Arpita Pal

Romance Classics

4  

Arpita Pal

Romance Classics

অন্তরাল-তৃতীয় পর্ব

অন্তরাল-তৃতীয় পর্ব

5 mins
385


চারিদিকের জমাট বাঁধানো অন্ধকারে শিঞ্জিনী নিজেকেও দেখতে পারছে না। বাতাসের চলাচল বলতে প্রায় কিছুই নেই। তার আশেপাশে কি রয়েছে তা সম্পূর্ণ চোখের দৃষ্টির বাইরে। এক অদ্ভুত উত্তেজনা আর আশঙ্কায় শরীরের সমস্ত শিরা গুলো দপ্ দপ্ করছে। পিঠের শিরদাঁড়া দিয়ে ঘামের শীতল স্রোত বয়ে যাচ্ছে। এ কোথায় এসে পড়েছে সে? কেমন একটা ক্ষীণ শব্দ তার কানে এসে পৌছালেও সেটার অর্থ বোঝার মতো স্পষ্টতা সেই শব্দের মধ্যে নেই। কোথা থেকেই বা সেই শব্দটা আসছে তা জানার কোনো উপায় নেই। এরকম এক নিকশ কালো অন্ধকারের মধ্যে একজন সুস্থ মানুষ নিজেকে বেশিক্ষণ ঠিক রাখতে পারবে না। এমন সময় শিঞ্জিনী তার শরীরের গোপন জায়গায় এক অবাঞ্ছিত স্পর্শ অনুভব করল। সে চমকে সরে আসলেও পরমুহূর্তাতেই তার শরীর যেন কোনো অজানা দুটো হাতের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে গেল। সে অনেক করে সেই দুটো হাতের বন্ধন থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু সে যেন আরও সেই বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। হাত দুটো তার শরীরে অবাধে বিচরণ করে বেড়াচ্ছে। আর তার সাথে দুটো নরম ঠোঁটের স্পর্শও অনুভব করছে শরীরের বেশ কিছু জায়গায়। তার মুখ দিয়ে বিশেষ কোনো শব্দ বেরোচ্ছে না। এমন সময় সব স্পর্শ গুলো যেন কোথাও উধাও হয়ে গেল। তার শরীর উত্তেজনা আর ভয়ে ঘামে ভিজে গেছে। জল তেষ্টায় গলা প্রায় শুকিয়ে গেছে। হঠাৎ সে বুঝতে পারল তার গলায় সেই দুটো হাতের আঙুল ক্রমশ জোরে চেপে বসছে। অসম্ভব যন্ত্রনা হচ্ছে। দম প্রায় বন্ধ হয়ে আসছে। সে কোনো ভাবেই হাত দুটোকে তার গলা থেকে সরাতে পারছে না। তার মনে হতে লাগল যে মৃত্যু অনিবার্য। সে ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করে ফেলে। 


 " দিদিভাই? ও দিদিভাই? কি হয়েছে তোমার? এরকম করছো কেন তুমি? "


শিঞ্জিনী তাড়াতাড়ি চোখ মেলে। চারপাশে তাকিয়ে দেখে যে সে তার নিজের ঘরেই শুয়ে আছে। ঘরটা দিনের আলোয় আলকিত। এদিকে সরুজিনী তার মুখের উপর প্রায় ঝুঁকে পড়ে তাকে ডেকে চলেছে-


 " ও দিদিভাই? কি হল গো তোমার? কোনো খারাপ স্বপ্ন দেখেছ নাকি? আর তুমি এরকমভাবে নিজের গলায় হাত দিয়ে রেখেছ কেন? "


ঠিক তখনি শিঞ্জিনী বুঝতে পারল যে সে নিজেই নিজের গলা হাত দিয়ে সজোরে চেপে ধরে রেখেছে। দ্রুত তার হাত দুটো সরিয়ে ফেলে। হুড়মুড় করে উঠে বসার পর তার বেশ কাশি হতে লাগলো। সরুজিনী সাথে সাথে পাশের টেবিলে রাখা এক গ্লাস জল শিঞ্জিনীর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল- 


 " কি হয়েছে গো দিদিভাই? তোমার কি শরীর খারাপ করছে? এই নাও জলটা খাও। "


শিঞ্জিনী গ্লাসের সব জলটুকু এক নিঃশ্বাসে শেষ করে ফেলল। এখন তার একটু শান্তি লাগছে। সরুজিনী আবার বলল-


 " শরীর কি খুব খারাপ লাগছে? "


 " না সেরকম কিছু নয়। তবে শরীরটা ভালো লাগছে না। "


সরুজিনী ব্যস্ত হয়ে বলল-


 " তাহলে কি ডাক্তার ডাকব? "


 " না না। তার দরকার নেই। আজ আর কলেজ যাব না। বাড়িতেই রেস্ট নিই। তাহলেই ঠিক হয়ে যাবে। "


সরুজিনী মাথা নেড়ে বলল-


 " আচ্ছা ঠিক আছে। তোমার খাবারটা এই টেবিলে রেখে দিয়ে গেলাম। খেয়ে নিও। আমি এখন যাই। কিছু দরকার পড়লে ডেকো আমায়। "


সে ঘর থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার আগে পেছন ফিরে শিঞ্জিনীর উদ্দেশ্যে বলল-


 " কিন্তু দিদিভাই তুমি ঐরকম ভাবে নিজের গলাটা চেপে ধরেছিলে কেন? "


