অণুঘটক
অণুঘটক
বিতান কিন্তু সৌরভের বেস্ট ফ্রেন্ড।শুধু বেস্ট বলাটাও ভুল হবে।একেবারে অন্তরঙ্গ আর কি।
তা সত্ত্বেও সৌরভের জন্য বিয়ের পাত্রী দেখতে গিয়ে,বিতান গোপনে কলকাঠি নাড়ানোর ঘৃণ্যতম কাজটা করে এসেছে।
সে কথা অবশ্য সৌরভ জানে না।
পাত্রীর নাম মালবিকা।দেখতে খারাপ না।পোশাক,আশাকে অত্যাধুনিক ছাপ ।সাবেকী রীতির সে একদম বীরুদ্ধে।চা,জল,মিষ্টি এসবের একটাও নিজের হাতে সার্ভ করেনি।
বরং তার মাই হাসি মুখে সকলের আপ্প্যায়ন করছিলেন।
মালবিকা খোলা চুলে যথারীতি মোবাইলে চ্যাট করছিল।
আর মাঝে,মাঝে পাত্রপক্ষের লোকজনকে আড়চোখে মেপে নিচ্ছিল।
এক সময় সৌরভকে,মালবিকার সাথে একান্তে কথা বলার জন্য ওপরের ব্যালকনিতে পাঠানো হল।
সৌরভের মুখ হাসি,হাসিই ছিল।তবু
বিতান একবার গোপনে গুতো মেরে জিজ্ঞাসা করেছিল,কিরে কেমন বুঝলি?
সৌরভ লাজুক হাসিটা পুরু গোফের আড়ালে লুকিয়ে বলেছিল,অসুবিধা নেই।
---আর ওর?
---সেটা তো ওর ব্যাপার।আমি কি করে বলবো?
---বুঝেছি।
তার কিছুক্ষণ পর বিতানও একবার মালবিকার সাথে আলাপ করার জন্য ওঠে গেছিল।সেখান থেকে ফিরেই তারা বেরিয়ে পড়েছিল।
ফোনটা এলো ঠিক রাত সাড়ে দশটাই।
সৌরভ তার আগামী কাব্যগ্রন্থের প্রুফ রিডিংটা চেক করছিল।
এমন সময় সেলফোনেটা গুরগুর করে কেঁপে উঠল।
নাম্বারটা সেভ করা আছে।তাই সৌরভের বুকের গতি হঠাৎ বেড়ে গেল।
মালবিকার ফোন!
সৌরভ রিসিভ করল।
---হ্যালো।
---বলছি,ফ্রি আছেন তো?
---হ্যা..হ্যা বলুন।
---একটা প্রশ্ন করার ছিল।আশা করি সঠিক উত্তর দেবেন?
সৌরভের হৃদগতি বাড়ছে।
---অফকোর্স।
মালবিকা গলা ঝেড়ে বলে উঠল।
---আপনি নাকি কবিতাকে খুব ভালবাসেন?
---একদম সত্যি কথা।খুব।
---কতদিন ধরে?
----তা ধরুন মোটামুটি বছর দশেক ধরে।
---ও তাই! আপনি হঠাৎ আমাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত কেন নিলেন?
----বাহ্ রে.. জীবনে তো একজনকে চাই।
---সে তো আপনার আছে।কবিতা।
---কবিতা আমার প্রথম ভালবাসা।আমার অবসর সময়ের নিশ্বাস।কিন্তু তুমি হবে আমার সর্বক্ষণের সাথী।সুখে,দুঃখের একমাত্র ভরসা।
---বাঃ...খুব সুন্দর কথা বলেন তো দেখছি!আমি তাহলে ভুল কিছু শুনিনি,তাই তো?একটা কথা কান খুলে শুনে রাখুন মিঃ সৌরভ সরকার।আমি কারু রক্ষীতা হতে চাই না।সবথেকে ভাল,আপনি একজন বেশ্যাকে বিয়ে করে ফেলুন।সুখে থাকবেন।
তারপরেই মালবিকা কলটা কেটে দিল।
সৌরভ তো রীতিমতো অবাক হয়ে গেল।
একি রে বাবা!একি কথা শোনাল?মেয়েটার কি মাথা,টাথা খারাপ আছে?নাহলে এরকম অভদ্র ভাষায় কেউ অপমান করে?
নাকি মেয়েটার কবিতাই এলার্জি আছে?থাকতেও পারে।সবাই যে কবি
তাকে ভালবাসবে সে তো আর না।তা হলেও এমনভাবে কথা বলার কি ছিল?অপছন্দের কথা,ভদ্রভাবেও তো বলা যায়।
এই ঘটনার পর মোটামুটি একবছর আর কোন মেয়ে দেখতে গেল না সৌরভ।
অপমানজনক কথাগুলো তার স্মৃতি থেকে কিছুতেই সরছিল না।
শেষ,মেশ তার এক বৌদির পীড়াপীড়িতে এক বছর পর আবার একটি মেয়েকে দেখতে যাওয়ার জন্য রাজি হল।
তবে তার শর্ত মেনে।
দেখা সে করবে,কথাবার্তাও হবে।কিন্তু তাদের ঘরে গিয়ে না।কোন রেস্টুরেন্ট অথবা পার্কে।কারণ বার,বার বাড়ি গিয়ে সে অপমান হয়ে ফিরে আসতে পারবে না।প্রথম দেখাই সবকিছু ঠিকঠাক হলে,তবেই বাড়ি যাবে।তার আগে নয়।
তাতে মেয়েটিও নাকি রাজি।
সেই মতো একদিন চুপিচুপি বিতানকে ফাঁকি দিয়ে সৌরভ মেয়েটির সাথে দেখা করতে পার্কের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল ।
গিয়ে দেখল,মেয়েটি আগে থেকেই একজন বান্ধবীকে সাথে নিয়ে বেঞ্চে বসে রয়েছে ।
প্রথম দেখাতেই সৌরভের ভাল লেগে গেল। কারণটা সে নিজেও জানে না।হয়তো মেয়েটির ঢলা,ঢলা চোখ অথবা বেগুনি চুড়িদার নতুবা প্রকৃতির মূর্ততা মেয়েটির শরীরে ছড়িয়ে ছিল বলেই।
আবার অন্য কোন কারণও হতে পারে।সঠিক সেও জানে না।
মেয়েটির আরো কিছুকে ভাল লেগে যাক,তার আগে সৌরভ আসল কথাটা সেরে নিতে চাইল।
তাই কোনরকম ভূমিকা ছাড়াই,সৌরভ বলে উঠল,আপনাকে একটা কথা আগেই জানিয়ে রাখি।সে সব জেনে যদি সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চান,নো প্রবলেম।কিন্তু না চাইলে প্রথমেই বলে দেবেন।
তারপর সৌরভ নিজেকে অল্প গুছিয়ে বলে উঠল,আমি কবিতাকে ভীষণ ভালবাসি।কবিতা আমার জীবন।তাকে ছাড়া আমি নিঃশ্বাস নিতেও ভয় পাই।আজ দশ বছর ধরে আমি কবিতাকে নিয়ে বেঁচে আছি।
সৌরভ আরো কিছু বলার আগেই মেয়েটি এক গাল হেসে বলে উঠল,আমি জানি।আর জানি বলেই,আপনাকে আরো বেশি করে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিল।
সৌরভ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল।
---কিন্তু এসব কথা আপনাকে কে বলল?
---কেন আপনার বন্ধু বিতান।ওই তো উনি।আমাদের জন্য পাপড়ি চাট আনছেন।
সৌরভের মুখে কথা হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম।
মেয়েটি বলে উঠল,আপনার সব কটি কাব্যগ্রন্থ আমি বিতানবাবুর কাছ থেকে নিয়ে নিয়েছি।সত্যি কথা কি জানেন,কবিতাকে আমিও ভালবাসি।তবে লিখতে পারিনা।
ততক্ষণে বিতান পাপড়ি চাটের প্লেট হাতে সামনে এসে গেছে।
শান্ত গলায় সৌরভকে উদ্দেশ্যে করে বলে উঠল,আমাকে ফাঁকি দেওয়া এত সহজ নয় রে।এবার তুই চোখ বুজে অঙ্কিতাকে ঘরে তোল।কোন সমস্যা নেই।সতীন নিয়ে ঘর করতে পারবে।প্রথমবারেরটা বড্ড হিংসুটে ছিল।ওকেও তোর কবিতাপ্রেমের কথাটা আমিই বলেছিলাম।
এতক্ষণে সৌরভের মুখের হা বুজে গেল।
তারপরেই তুমুল অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল।
------সমাপ্ত-----