অন্তরাল-দ্বিতীয় পর্ব
অন্তরাল-দ্বিতীয় পর্ব
দরজায় টোকা দেওয়ার আওয়াজে সকালে ঘুম ভাঙে শিঞ্জিনীর। আড়মোড়া ভেঙে বিছানায় উঠে বসার পর আবার দরজায় টোকা দেওয়ার আওয়াজ। ঘুম জড়ানো গলায় সে বলে-
" কে? "
" দিদিভাই আমি। সকালে জল খাবার নিয়ে এসেছি। "
শিঞ্জিনীর আচমকাই গতকাল রাতের কথা মনে পড়ে গেল। কাল সরুজিনীকে সে দেখেনি। এখন সকালে এসেছে জল খাবার নিয়ে। শিঞ্জিনী উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। দেখে সরুজিনী মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে একটা ট্রেতে কিছু পাউরুটি আর এক গ্লাস দুধ। শিঞ্জিনী তাকে ভেতরে আসতে দিয়ে বলে-
" তুমি এখানে একটু অপেক্ষা কর। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। তোমার সাথে কিছু কথা আছে। "
এই কথায় সরুজিনী শুধু ঘাড় নেড়ে হাতের ট্রেটা বিছানার পাশে টেবিলটায় রেখে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। শিঞ্জিনী বাথরুমে গিয়ে চোখে মুখে জল দিতে দিতে ভাবছে সরুজিনীকে কি ভাবে কাল রাতের কথাটা বলা যায়? এখনি কি বলবে নাকি আর কয়েকদিন লক্ষ্য রেখে তারপর বলবে? এসব জিনিস তার মাথায় আসত না। যদি না ঐ লোকটাকে মাঝে মাঝে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখত। বাথরুম থেকে বেড়িয়ে শিঞ্জিনী দেখে সরুজিনী বিছানার পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রয়েছে। শিঞ্জিনী হাত মুখ মুছতে মুছতে বলে-
" তোমার শরীর ঠিক আছে তো? "
সরুজিনী মাথা নিচু করে ধীর গলায় বলল-
" হ্যাঁ ঠিক আছে। "
শিঞ্জিনী এবার পাউরুটির প্লেটটা হাতে নিয়ে বিছানায় বসে বলে-
" তাহলে কাল তোমায় দেখতে পেলাম না যে? সকালে নকুল এসে খাবার দিয়ে গেছিল। রাতেও সে-ই এসেছিল। "
সরুজিনী এবার মাথা তুলে কাঁচুমাচু মুখ করে বলে-
" আসলে কাল একটু আমার মাথাটা ব্যাথা ছিল। তাই নকুলদাই বলল যে তোর উপরে যেতে হবে না। আমি গিয়ে ম্যাডামের খাবার দিয়ে আসছি। "
" আচ্ছা। কাল রাতে এই বাড়িতে কেউ এসেছিল?
তার এই সরাসরি প্রশ্নে সরুজিনীর মধ্যে কোনরকম উত্তেজনা দেখা দিল না। যেটাই দেখতে চেয়েছিল শিঞ্জিনী। সরুজিনী শান্ত গলায় বলল -
" আমি বলতে পারব না দিদিভাই। "
" ঠিক আছে তুমি এখন যাও। "
শিঞ্জিনী ভাবে সরুজিনীকে সন্দেহ করার কোন মানেই হয়। অল্প বয়সের একটা মেয়ে। কি-ই বা করতে পারবে? এই বিষয়ে নকুলকে জিজ্ঞেস করাই ভালো হবে। কিন্তু সেও যদি এই ব্যাপারে কিছু বলতে না পারে তাহলে?
এই ঘটনার পর মাঝে দুদিন কেটে যায়। নকুলকে শিঞ্জিনী সেদিন রাতের কথা জিজ্ঞেস করাতে সেও কিছু বলতে পারেনি। এই বিষয়ে কথা বার্তা চলার সময় নকুলের মধ্যে কোনরকম উদ্বেগ বা আশঙ্কা প্রকাশ পায়নি। তবে কি শিঞ্জিনী এই বিষয়গুলো একটু বেশি-ই ভেবে ফেলছে? কিন্তু সেই লোকটা যে মাঝে মাঝে এই বাড়ির দিকে তাকিয়ে অনেক্ষণ ধরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে। তার বেলা? লোকটা কি তাহলে পাগল? নাকি অন্য কোন মতলব রয়েছে? মেসোকে কি এই ব্যপারে কিছু বলা দরকার? এমন সময় কেউ একজন পেছন থেকে শিঞ্জিনীকে হালকা ধাক্কা দিল। সে চমকে পেছন ফিরে দেখে অর্জুন হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
" ওহ্ তুই? আয় বোস্। "
" আজকাল তুই কি এতো ভাবিস বলতো? কিছু কি হয়েছে? আমায় বল না। "
সে তাকে কিছুই বলতে চায় না। এই ঘটনা গুলোর কোনো সরাসরি প্রমান তো সে এখনও পায়নি। এখন অর্জুনকে এই ব্যপারে কিছু বললে শুধু শুধু তার জন্য টেনশন করবে। তাই শিঞ্জিনী কথাটা অন্য ভাবে বলল-
" আসলে মা-বাবার জন্য মন কেমন করছে। ভাবছি সামনের সপ্তাহে একবার বাড়ি ঘুরে আসব। "
" আর এইটা তুই আমাকে এত দিন ধরে বলতে পারলিছিলিস না? "
" এই ছোট ব্যপারটা কি আর বলব তোকে? তাই আর বলিনি। "
অর্জুন শিঞ্জিনীর হাতটা নিজের হাতে নিয়ে নরম উষ্ণতা মাখানো গলায় বলে-
" তোর সব কিছুই কিন্তু আমার কাছে impotant। "
ক্রমশ....