের ধারা।ঋতেশ ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।প্রিয়া একটু শান্ত হলে ঋতেশ আবার শুরু করে-" আর প্রিয়া অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে সম্পূর্ণ বিবস্ত্র, আর সারা মুখ অ্যাসিডে ঝলসে গেছে।আমি আমার জামাটা ওর গায়ে দিয়ে কি ভাবে যে সেদিন ওকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে হসপিটালে পৌঁছালাম, তা আজো যেন আমার নিজের কাছেই অজানা। যদি আর কিছু পরে আমার জ্ঞান আসত তা হলে আমার প্রিয়া...পরে তদন্তে ধরা পরে প্রিয়ার কাকা নিজের পথের কাঁটা সরাতেই সব করিয়েছে।" কিছুক্ষণ সবাই চুপচাপ হয়ে থাকে।ঋতেশ যেন কতকটা নিজের মনে বলে ওঠে,-"হাসিবুল সেদিন বাঁচাতে না গেলে প্রিয়াকে হয়তো বেঁচে যেত কিন্তু, ও শেষ শ্বাস পর্যন্ত প্রিয়ার গায়ে কাউকে হাত দিতে দেয় নি।প্রিয়াকে হাসিবুল বহিন বলতো।প্রিয়া আজো রাখির দিন রাখি পরায় হাসিবুলের ছবিতে। প্রিয়ার নিজের জন্য কোনো কষ্ট নেই, ওর একমাত্র কষ্ট হাসিবুলকে হারানোয়। হাসিবুল ছিল একমাত্র ছেলে, ও মারা যাবার পর কাকু সব সম্পত্তি দান করেন আশ্রমকে।উনি এখানেই এখন থাকেন কাকিমাকে নিয়ে।" ওদের কথার মাঝেই বছর সাত এর একটা বাচ্ছা ছুটে আসে প্রিয়ার দিকে।প্রিয়া প্রিয়া ওর মাথায় হাত বুলিয়ে স্নেহের স্বরে বলে,-"হ্যাঁ হবে তো, সবাই প্রেয়ার লাইন কর।" বাচ্ছাটা ছুটে গিয়ে সবাইকে প্রেয়ার লাইনে দাঁড় করায়। বাচ্ছাটার দিকে তাকিয়ে ঋতেশ বলে,-"ঐ বাচ্ছাটা কে জানো? প্রিয়ার কাকার ছেলে।প্রিয়ার কাকিমা বাচ্ছাটার জন্মের সময় মারা যায়।প্রিয়ার ঠাকুমা ওকে মানুষ করে। পরে উনি মারা যাবার পর ওর বাবাও ততদিনে জেলে। ছেলেটার দায়িত্ব নেবার আর কেউ ছিল না তখন, প্রিয়া সব দায়িত্ব নেয় ওর। তবে সম্পত্তি উকিলের জিম্মায় আছে ছেলেটি বড় না হওয়া পর্যন্ত।প্রিয়া সে দায়িত্ব নেয় নি।এমন কি বাচ্ছাটির সব দায়িত্ব প্রিয়া নিজের খরচে বেয়ার করে।প্রিয়ার বাবা প্রথমদিকে একটু আপত্তি করে বলে, ওকে কোনো আশ্রমে দিয়ে দিতে, ঐ নোংরা রক্তের ছেলে কোনো দিন ভাল হতে পারে না।কিন্তু প্রিয়া ওর বাবাকে বুঝিয়ে বলে ওর কাকার মত একটা 'নরপিশাচ' ও ওর ভাইকে তৈরি হতে দিতে পারে না।প্রিয়ার ভালবাসা, স্নেহ ওকে মানুষ করে তুলবে ওর বাবার থেকে পাওয়া জন্মগত সব পাপ ধুয়ে, যা প্রিয়া বিশ্বাস করে।ঋতেশ দেখে সবাই প্রেয়ার লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েছে।ঋতেশ প্রিয়ার হাত ধরে প্রেয়ার মঞ্চের দিকে এগিয়ে যায়।মানালি দেখে প্রিয়া আর ঋতেশ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে।না, ওরা কেউ কাউকে বলছে না ওরা কতটা ভালবাসে একে অপরকে।তবু ঋতেশের ভালবাসার হাত ছুঁয়ে আছে এক অপার নির্ভরতার আশ্বাস নিয়ে।আর প্রিয়ার দৃষ্টিহীন চোখ যেন নীরব ভালবাসার দৃষ্টিতে সিক্ত করছে ঋতেশের হৃদয় । প্রিয়ার সাহসিকতা মানালিকে অবাক করেছে। নিজের এতকিছু হারিয়ে ও আজও হাসতে ভুলে যায় নি।ঐ ছোট ছোট বাচ্ছা গুলোর আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে।সত্যি ঋতেশ যোগ্য একটা মেয়েকে সাথি পেয়েছে, মানালি মনে মনে স্বীকার করে নিল।হঠাৎ করেই মানালির ফোনে কল ঢোকে প্রকাশজির।মানালি ফোনটা সাইলেন্ট করে দেয়।থাকনা আজ এই সকালটা সব রকম দেনা পাওনার বাইরে।তখন প্রেয়ার রুমে বাচ্ছাদের কচি গলা সুর তুলেছে প্রেয়ারের-"তুমি নির্মল কর মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে/তব পূর্ণ কিরণ দিয়ে যাক মোর মোহ কালিমা ঘুচায়ে মলিন মর্ম মুছায়ে।''
#positiveindia