STORYMIRROR

Anishri's Epilogue

Drama Romance

3  

Anishri's Epilogue

Drama Romance

অনাদৃতা (পর্ব ২)

অনাদৃতা (পর্ব ২)

18 mins
198

নিয়তির কাছে পথহারা দুই পথিক... একজন শত প্রতিকূলতা, শত দুঃখ-কষ্টের মধ্যেও নিজেকে হারিয়ে যেতে দেয় নি... বয়স যতই কম হোক, তার চারিদিক দৃঢ়তা পর্বতসম, লক্ষ্য স্থির, আর চেষ্টা অন্তহীন... হয়তো কখনও কখনও এলোমেলো হয়ে যায়- কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল... কিন্তু, তার স্বপ্নগুলোকে বড় যত্নে সে আগলে রাখে সকলের চোখের আড়ালে...

আরেকজনের কাছে এই ধূসর পৃথিবীতে বেঁচে থাকাটা ক্লান্তিকর ভারী... ইচ্ছে করে তার চেতনায় আর কেউ কড়া নাড়ে না- না স্বপ্ন, না দুঃস্বপ্ন, না রূপকথা... তার ক্লান্ত শরীরে কেবল অবসন্নতার ছাপ পড়ে....

Pune :

----------

সবাই ক্লাসে ঢুকে দেখে মৈথিলী একদম পেছনের বেঞ্চে চুপ করে মাথা নীচু করে বসে আছে... এষণা পড়াশোনাতে খুব ভালো, তাই সবাই আসতেই সে মৈথিলীর পাশ থেকে উঠে First Bench-এ চলে যায়... দিব্যান্ত দিব্যাকে কানে কানে বলে,

দিব্যান্ত : Please Diva, ওকে একটু বোঝা... সবসময় সবকিছুর দায় নিজের কাঁধে নিতে নেই... এতে শুধু মনের ভার বাড়ে, সমস্যার সমাধান হয় না...

দিব্যা : তুই চিন্তা করিস না, দেব... আমি সব ঠিক করে দেব... ও ভীষণ Emotional... ও যদি জানে, ওর জন্য আমি আর তুই কষ্ট পাচ্ছি... ও এক মূহুর্তের জন্যও নিজের কথা ভাববে না... দেখবি....

দিব্যান্ত : এটা তো খুব ভয়ের... কখনো কখনো তো নিজের কথাও ভাবতে হয় মানুষকে... এত আবেগতাড়িত হওয়া ভালো না... Thank You for sharing....

দিব্যা : You are most welcome... আচ্ছা তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি, অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম... দেব,তোর আমাকে কেমন লাগে !!!

বলেই একটু হাসি নিয়ে দিব্যান্ত-র দিকে তাকায় দিব্যা...

দিব্যান্ত : এ বাবার কেমন প্রশ্ন রে বাবা !! Well, জানতে যখন চাইলি তখন বলি, You are Cute and Bubbly... Always Bubble with Happiness... Just like a 'Diva' ....

বলেই হাসতে থাকে দিব্যান্ত...

দিব্যা : ব্যাস... আর কিছু না !!!

দিব্যান্ত : আবার কি !! Full of Life...

দিব্যা ঠোঁট ফুলিয়ে মৈথিলীর পাশে গিয়ে বসে... ছেলেদের Row-তে দিব্যান্ত এমন একটা জায়গাতে বসে যাতে ও সহজেই এই মানিকজোড়কে দেখতে পায়... দিব্যান্ত-র দিকে একটা আলতো হাসি হেসে মৈথিলীর হাতের উপর আলতো করে হাত রেখে হিসহিসে গলায় মৈথিলীকে বলে,

দিব্যা : ওইভাবে চলে এলি কেন !! সবাই কি ভাবলো !!!

মৈথিলী : এবার থেকে আমি একাই যাওয়া আসা করব... এত কথা আমার ভালো লাগে না...

দিব্যা : শোন আজ দেব আমাদেরকে ঘুরতে নিয়ে যাবে... Scene create না করে চুপচাপ যাবি... আমার আর দেব-এর Relationship-টা হয়ে গেলে তোকে বলবোও না বেরতে... কিন্তু যতদিন না হচ্ছে, তোকে আমার কথামতো চলতে হবে... আমি যেটা বলছি, সেটা না পেলে আমি কিন্তু কেলেঙ্কারি করব বলে দিলাম... আর তুই তো জানিসই- আমার কথাই শেষ কথা... আমি যা চাই, তা পেয়েই ছাড়ি... and that's Final... আর আমি কিছু করলে আমার Roommate হিসেবে সব দোষ গিয়ে পড়বে তোর উপর... আর, তুই যাবি নাই বা কেন !!! সেই তো ঘরে ঢুকে ঢুকে Sad Luxury আরম্ভ করিস... অসহ্য !! এইবার অন্তত চল আমার জন্য !! আজ কিন্তু 'না' করিস না... আর তা না হলে...

চুপ করে শোনে মৈথিলী... শুধু বুঝতে পারেনা এর সাথে তার কি সম্পর্ক !! বিকেলে তিনজনে একসাথে ঘুরতে বেরোয়... কিন্তু আজ আকাশের সাথে সাথে মৈথিলীরও মুখ ভার... দিব্যাকে ICE CREAM আনতে বলে দিব্যান্ত মৈথিলীর কানের কাছে মুখ নামিয়ে বলে,

দিব্যান্ত :

'আমার এই স্বেচ্ছা একাকীত্ব,

এই একলা যাপন আমার বিলাসিতা....

এ শুধু তোমায় নিয়ে কাল কাটানোর অভীপ্সা...'

                    (সংগৃহীত : বৃষ্টিস্নাত, মানসী গাঙ্গুলী)

তোমার পথ চেয়ে অপেক্ষায় কাটিয়ে দিতে পারি কয়েকটা জন্ম... এই অনন্ত অপেক্ষার সবে তো শুরু এই জন্মে...

কড়া দৃষ্টিতে দিব্যান্ত-র দিকে তাকিয়ে মৈথিলী বলে ওঠে,

মৈথিলী : কথাগুলো কি আমাকে বললি !!

দিব্যান্ত : নাহহহ... দিব্যাকে... আর কেউ আছে এখানে !! জানিস, সবাই চাইছে আমার সাথে দিব্যার প্রেমটা হোক...

মৈথিলী : ওহহহ, তাই মহড়াটা কি আমাকে দিয়ে শুরু করলি...

দিব্যান্ত : আমার তোদের দু'জনের সাথে কথা বলতে খুব ভালো লাগে জানিস তো !!! মনে হয়, তোদের দু'জনের কারুর একজনের সাথে আমার Love at First Sight হয়েছে...

মৈথিলী : আমি কিন্তু এখান থেকে চলে যাব... আর শোন, দিব্যা তোর উপযুক্ত মেয়ে... পারলে ওর হাতটা শক্ত করে ধরিস....

দিব্যান্ত : Ohhh WOW.... এত অল্প আলাপে তুই আমাকে এত ভালো করে চিনে গেলি যে, কে আমার উপযুক্ত আর কে আমার অনুপযুক্ত সব বুঝে গেলি... তাহলে তো আমার তোর সাথেই প্রেম করা উচিত...

মৈথিলী : আমি কিন্তু...

কথাটা আর শেষ করে উঠতে পারে না, তার আগেই দিব্যান্ত কথার খেইটা ধরে নেয়...

দিব্যান্ত : তোর যদি আমার উপস্থিতি ভালো না লাগে বল, আমিই চলে যাচ্ছি...

মৈথিলী তার নরম তুলতুলে হাত দিয়ে দিব্যান্ত-র অঞ্জলি শক্ত করে আঁকড়ে ধরে, দিব্যান্ত-র মুখটা মূহুর্তেই আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে... মুখ নামিয়েই আকুতিমাখা নরম স্বরে বলে ওঠে,

মৈথিলী : Please, চলে যাস না... দিব্যা অনেক আশা নিয়ে এসেছে আজ...

দিব্যান্ত : (একটা অদ্ভুত সুরে) আমিও তো এসেছি...

মৈথিলী : দিব্যার জন্য !!! তাই না !!!

হঠাৎই দিব্যান্ত-র মুখের উজ্জ্বলতা যেন কালো মেঘে ঢেকে গেল... মৈথিলীর হাতটা ছাড়িয়ে কঠিন স্বরে বলে ওঠে,

দিব্যান্ত : সবসময়ই দিব্যা, দিব্যা করিস কেন !!! Lesbian না কি তুই !!!

মৈথিলী : (চাপা স্বরে চেঁচিয়ে ওঠে) দিব্যান্ত...

দিব্যান্ত : পরের জন্য বাঁচাটা একটু কমা মৈথি... তোকে জীবন হাত বাড়িয়ে আলিঙ্গন করতে চাইলেও তুই সেই আলিঙ্গন নিতে পারিস না... আমার তোকে নিয়ে খুব ভয় লাগে জানিস... পরের জন্য আত্মবলিদান দিতে দিতে কোনোদিন না তুই একেবারেই শেষ হয়ে যাস...

মৈথিলী : Who Cares !!!

দিব্যান্ত : আম... আমি...

দিব্যা : এই তোরা হাত ধরাধরি করে কি এত কথা বলছিস !!! মৈথি !!! কি রে !!!

দিব্যান্ত : তোর মৈথি আমাকে বলছিল, আমার মতো Handsome Hunk-কে 'The Heart of Deccan College' - কে Propose করা উচিত... ওই হাত ধরে অনুনয় বিনয় করছিল আর কি... কি বলিস দিব্যা, Propose করব না কি !!!

দিব্যা : দেখ, আমি মৈথিলী নই হ্যাঁ, যে অনুনয় বিনয় করে আমাকে প্রেমভিক্ষা চাইতে হবে... ছেলেরা না অন্ধের মতো আমার পেছনে পেছনে ঘোরে... আর মৈথী, তোকে এত বাড়াবাড়ি করতে কে বলেছে !!!

মৈথিলী : নাহহহ... আ...

দিব্যান্ত : এই বৃষ্টি নামছে... তোরা এই দোকানটার নীচে আয়...

দিব্যান্ত ওদের দু'জনকে হাত ধরে টেনে নিয়ে আসে পাশের ছোট্ট চায়ের দোকানটাতে... ঠিক শ্রাবণের বর্ষামুখরিত দিনের মতো আকাশ জুড়ে বৃষ্টি নামে... বৃষ্টি ভেজা মাটির সোদা গন্ধ বরাবরই মৈথিলীকে মাতাল করে তোলে... আর সে নিজেকে ধরে রাখতে পারে না... নিজের ফোনটা চা-কাকুকে দিয়ে মোহাবিষ্টের মতো এগিয়ে যায় বৃষ্টিকে টুপটাপ গায়ে মেখে নিতে... দুইদিকে নিজের দুই বাহু প্রসারিত করে বৃষ্টিকে আলিঙ্গন করে মৈথিলী... বৃষ্টি যে তার বড় আপন, তাকে তার মতো করে বোঝে... কোনো Judgement, Comparison-এর প্রতিযোগিতা নেই সেখানে... আর তার তো নিজের মানুষ কেউ নেই যে তার চোখের জলের থেকে বৃষ্টির জলকে আলাদা করে বুঝতে পারবে... তাই বৃষ্টিকে আলিঙ্গন করে তার বারিধারাতে মৈথিলী নিজের হৃদয়ের ভারকে অশ্রুধারায় মুক্তি দেয়.... বৃষ্টির মাদকতা তাকে ভুলিয়ে দেয় দিব্যান্ত-র উপস্থিতি, ভুলিয়ে দেয় বৃষ্টিস্নাত হলে তার দেহসৌষ্টব স্পষ্টতর হয়ে উঠবে সকলের চোখে...

'ও না বলে আসা বর্ষাতে ভিজতে চেয়ে

কেবলই ভাসে কার সাথে একলা মেয়ে

মুষুলধারে কোন কিনারে

এ ওঠা এ পড়া বড়োই সৃষ্টি ছাড়া

কিসের হদিস চাও রে

ইচ্ছেরা যাচ্ছে কই- কেউ অতল, কেউ অথই

কেউ দিলে উস্কানি পাখনাদের স্বস্তি কই

ওড়ার বাহানা চাই রে- মন বাবরে, মন‌ বাবরে'

দিব্যান্ত : (মনে মনে) ইসসসস... আমিও যদি বৃষ্টি হতাম, এইভাবেই আলিঙ্গন করতিস আমায় মৈথিলী !!! এমনই আদরে আমার বৃষ্টির ফোঁটাগুলো গায়ে মাখতিস, এমনই সুন্দর করে তোর ওই নরম আঙুলের নিষ্পাপ সোহাগ স্পর্শে জড়িয়ে নিতিস আমায় !!! হঠাৎই যখন তোর চোখ পড়তো আমার পানে, কেমন যেন লজ্জা পেতিস তুই !!! আমি তোর কিছু দেখতাম না জানিস, শুধু তোর ওই বৃষ্টিভেজা আঁখিপল্লব দুটো ছাড়া... দুষ্টু বৃষ্টির ফোঁটাগুলো কেমন তোর নরম চোখের পাতাগুলো ভিজিয়ে দিচ্ছে !!! খুব হিংসে হচ্ছে আমার জানিস... আমার অধর তো ওদের ছুঁতে পাচ্ছে না... যদি তোর আঁখিপল্লবের সিক্ততা শুষে নিতে পারতাম....

দিব্যা দেখে তার পাশেও দাঁড়িয়ে দিব্যান্ত মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে মৈথিলীর দিকে... সহ্য হয় না তার... দ্রুত পায়ে এগিয়ে যেতে চায় মৈথিলীর দিকে, হঠাৎই দিব্যান্ত-র হাতের বাঁধনের বাধা পায়....

দিব্যান্ত : যাস না ডিভা... মেয়েটা এই প্রথম নিজেকে একদম মুক্ত করে মেলে ধরেছে... ওকে একটু ভিজতে দে....

দিব্যা খুব ভালো করে জানে এই সময় কোনো কটু কথা বললে ও-ই দিব্যান্ত-র চোখে নীচে নেমে যাবে... কিন্তু এটা তো হতে দেওয়া যায় না... তাই নিজের গাত্রদাহ লুকিয়ে উদ্বেগের সুরে বলে ওঠে,

দিব্যা : কি বলছিস তুই দেব !! সবাই আমি আর তুই নই... চারপাশে তাকিয়ে দেখ, সবাই কেমন লোলুপ দৃষ্টিতে ওর ভেজা শরীরটার দিকে তাকিয়ে আছে...

কথাটা একটু বাড়াবাড়ি হলেও খুব ভুল ছিল না... সবাই না দেখলেও কিছুজন তো চোখে অনুবীক্ষণ যন্ত্র লাগিয়ে সবসময়ই প্রস্তুত থাকে, কোনো নারীর আনমনার সুযোগে যতটা পারা যায় তাকে চোখ দিয়ে ভক্ষণ করে নেওয়া যায়... দিব্যান্ত নিজে বেরিয়ে মৈথিলীকে হাত ধরে টেনে চায়ের দোকানে নিয়ে আসে...

দিব্যান্ত : (চাপা গলায় ধমকে) Are You Crazy, Maithili !!! চারপাশে সবাই আছে তো নাকি !!!

দিব্যান্ত-র কথায় চমকে ওঠে মৈথিলী... সত্যিই তো সে বড্ড ছেলেমানুষী করে ফেলেছে... দুই হাত দিয়ে যতটা সম্ভব নিজের লজ্জা আবৃত করে চায়ের দোকানের একটা অন্ধকার কোনে সরে দাঁড়ায় সে... দিব্যান্ত সরে আসে তার কাছে....

দিব্যান্ত : May I....

মৈথিলী চোখ তুলে তাকাতেই দিব্যান্ত দেখে লজ্জায় মৈথিলীর দুই চোখ ভর্তি জল... দিব্যান্ত মৈথিলীর মাথায় হাত রেখে ওকে ভরসা দিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করলেও মৈথিলীর ফুঁপিয়ে ওঠা তার হৃদয়কেও আদ্র করে দেয়... তবুও দিব্যান্ত মৃদু হেসে চোখের ইশারায় ভরসা দিয়ে মৈথিলীর দুই হাত সরিয়ে ওর গায়ের ওড়নাটা ওর কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে সেটাকে ভালো করে নিংড়ে সেটা দিয়ে চাদরের মতো করে মৈথিলীকে ভালো করে ঢেকে দেয়... তারপর মৈথিলীর পিঠে হাত রেখে বলে,

দিব্যান্ত : ভয় পাস না... তুই তো সুতির সালোয়ার-কামিজ পরিস, তাই কিছু দেখা যাচ্ছে না... বৃষ্টিটা ধরে এলো প্রায়... একটু চা খেয়েই বেরিয়ে পড়ব... আয় একটু গল্প করি... আচ্ছা তোদের প্রিয় জায়গা কোনটা !!!

দিব্যা : আমার তো বিদেশ ভালো লাগে... ওখানে গিয়ে সব Western Outfit পরে মজাটাই আলাদা...

মৈথিলী : (উদাস হয়ে) আমার 'কবিনগর'... শান্তিনিকেতন... আমার কাছে নির্জন সোনাঝুরি শান্তির স্থল... যেখানে ডালে ডালে পাখিরা গান গায়, আর তাদের সাথে গলা মিলিয়ে গান গাইতে গাইতে বয়ে যায় ক্যানেলের জল... শীতের সকালে গা এলিয়ে সোনাঝুরি রোদ খায়... রমনীরা ঝুমুর গায়, পুরুষেরা বাজায় মাদল... সোনাঝুরির সারা দেহে মাতন লাগে... যেখানে বুনো ফুলের গন্ধ চিনিয়ে দেয় নতুন পথ...

ওখানে PhD করতে যাবার ইচ্ছেটুকুই আমার প্রাণের শেষ নিঃশ্বাস সম... আমি হারিয়ে যেতে চাই সোনাঝুরির ওই মেঠো পথ ধরে ওই বহুদূরের গড় জঙ্গলে... একাকী বাউল মনটাকে সাথী করে পাড়ি দিতে চাই অজানা পথে... তাই, ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখি আরো একটা দিন বাঁচার, শিয়রে সোনাঝুরি সারারাত জাগে...

Delhi :

----------

কেউ কি জানে, কেমন করে সূর্য ডোবে !!

নিখোঁজ যারা ফেরে না ঘরে,

তাদের খবর কেউ কি রাখে !!

পুড়ছে যারা ভেতর ভেতর, ক'জন রাখে সেসব খবর !!

বারুদ চোখে হাঁটছি সবাই,

লুকোয় শোক চোখের তারায়...

দিনের শেষে বোঝার মানুষ, থাকতো যদি সন্ধ্যা ছুঁয়ে,

জীবনগুলোও সাজত তবে, সম্পর্কের সম্মোহনে...

                                               (সংগৃহীত, গ্রন্থকীট)

অ্যালকোহলের শেষ বিন্দুটা গলায় ঢেলে জড়ানো গলায় কথাগুলো বলে আদ্বান... Cup Winning Celebration করতে পিহু আর বৃন্দা আদ্বান-দের মেসে আসে... ওরা আসবে বলে আদ্বান আজো চিকেন রান্না করেছে... আর তাই সবাই মিলে ছাদে বসে ছোট্ট মতো Picnic করছে... আদ্বান-এর কথাগুলো শুনে সবাই হাততালি দিয়ে ওঠে...

বৃন্দা : WOW... কি ভালো !! আচ্ছা আদ্বান, তুই এরপর কি করবি ভাবছিস !!

আদ্বান : PhD করব...

পিহু : কোথায় !!! নিশ্চয়ই কোনো বড় University-তে !! Foreign-এ....

আদ্বান : বিদেশের মোহ আমার নেই... আমাকে এমন কাজ করতে হবে, যাতে বিদেশীরা বাধ্য হয় আমার দেশে এসে আমার কাজ নিয়ে পড়াশোনা করতে... বিদেশ যেন দেশের মাটিতে এসে দাঁড়ায়, দেশ বিদেশের মাটিতে নয়... শান্তিনিকেতনে প্রতি বছর কত্ত বিদেশী আসে বল তো !! আমাকে ঠিক ওমনি কাজ করতে হবে, যাতে এই পৃথিবীর বুকে ছোট্ট হলেও একটু Imprint রেখে যেতে পারি...

পিহু : শান্তিনিকেতন !! Is it !!

আদ্বান : a festivity of Colour, Sound, Love, Light and Culture among the Red Dusts and Tiny Forest of Sonajhuri on the Bank of River Kopai & experiencing the Magic of 'BAUL' in its purest form... It is.... আমার শহর... আমার ভালোবাসা... আমার সোনাঝুরি... যে আমি ক্লান্ত হলেও বিশ্রামকে প্রশয় দিতে দেয় নি কখনো, কারন মাদলের শব্দ আমার দিকে সঞ্জীবনার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে... স্বপ্নপূরনের পথে এগিয়ে যাবার জন্য ওই ভালোবাসায় মোড়া গ্রামের পথ ছেড়ে হয়তো ক্ষণিকের জন্য আমি কোথাও পাড়ি দিতেই পারি... কিন্তু আমার আত্মা শুধু ওই সোনাঝুরির রাঙা পথেই পড়ে থাকবে...

যে দৃষ্টি শুধু দৃষ্টিকে চেনে, ঝরা ফুলের পাপড়ি ঝরে পড়ে যায়, সময় কি পারে সেই ফুল ফোটাতে? জীবনের ওঠা পড়ায় একটু কাছে আসা অথবা চলে যাওয়া- সময় কি পারে তাকে ফিরিয়ে আনতে? এক মুঠো ধুলোর ঝড় যখন তছনছ করে সব হিসেব, সময় কি পারে সেই হিসেব মেলাতে? কিংবা চোখের জলের সেই আর্তি যাতে ভেজে নি কোনো পাষান হৃদয়- সময় কি পারবে সেই মন মেলে ধরতে? যে মন ভেঙে যায় নির্মম আঘাতে, সময় কি পারবে তাকে জোড়া লাগাতে? যে দেওয়া শুধু দেওয়াই ছিল, নেওয়ার দাসত্ব করে নি- সময় কি পারে তার অধিকারের সীমা বুঝে নিতে? প্রশ্নগুলো যখন শুধু প্রশ্নই থেকে যায়, সময় কি পারে তার উত্তর খুঁজে দিতে !!

                                 (রচয়িতা- সুগতা রায় চৌধুরী)

সময় কি পারবে আদ্বান আর মৈথিলীর জীবনের সব প্রশ্নের উত্তর দিতে !!


Pune :

-------------

'এই শহর ভাঙ্গাচোরা গলি, রাস্তাঘাট

নিয়ে হাজার ঝঞ্ঝাট জমজমাট...

নিয়ে হাজার দুঃখ বুকে আমাকে রোজ বাঁচতে শেখায়...

এ শহর এখনো যে কাঁদে, এ শহর হাসে তাই...

এখানে কেউ ঘর বাঁধে, এই শহর ভালোবাসে তাই...

এ শহর, আমার এই শহর বড় সেকেলে...

তবু নতুন করে হঠাৎই কোনো বিকেলে,

আমি খুঁজে পাই এখানে আমার আসল পরিচয়...

এ শহর এখনো কাঁদে, এ শহর হাসে তাই...

এখানে কেউ ঘর বাঁধে, এই শহর ভালোবাসে তাই...'

সবার অনুরোধে The Bong Again সিনেমার নীল দত্ত-এর এই গানটা গায়... কিন্তু সঞ্চারী আর অভোগ অংশটুকু গায় না... তার প্রাণাধিক প্রিয় গিটার-টাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে অন্ধকারের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে...

পিহু: গানটা এইটুকু !!!

আদ্বান : বাকি অংশটুকু তোদের জন্য নয়... যদি কোনো... যদি কোনোদিন ওই অংশটুকু গাওয়ার কারন খুঁজে পাই... যদি কোনোদিন তেমন কোনো মনের মানুষ খুঁজে পাই... সেদিন গাইব... সব গান তোদের জন্য নয়... (ক্লান্তিকর একটা হাসি হেসে) যদিও জানি, সেইদিন বা সেই মানুষ হয়তো কোনোদিনও আসবে না... সবাই এখন স্বার্থের জন্য বাঁচে... infact, পিহু আর বৃন্দা তোরা দু'জনেই... পিহু আমাকে কাছে পেতে চাস... Ohhh Sorry, আমার শরীরটা পেতে পাস... কিন্তু, বিয়ে করবি একজন Well Established মানুষকে... আমার এই পড়া শেষ হলে আসল জীবনযুদ্ধ শুরু হবে... চড়াই-উতরাই রুক্ষ্ম ঊষর প্রান্তর আমার রণক্ষেত্র... সেখানে যাজ্ঞসেনী হওয়াটা তোদের সাজে না... আরে Status পড়ে যাবে না !!! আর, বৃন্দা ওর মনের মানুষটাকে ভীষন ভালোবাসে... ওর এই দুঃসময়ে, এই ক্যান্সারের লড়াই-এ যেখানে আমরা ওর বন্ধুরা ওকে আগলে রাখছি- সেখানে ওর মনের মানুষ ওর পাশে নেই... তবুও বৃন্দা ওর ভালোবাসার উপর থেকে ভরসা হারায় নি... কিন্তু বৃন্দা, ঈরিশ যে তোকে বন্ধুত্বের বাঁধন দিতে গিয়ে তোকে নিজেকে উজার করে ভালোবেসে ফেলেছে... তার আভাস তুই খুব ভালো করেই জানিস, আর জানিস বলেই ওর অনুভূতিকে তুই কাজে লাগাচ্ছিস... নিজের কঠিন সময়ে ওকে তোর শক্তি করছিস... কিন্তু সেটা শুধুই আলগা ভালোলাগা... তাতে কোনো ভালোবাসা নেই... তোর এই কঠিন সময়টা কেটে গেলে কিন্তু তুই তোর মনের মানুষের কাছেই ফিরে যাবি... তখন আমার এই বন্ধুটা আর তার নিঃস্বার্থ ভালোবাসার কি হবে, বল তো !!

বৃন্দা চোখ নামিয়ে নেয়... ঈরিশ রাতের অন্ধকারে মধ্যেও আরো অন্ধকারের সন্ধান করতে থাকে চোখের সিক্ততার আড়াল করার জন্য... সে বৃন্দার জন্য শুধুই আলোটুকুই নৈবেদ্য করে রেখেছে, অন্ধকারটা নয় তার জন্যই থাক...

ঈরিশ : সব কিছু ভুলে গিয়ে সেদিন যে যার পথে হাঁটা শুরু করবো... 'সব শীতের শেষে হয়তো বসন্ত আসে না'... আমাদের জীবনেও বসন্ত আসবে না... বর্ষা এসেছিল, ভিজেছিলাম একসাথে... শীতের শৈত্যের পর হয়তো আর একসাথে পথ চলা যাবে না, তখন একা...

অন্ধকারের জন্য কেউ দেখতে পায় না, আদ্বানের চোখে তখন আগুন জ্বলছে...

আদ্বান : কথায় বলে, ঠান্ডা ঘরে থাকা লাশের মধ্যেও থেকে যায় 'অপ্রকাশিত' কিছু গল্প... তেমনই জীবন্ত মানুষের মনের ঘরেও থেকে যায় কিছু অপ্রকাশিত গল্প... আর তোরা দু'জন, তাই তোদের মতো এই স্বার্থপরদের ভিড়ে আমি আদৌ আমার 'মানসী'- কে খুঁজে পাব কি না, জানি না !!! কিন্তু যদি কোনোদিন সন্ধান পাই...

পিহু : তাহলে তুই আবার প্রেম করবি !!!

আদ্বান : তাতো জানি না... সে আদৌ আছে না কি, শুধুই আমার কল্পনা- সেটাই তো জানি না রে !!! আর আমি প্রেম করব কি না, সেটা অপ্রাসঙ্গিক... ভালোবাসা এসে আমায় ছোঁবে কি না, আমার 'দুখজাগানিয়া' হবে কি না- সেটা তো সময় গর্ভেই নিমজ্জিত আছে এখন... ঠিক যেমন সমুদ্রের গর্ভে শ্রীকৃষ্ণের দ্বারকা নিমজ্জিত আছে...

পিহু : এই বৃন্দা চল... এখানে আর ভালো লাগছে না...

পিহু উঠে আদ্বানদের মেস থেকে হনহনিয়ে বেরিয়ে যায়... ওকে আটকাতে ওর পেছন পেছন বৃন্দা আর ঈরিশ-ও ছোটে... চোখে আগুন আর পাথুরে মুখ নিয়ে আদ্বান অন্ধকারেই বসে থাকে শুধুমাত্র এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের অপেক্ষায়... আরেকটা বিয়ার বোতল খুলে সবটা গলায় ঢেলে শেষ করে নেয়... উঠতে গিয়েও উঠতে পারে না, টলে পড়ে যায়... নেশার ঘোরে মুখের সামনে ভেসে ওঠে একটা মুখ, যাকে ভালোবেসে সবকিছু তুচ্ছ করেছিল সে... Result খারাপ হলো... তার Career-এ সারাজীবনের মতো ছোট্ট হলেও একটা দাগ পড়ে গেল... যদিও আদ্বান মনে করে যে, শিক্ষা কতগুলো নির্ধারিত সংখ্যার উপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে একজন ব্যক্তির স্বতন্ত্র মানসিকতা ও নিজস্ব জ্ঞানের উপর... কিন্তু তাও, এই সমাজ তো একজন মানুষকে দিন শেষে তার কাছের ফলাফল দিয়েই বিচার করে... মানুষের যোগ্যতার মাপকাঠি যেখানে যেন একমাত্র তার রিপোর্ট কার্ড-এর ওই সংখ্যাগুলো... তাই এহেন পরিস্থিতিতে আদ্বান যখন একদম একা হয়ে গেল, যখন সত্যিই তার পাশের মানুষটাকে তার বড্ড প্রয়োজন ছিল- তখন সেই দুঃসময়ে তার ভালোবাসার সরে যেতে চাইছে বুঝতে পেরে নিজেই মুক্ত করে দেয় তাকে... সে কৃত্রিম কোনো বাঁধনে বিশ্বাস করে না... বিশ্বাস রাখে 'বাঁধনবিহীন অকারণ বাঁধনে'- যা কখনো ছিন্ন হয় না... তেমন আত্মার সাথে আত্মার সম্পর্ক কি আছে !!! কেউ কি বিশ্বাস রাখে তাতে !! না কি সবটাই Myth !! না কি সময় তাকে তৈরি করছে নিয়তির দ্যূতক্রিয়ায় নিগৃহিতা কৃষ্ণার সম্মানরক্ষার জন্য...

এরপর কেটে যায় তিনমাস... আদ্বান তার লক্ষ্যে স্থির থেকে আরো কিছুটা পথ এগিয়ে যায়... আর মৈথিলী !!!!



Pune (তিনমাস পর) :

-------------------------------

মৈথিলীকে তার জীবনে দিব্যান্তকে বাধ্য হয়ে মেনে নিতে হয়েছে... সে অনুভব করে, দিব্যান্ত-র এক জোড়া মুগ্ধ চোখ সবার অলক্ষ্যে যাকে সবচেয়ে অনুসরণ করে, সেটা মৈথিলী... দিব্যান্ত এখন University থেকে ফিরে দিব্যা-র সাথে গল্প করার অছিলাতে মৈথিলীর ঘরে আসর জমায়... আজ তিনজনের চা নিয়ে এসে মৈথিলী ওদের খাটে এসে বসে, তার আগে ওদের দু'জনকেই চপ মুড়ি মেখে খেতে দিয়ে গেছে সে...

দিব্যান্ত : আজকের MS Mam-এর পড়াটা আমি কিছু বুঝতে পারি নি... মৈথি, একটু পড়িয়ে দিস তো !!!

মৈথি হাতে চায়ের কাপ নিয়ে আনমনে বসে থাকে, দিব্যান্ত-র কথা ওর কানে ঢোকে না... দিব্যান্ত ওর হাতের উপর আলতো হাত রেখে বলে,

দিব্যান্ত : এই পাগলি !! কি হয়েছে !!!

মৈথিলী : কালকের দিনটা নিয়ে খুব চিন্তায় আছি... সত্যিই I Love You বলতে হবে, Senior-রা যাকেই বলতে হবে, হাতের পাতায় Kiss করতে হবে !!! আমি কাল যাবই না University...

দিব্যান্ত : যাহহহ... ওরা কিন্তু তাহলে ঘরে ঢুকে Ragging করবে... সেটা কিন্তু আরো ভয়ঙ্কর হবে... ওই ভুলটা করিস না মৈথি...

দিব্যা : আচ্ছা, তোকে Lip Kiss তো করতে হচ্ছে না... আজব...

দিব্যান্ত : আচ্ছা মৈথি, তোর ভালোবাসায় এত Allergies কেন !!!

মৈথিলী : ছুলেই হারিয়ে যায় যে... ছোটো থেকে যাই ভালোবেসেছি, তাই হারিয়ে যায়... ভালোবাসতে বড় ভয় লাগে আমার... ছোট্টবেলায় ভালো নাচতাম, শুনেছি... খুব ছোটবেলায় নাচতে গিয়ে পা ভেঙে যায়... আর পায়ে ঘুঙুর উঠলো না... Plastar করা পা নিয়েই না কি নাচার চেষ্টা করতাম... পা তো কোনরকমে জোড়া লাগল, কিন্তু নাচ চিরতরে হারিয়ে গেল... গান শিখলাম, ভালোবেসেই চেষ্টা করলাম- সেখানেও তো সুর, তাল, লয়, ছন্দ আছে... Adolescent Period-এ গলা এমনভাবে Crack করে গেল... আবার সেই একই পরিণতি- ডক্টরের অমোঘ ভবিষ্যতবাণী- যদি আবার নাচতে গিয়ে পা ভাঙে, আর জোড়া লাগবে না; এরপরেও যদি এই ভাঙা গলায় গান গায়, একদিন কথা বলাই বন্ধ হয়ে যাবে... আচ্ছা বলতে পারিস দিব্যান্ত, কেন !!! বারবার... বারবার আমিই কেন !!! কেন !!

উত্তেজিত মৈথিলী ভেতরের ক্ষোভ থেকে বিছানাতে হাত দিয়ে ঘুসি মারতে থাকে... দিব্যা দেখে মৈথিলীর চোখের জল দিব্যান্ত-র চোখের কোণে ধরা দিচ্ছে... দিব্যান্ত কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, তার আগেই...

মৈথিলী : যে বিষয়টা নিয়ে পড়ব বলে, ছোটো থেকে স্বপ্ন দেখলাম... খাটলাম... Test-এ Hightest পেলাম.... অবিশ্বাস্যভাবে H.S.-এ সেই বিষয়টাতে সবথেকে কম নম্বর এলো... অথচ আমার স্কুল ছাড়, অঞ্চলে আমি প্রথম হলাম... কেউ পাশে থাকলো না, কেউ সাহস দিল না, কেউ উদ্বুদ্ধ করলো না- কম নম্বর হলেও প্রিয় বিষয়টা নিয়ে এগিয়ে যেতে... সবার চাপে চোখের সামনে এত বছর ধরে তিলে তিলে গড়ে তোলা স্বপ্নটা হারিয়ে গেল মূহুর্তে... কেউ মনের রক্তক্ষরণটা দেখলো না... দুটো বছর যখন অন্য বিষয় নিয়ে পড়েও যখন First Division হলো- সবাই Suggestion দেবার কৃতিত্ব নিল... কিন্তু যেই শেষ বছর 2nd Division হয়ে গেল- ওমনি না আমার ব্যর্থতার দায় কেবল আমার একার হয়ে গেল... কেন বল তো !! সাফল্য যদি সবার হয়, তাহলে ব্যর্থতা কেন একা আমার !!! আমার কি মন বলে কিছু নেই !!! তাতে রক্তক্ষরণ হয় না !!! যন্ত্রণা হয় না !! আমি কি মানুষ নই, শুধুই স্বপ্নপূরণের যন্ত্র....

আবার ক্ষোভে, কষ্টে বিছানাতে ঘুসি মারতে গেলে দিব্যান্ত ওর দুই হাতে মুষ্টিবদ্ধ করে নেয় মৈথিলীর নরম তুলতুলে হাতটা... দিব্যান্ত-র হাতের স্পর্শ পেয়ে মৈথিলীর অন্যমনস্কভাবে বলে,

মৈথিলী : কোনো মানুষকে ভালোবেসে, তার আত্মাকে ভালোবেসে আমাকে যদি তাকে হারাতে হয় না, দিব্যান্ত... আমি না মরে যাব... নিজেকে শেষ করে দিতে হবে আমাকে... আর আমি নিতে পারব না রে... সহ্য করতে পারব না... (নিজের উদাসীনতা কাটিয়ে ঝট করে নিজের চোখটা মুছে মুখে হাসি টেনে বলে) তার থেকে এই ভালো না যে আমি একাই ভালো আছি... অন্ততঃ বেঁচে তো আছি... কোনো সম্পর্কের কি দরকার !!!

হঠাৎই সে অনুভব করে তার হাত দিব্যান্ত-র অঞ্জলিবদ্ধ... তাই সে দ্রুত হাতসহ নিজেকে সরিয়ে দিব্যার পাশে গিয়ে বসে... কিন্তু দিব্যা তো দিব্যাই... সে তো যা দেখার তা দেখেই নিয়েছে এবং তার নারী মন মানতে না চাইলেও একটা জিনিস উপলব্ধি করেই ফেলেছে যে বাকিদের মতো দিব্যান্তকে নিজের দিকে আকর্ষণ করা বা তাকে শুধুই শরীরী মায়া জালে আটকে রাখা এতটাও সহজ নয়... Deccan College-এর বহুল পরিচিত এই সুদর্শন যুবকটিকে তার হাতের মুঠোয় আনতে গেলে দিব্যাকে সত্যিই এবার 'ডিভা' হতেই হবে, কারণ দিব্যা কখনো হারতে শেখেনি..তবে এইটাও ভেবেই কিন্তু মনে মনে অবাক হয়ে যায়, ও উপস্থিত থাকা স্বত্ত্বেও দিব্যান্ত মৈথিলীর সাথে একদম একান্ত হয়ে গেল... ওর উপস্থিতিটা ভুলেই গেল এই মেয়েটার জন্য... তাহলে এই সাধারণ মেয়েটার কাছে তাকে হেরে যেতে হবে... নাহহহহ... কখনোই নই...

দিব্যা : (মনে মনে) এক হয় অর্জন করা, আর এক হয় ছিনিয়ে নেওয়া...প্রাপ্তির খাতা দুই ক্ষেত্রেই পূর্ণ হয়... তুই যদি ভুলেও দিব্যান্ত-র ভালোবাসা অর্জন করে নিস, দ্বিতীয় পথটা আমার জন্য খোলাই থাকবে.... আর দিব্যান্তর তোকে ভালোবাসার দাম তোকে একা দিতে হবে... একা... আর সেটা কাল থেকেই শুরু হবে...

এমনসময় দিব্যা-র কিছু কাছের Senior-রা আসে ওর সাথে কথা বলতে... দিব্যা ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায় এক অদ্ভুত ক্রুর হাসি নিয়ে... ঘরে একা তখন দিব্যান্ত আর মৈথিলী... দিব্যান্ত স্মিত হেসে হাত বাড়িয়ে মৈথিলীর দিকে... বিস্মিত চোখে মৈথিলী তাকায় দিব্যান্ত-র দিকে... মূহুর্তে চমকে ওঠে সে... এ কোন দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে দিব্যান্ত !!! মৈথিলীর নিজস্ব অনুভূতি জানান দেয়, দিব্যান্ত আর আগের মতো নেই... কিন্তু এর কারনটা কি !!! দিব্যান্ত কি মৈথিলীকে করুণা করছে !!! কে চেয়েছে ওর করুণা !!!

দিব্যান্ত : আয়...

মৈথিলী : ক্কে !! কেন !!

দিব্যান্ত : কালকের জন্য তৈরি হবি... কাল ওরা তোকে Ball Dance করতে বলবে...

মৈথিলী : ত্তু... তুই কি করে জানলি !! কার সাথে করতে বলবে !! তোর সাথে !!

দিব্যান্ত : আমার সাথে পড়লে আমার চিন্তা ছিল না... আমি তোকে আগলে রাখতাম... এখানে সবাই চায়, আমাকে আর দিব্যাকে জুটি হিসেবে দেখতে... তাই ওরা আমাদের জুটি বানিয়েছে... কিন্তু তোর কোনো অসম্মান আমার সহ্য হবে না... আয়, তৈরি হবি আয়...

মৈথিলী : জু... জুটি মানে !! ছেলেদের সাথে আমাকে নাচতে হবে... নাহহহ...

দিব্যান্ত : তুই হারাবি না মৈথি... নিজের সম্মানটা নিজে অর্জন করে নিবি... ছিনিয়ে নিতে বলছি না তোকে, অর্জন করতে বলছি... কারন, কোনো কিছু জোর করে ছিনিয়ে নেওয়াটা লজ্জার, কিন্তু অর্জন করে নেওয়াটা সম্মানের... আর তুই যদি এখন চুপচাপ নিচে নেমে না আসিস, আমি কিন্তু তোকে কোলে করে নামিয়ে আনব... আয়... নীচে নাম...

মৈথিলী ধীরে ধীরে নীচে নামে... কিন্তু দিব্যান্ত-র সস্নেহ সাহচর্য তাকে তার খোলস থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করে... একটু একটু করে সে কাজ চালানোর মতো নাচটুকু শেখে... দিব্যান্ত-র সাথে 'I Love You' বলা Practice করে... হাতের পাতায় 'Cheat Kiss' করা Practice করে... আর এইসব করতে করতে কখন যে তারা পরস্পরের অন্তরের সমীপে চলে আসে- নিজেরাই বুঝতে পারে না... বিশেষ করে, দিব্যান্ত-র ওকে শারীরিকভাবে না ছুঁয়েই ওর অন্তর স্পর্শ করা... মৈথিলী এর আগে কোনোদিন কোনো পুরুষেরই সান্নিধ্যে আসে নি, অথচ যে পুরুষের সে প্রথম কাছে এলো- সে যে তাকে এতটা সম্মান দিল, সেটা ওর দুই চোখ ভিজিয়ে দেয়... দিব্যান্ত-ও আজ দেখে যে মৈথিলী সবসময়ই তার সাথে ঝগড়া করতো, সেই মৈথিলীর দুই গালে কে যেন লজ্জার রাঙা আবীর রাঙিয়ে দিয়ে গেছে... মৈথিলী চুপ করে ধীরে ধীরে দিব্যান্ত-র থেকে সরে দাঁড়ায়....

দিব্যান্ত : কাল আমি অপেক্ষা করব, আমার মৈথিকে শাড়ি পরে দেখতে...

মৈথিলী : কি !!!

দিব্যান্ত : না দেখব, তুই কেমন শাড়ি কোমরে বেঁধে শালিক পাখির মতো ঝগড়া করিস... আসবি তো শাড়ি পরে...

মৈথিলী : শাড়ি তো সবাই পরে আসবে...

দিব্যান্ত : আমি তো শুধু তোকে দেখতে চাই... জানিস, আমার মনে হয়- আমি কারোর একজনের প্রেমে পড়েছি... একটা মেয়ে আমার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে... তুই জানিস, সে কে !!!

মৈথিলী : জানি...

দিব্যান্ত : কে !!!

মৈথিলী : দিব্যা...

দিব্যান্ত : কিইইই !!!

মৈথিলী : সবাই তো জানে...

দিব্যান্ত : বাহহহ... আমার মনের কথা আমি ছাড়া সবাই জানে... (মৈথিলী নাকটা ধরে টেনে) ওরে পাগলি আমার...

মৈথিলী : দাঁড়া... তোর হচ্ছে...

দিব্যান্ত তখনকার মতো দৌড়ে পালিয়ে গেলেও ওদের এই একান্ত মূহুর্তগুলো ওদের সারারাত ঘুমাতে দেয় না.... প্রায় ভোর রাতে দিব্যান্ত মৈথিলীকে Whatsapp করে,

দিব্যান্ত : কি রে, ভোরাই !! আমার চোখের ঘুম কেড়ে নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছিস বল...

মৈথিলী : নাহহ... পোড়া চোখে ঘুম আসছে না...

দিব্যান্ত : কে কাড়ল তোর ওই ম্যানহোলের মতো খুদি খুদি চোখের ঘুম....

মৈথিলী : Freshers Day-এর টেনশন...

দিব্যান্ত : অত ভাবিস না... আমি পাশে আছি তো না কি !! একটু ঘুমো, নয়তো শরীর খারাপ করবে.... শুয়ে পড়...

(কেমন হবে মৈথিলীর Freshers Day !!! )




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama