অলিখিত ভালোবাসা
অলিখিত ভালোবাসা
রবিবার এর বাংলা কোচিং ক্লাস।
দশম শ্রেণী থেকে ওরা একাদশ শ্রেণীতে উঠলো। ওরা মানে, অস্মিতা, দোয়েল, সুস্মিতা, সৃজনী, দীপায়ন, রূপসা, বিদিশা , সায়ন্তন ,অনুব্রত ...... এক ঝাঁক ছেলে মেয়ে।
বিভিন্ন স্কুল হলেও ওরা একসাথে টিউশন পড়ে আর সেখান থেকেই একে অপরের সাথে আলাপ। কেউ আর্ট, কর্মাস কেউ সায়েন্স নিয়ে পড়ছে ওরা। রবিবার ক্লাস শুরু সকাল সাড়ে সাতটা থেকে ।
ওরা সবাই মোটামুটি আসতে শুরু করে সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে।
বাংলা স্যার এর দোতলার ছাদের পাশে একটা ছোট্ট ঘর । আর সেখানে জোড়া টেবিল , সারি দিয়ে চেয়ার পাতা।
স্যারের বাড়ির প্রধান দরজা দিয়ে ছাএছাত্রীদের আসতে হয় না। বাইরে থেকে একটা লোহার প্যাঁচানো সিড়ি তা দিয়ে উঠে গেলেই সরাসরি ছাদ।
ছাদের এক পাশ জুড়ে চমৎকার ফুলের শোভা। অন্যপাশে পড়ানোর ঘরটা।
বাংলা কম্পালশারি তাই সবাই একদশ শ্রেনীতে উঠে আবার রবিবারের বাংলা ক্লাসে ।
মোটামুটিভাবে ক্লাস দুতিনটে রবিবার হয়েছে তখন।
সেদিন রবিবার সকালে সবার প্রথমে এসেছে অস্মিতা।
কেউ নেই ফাঁকা, একা বসে আছে।
তারপর ঢুকলো বিদিশা,
এসে বসলো অস্মিতার পাশে আর বলে উঠলো," কাল কত ফোন করলাম তুললিনা...! কেন রে...?
অস্মিতা --- "একটা ব্যাপার নিয়ে ভাবছিলাম।"
বিদিশা--- "ব্যাপার..!কি রে... কি ভাবছিলিস..?"
অস্মিতা---"জানিস তো..! আমাকে না অনুব্রত ফোন করেছিলো।"
বিদিশা---" তা..তাই নিয়ে আবার ভাবার কি আছে।"
অস্মিতা লাজুক ভাবে, "না মানে .."
বিদিশা---" তোর কি আবার ওকে পছন্দ নাকি..?"
অস্মিতা---"কেন ..?ওকি খারাপ.!"
বিদিশা---"না.., আমার তেমন একটা ভালো লাগে না, কেমন যেন ক্যাবলা... টাইপের.."
অস্মিতা---"মোটেই না যথেষ্ট ভালো , ভদ্র।
বিদিশা---"তা কি এতো কথা বললি যা নিয়ে পরেরদিন অবধি ভেবে আমার ফোনটা ধরলি না।
আর ও কি তোকে ..
না মানে ও সবাইকেই ওরকম ফোন করে হয়তো।"
অস্মিতা --"সে তো করতেই পারে তবে..!"
বিদিশা, ---"তবে... তবে কি?"
অস্মিতা---"কথা ও কি একি বলবে।"
বিদিশা---" না..তা হয়তো বলবে না মানে যদি ওর তোকে.."
কথাটা বলতে বলতেই রূপসা ঢুকলো।
ঢুকেই রূপসা বললো, "এই কিরে অস্মিতা কাল বায়োলজি ক্লাসে, গেলি না কেন..?
বিদিশা বললো, "ও তুই আবার ক্লাসে ও যাসনি !
রূপসার দিকে তাকিয়ে হেসে বললো, "ও না ভাবছিলো..."
রূপসা বলে উঠলো, "ভাবছিলো... মানে.. জানিস ? স্যার কত নোটস দিয়েছে কাল ,
যা গিয়ে পড়ে পড়ে লেখ এবার,
নয়তো জেরক্স কর ।
আবার রূপসা বলে উঠলো, "তা কি হয়েছে বলবি..?"
বিদিশা বললো, "ওকে অনুব্রত ফোন করেছিলো , ও প্রেমে পড়েছে।"
রূপসা বললো, "আজব পৃথিবী... অস্মিতার দিকে তাকিয়ে বললো ,"তুই প্রেমে পড়লি আর ওদিকে দীপায়ন আর সৃজনীরটা ভাঙলো।"
বিদিশা একটু অবাক হয়ে,"ভাঙলো মানে... সৃজনীর সাথে ছিলো নাকি..?"
রূপসা --- -"হ্যাঁ টেন থেকেই তো এই বাংলা স্যারের ক্লাসে , দেখিসনি ওরা একসাথে বসতো এখন হঠাৎ সৃজনী ভাঙছে। সেদিন ইংলিস স্যারের ওখানে জানলাম । ওরা আমি ওখানেও একসাথে পড়ি, তোকেও তো ওই ইংলিশ স্যার কোচিং এ বললাম চলে আয়।"
বিদিশা বললো, "দীপায়ন তো ভালো ছেলে রে , ব্রিলিয়েন্ট স্টুডেন্ট, ওর রেজাল্ট ও ভালো তাহলে ... হঠাৎ সৃজনী কেন...!"
অস্মিতা বলে উঠলো, "বাবা... কি ব্যাপার দীপায়ন এর প্রসংসা ..."
বিদিশা,---,"ভালো কে ভালো বলেছি..।"
অস্মিতা--"শোন ..! ওই তো কি লম্বা উঃ হ্ ওকে..! তুই ভালো বলছিস।"
বিদিশা---" তা কি তোর অনুব্রতর মতো বেঁটে গুড় গুড়ে হবে সবাই।"
অস্মিতা---"এই এক দম বাজে কথা বলবি না। দীপায়ন সবসময় কেমন একটা উদাস হয়ে থাকে ওই জন্যই হয়তো সৃজনী ভেঙে দিয়েছে।"
রূপসা---" ওহ্.....তোরা থাম এবার..! খালি ঝগড়া।"
বিদিশা আবার বললো,"জানিস ও বাস্কেটবল খেলে ভালো শুনেছিলাম।
রূপসা ---"হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক বলেছিস।"
অস্মিতা--- "এই দাঁড়া ... অন্যরা আসছে চুপ কর, এই টপিক চ্যাঞ্জ কর।"
ধীরে ধীরে অনুব্রত, দীপায়ন, সুস্মিতা, দোয়েল, সৃজনী আরো সবাই চলে এলো ।
এরপর বাংলা স্যার ঢুকলো।
ক্লাস শুরু হলো .......।
নোটস লেখানো দেওয়া খানিকটা হয়েও গেলো। তখন হঠাৎ ঢুকলো সায়ন্তন
--- আসবো স্যার?"
স্যার---" কি ব্যাপার তুমি কি রাত ধরে মিছিলে হাঁটছো ..? যে এতো দেরি হলো।"
সবাই হেসে উঠলো।
সায়ন্তন বললো, "আমার এলাম বাজেনি ,, ঘড়ি বন্ধ।"
সবাই আবার হেসে উঠলো।
এভাবে কেটে গেলো সেদিনের সকাল টা।
পরের রবিবার সকাল....
বিদিশা প্রথম স্যারের বাড়ি ঢুকলো দেখলো দীপায়ন বাইরে ছাদে দাঁড়িয়ে আছে।
বিদিশা--"কিরে এখানে দাঁড়িয়ে। কেউ আসেনি না..? বিদিশা ব্যাগটা রেখে দিয়ে আবার এলো ছাদে। আর বললো,
কেমন প্রিপারেশন চলছে তোর কোনটা ভালো লাগে তোর ।"
দীপায়ন---"আমার ম্যাথ , ফিজিক্স।"
বিদিশা---"আমার না ফিজিক্স ভীষণ উল্টো পাল্টা হয়ে যায়। "
দীপায়ন---"তুইতো বায়োলজি তে খুব ভালো আমাকে রূপসা বলছে।"
বিদিশা---"ওই আরকি.. , ওর আমার অস্মিতার এক স্যার শুধু ব্যাচটা আলাদা। আচ্ছা সৃজনীর সাথে তোর ব্রেক আপ কেন হলো..?"
দীপায়ন---"জানি না ওই হঠাৎ করে।
ইংলিশ কোচিং আর বাংলাতে ওর সাথে দেখা হয়। ও আর্টস এর স্টুডেন্ট। তাই বাকি সাবজেক্ট গুলো আলাদা।"
বিদিশা--" কিন্তু ও কেন...?"
দীপায়ন---"ছাড় বাদ দে..."
পরিবেশটা ভারী দেখে বিদিশা স্বাভাবিক করার জন্য হঠাৎ বলে উঠলো,"আচ্ছা তুই ফিজিক্স এ হেল্প করে দিবি আমায় ।"
দীপায়ন হেসে বললো,"আমাকে ফোন করিস যখন অসুবিধা হবে তোর ...তবে ভাবিস না যেনো আমি সবজান্তা।"
দীপায়ন বললো, "বায়োলজির জন্য আমিও ডিসট্রাব করবো কিন্তু। "
বিদিশার হাসি। তারপর বললো," ভীষণ মিউচ্যুয়াল...."
এরপর দুজনের শুরু ফোনে কথা।
বেশির ভাগ কথাই ফিজিক্স নিয়ে বোঝানো দীপায়ন , বিদিশা কে। আবার কখনো ও বায়োলজি নিয়ে।
একদিন তখন সন্ধ্যেবেলা ওদের ফোনে কথা চলছে।
দীপায়ন বললো, "বাংলা ক্লাসে ওই প্রবলেম টা আনিস আর একটু তাড়াতাড়ি আসিস তখন বসে সলভ করবো।"
পরের রবিবার বিদিশা আর দীপায়ন ক্লাস তখন পুরো ফাঁকা।
তখনও কেউ আসেনি।
ফিজিক্স বুঝতে বুঝতে কখন বিদিশা দীপায়নের ভীষণ গা ঘেঁষে। কখনও আবার দীপায়ন এর হাত লেগে গেছে বিদিশার হাতে। কোনো আপত্তি নেই। কোনো বাধা নেই। মাঝেমধ্যে আবার চোখে চোখ।
কেটে গেলো সময়.... ।
তারপর ক্লাস শুরু বাংলা।
বাংলা স্যার নোটস লেখাছে, বোঝাচ্ছে ।
রূপসা কনুই দিয়ে ঠেলে বিদিশা কে , "দ্যাখ অস্মিতাকে, প্রেমে পাগল হয়ে না যায় ।"
বিদিশা হেসে ফেললো।
দীপায়ন তাকালো একবার।
ওদিকে সায়ন্তন বলে উঠলো ,"স্যার আমি না অনেক কিছু ইদানিং বাংলা বুঝে উঠতে পারছিনা।"
সুস্মিতা ,দোয়েল এর খিলখিল হাসি।
সায়ন্তন বিরক্ত হয়ে,---" হাসির কি আছে এতে ... বুঝতে পারছি না জানাবো না, আশ্চর্য ..।"
অনুব্রত বলে উঠলো, "ঠিকিই তো ঠিকিই তো।"
স্যার বলে উঠলো, "আচ্ছা চুপ সবাই, আমি বলছি।"
তারপর স্যার বোঝাতে শুরু করলো।
কিছু মাস পর......
সেদিন আকাশে দারুন মেঘ। বাংলা স্যার এর ক্লাস শেষ হলো।
যে যার মতো সবাই বেরিয়ে গেলো।
হালকা বৃষ্টি শুরু হলো।
দীপায়ন তখন অনেকটা এগিয়ে গেছে।
রূপসার, দোয়েলের সাথে কথা বলছিল বিদিশা। তারপর ছাতা হাতে বেরোলো,
দীপায়নকে পিছন থেকে ডাকলো আর বললো," এই দাঁড়া একসাথে যাবো।"
কিছু ক্ষন দুজনে হাঁটলো দুজনের আলাদা ছাতা।
হঠাৎ তুমুল বৃষ্টি নামল।
ওরা একটা বন্ধ দোকান এর ছাউনির তলায় গিয়ে দাড়ালো।
প্রচন্ড বৃষ্টির ঝাঁট ।
বিদিশা দীপায়ন এর গা ঘেঁষে।
দীপায়ন বিদিশার দিকে বহুক্ষন তাকিয়ে ।
হঠাৎ প্রচন্ড শব্দে বাজ আর
বিদিশা ভয় পেয়ে দীপায়ন এর বাহু ধরে ওর দিকে মুখ নীচু করে।
দীপায়ন বিদিশা কে আশ্বাস দিলো।
যেমন সব প্রেমের গল্পে হয় ঠিক তেমন একটা পরিবেশ তৈরি হলো ।
দুজনের মনের গভীরে অদৃশ্য অলিখিত প্রেম
সৃষ্টি হলো।
মেঘলা দিন, ভেজা ভেজা হাওয়া। ঝাপসা চারপাশ
সেদিন সকালে এরপর ওরা একটা ছাতায় দু'জন দু'জনকে ধরে বেরিয়ে পড়লো বাড়ি ফিরবে বলে।
বাড়ি ফিরে সেই গোটা সপ্তাহ ওরা কেউ কাউকে ফোন করলো না।
শুধুই ভেবে গেলো ।
আর দেখতে দেখতে ফিরে এলো আবার রবিবার।
তখন সকাল, হাল্কা রোদ। স্যার এর বাড়ির ছাদে দাড়িয়ে বিদিশা। ফুল দেখছে।
দীপায়ন এলো ব্যাগটা টেবিলে রেখে। "কিরে কি করছিস .. তারপর ফুলের দিকে তাকিয়ে
চিনিস এটা কি ফুল..?
তারপর আবার বিদিশা র দিকে তাকিয়ে।
বিদিশা---"এটা জিনিয়া, আর ওই পাশে জারবেরা, আর এটা হলো... ।"
দীপায়ন বলে উঠলো, " জানি জুঁই।
বিদিশা---"কি সুন্দর না ....?"
দীপায়ন বিদিশার দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলো, "জুঁই ফুলের মালা খোঁপা য় সুন্দর লাগে...!"
বিদিশা অবাক হয়ে বলে উঠলো, "বাব্বা তুই জানিস এতো কিছু । আমি ভাবিনি। "
দীপায়ন যেচে জবা ফুল হাতে নিয়ে বললো এই... এর সেকসান করা শিখেছিস। "
বিদিশা ---"হ্যাঁ গত সপ্তাহে বায়োলজি ক্লাসে স্কুল এ করিয়েছিলো। "
দীপায়ন--" সে আমাদের ও করিয়ে ছিলো
আমার না সব ঘেঁটে গেছে।
আমাকে দেখাতে পারবি এখন।"
বিদিশা উৎসাহিত হয়ে," হ্যাঁ চল একটা ব্লেড লাগবে নইলে..."
দীপায়ন---" দাঁড়া বলেই নীচে চলে গেলো তারপর ফিরে এসে" স্যার কাছ থেকে চেয়ে আনলাম "
বিদিশা---"কিছু বলেনি..."
দীপায়ন-- "জিগ্যেস করছিল বলেছি ক্লাস শুরু হলে বলবো।"
বিদিশা---"" তুই না...।"
জবা ফুল এনে দুজনে ভিতরে চেয়ারে বসলো। এবার শুরু হলো বিদিশা র বোঝানো এইটা হলো ক্যলিক্স, পেটাল
দীপায়ন বলে উঠলো, " সেটা তো বুঝলাম আর অ্যন্ড্রোসিয়াম, গাইনিসিয়াম ।"
বিদিশা-- "দাঁড়া দেখাচ্ছি।"
ব্লেড দিয়ে সেকসান করছে বিদিশা। আর দীপায়নকে দেখাচ্ছে।
বুঝতে বুঝতে দীপায়ন বিদিশা আরো কাছাকাছি।
হঠাৎ রূপসা ঢুকেই, "কি গরম .! ফ্যান না চালিয়ে বসে আছিস ..."
বলেই ফ্যান চালাতেই খাতার ওপরে রাখা জবা ফুলের পাপড়ি সব উড়ে গেলো,
দীপায়ন --"যা.....
বিদিশা চমকে উঠে তাকালো।
রূপসা বলে উঠলো, "কি ছিলো ওগুলো..?
এ বাবা সরি সরি ...তোরা কি করছিলি।"
বিদিশা---"আরে জবা ফুলের সেকসান...।"
তিনজনের একসাথে হাসি তারপর কিছুক্ষণ এটা সেটা বলে ইয়ার্কি চললো। ধীরে ধীরে বাকিরা এলো।
স্যার এলো ক্লাস শুরু হলো।
প্রতিদিন এর মতো সবার এটা সেটা বলে মজা করা, স্যারের একটু বকুনি । আবার সবার খুব মনোযোগ। নোটস লেখা , তারপর বুঝে নেওয়া।
সৃজনীর সাথে সবাই এখন কমই কথা বলে।
আর অন্য দিকে দীপায়ন এর সাথে বিদিশার এই যে গভীর আলাপ বাড়ছে রোজ । তা সবার অজান্তে।
এভাবে কেটে গেলো বছর তারপর দ্বাদশ শ্রেণিতে সবাই আর দেখতে দেখতে উচ্চমাধ্যমিক।
পরীক্ষা প্রায় এসে গেছে।
আর এরই মধ্যে ঘটলো একটা ঘটনা।
দীপায়নের কাছে ফিরে আসলো সৃজনী।
বিগত দিনের সমস্ত তার ব্যবহার এর জন্য সে ক্ষমা চাইলো।
দীপায়ন সৃজনীকেই ভালবাসতো ঠিকই।কিন্তু আজ কোথায় যেন সেই ভালোবাসায় কমতি , কেমন ভাঁটা পড়েছে। যদিও সৃজনী তা খুব বেশি অনুভব করতে পারেনি।
এই সৃজনীর দীপায়নের কাছে ফিরে আসাটা ধীরে ধীরে কোচিং এর বাকি বন্ধুরা জানতে পেরে খুশি হলো।
দীপায়ন বিদিশা কে জানালো।
বিদিশার উওর ছিল নীরব, ম্যাড়ম্যাড়ে।
বিদিশা নিজেকে গুটিয়ে নিলো।
দীপায়ন বিদিশার এই সরে যাওয়াকে মানতে পারলো না। অথচ কিছু করতে ও পারলো না। শুধু ভিতরে ভিতরে রাগ, বিরক্তি, অভিমান করতে থাকলো।
পরীক্ষা হলো রেজাল্ট বেরোলো সবাই এলো বাংলা স্যার কে প্রনাম করতে। সবার মনখারাপ এই রবিবার সকাল টা তার আর পাবে না এখন থেকে।
দীপায়ন ভাবলো বিদিশার সাথে দেখা হবে কিন্তু হলোনা।
স্যারই জানালো বিদিশা আসতে পারবেনা ।ও একটু অসুস্থ, ফোনে জানিয়েছে। তবে ভালো রেজাল্ট করেছে।
দীপায়নের বিরক্তি, আরো বাড়লো।
বাংলা স্যার বললো, "নতুন জীবন এ পা দিতে চলেছো। স্কুলের গন্ডি শেষ। ভালো করে পথ চলো আর অবশ্যই কোনো প্রয়োজন হলে আমাকে জানিয়ো। "
কেটে গেলো বেশ অনেক গুলো বছর।
এখন সবাই ওরা বড়ো হয়েছে। সোস্যাল মিডিয়ায় দৌলতে সবার সাথে সবারই হাল্কা যোগাযোগ আছে। তবে ওই সংসার, কাজের চাপ, সব মিলিয়ে আর সেইভাবে কথা হয় না তবে। ফেসবুক এ প্রায়ই ওদের দেখা যায়।
অস্মিতার সাথে অনুব্রতর বিয়েটা হয়ে গেছে।
রূপসা চাকরি করে আর একটা মিষ্টি মেয়ে ও হয়েছে সম্প্রতি ।
প্রায়ই ফেসবুকে ছবি আপলোড করে ।
সায়ন্তন এখন বিদেশে থাকে।
তবে ফেসবুকে এ সবার সাথে কথা বলে। আর দোয়েল সুস্মিতা সেই একি আছে ফিচেল স্বভাবের সবাই কে নিয়ে খালি হাসি ঠাট্টা করে।
সৃজনী কেও ফেসবুকে বেশ দেখা যায়। দীপায়ন এর সাথে তার বিয়ে হয়েছে।
বিদিশা ও বিবাহিত , তবে বন্ধুদের সাথে কম যোগাযোগ।
একদিন হঠাৎ অস্মিতা আর রূপসা দেখা করলো।
সন্ধ্যে নেমে এসেছে।
কফির কাপে চুমুক দিয়ে রূপসা বললো, "দেখতে দেখতে কেটে গেলো কত বছর, সবাই আমারা কেমন বড়ো হয়ে গেলাম।"
অস্মিতা---" তোর মেয়েকে আনলি না কেন? কাছ থেকে দেখতাম।"
রূপসা--"তাহলেই হয়েছে আর কথাই বলা হতো না।"
অস্মিতা--- "একদিন সবাই একসঙ্গে হলে খুব ভালো হতো সেইসব সকাল গুলো , স্যারের বাড়িতে... রোববার গুলো ভোলা যায় না।"
রূপসা--- "তা যা বলেছিস। সৃজনী কে বলতে হবে আর বিদিশাটা কি জানি কেমন আছে..."
অস্মিতা--- "খুব বেশি কথা বলে না ।
বিদিশা, হঠাৎ করে কেমন বদলে গেছিলো ।"
রূপসা--- "হ্যাঁ ঠিকিই, তবে সৃজনীটা খুব সেজেগুজে ফোটো দেয় দেখেছিস।"
অস্মিতা--- "বাব্বা হ্যাঁ সত্যি , কিন্তু দীপায়ন টা তেমন একটা আবার আসে না।"
রূপসা--- "সেই সৃজনী ছেড়ে গেলো আবার ফিরে এলো দীপায়ন এর জীবন। আর তোদের প্রেমটাও রবিবার সকাল থেকে শুরু। অনুব্রতকে নিয়ে বিদিশা কত্ত মজা করত আগে। কিন্তু এখন ভীষণ সিরিয়াস হয়ে গেছে তবে অনুব্রত অনেক চেঞ্জ।"
অস্মিতা বলে উঠলো, " হ্যাঁ অনুব্রত ভীষণ ব্যস্ত থাকে আমাকে সময়ই দেয় না আজকাল। কিন্তু বিদিশা র মজা গুলো মনে করতে ভালোই লাগে। "
ধীরে ধীরে কথা শেষ হলো দুজনের। একদিন সবাই মিলিত হবে একসাথে , সেইসব আলোচনা করতে করতে তারপর যে যার বেরিয়ে পড়লো। রাস্তায় নিয়নের আলোয় উজ্জ্বল হয়ে উঠল স্মৃতির পাতা গুলো।
ওদিকে
দীপায়ন অফিসের ছুটি পেয়ে গেলো , বেরিয়ে পড়লো সৃজনী কে নিয়ে সমুদ্রে কাছে।
বুক করা হোটেলে উঠলো।
রুম থেকে নেমে সিড়ি দিয়ে দুজনে বেরতে যাবে হঠাৎ সামনাসামনি বিদিশা আর তার হাজবেন্ড লোলিত।
বিদিশা কে দেখে খানিকটা অবাক হলো দীপায়ন। ওরা একে অপরকে দেখছে।
এতগুলো বছর পর দেখা।
সোস্যাল মিডিয়ায় ক্ষীণ যোগাযোগ সে না থাকার মতোই।
তবে সৃজনী উচ্ছ্বাসিত হয়ে , "কিরে.... বিদিশা !কেমন আছিস..? বাব্বা তোর সাথে আর কথাই হয় না। এত কি ব্যস্ত থাকিস তুই। কতদিন বাদে দেখা।
লোলিত বললো বিদিশার দিকে তাকিয়ে, "তুমি ওনাদের চেনো নাকি?"
বিদিশা বলার আগেই।
সৃজনী বলে উঠলো, "আমরা তো একি ইয়ারের। স্কুল আলাদা ছিল ,কিন্তু একি টিউটোরিয়াল টানা চার বছর। দীপায়ন আমার হাজবেন্ড আর আমি দুইজনেই বিদিশার ব্যাচমেট।
লোলিত খুশি হয়ে আলাপ করলো ।
দীপায়ন বিদিশাকে এতদিন বাদে দেখে ভীষণ খুশি হলো।
পরের দিন ভোর বিদিশা হোটেলের সামনে বাগানে ঘুরছে।
হঠাৎ দীপায়ন এলো, বিদিশা কে নানান রকম কথা জিজ্ঞেস করতে শুরু করলো।
বিদিশা একটু দূরে দূরে থেকে উওর দিচ্ছে ।
দীপায়ন বিদিশার হাতটা ধরে আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছিস তুই । আমি কাল থেকেই খেয়াল করেছি।
বিদিশা বলে উঠলো, "পাত্তা দেয়া মানে কি ছুঁয়ে থাকা। কি বলতে চাইছিস..?"
দীপায়ন বিদিশার হাত ছেড়ে বিরক্ত হয়ে বললো, "কেন ..! বাংলা কোচিং এ তো আগে সবসময় গা ঘেঁষে ঘেঁষে আসতিস।"
বিদিশা রিয়েক্ট করে বলে উঠলো, " ও... আর তার পরেরটা তুই বারন ও তো করিস নি কখনো ।
প্রশয় দিয়েছিস সেটা কিছু ছিলো না।"
দীপয়ন শান্ত গলায় বললো, "এতই যখন ভেবেছিলে আমি তোমায় প্রশয় দিয়েছি তাহলে দূরে চলে গেলে কেন ? বলো..? কেন ...সেদিন আশকারা দিলে না সবকিছু।"
কথাটা বলেই দীপায়ন বিদিশার খুব কাছে এসে যখন তাকলো বিদিশা ও দীপায়ন বাহু ধরে কেঁদে ফেললো।
তারপরেই আবার দীপায়ন কে ছেড়ে একটু তফাতে গিয়ে বললো," তোমায় ছুঁয়ে কাঁদলাম বলে এটা ভেবো না যেনো আমার স্বামী আমায় ভালোবাসে না।"
দীপায়ন বললো, "কথাটা এভাবে না বললেও পারতে... ।
সেদিন কেন সরে গেলে । সেদিন কেন আমায় দূরে সরিয়ে দিলে।"
বিদিশা কান্না ভেজা গলায় বললো, "কি বলতাম তোমায়..?"
দীপায়ন বললো, "আমাকে তোমার পাশে থাকতে বলতে পারতে।"
বিদিশা বললো,"আমি বলতাম আর তুমি থেকে যেতে, আর সৃজনী ও ....।
ইতঃস্তত হয়ে দীপায়ন বললো,"তুমি বলনি, বলতে পারোনি...
বিদিশা আবার বলে উঠলো,"দীপায়ন ছেলেমানুষ এর মতো কথা বলো না। ধর আমি বলতাম তখন তুমি পারতে সৃজনী কে ফেলে....
আমি যদি বলতাম আমার তোমাকে... তোমাকে ভালোলাগে।
তুমি কি করতে দীপায়ন।"
দীপায়ন বিদিশার দিকে তাকিয়ে উওর হীন ভাবে। যেকথাটা এতবছর ধরে শুনতে চেয়েছিলো দীপায়ন, সেই কথাগুলো বিদিশার কাছ থেকে আজ শুনছে সে।
দীপায়ন তার মনের আলোড়ন প্রকাশ করতে না পারলেও তার চোখ তা বলে দিয়েছিলো বিদিশা কে , তাদের ভালোবাসা আজো কোথাও একটা বেঁচে আছে। অপ্রকাশিত ভাবে জেগে আছে মনের অতলে।
সেদিন তখন বিকেল।
ওরা চারজনে সমুদ্রের কাছাকাছি। সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়ছে। সৃজনী পুরনো দিনের কথা বলছে, রূপসা অস্মিতার কথা নিয়ে বিদিশার সাথে আলোচনা করছে। একদিন সবাই দেখা করলে ভালো হতো এসব কথা বলতে বলতে এগিয়ে চলেছে।
হাঁটতে হাঁটতে ওরা চারজন।
তারপর একসময়
বিদিশা বসে পড়লো বালিরচরে, আর দীপায়ন ও ।
সৃজনী বললো, "হয়ে গেলো আর হাঁটবে না তোমরা।"
বিদিশা বললো, " আমি আর পারবো না। পুরো হাঁপিয়ে গেছি।"
দীপায়ন ও একি জানালো।
সৃজনী আবার বললো, "লোলিত চলুন আমরাই হেঁটে আসি। এদের দ্বারা কিচ্ছু হবে না। আচ্ছা আপনি ছবি তুলতে পারেন তো।
লোলিত হেসে বলে উঠলো, "হ্যাঁ হ্যাঁ , চলুন।"
সৃজনী বললো, " তোমরা বসো আমরা তাহলে ওদিকটা থেকে ঘুরে আসি।"
ওদের যাবার পর .....
দীপায়ন বিদিশা কে বললো, " তোর হাজবেন্ড বেশ ভালোই , সাদামাটা ।"
বিদিশা বললো, " হ্যাঁ ও কাজ নিয়েই থাকে বেশি।আমরা বছরে একবার মোটামুটি বেড়াতে বেরোই. আগের বার লোলিত ভীষণ ব্যস্ত ছিলো তাই হয়নি।.. খানিকটা থেমে আবার বললো, সৃজনীটা এখনো বেশ মজা করতে ভালোবাসে।"
দীপায়ন বললো, "হুম এটা ও..রি প্ল্যান । সবকিছু বেড়াতে আসা ওই সব এরেঞ্জ করেছে।"
দীপায়ন বিদিশার দিকে তাকিয়ে আবার বললো,"স্যারের বাড়ির সেইসব সকাল গুলো তোমার নিশ্চয়ই মনে থাকে না ।"
বিদিশা সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো, "মনে থাকে... মনে আছে। কিন্তু কি হবে..? যা কোনদিন.."
দীপায়ন আবার বললো, " আর এই ভালোলাগাটা সেদিনের কাছে আসাটা সেগুলো তো মিথ্যে নয়।"
বিদিশা বললো,"না তা নয় ঠিকিই..।"
দীপায়ন এবার বললো, "বিদিশা ...আমার সাথে যোগাযোগটা রেখো, মানে কথা বলো।
এটুকু ও কি আমি পেতে পারি না, বিদিশা..।"
বিদিশা দীপায়ন এর হাতে হাত রেখে চোখে চোখ রেখে বললো, "আচ্ছা....."
বিকেলের সূর্য কে সাক্ষী রেখে এক আশ্বাস আর নতুন করে আবার দুজন দুজনের বন্ধুত্ব এর সাথে আলাপ
যার অলিখিত সেতু ছিলো ভালোবাসায় বাঁধা।