অন্তরের ভালোবাসা
অন্তরের ভালোবাসা


- সমু পিছন থেকে বনিকে জাপটে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখটা ঘষতে ঘষতে বলে "তুই আজ যাস না প্লিজ, আমার খুব তোকে আদর করতে ইচ্ছা করছে"। বনি একটুও নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা না করেও বলে ওঠে "এই ছাড় ছাড়, কেউ দেখে ফেলবে"। এতক্ষণে সমু আর নিজের বশে নেই, বনির কোনো কথাই তার কানে ঢুকছে না। নিজেকে সমুর হতে সঁপে এক দারুন তৃপ্তি হচ্ছিলো বনির। আদিম খেলায় সাক্ষী থাকছিল ঘরের ব্রিটিশ জামানার ঢাউস ঘড়িটা। সে ঢং ঢং করে জানিয়ে দিলো ন'টা বাজে। বনি এবার সমুর বুক থেকে মুখ উঠিয়ে বলে উঠলো "এ্যাই ছাড়, ন টা বাজলো, সিরিয়াল শুরু হয়ে যাবে" সমু আরো জোরে বুকে।চেপে ধরে প্রশ্ন করে "আমি আগে, না তোর সিরিয়াল দ্যাখা আগে?" বনি এবার জোর করে নিজেকে ছাড়িয়ে মুখ টিপে হেসে উত্তর দেয় "তুই তো আছিস, কিন্তু এই এপিসোড কি পরে হবে? সমু কপট রাগ দেখিয়ে বলে "আচ্ছা, আমি সত্যি করে চলে গেলে বুঝবি, আর ফিরবো না" বনি নিজের এলোমেলো শাড়ি ঠিক করতে করতে বলে "কোথায় যাবি, আমার সতীনের কাছে?" সমু এর উত্তরে কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু বনি আর শুনলো না দরজা খুলে মায়ের ঘরে গিয়ে ঢোকে টিভি দেখার জন্য। সমু একটা সিগারেট ধরিয়ে জানলায় গিয়ে দাঁড়ায়। আকাশে পূর্ণিমার চাঁদের জোৎস্নায় ভরা রূপ যেনো উপচে পড়ছে। মনে পড়লো কাল দোল। বনি বলেছিল রং আর মিষ্টি আনতে। জামাটা গায়ে দিয়ে টেবিলে রাখা পার্শে দেখলো কত টাকা আছে। মনে মনেই বির বির করলো "হয়ে যাবে, যা আছে"। সদর দরজা ভেজিয়ে বার হলো রং আর মিষ্টি কিনতে। বনি আর সমুর মা সিরিয়াল দেখতে এতই বিভোর যে সদর দরজা ভেজানোর শব্দও পেলো না। হঠাৎ পাড়ার বিশু সটান বাড়িতে ঢুকে পড়ায় শাশুড়ি বউ দুজনেই অবাক, "কি রে, হাঁপাছিস কেনো" সমুর মা প্রশ্ন করে। বিশু মুখটা কাঁচু মাচু করে বলে "তোমরা চলো, সমুদার অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে" বনির মাথা ঘুরে টাল খেতে যাচ্ছিল, বিশু ধরে খাটের ওপর বসিয়ে দিয়ে বলে "বৌদি, তুমি এমন কোরো না, মাসিমা ভয় পাবে, চলো, হসপিটালে নিয়ে গেছে" সমুর মা যেনো কয়েক মিনিটেই পাথর হয়ে গেছে। বনি আর দেরি না করে বিশুর সাথে হাসপাতালে গেলো। আরো কয়েকজন পাড়ার ছেলে সাথে গেলো। চোট বেশ গুরুতর নয়, তবে কয়েকদিন বিশ্রামে থাকতে হবে। বনি এমার্জেন্সি তে স্ট্রেচারে শোয়া সমুর কপালে হাত রাখলো। চোখের জল যেনো আর বাধা মানছে না। ভেবেছিল সমুর সামনে একটুও কাঁদবে না, তাতে ওর মন দুর্বল হয়ে পড়বে কিন্তু পারলো না। সমু এত কষ্টের মধ্যেও ঠোঁটের কোনে ঈষৎ হাসি এনে বললো "দেখলি তোর সিরিয়ালের আগে আমি, চিন্তা নেই, এত তাড়াতাড়ি তোকে ছেড়ে আমি যাবো না" বনির মনে পড়লো সিরিয়াল দেখার জন্য তার ছেলেমানুষী। মুখটা বেশ গম্ভীর করে বললো "তুই সুস্থ হলে, তুই পরে, সিরিয়াল আগে"। দুজনের এই তামাশা দেখে বিশুও হাসে। বনি তার সমুকে হারাতে বসে টের পেলো প্রিয় মানুষের মূল্য অনেক সময় বোঝা যায় না কিন্তু সে কতটা দামী তার ঠিক হিসাব রাখে অন্তর।