অজানা পথে ( পর্ব - ৩০ )
অজানা পথে ( পর্ব - ৩০ )
বিনয় বলল,তোমার মুখ চোখ কেমন শুকনো রাতে ঘুম হয়েছিল ! শরীর ঠিক আছে তো!"
"কেন দাদা!এক কথা বার বার বলছেন!আমার ঘুম আসবে না কেন!খুব ঘুমিয়েছি।"
"আমার মনে হচ্ছে তুমি খুব ক্লান্ত,অসুস্থ তাই জানতে চাইলাম। আমার কিন্তু গোয়েন্দা চোখ।"
রূপসী গত সারারাত জুড়ে আর আজ দুপুরের ভাত খাওয়ার পর এই ঘরে ভয় ভয় ভাব,বিনয়ের অনুপস্থিত কারণে অনুভব করছিল।
গত রাতে ঘর থেকে বের হয়ে বাথরুম যাওয়ার সময় ডাইনিং হলে ঘোরের মধ্য অচেতন হয়ে পড়ে,কী সব রাতে চোখের ভ্রম দেখেছিল,গত বিকালে ছাদে ওঠার ঘটনা ,কালো বিড়ালের স্বপ্ন বা সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় সে আচমকা পড়ে যাওয়ার আগের মুহূর্তেই কে যেন তাকে আচমকা আটকে সোজা করে দিল,এসব কিছুই গোপন করল।তবে সে একটু অসুস্থবোধ করাতে শরীর টলমল করছে,মুখ শুকনো খুব অবসন্ন বিনয়ের মনে হচ্ছিল।
রূপসী গোপালের দুধ প্রোটিন পাউডার মিশ্রণ আর বিনয়ের চা তৈরী করে একটু পর এঘরে সে নিয়ে এল। ইতিমধ্যেই বাবার সাথে গল্পের আনন্দে মত্ত গোয়েন্দা বাবার কৌশলী প্রশ্নে রাতে সে যে বিছানা ভিজিয়ে ফেলেছিল বলে দিল। রূপসী গভীর ঘুমে গোপালকে তুলতে পারেনি।এজন্য রূপসীর ভয় সংকোচ ছিল। বাবাকে এসব কথা গোপাল বললে,বাবা মনে হয়ত কষ্ট পাবেন, তাই গোপালকে এসব কথা বলতেও রূপসী
নিষেধ করেছিল।
রূপসী রান্নার ঘর থেকে এত সব বাপ ছেলের শোনে নেই। রূপসী ঘরে এলে বিনয় বলল,
"তোমার চা কৈ।"
"রান্নার ঘরে আছে দাদা।"
"চা নিয়ে ঘরে এসো আমার বিছানায় বসবে অনেক কথা আছে।"
রূপসী বিনয়ের কথা মত তার চা রান্নার ঘর থেকে আনতে গেল।গোপাল বলল মায়ের কোন দোষ নেই বাবা,মাকে বকবে না।আমি -"
রূপসী ঘরে ঢুকতে গোপাল চুপ করে গেল। রূপসী ঘরের মেঝে বসতে গেলে বিনয়ে বলল,
"আমি যে বললাম আমার খাটে এসে বস!"
রূপসী একটু সংকোচে অভি খাটে বসতেই, কেমন অপরাধীর মত গোপাল বলল,
"আমি মা বলে ফেলেছি কাল রাতে বিছানা ভিজিয়ে ফেলেছি। "
রূপসী অপরাধী মুখে মাথা নত করে বলল,
" আমার যেন মরন দশা এমন ঘোরে পড়েছিলাম।"
"কোথায় পড়েছিলে!"
রূপসী ভয়ে নার্ভাস লাগছিল বলল,"কেন বিছানায়!"
"মিথ্যা বলছ! আমি পুলিশ গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করি মানুষের মুখ দেখলেই বলে দেবো সে মিথ্যা না সত্যি বলছে।"
একটু কড়া ভাবেই কথা গুলো বিনয় বলল।
রূপসী মুখ নামিয়ে ছিল,সে যে কাঁদছে ভয়ে নার্ভাস বোধ করছে বিনয় বুঝে, দরদী মনে বলল।
"তোমাকে আমি বকাঝকা করছি না,গোপাল রাতে বিছানা ভিজিয়ে ফেলেছিল বলে এরজন্য দোষ তোমাকে দিচ্ছি না।আমি শুধু জানতে চাইছি রাতে তুমি ঠিক কোথায় ঘোরে পড়েছিলে ! আর কেন!তোমার ভালোর জন্য বলছি ময়না।তোমার প্রতিও আমার খুব স্নেহ আছে তাই বলছি।"
বিনয়ের দরদী গলায় কথা গুলো শুনে রূপসী বলল।
"মাথাটা ঘুরে ভোরের সময় বাথরুম যেতে গিয়ে পড়ে যাই দাদা।একটু পরেই উঠে বাথরুম থেকে ঘরে এসে দেখি গোপাল ততক্ষণ বিছানা ভিজিয়ে ফেলেছে।"
"তা বেশ করেছে, এতে গোপনের কী আছে,তার জন্য আমি কী তোমায় বকব! তুমিও আমার চেয়ে অনেক ছোট খুব স্নেহ করি। কিন্তু হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়লে কেন শরীর খারাপ করছিল?"
"আমার শরীর ঠিক আছে দাদা,এত চিন্তার কী আছে দাদা!আপনি আমায় স্নেহ করেন তাই এত ভাবেন।"
সজল চোখে বিনয়ের দিয়ে রূপসী কৃতজ্ঞ চিত্তে তাকায়।
"ঠিক আছে তাই যদি জানো,তবে এটাও জানবে তোমার কোন অনিচ্ছাকৃত ভুল বা দোষ আমি ক্ষমা করে দেবো,এবার থেকে কিছুই গোপন করবে না।গোপালকে কিছু মিথ্যা বলতে শেখাবে না।গোপাল
কী শিখবে বলো!"
"আমার খুব অন্যায় হয়েছে দাদা আমি ক্ষমা চাইছি।"
"আমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার বিষয় নয়।গোপাল বাচ্ছা ছেলে আমার জেরায় গোপাল বা তুমি কেন!কতসব দাগী অপরাধী সত্যিই বলে দেয়।তুমি আবার গোপাল কে ভুল বোঝা না।"
"দাদা এর চেয়ে আমার মরন ভালো।গোপাল আমার ছেলে ও আমার গায়ে হেগে দিলেও রাগ করব না।"
বিনয় বলল,"অবোধ শিশু মা বাবার গায়ে হেগে দিতে পারে বা খুব অসুস্থ অবস্থায় একটু বড় গোপালের মত বা আরও বড় এসব অপকর্ম করতে পারে, সুস্থ শরীরে গোপাল কেন এমন করবে!"
"গোপাল খুব ভাল দাদা,আপনার ছেলে ঠিক আপনার মত।"
"ওর জন্মদাত্রী মা ভীষণ ভাল ছিল। আর এ মাও খুব ভালো একথা আমার নয় গোপাল বলছে।"
রূপসী পরিতৃপ্ত মুখে,চা খেয়ে গোপালকে আদর করে কোলে তুলে চুম খেয়ে বলল এসো বাবা আমরা ও ঘরে বসে গল্প করব।বাবা একটু বিশ্রাম নিন।
ক্রমশ