 " একটা খুব বাজে স্বপ্ন দেখেছি। তার জন্যই হয়তো। তুই এখন যা। আমি পরে তোকে ডেকে নেব। "


 " সে এখন যাচ্ছি। তবে তুমি কিন্তু খাবারটা খেয়ে নিও। "


শিঞ্জিনী শুধু হুম করে বাথরুমে চলে গেল। বেসিনের মুখ ধুতে গিয়ে আয়নায় চোখ পড়তেই অবাক হয়ে যায় সে। তার গলায় আঙুলের স্পষ্ট দাগ ফুটে উঠেছে। ধীরে ধীরে তার স্বপ্নটা মনে পড়তে লাগল। সপ্নে যে তার শরীরে দুটো হাত যত্রতত্র ঘোরাঘুরি করছিল। সে সাথে সাথে নিজের রাতের পোশাকটা খুলে দেখার চেষ্টা করল যে শরীরে আর কোনো দাগ আছে কিনা। আর সেই সময় নজরে পড়ল তার বুকে, পেটে, উরুতে আর হাতের বেশ কয়েকটা জায়গায় আঁচড়ের দাগ। শিঞ্জিনী বুঝতে পারে না যে এসব কিভাবে হল? গলাতেও দাগ রয়েছে। তাহলে কি স্বপ্ন দেখার সময় উত্তেজনার বশে এগুলো সে নিজেই করেছে? হয়তো তাই হবে। মানুষতো কত স্বপ্নই দেখে। কিন্তু স্বপ্ন দেখতে গিয়ে কি এরকমটা হয় নাকি? শিঞ্জিনী আর কিছু ভাবতে পারছে না। তার শরীর ভীষণ দুর্বল লাগছে। জামাকাপড় চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে আবার শুয়ে পড়ে। এমন সময় তার ফোনে অর্জুনের কল আসে। কলটা রিসিভ করে সে বলে-


 " হ্যাঁ রে বল। "


 " কি রে তুই আসবি না? আধ ঘণ্টা হয়ে গেল আমি কলেজে এসেছি। কিন্তু তোর তো কোনো পাত্তাই নেই। সকালেও Good morning জানালি না। আর এতোক্ষণ পর ফোনটা রিসিভ করলি। "


 " আসলে আমার শরীরটা ভালো নেই রে। তাই আজ আর যাব না। "


 " কেন? কি হয়েছে? "


 " না সেরকম serious কিছু নয়। শরীরটা একটু দুর্বল লাগছে তাই। "


 " আচ্ছা তাহলে রেস্ট নে। পরে কথা হবে। এখনি ক্লাস শুরু হয়ে যাবে। রাখলাম। "


ফোনটা রেখে দিয়ে ভাবে আজ না হয় সে কলেজে গেল না। কিন্তু কালকের মধ্যে গলার দাগগুলো তো কমবে না। এখন শীতকাল বলে তাই রক্ষে। নাহলে এই অবস্থায় কলেজ যাওয়া তো দূর। বাইরে বেরনোও সম্ভব হত না। তার মনের মধ্যে একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে যে সে এরকম একটা স্বপ্ন দেখল কেন? তার শরীর এতটাই দুর্বল লাগছে যে রাতে যেন সে ঘুমাইনি। রীতিমত কোনো কিছুর সাথে সে যুদ্ধ করে গেছে। দুর্বল শরীরে সে বেশিক্ষণ জেগে থাকতে পারে না। আবার সে ঘুমের দেশে প্রবেশ করে। ঘুম ভাঙে তার কপালে এক স্নেহের স্পর্শে। সে চোখ মেলে দেখে অর্জুন তার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। অর্জুনের চোখে শিঞ্জিনীর প্রতি চিন্তা আর ভালবাসা ফুটে উঠেছে। শিঞ্জিনী অবাক হয়ে উঠে বসে বলে-


 " কি রে তুই কখন এলি? "


 শিঞ্জিনীর উঠে বসার সময় তার গলার দাগগুলো চোখে পরে অর্জুনের। সে অবাক হয়ে বলে-


 " তোর গলায় এগুলো কীসের দাগ? "


শিঞ্জিনী তখন অর্জুনকে স্বপ্নের কথাটা বলে। অর্জুনও বেশ অবাক হয়ে যায় শুনে। শিঞ্জিনী তার বুকের উপর থেকে যতটা সম্ভব অল্পভাবে কাপড় সরিয়ে আঁচড়ের দাগটা দেখায়। অর্জুন সেখানে নিজের হাতের আঙুলের ছোঁয়া লাগায় আলতোভাবে। শিঞ্জিনীর শরীরে যেন এক শিহরণ খেলে গেল। সে তাড়াতাড়ি অর্জুনের হাতটা সরিয়ে দিয়ে বুকের কাপড়টা টেনে নেয়। অর্জুন শিঞ্জিনীর আরও কাছে এসে তার মুখটা নিজের মুখের সামনে তুলে ধরে। দুজনেই এক দৃষ্টিতে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। ধীরে ধীরে দুজনের ঠোঁটের মধ্যে দূরত্ব কমছে। অর্জুনের ঠোঁট দুটো তার ঠোঁটকে ছুঁয়ে ফেলার আগেই শিঞ্জিনী অর্জুনের মুখে হাত রেখে বলে দরজাটা আটকে আসি? এরপরে শিঞ্জিনীর শরীরে যে স্পর্শগুলো এসেছে সেগুলো সবটাই বাঞ্ছিত। সেই স্বপ্নটার মতো অবাঞ্ছিত নয়।


     


             ক্রমশ......                          


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance