STORYMIRROR

"বেখেয়ালী কলম"

Drama Romance

4  

"বেখেয়ালী কলম"

Drama Romance

#অনপেক্ষিত

#অনপেক্ষিত

6 mins
267

 

  পর্ব-৩ 


কম্প্লেক্সের বাইরের আলো আঁধারি রাস্তাটা একটু গিয়েই মিশেছে বড় রাস্তায়. ধৃতি আর উজান সেই রাস্তা ধরে পৌঁছে যায় চায়ের ঝুপড়িতে. দোকানদার বেশ বয়স্ক. দোকানদার আর ধৃতির কথা শুনে উজান বোঝে এই চায়ের দোকানটা এখানে প্রায় দশ বছর ধরে আছে. উজান আশ্চর্য হয় এটা ভেবে যে এতো বছর এই দোকানটা এখানে আছে অথচ ও কোনোদিন লক্ষ্যই করেনি? অন্তরীক্ষ কে একবার জিজ্ঞাসা করবে ভাবে. তবে যাইহোক চা টা কিন্তু ভীষণ ভালো বানায়. ধৃতির কথা না রাখলে এটা ওর অজানাই থেকে যেত۔۔


চা শেষ করে ধৃতি দাম দিতে গেলে উজান বাধা দেয়۔۔


উজান: আপনি আপনার চায়ের দাম দিন. আমি আমারটা দিচ্ছি.


ধৃতি: আমি যদি আমার টার দাম দিতে পারি আপনারটা পারবোনা কেন?


উজান: আপনাকে কিছুই দিতে হবেনা. দেখে তো মনে হচ্ছে এখনো স্টুডেন্ট. যেদিন রোজগার করবেন সেদিন না হয় খাওয়াবেন. বাবা মায়ের রোজগার অন্যত্র খরচ করার অভ্যেস ভালো না.


ধৃতি: আমি আপনার সাথে ১০০% একমত. তবে কি জানেন, আমার খরচ আমিই চালাই. স্কলারশীপ আছে আমার. এই চায়ের টাকাটাও আমার স্কলারশীপের টাকা. I may be a poor Indian but I can treat you a cup of tea.....in this jhopra atleast...


উজান: তাহলে তো আরোই প্রশ্ন ওঠেনা. স্কলারশীপে এমন কিছু বেশি টাকা দেওয়া হয়না যেটা দিয়ে ট্রিট দেওয়া যায়. And for your kind information I will be happy to have a cup of tea in this jhopra rather than a cup of coffee in a costly coffee shop....but not now...start earning first.


ধৃতি হেসে ফেলে. আর কথা বাড়ায় না, কারণ ও বুঝে গেছে যে উজান এই ব্যাপারে অনড়. উজান দুকাপ চায়ের দাম দিয়ে বেরিয়ে আসে۔۔


ধৃতি: আশা করি আপনার মুড কিছুটা হলেও ঠিক হয়েছে. আপনি তাহলে কমপ্লেক্সে ফিরে যান. আমি একটু বাজারে যাবো, পুজোর কিছু জিনিসপত্র কিনতে হবে۔۔


উজানের কমপ্লেক্সে ফিরতে ইচ্ছে করছিলোনা. কিই বা করবে ফিরে? অন্তরীক্ষর উপর মনে মনে রাগও হচ্ছিলো, ও যে এতক্ষন নেই একবার খোঁজও করলোনা? ভাবতে ভাবতেই অন্তরীক্ষর ফোন. উজান একটু সরে এসে ফোন রিসিভ করে. একটু রাগ দেখানোর পর অন্তরীক্ষকে ওই চায়ের দোকানের ঠিকানা দেয় উজান. উজানের অনুরোধে ধৃতি অপেক্ষা করে যতক্ষণ না উজানের বন্ধু আসছে۔۔ 


অন্তরীক্ষ বেশ অবাক হয় উজান চায়ের দোকানের কথা বলায়. উজান আর চায়ের দোকান? কম্বিনেশনটা বড়ই অদ্ভুত. উজান তো চা ই খায়না. কিন্তু অন্তরীক্ষর আরো অবাক হওয়া বাকি ছিলো. পাঁচ কথা ভাবতে ভাবতে অন্তরীক্ষ এসে উপস্থিত হয় সেই চায়ের দোকানে. দূর থেকে উজানকে একটি মেয়ের সাথে কথা বলতে দেখে অন্তরীক্ষ এবার আকাশ থেকে পড়ে. হচ্ছে টা কি? উজান কোনো মেয়ের সাথে কথা বলছে তাও একান্তে এভাবে চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে? অন্তরীক্ষ নিজের অজান্তেই নিজের দুচোখ কচলে নেয়۔۔۔۔না ও ঠিকই দেখছে. ধীর পায়ে অন্তরীক্ষ এগিয়ে যায় ওদের দিকে. উজান অন্তরীক্ষকে লক্ষ্য করে হাত নেড়ে ইশারা করে. অন্তরীক্ষ ওখানে পৌঁছে আবারো অবাক হয়. উজান আলাপ করিয়ে দেয় মেয়েটির সাথে۔۔۔


উজান: ও হলো অন্তরীক্ষ আমার একমাত্র বন্ধু. আর উনি হলেন ধৃতি আজই আলাপ হলো, আমাদের কমপ্লেক্সেই থাকেন۔۔ You may know each other..


ধৃতি হেসে: অবশ্যই চিনি, আর উনিও আমায় ভালো মতোই চেনেন۔۔


অন্তরীক্ষ হেসে: হ্যাঁ চিনি তো. (ধৃতি কে উদ্দেশ্য করে) তুই এখানে কি করছিস? তোকে তো ওখানে সবাই খুঁজছে۔۔


উজান: সবাই খুঁজচ্ছে না হিয়া? এক্সাক্টলি কে খুঁজছে?


অন্তরীক্ষ একটা ঢোক গিলে বলে: দেখ উজান এতো রাগ করতে নেই. তাছাড়া۔۔۔ (ধৃতির দিকে তাকায়)


ধৃতি হেসে: হ্যাঁ অন্তরীক্ষদা۔۔۔বলতো কে খুঁজছে? নিশ্চই হিয়া? ওর কোনো কাজ নেই, বাদ দাও ওর কথা. আমিও তো কাজেই বেড়িয়েছি. তাছাড়া (উজানকে দেখিয়ে) ওনার কিন্তু হিয়ার উপর রাগের যথেষ্ট কারণ আছে. কাজেই তুমি যদি হিয়ার ওকালতি এই মুহূর্তে না করো তাহলেই ভালো হয়. (উজানকে উদ্দেশ্য করে) কি ঠিক বললাম তো?


উজান মুখে কিছু না বললেও ওর দেহভঙ্গি জানান দেয় যে ও হিয়ার সাথে একমত. অন্তরীক্ষ নির্বাক۔۔


ধৃতি: আমি তাহলে এখন আসি?


উজান: (অন্তরীক্ষকে) তোর কোনো কাজ আছে?

 

অন্তরীক্ষ ইতস্তত করে বলে: হ্যাঁ۔۔۔۔۔মানে, হিয়া۔۔۔۔۔۔(থেমে যায়)


উজান রেগে বলে : যা তুই۔۔


অন্তরীক্ষ: আরে শোন না۔۔۔


উজান: না না۔۔۔۔۔তুই হিয়ার কাছে যা. (ধৃতিকে) আমি যদি আপনার সাথে যাই অসুবিধা আছে?


