অদৃষ্ট পর্ব ৩
অদৃষ্ট পর্ব ৩
তারপর,, আমার কেমন মন টানত,, সুভাষ যদি আমার একটা ছবি এঁকে দেয় । আমি নিজেও বুঝতে পারতাম না কেন এরম মনে হয়।
আমি একদিন সুভাষকে বলে ফেলেছিলাম ওয়াটস্যাপে এই কথা ।
একদিন ও আমায় বলে-- " আয়, আঁকব । ভালো লাগবে আমার খুব ।"
বললাম-- " না আমি মজা করছিলাম । ছাড় না।"
সুভাষ-- " আচ্ছা তুই কি রে?? ছোট বাচ্ছা?? তুই এক কাজ কর ,,, লজ্জাবতি লতিকা হয়ে থাক। "
বললাম-- " আচ্ছা ঠিক আছে চল।"
দেখি সত্যি কি সুন্দর এঁকেছে । আমার মনটাই আনন্দে ভরে গেছিল ।
সুভাষ-- " কিরে ভালো লাগছে??"
-- " হমম্,, খুব ।"
তারপর আমি চলে যাই ।
সেদিন friendship day ছিল ।
সুভাষ আর আমি মজা করছিলাম । তারপর দেখি ও আমারই একটা ছবি এঁকে আমায় দিচ্ছে ।
অবাক হয়ে গেছিলাম ।
বললাম-- " কি করে আঁকলি?"
সুভাষ-- " কেন,,, আমার মোবাইলে তো তোর ছবি আছে । তাই দেখে এঁকেছি ।"
আমার মনটা আবারও আনন্দে ভরে গেছিল। কেন এতো খুশি হতাম,, বুঝতে পারতাম না ।
২০১৭ সালে আমি চাকরি পেয়েছিলাম। সুভাষও চাকরি করত ।
আমি জার্নালিস্টের চাকরি করতাম বলে বহু জায়গায় খবরের জন্য আমায় যেতে হতো ।
সকাল ৭টা নাগাদ আমায় অফিসে যেতে হতো। আর কখন ফিরতাম,, তার ঠিক থাকতো না ।
২০১৯ সালেই আমার প্রমোশন হয়েছিল ।
তারপর,, আমি TV তে নিউজ পড়তাম ।
এতো আনন্দের পর এই বছর যে আমায় কাঁদতে হবে ভাবিনি ।
এই বছর মার্চ মাসেই আমার জীবনটা যেন শেষ হয়ে গেল । মনে হচ্ছিল,,, আমি একটা ডানা কাটা পাখি।
বাসে করে মেয়ন্ রাস্তায় নেমে,, আমি একটা রিক্সা করে বাড়ি ফিরতাম ।
তবে রাত হয়ে গেলে আমায় হেঁটেই ফিরতে হতো।
সেইভাবেই আমি একদিন রিক্সা করে ফিরছিলাম । হঠাত্ একটা গাড়ি রিক্সার পেছনে এতো জোর ধাক্কা মেরেছিল,,, যে আমি ছিটকে রিক্সা থেকে পরে যাই।
মদ খেয়ে গাড়ি চালাচ্ছিল লোকটা । এমন ভাবে পরেছিলাম,, লোকটা আমার একটা পায়ের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে চলে যায় ।
যন্ত্রণায় আমি কাতরাচ্ছিলাম। মাথা দিয়ে রক্তও বেরোচ্ছিল,,, আর তারপর আমার কিছু মনে ছিল না ।
জ্ঞান আসতে আমি দেখি,, আমি হাসপাতালে,, আর ডান পা হাঁটু থেকে কাটা গেছে। সে দেখে কাঁদতে কাঁদতে আমি শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম । মা, বাবা মনে জোর দিচ্ছিল। কিন্তু আমি নিজেকে সামলাতেই পারছিলাম না ।
তারপর দেখি সুভাষ এসছে
বলছিলাম -- সুভাষ,, আমি মরে গেলে ভালো হতো।"
সুভাষ-- " আর কাকু,, কাকিমার কি হতো?? শুধু নিজের কথা ভাববি?? খবরদার আর এই কথাটা বলবি না তুই ।"
-- " কি হবে বেঁচে থেকে?? আমি তো আর কিছু করতেও পারবো না ।"
সুভাষ-- " করতে পারবি না ভাবলেই পারবি না । আর যদি ভাবিস পারবি তাহলেই এগোতে পারবি।
তোর যা কষ্ট হচ্ছে,,, তার তিনগুণ কষ্ট পাচ্ছে অনেকে ।
শুনলি না খবরে,,,, একটা লোক হাত দিয়ে কিছু করতে পারেনা,,, সে পা দিয়ে খায়,, পা দিয়েই লেখে, পা দিয়েই চুল আশ্রায় ( সত্যি কথা এটা।)
ও তো বলছেনা মরে যাবো । তুই কাপুরুষের মতন কাঁপছিস।
কেন,,,, এখন তো সবাই ওয়ার্ক ফ্রম হোম করছে । জার্নালিস্ট হয়ে আর ঘুরতে পারবি না মানে মরে যাওয়ার কথা ভাববি???
তুই কি জার্নালিসিম ছাড়া আর কিছু শিখিসই নাকি??
কম্পিউটার শেখাটা পুরো বেকার?? বাড়ি বসে কাজ খুঁজলে,,, তুই এখন ভালো মতন পেতে পারিষ, কারণ তোকে লোকে চেনে ।
থামা কান্না। একদম কাঁদবি না আর। আর বাজার ও তো অনলাইনে করতে পারবি । চিন্তার কি হয়েছে।"
-- " তুই শুধু বলছিসই । এইভাবে পা কাটা গেলে কতো কষ্ট হয় ,,, সেটা তুই বুঝতেও পারিব না।
একজন মানুষের মনের ব্যথা অন্যজন বুঝতে পারে না । কাউকে জ্ঞান দিতে আর কতক্ষণ সময় লাগে??"
সুভাষ-- " তাহলে এইভাবে কেঁদেই যাবি তুই???
কেঁদে কিছু ফিরে পাবি??? এইভাবে তুই depressed হয়ে যাবি । কোথায় তোর ওই মনের জোর??"
--- " এতোই যখন বলছিস,,, তাহলে চেষ্টা করবো ।"
সুভাষ-- " এই তো,,,, আমার বন্ধু সুভমিতা।"
কি আর করবো,, থেমে থাকলে তো চলবে না। প্রথমে ওয়্হীল চেয়ারে করে মা বাথরুমে, খাবার টেবিলে নিয়ে যেতো। তারপর আমি cratch নিয়ে হাটতাম।
সারাদিন তো আর ঘরে বসে থাকা যায় না, ওইভাবেই একটু বায়রে মা'র সাথে যেতাম ।
অনলাইনে চাকরি পেয়েছিলাম ।
মাসে ৭০০০ টাকা পেতাম। তাতে সংসরের কিছু কাজ তো হতো। ওতেই আমার শান্তি হতো।