STORYMIRROR

Sharmistha Mukherjee

Inspirational Thriller

4  

Sharmistha Mukherjee

Inspirational Thriller

অন্ধকারে কে দাঁড়িয়ে ?

অন্ধকারে কে দাঁড়িয়ে ?

4 mins
265


ঘুমের মধ্যে ছটফট করছে সপ্তর্ষি । পুরো ঘেমে-নেয়ে স্নান । মুখে সমানে আওড়ে চলেছে একই বুলি, " আমাকে আর কামড় দিও না আমার লাগছে । কে তুমি ? বলো কে তুমি ? " অপরপক্ষ উত্তর দিলো, " আমি কে দেখে চিনতে পারছিস না ? আমি সপ্তর্ষি । ভালো করে দ্যাখ আমার মুখটা । পারছিস চিনতে ? " ঘুমের মধ্যে সপ্তর্ষি বললো , " হ্যাঁ, হ্যাঁ এতো আমি । হ্যাঁ তুমিতো পুরো আমার মতো দেখতে কিন্তু , শরীরটা ! তোমার শরীরটা সাপের মতো অথচ মুখটা আমার ? এটা কি করে সম্ভব ? " সর্পরূপী সপ্তর্ষি উত্তর দিলো , " যাক চিনতে পেরেছিস তাহলে ! কিন্তু আমার শরীরটা সাপের মতো কেনো বুঝতে পারছিস না ? আমি তোকে এতো দংশন করেছি কেনো তাও তো বোঝা উচিত ছিল । আমি , আমি তোর মনের অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা বিবেক । বিবেকের দংশন কথাটা নিশ্চয়ই শুনেছিস ? " এই বলেই সাথে সাথে আবারও দংশন করলো ঘুমন্ত 

সপ্তর্ষিকে । আবারও সপ্তর্ষি আর্তনাদ করে উঠলো প্রচন্ড যন্ত্রনায় । ছেলের চীৎকার শুনে পাশের ঘর থেকে ছুটে এলো সপ্তর্ষির মা - বাবা । দরজা খুলে ঘরে ঢুকে আলো জ্বালাতেই সপ্তর্ষি চীৎকার করে বললো , " মা ঘরে সাপ , একটা বিশাল বড়ো সাপ । আমাকে দংশন করে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে দ্যাখো । " ছেলের এই অবস্থা দেখে ওর মা গিয়ে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলো , " কোথায় সাপ ? কিছু নেই বাবা, তুই স্বপ্ন দেখেছিস । আচ্ছা ঠিক আছে আমি এখানেই থাকছি । " সেদিন রাতটা কোনোরকম ভাবে কাটলেও প্রায় প্রত্যেক দিন রাতে একই ঘটনা ঘটতে থাকে । দিন পাঁচেক পর সপ্তর্ষি একদিন ভোর হতেই ছুটে যায় অহনার বাপের বাড়িতে । বার বার দরজায় টোকা দিতে দরজা খুললেন অহনার মা । কোনো কথা না বলেই অহনার শোবার ঘরের দিকে ছুটে গিয়ে পা দুটো জড়িয়ে ধরে হাউহাউ করে কেঁদে ফেলে । ঘুমের মধ্যে হঠাৎ পা ধরে কান্নার শব্দ শুনে উঠে বসে অহনা । অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে , " একি তুমি ? তুমি এতো সকালে এখানে ? কেনো এসেছো এখানে , বেরিয়ে যাও এখান থেকে । " এই কথা শুনে গত পাঁচ দিন রাতের সমস্ত ঘটনা খুলে বলে সপ্তর্ষি তার স্ত্রী অহনাকে । পা জরিয়ে ধরে ক্ষমা চায় , " আমি খুব ভুল করেছি অহনা । এক বার না, দু বার না, বার বার ভুল করেছি আমি । না না ভুল না , ভুল না , অন্যায় করেছি চরম অন্যায় করেছি আমি । আজ তোমার এই অবস্থার জন্য আমিই দায়ী । মা - বাবার প্ররোচনায় প্ররোচিত হয়ে বংশরক্ষার তাগিদে সাত বার তোমার গর্ভপাত করেয়েছি । আমার বন্ধু ডাক্তার নিলয় পাঁচ বার গর্ভপাত করানোর সময় বার বার বলেছিল," তুই বুঝতে পারছিস না সপ্তর্ষি এতো বার গর্ভপাত করানো ঠিক নয় । Carcinogenic uterine risk of repeated abortions । মানে জরায়ুতে ক্যান্সার হতে পারে । এটা খুবই বিপদজনক । আমি পারবো না এতো গর্ভপাত করাতে । " তখন আমি ওকে ভয় দেখিয়েছিলাম যে তোর নামে পুলিশের কাছে গিয়ে সব বলে দেবো তাতে আমার যা হবে হোক কিন্তু তোর ভবিষ্যৎ শেষ করে দেবো । " তাই বাধ্য হয়ে নিলয় সাত বার তোমার গর্ভপাত করতে বাধ্য হয় । আর এতো বার গর্ভপাত করানোর জন্য তুমি আজ মৃত্যুর মুখে । আমাকে ক্ষমা করে দাও please । আমি রোজ বিবেকের দংশন নিয়ে বাঁচতে পারবো না । " অহনা দিনের পর দিন ভালোবাসার মানুষটার হাতে ঠকতে ঠকতে নিজেকে পাষাণ করে তুলেছিল । সপ্তর্ষির সব কথা চুপচাপ শুনে ঠান্ডা মাথায় উত্তর দিলো , " বাঁচতে পারবে নাতো মরে যাও । আর তোমার মতো মানুষের বেঁচে থাকা মানে পৃথিবীর উপর বিশাল বোঝা । না তার বরং তোমার না বেঁচে থাকাই ভালো । আর রইলো পড়ে আমার কথা, আমি এমনিও বেশিদিন বাঁচবো না । আমার বিধবা মায়ের এতো সামর্থ্য নেই যে আমার ভালো করে চিকিৎসা করাবে । আর তুমিতো আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিলে যখন তোমার মা - বাবা বললেন , " খোকা এখন কিন্তু অনেক খরচ , তুই পুরো ভিখারি হয়ে যাবি । তার থেকে ভালো তুই বৌমাকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দে । আর আগ বাড়িয়ে কোনো খোঁজ খবর নিতে হবে না । সেদিন তোমাদের জন্য চা নিয়ে যাবার সময় আমি আড়াল থেকে সব শুনেছি । যা করেছো খুব ভালো করেছো । আসলে কি জানোতো , ভালোবাসার হাতে বন্দী হয়ে আমি তোমার অনেক অন্যায় সহ্য করেছি । এখন তোমাকে দেখলে আমার রীতিমতো ঘৃণা করছে । এখনি বেরিয়ে যাও আমার বাড়ি থেকে , আমি বেঁচে থাকতে তোমার মুখ যেন কোনোদিন দেখতে না হয় । যাও , যাও বলছি , যাও ওওওও.......... " - এই বলে অহনা চীৎকার করে ওঠে । মাথা নীচু করে আস্তে আস্তে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় সপ্তর্ষি । অদ্ভুত ভাবে কোনোদিন রাতে শান্তির ঘুম ঘুমাতে পারেনি সে । ভালোবাসার ছলনায় একটু একটু করে অহনাকে সাপের মতো আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধীরে ধীরে মৃত্যু মুখে ঠেলে দিয়েছে সে তাই বিবেক সর্পরূপে প্রত্যহ তাকে দংশন করে চলেছে । প্রায় মাসখানেক বাদে ভয়াবহ মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে সপ্তর্ষি আত্মহত্যা করে ।সপ্তর্ষির বাবা - মাও একমাত্র সন্তান হারিয়ে প্রায় পাগলের মতো অবস্থা । অপরদিকে আস্তে আস্তে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে অহনাও । 


কথায় বলে বিবেকের দংশনের হাত থেকে স্বয়ং ভগবানেরও রেহাই নেই আর মানুষ তো ছাড় ! তাই এই প্রবাদটি এক্কেবারে সঠিক -

" ভাবিয়া করিও কাজ , করিয়া ভাবিও না "। 



 🔸🔸🔸🔸 সমাপ্ত 🔸🔸🔸🔸


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational