অনপেখিত
অনপেখিত
পর্ব-২
উজান কমপ্লেক্স থেকে বেরিয়ে হাঁটতে থাকে. কমপ্লেক্সের বাইরে একটা মন্দিরকে ঘিরে একটা ছোটো বাগান মতো করেছে কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ, উজানের উদ্দেশ্য সেখানেই কিছুক্ষনের জন্য বসার. আশা আছে সেখানে অন্তত "হিয়া" ওর পিছু নেবেনা.
বাগানের ভিতর পৌঁছে দেখে একটা মেয়ে একটা বেদিতে বসে একাই বক বক করে যাচ্ছে. উজানের ভীষণ অবাক লাগে. সাধারণত ও অপরিচিতদের এড়িয়ে চলে, কিন্তু মেয়েটাকে দেখে কৌতূহলী হয়ে উজান মেয়েটার দিকে এগিয়ে যায়۔۔
মেয়েটা: হিয়া হিয়া হিয়া. সবাই জাস্ট পাগল হয়ে গেছে. হিয়া সব পারে, আর তো কোনো লোকই নেই কাজ করার. কি মনে করে কি ওরা? ওদের এতো আদিক্ষেতা না আর জাস্ট সহ্য হচ্ছেনা۔۔
মেয়েটা নিজের মনে বক বক করতে করতে হঠাৎই সামনে উজানকে দেখতে পায়. জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে উজানের দিকে তাকিয়ে বলে۔۔
মেয়েটা: আপনি? এর আগে আপনাকে দেখেছি বলে তো মনে হয়না. (কয়েক সেকেন্ডের বিরতি) দেখুন মাথা আমার ভীষণ গরম হয়ে আছে. এখন আপনি আসুন প্লিজ۔۔
উজান: আপনি হিয়ার ব্যাপারে কি যেন বলছিলেন?
মেয়েটা: কেন? আপনার অসুবিধা আছে?
উজান এবার মেয়েটার পাশে বেদিতে বসে পড়ে. উজানের ব্যবহারে মেয়েটা যারপর ন্যায় অবাক হয়.
মেয়েটা: আপনার সমস্যাটা কি বলুন তো? একবার বললাম না আমার মাথা গরম আছে এখন যান?
উজান: আমার মাথাও গরম আছে۔۔
উজানের উত্তরে মেয়েটা থতমত খায় মুহুর্তের জন্য. তারপর দ্রুত সামলে নিয়ে বলে: তো? আমি কি করতে পারি?
উজান: আপনি কিছু করতে পারবেন না. তবে আমার আর আপনার মাথা গরমের কারণটা এক কিনা, তাই আপনার সমস্যাটা আমি কিছুটা হলেও বুঝতে পারছি۔۔
মেয়েটা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে: মানে? আপনার আর আমার সমস্যা এক কি করে হলো বুঝলামনা۔۔
উজান: হিয়া۔۔
মেয়েটা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করে: হিয়া? হিয়া আপনার সমস্যার কারণ? কিভাবে?
উজান: ওই যে আপনি বলছিলেন না সবাই শুধু "হিয়া হিয়া হিয়া" করে. যেন আর কেউ কিছু পারেনা, বোঝেনা. আসলে AIIMS এ ডাক্তারি পড়ে তো তাই ও এই ইম্পর্টেন্সটা পায়۔۔
মেয়েটা এবার কিছুক্ষন উজানকে দেখে, বোঝার চেষ্টা করে উজান ঠিক কি বলতে চাইছে. তারপর একটু শান্ত হয়ে প্রশ্ন করে: হিয়া আপনার সাথে কি করেছে? না খুব রেগে আছেন দেখছি তো তাই۔۔۔
উজান: ওই একটা নাম শুনতে শুনতে আমি গত তিন দিনে জাস্ট পাগল হয়ে যাবো মনে হচ্ছে, উফ۔۔
মেয়েটা: আপনার সাথে ওর আলাপ হয়েছে? মানে এই কমপ্লেক্সে হিয়ার বিরুদ্ধে আপনি আমার দেখা প্রথম কেস কিনা, তাই۔۔
উজান: প্লিজ আমাকে ক্ষমা করুন. ওর নাম শুনেই যে পরিমান ইরিটেশন হচ্ছে সামনে দেখলে যে কি করে বসবো কে জানে۔۔
তিনদিন ধরে জমানো নিজের সবটুকু ফ্রাস্ট্রেশন মেয়েটার কাছে উজাড় করে দেয় উজান. মেয়েটা উজানের কথা শুনতে শুনতে নিজে সম্পূর্ণ শান্ত হয়ে যায়. এবার উজানের উদ্দেশ্যে বলে۔۔
মেয়েটা: বুঝলাম. হিয়া নিজের অজান্তেই আপনাকে খুব বিরক্ত করেছে. কি আর করবেন? ক্ষমা করে দিন বেচারিকে. আচ্ছা ঠিক আছে, হিয়াকে নাহয় আমিই বলে দেব যাতে আপনার সামনে না আসে. কিন্তু বাকিদের মুখ কি করে বন্ধ করি বলুনতো? Any idea? (কিছুক্ষন চুপ করে থেকে) আপনাকে কিন্তু ঠিক চিনতে পারলামনা. আপনি এই কমপ্লেক্সেই থাকেন?
উজান: হুম. আমি উজান۔۔۔۔ ডা: উজান চ্যাটার্জী. আসলে এখানে থাকা হয়না আর এলেও কম দিনের জন্য আসি. তাই হয়তো চেনেন না۔۔
মেয়েটি হেসে: হাই۔۔۔ আমি ধৃতি. আপনার সাথে আলাপ হয়ে ভালো লাগলো. বেশ ইন্টারেষ্টিং মানুষ আপনি.
উজান ভ্রুতে ভাঁজ পড়ে: ইন্টারেষ্টিং এর কি হলো?
ধৃতি: হলো না? না দেখেই শত্রু বানিয়ে ফেললেন? আপনি তো মশাই সেই দলে۔۔
উজান: দল? কোন দল?
ধৃতি: ওই যে۔۔۔
তারে আমি চোখে দেখেনি
তার অনেক গল্প শুনেছি
গল্প শুনে তারে আমি অল্প অল্প ভালবেসেছি।
বলেই ধৃতি হেসে গড়িয়ে পড়ে۔۔
উজান রেগে: আপনার এটা লাভস্টোরি মনে হচ্ছে?
ধৃতি হাসতে হাসতে: লাভ স্টোরি না হলেও, গল্পটা কিন্তু ঐরকমই۔۔۔
উজান বিরক্তি ভরে বলে: Oh Please, I am the last person to love that girl..
ধৃতি: না না۔۔۔۔ ভালোবাসতে বলিনি. আমি আসলে বলতে চেয়েছিলাম যে হিয়া কে যেমন না দেখে অপছন্দ করে ফেলেছেন, তেমনই কোনোদিন কাউকে না দেখে তার প্রেমে পড়ে যাবেন. দেখুন আপনি না ওই সব সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলো থেকে একটু দূরে থাকবেন. বলা তো যায় না۔۔
উজান আরো রেগে যায়: এই আপনি না এতক্ষন ভীষণ রেগে হিয়ার পিন্ডি চটকাচ্ছিলেন? আর এখন হেসে গড়িয়ে পড়ছেন? খুব মজা পেয়েছেন মনে হচ্ছে?
ধৃতি : আরে মশাই এতক্ষন তো শুধু আমি একা ছিলাম তাই রাগটা অনেকটা হয়েছিল. এবার আরেকজন পার্টনার পেয়ে গেছি তাই একটু কমে গেছে.
উজান ভ্রু কুঁচকে: পার্টনার?
ধৃতি: হ্যাঁ۔۔ একজন হিয়া হেটার۔۔۔সত্যি বড্ডো বেশি আদিখ্যেতা এদের۔۔ এতোটা মানা যায়না۔۔
ধৃতির কথা শুনে উজানের রাগটা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে. একটু হালকা চাপা হাসিও দেখা দেয় উজানের ঠোঁটের ফাঁকে. সেটা দেখে ধৃতি বলে۔۔
ধৃতি: আপনার সাথে কথা বলে আমার রাগ তো কমে গেছে۔۔ এখন মনে হচ্ছে আপনার রাগটাও কমে গেছে. কি তাই তো?
উজান মাথা নেড়ে "হ্যাঁ" বললে ধৃতি বলে۔۔
ধৃতি: চা খাবেন? একটু দূরে রাস্তার পাশে একটা ছোট ঝোপড়া আছে. দারুন লেবুচা বানায়. যাবেন? এই সামনে. হেঁটে যেতে পাঁচ মিনিট লাগবে۔۔
উজান স্থির দৃষ্টিতে ধৃতির দিকে তাকিয়ে থাকলে ধৃতি বলে۔۔
ধৃতি: আরে কোনো ব্যাপার না. আমি বললাম বলেই যে যেতে হবে তেমনটা মোটেই না. আমি এখন আসি তাহলে? আপনার সাথে আলাপ করে খুব ভালো লাগলো. এক কমপ্লেক্সেই যখন থাকি তখন হয়তো পরেও দেখা হয়ে যেতে পারে. বাই (ধৃতি চলে যেতে উদ্যত হয়)
উজান: দাঁড়ান۔۔۔ আমি কি বলেছি যে যাবোনা? চলুন. এমনিতেও আজ ওই হিয়ার চক্করে অন্তরীক্ষর সাথে বেরোনো হলোনা. মাথাটা বড্ডো ধরেছে. এক কাপ লেবু চা হলে মন্দ হবেনা۔۔
ধৃতি হেসে উঠে দাঁড়ায়: চলুন তাহলে۔۔
ধৃতি আর উজান একসাথে হাঁটতে থাকে۔۔۔۔
দেখা যাক ধৃতি উজানের সম্পর্ক কেমন হয়!!!