ধৃতি পড়েছে মুস্কিলে. সে বুঝেছিলো যে উজান হিয়ার উপর রেগে আছে, কিন্তু সেটার প্রাবল্য যে এতটা সেটা বেচারি বুঝতে পারেনি. সে প্রথমটাই কি বলবে বুঝতে পারেনা, তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলে۔۔


ধৃতি: আমার মনে হচ্ছে আপনি খামোকা অন্তরীক্ষদার উপর এতটা রাগ করছেন. (অন্তরীক্ষকে) হিয়া তোমাকে মণ্ডপ সাজানোর দায়িত্ব দিয়েছে তো? কিন্তু আমি যতক্ষণ না জিনিসগুলো কিনে আনবো ততক্ষন তো সাজানো যাবেনা. তুমি এক কাজ করো, ডা: চ্যাটার্জীর সাথে একটু সময় কাটাও না, আমি ফিরে তোমাকে ডেকে নেবো۔۔۔


উজান রেগে ধৃতিকে বলে : আপনাকে আমার তারফদারী করতে কে বলেছে? আপনার অসুবিধা থাকলে সোজাসুজি বলতে পারছেন না?


ধৃতি এবার অন্তরীক্ষর দিকে তাকায়, চোখে সাহায্য প্রার্থীর দৃষ্টি. ধৃতি বেচারি উজানের ঝাড় সেই প্রথম থেকে খেয়ে চলেছে, অকারণেই. এতক্ষন অন্তরীক্ষ একটু টালমাটাল করছিলো কিন্তু এবার পুরো পরিস্থিতিটা ও বুঝে গেছে۔۔


অন্তরীক্ষ: ধৃতি۔۔۔বলছি আমি আর উজানও যাই না তোর সাথে. তোর তো অনেক জিনিসপত্র কেনার আছে, একা আনতে পারবিনা.


ধৃতি: কিন্তু۔۔۔


উজান: আপনাকেও কি হিয়া বলেছে যে একা একা সবটা করতে হবে?


ধৃতি: তা কেন? হিয়ার কি দায় পড়েছে জানতে যাবার আমি একা যাচ্ছি না দলবল নিয়ে? কাজটা হলেই হলো. (একটু থেমে) চলুন۔۔۔


অন্তরীক্ষ: আমি বরং গাড়িটা নিয়ে আসি?


ধৃতি: না না, বড়বাজার যাবো۔۔۔۔গাড়ি পার্ক করা নিয়ে ঝামেলা হতে পারে. ক্যাব বুক করে নেওয়াই ভালো۔۔


সামনের সিটে ধৃতি, পেছনে উজান আর অন্তরীক্ষ. অন্তরীক্ষ আর উজান বহু কিছু আলোচনা করতে থাকে, মাঝে মাঝে ধৃতি সেই আলোচনায় যোগ দিলেও, ও তখন অন্য ভাবনায় নিমজ্জিত۔۔۔


ধৃতি কিছুতেই উজানের এতটা রাগের কারণ অনুধাবন করতে পারেনা. যেটা উজান বলেছে সেটা বড় জোর সামান্য বিরক্তির কারণ হতে পারে, কিন্তু ঘৃণার কারণ হতে পারেকি? হ্যাঁ۔۔۔۔۔۔ঘৃণা, উজান ঘৃণা করে হিয়াকে. এতদিনের পর্যবেক্ষণে ও এইটুকু বুঝেছে যে হিয়াকে সবাই ভালো না বাসলেও, খারাপ ও বাসে না কারণ ও কারোর সাতে পাঁচে থাকেনা. হিয়া পারলে সাহায্য করে কিন্তু ক্ষতি করেনা. বড়োজোর একটু বিরক্ত হতে পারে কেউ কেউ ওর উপর, কারন সবার পেছনে পরে থেকে কাজ করায়. তাহলে উজানের আসল সমস্যাটা কোথায়? নাহ, ব্যাপারটা দেখতে হচ্ছে۔۔


উজান এই প্রথম বড় বাজারে এলো কিছু কিনতে তাও সন্ধ্যের সময়. ওর মনে হচ্ছিলো যেন পুরো কলকাতা শহরটা বড় বাজারে এসে জুটেছে. এতো ভিড়ের মধ্যে উজান যে কমফোর্টেবল না সেটা ওর মুখ নিঃসৃত বিরক্তিকর শব্দ গুলো জানান দিচ্ছে۔۔


ধৃতি সেটা দেখে অন্তরীক্ষকে বলে উজানকে নিয়ে একটু ফাঁকা জায়গায় দাঁড়াতে. কেনাকাটা হলে পর ধৃতি অন্তরীক্ষ আর উজানের কাছে চলে আসে.


ধৃতি: (উজানকে) আপনি এর আগে বড় বাজারে এসেছেন?


উজান: বড় বাজারের উপর দিয়ে গেছি কিন্তু পার্টিকুলারলি বড় বাজারে আসিনি۔۔


ধৃতি: চলুন আপনাকে এখানকার বেস্ট দহি-বড়া খাওয়াই. বড় বাজারে এলেন আর দহি-বড়া খেলেন না তো আর কি করলেন. এমনিও আর কোনোদিন আপনি এখানে আসবেন বলে মনে হয়না۔۔


উজান : আপনি খালি খাই খাই করেন কেন বলুন তো?


সেই সন্ধ্যে থেকে উজানের বকা খেতে খেতে এখন অনেকটা সহ্য হয়ে গেছে ধৃতির. সে বলে۔۔


ধৃতি: সে তো আপনার জন্য. আমি তো অন্য সময়েও খেতে পারি۔۔


অন্তরীক্ষ: হ্যাঁ হ্যাঁ۔۔۔۔۔۔۔۔আমারও খিদে পেয়েছে۔۔۔۔ চল না۔۔


উজান আর কিছু বলেনা. তাছাড়া ধৃতির হাত ধরে উজান অনেক কিছু জানতে পারছে যেটা ও নিজে কোনোদিন জানতে পারেনি, বলা ভালো জানতে চায়নি. এগুলোও তো জীবনের একটা অঙ্গ۔۔


যখন ওরা বাড়ি ফেরে তখন প্রায় রাত আটটা বেজে গেছে. ধৃতি অন্তরীক্ষকে বলে আজ আর অন্তরীক্ষর আসার দরকার নেই পুজো মণ্ডপে, ও যেন উজানের সাথেই থাকে. ধৃতি চলে যাবার পর উজান আর অন্তরীক্ষ উজানদের বাড়িতে আসে. বাড়িতে তখন সমরেশ, বাসবী আর গায়েত্রী দেবী গল্প করছিলেন. উজান এসে হাতে ধরে থাকা প্যাকেটটা বাসবীকে দিয়ে বলে۔۔۔


উজান: দহি-বড়া আছে সবার জন্য. সবাইকে দিয়ে দাও. আমি আর অন্ত খাবোনা, আমরা খেয়ে এসেছি۔۔۔


বাসবী অবাক: দহি-বড়া কোথায় পেলি?


উজান: বড় বাজার গিয়েছিলাম, ওখান থেকেই এনেছি۔۔


বাড়িতে যদি পর পর বোমা পড়তো তাহলেও সবাই হয়তো এতটা চমকাতোনা۔۔


ঠাম্মি: বড় বাজার? তুই গিয়েছিলি? সবার জন্য দহি-বড়াও এনেছিস? কিছুই তো বুঝতে পারছিনা۔۔۔


উজান: না বোঝার কি আছে? আমি, অন্তরীক্ষ আর ধৃতি একসাথেই গিয়েছিলাম. ধৃতির কিছু কেনা কাটা ছিল তোমাদের পুজোর জন্য. ওই বললো বলে খেলাম. ভালো লাগলো তাই তোমাদের জন্যও নিয়ে এলাম. জিনি কোথায়? ওর হিয়াদির কাছে? যাইহোক ওর ভাগেরটা রেখে দিয়ো۔۔


সমরেশ কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু অন্তরীক্ষ ইশারা করে থামিয়ে দেয়۔۔۔


অন্তরীক্ষ: (উজানকে) তুই বরং রুমে যা, আমি আসছি۔۔


উজান আর কথা না বাড়িয়ে নিজের রুমে চলে যায়, আর এদিকে অন্তরীক্ষ সবাইকে পুরো ঘটনাটা বুঝিয়ে বলে۔۔۔


দেখা যাক উজানের এবারের দূর্গাপুজো ধৃতির সাথে কেমন কাটে!!!


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama