Partha Pratim Guha Neogy

Classics Inspirational

4.0  

Partha Pratim Guha Neogy

Classics Inspirational

অবক্ষয়ের সভ্যতা

অবক্ষয়ের সভ্যতা

2 mins
446


মাথা নীচু করে থানায় বসেছিলেন প্রৌঢ়মানুষটা। মানুষটির বসে থাকার ভঙ্গী খুব চেনা লাগছে। মনে পড়তেই চমকে উঠল ! “একি মাস্টারমশাই! এখানে কি করছেন?”     


পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে, FIR - টাতে আড়চোখ বুলিয়ে নিলেন- ছাত্রীকে বলাৎকারের অপরাধে ধৃত মজুমদার স্যার-পকসো অ্যাক্টে।


কনস্টেবল হাজতে ঢোকাবার জন্য হাতকড়া ধরে টানতেই—

“খবরদার! কেউ ছোঁবে না‌।

ওনাকে কে হাতকড়া পরিয়েছে? খোলো! এখুনি খোলো হাতকড়া!”

চমকে কনস্টেবল একটা সেলাম ঠুকে হাতকড়াটা খুলে দেয়।

অফিসারটি একটা সাদা কাগজ টেনে খসখস করে লিখে ফাইলে ঢুকিয়ে রাখলেন।

“আমি নিজে ওনার জামিন মঞ্জুর করলাম।

স্যার! আপনি বাড়ি ফিরে যান।

আমি আসছি আপনার বাড়িতে।”

FIR থেকে ঠিকানা নিয়ে, ছাত্রী রমা সাহার বাড়িতে এলেন এস আই সত্য দাস ।

“থানা থেকে আসছি।

আপনার মেয়ের সঙ্গে একটু আলাদাভাবে কথা বলতে চাই।”

“না। ও নাবালিকা।আমরা ওকে একা অ্যালাউ করবো না।”

“ঠিক আছে। আপনারাও থাকুন।

তুমি পুরো ঘটনাটা গোড়া থেকে বলো তো, মামণি! স্যার কি সত্যিই সেদিন তোমার গায়ে হাত দিয়েছিলেন?”


উদ্ধত রমা জবাব দেয়, “দিয়েছেন বলেই তো অভিযোগটা করেছি! আমি কি মিথ্যে বলেছি?”

“আপনি প্রশ্ন করে আমার মেয়েকে বিব্রত করতে পারেন না। যা বলাবলি তা কোর্টরুমে হবে- এখানে নয়।” চেঁচিয়ে ওঠেন রমার মা।

“এসব বললে কি হয়? আমাকে জিজ্ঞাসা করতেই হবে।”

আপনি যদি এক্ষুণি চলে না যান, তাহলে আমি মিডিয়াতে জানাবো বলাৎকারের পুরো ঘটনাটা।

জানেন নিশ্চয়ই রমার কাকা খবরের কাগজের রিপোর্টার! নিশ্চয়ই চান না যে ওই মাস্টার কালকের পেপারের হেডলাইন হোক!


টুং করে মেসেজ দুজনের ফোনেই ঢুকলো। মেসেজটা একনজর দেখে, রমা আপন মনেই বললো, "এমনটা তো আমি চাইনি!"


আগের দেখা মেয়েটা হঠাৎ বদলে গিয়ে, মাথা নীচু করে বিড়বিড় করতেই, “এক মিনিট দাঁড়াও!রেকর্ড করে নিই। এবার বলো।”

“আমি স্যারের ক্লাস পালিয়ে ঘুরছিলাম বলে,স্যার আমাকে সবার সামনে বকাবকি করেছিলেন। আমিও স্যারকে টাইট দিতে চেয়েছিলাম বলে, ওভাবে ছকটা বানিয়েছিলাম বন্ধুদের সাথে। যা বলেছি, মা-বাবা বিশ্বাস করেছে।রিপোর্টার কাকা খবরটা আগুনের মতো ছড়িয়ে দেয় ।

অভিযোগ করাতে স্কুলের থেকে হাতকড়া পরিয়ে স্যারকে গাড়িতে তোলা হয়- সবার সামনে দিয়ে।”


SI দাসের চোখের সামনে ভেসে উঠলো দোর্দণ্ডপ্রতাপ ছোটবেলার মজুমদার স্যারের লিকলিকে বেতটার ওঠানামা।

“বিশ্বাস করুন, স্যার!

আমি চাইনি!

স্যার মারা যাক।।”

“মারা গেছেন?

কি বলছ কি তুমি?”

“হ্যাঁ।

এইমাত্র মেসেজ এলো।

উনি বাড়ি ফেরার পথে রেললাইনে সুইসাইড করেছেন।”

নিজের মোবাইলটা এতোক্ষণে খুলে, মেসেজ দেখে স্তম্ভিত সত্য।

উঠে দাঁড়িয়ে, টুপিটা মাথা থেকে নামিয়ে, একমিনিট নীরব থেকে বললেন,

“আশা করি, তুমি স্যারকে ঠিক মতোই জব্দ করেছ!আসলে উনি আমারও শিক্ষক ছিলেন—-“

SI সত্য দাস মাথা হেঁট করে বাড়ী থেকে বেরিয়ে গেলেন। হায়রে আধুনিক সভ্যতা!!



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics